গতকাল বুধবার গত অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে আইএমইডি। এতে দেখা যায়, গত অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৬৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দের ৪২ শতাংশেরও বেশিই অব্যয়িত। বরাদ্দের ৭২ হাজার ৭১৪ কোটি টাকাই অব্যায়িত থেকে গেছে। সংশোধিত এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ২৬ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছর অব্যয়িত ছিল সংশোধিত বরাদ্দের ১৯ শতাংশ। অর্থবছরের বাইরে একক মাসের হিসাবে অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ব্যয়ের হার ১৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
আইএমইডির প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দের ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন সবচেয়ে কম হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের। এ বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ২১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ১৯ প্রকল্পের বিপরীতে এ বিভাগের বরাদ্দ ছিল পাঁচ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে ব্যয় হয়েছে মাত্র এক হাজার ২৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দের ৭৮ শতাংশই অব্যয়িত থাকল। অন্যদিকে ব্যয়ে সক্ষমতার ঝলক দেখিয়েছে বিদ্যুৎ। এ বিভাগের ব্যয় ৯৮ শতাংশেরও বেশি। ৬০ প্রকল্পের বিপরীতে বিদ্যুৎ বিভাগের বরাদ্দ ছিল ২৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা।
অনেক কারণে গত অর্থবছর এডিপি বাস্তবায়ন কমেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের একনেকের প্রথম বৈঠকেই এডিপিভুক্ত সব উন্নয়ন প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকার মনে করে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া অনেক উন্নয়ন প্রকল্পগুলো প্রয়োজনীয়তার দিক থেকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এডিপিতে এমন অনেক প্রকল্প আছে যেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এলাকার নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে নেওয়া হয়েছে। কিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব ও ঠিকাদারদের স্বার্থে। সক্ষমতা প্রদর্শনে সামর্থ্যের বাইরেও উচ্চাভিলাষী কিছু ‘প্রেস্টিজ’ প্রকল্পও নেওয়া হয়। অত্যন্ত বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিল এডিপিভুক্ত প্রকল্পগুলো।
এ কারণে প্রতিটি প্রকল্প যাচাই-বাছাই শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে অনেক প্রকল্প বাদ পড়েছে। কিছু প্রকল্পের বরাদ্দ কমানো হয়। অন্যদিকে গণঅভ্যুত্থান কেন্দ্র করে সরকার পরিবর্তন এবং এ নিয়ে আগে পরের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বিদেশি অর্থায়নের প্রকল্পে কাজ করা অনেক বিদেশি কর্মী, ঠিকাদার প্রতিনিধি ও পরামর্শক বাংলাদেশ ছেড়ে যান। তাদের বড় একটা অংশ লম্বা সময় ধরে কাজে অনুপস্থিত ছিলেন। এ কারণেও প্রকল্পের কাজে স্থবিরতা দেখা যায়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলো কতটা প্রয়োজনীয় তা পর্যালোচনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যে অনেক প্রকল্প বাদ পড়েছে। স্থগিত রাখা হয়েছে কিছু প্রকল্প। আবার কিছু প্রকল্পের বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
অন্যদিকে ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে সরকার পরিবর্তন এবং এ নিয়ে আগে-পরের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির ধাক্কা লেগেছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপি বাস্তবায়ন চিত্রে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৪৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাস্তবায়নের হার ৬৮ শতাংশেরও কম। স্বাধীনতার পর এর আগে কবে এত হারে এডিপি কম বাস্তবায়িত হয়েছে সে হিসাব জানা যাচ্ছে না। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ওয়েবসাইট এবং অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪-এর তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা যায়, গত ৪৮ বছরের মধ্যে আগে কখনও এত কম হারে এডিপি বাস্তবায়নের রেকর্ড।
আইএমইডির ওয়েবসাইটে আগের অর্থবছরগুলোর মধ্যে ২০০৪-০৫ অর্থবছর পর্যন্ত পুরোনো তথ্য রয়েছে। আর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় রয়েছে ১৯৭৬-৭৭ পর্যন্ত পুরোনো তথ্য।
রেকর্ড ঘেঁটে দেখা যায়, এর আগে গত ৪৮ বছরের মধ্যে কম বাস্তবায়নের রেকর্ড ছিল গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। ওই অর্থবছর বাস্তবায়নের হার ছিল ৮০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এমনকি অতিমারি করোনাকাল লম্বা সময় লকডাউনে থাকার বছরও এর চেয়ে বেশি হারে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাস্তবায়ন ছিল ৮২ দশমিক ১১ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
গতকাল বুধবার গত অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে আইএমইডি। এতে দেখা যায়, গত অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৬৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দের ৪২ শতাংশেরও বেশিই অব্যয়িত। বরাদ্দের ৭২ হাজার ৭১৪ কোটি টাকাই অব্যায়িত থেকে গেছে। সংশোধিত এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ২৬ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছর অব্যয়িত ছিল সংশোধিত বরাদ্দের ১৯ শতাংশ। অর্থবছরের বাইরে একক মাসের হিসাবে অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ব্যয়ের হার ১৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
আইএমইডির প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দের ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন সবচেয়ে কম হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের। এ বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ২১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ১৯ প্রকল্পের বিপরীতে এ বিভাগের বরাদ্দ ছিল পাঁচ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে ব্যয় হয়েছে মাত্র এক হাজার ২৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দের ৭৮ শতাংশই অব্যয়িত থাকল। অন্যদিকে ব্যয়ে সক্ষমতার ঝলক দেখিয়েছে বিদ্যুৎ। এ বিভাগের ব্যয় ৯৮ শতাংশেরও বেশি। ৬০ প্রকল্পের বিপরীতে বিদ্যুৎ বিভাগের বরাদ্দ ছিল ২৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা।
অনেক কারণে গত অর্থবছর এডিপি বাস্তবায়ন কমেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের একনেকের প্রথম বৈঠকেই এডিপিভুক্ত সব উন্নয়ন প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকার মনে করে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া অনেক উন্নয়ন প্রকল্পগুলো প্রয়োজনীয়তার দিক থেকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এডিপিতে এমন অনেক প্রকল্প আছে যেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এলাকার নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে নেওয়া হয়েছে। কিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব ও ঠিকাদারদের স্বার্থে। সক্ষমতা প্রদর্শনে সামর্থ্যের বাইরেও উচ্চাভিলাষী কিছু ‘প্রেস্টিজ’ প্রকল্পও নেওয়া হয়। অত্যন্ত বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিল এডিপিভুক্ত প্রকল্পগুলো।
এ কারণে প্রতিটি প্রকল্প যাচাই-বাছাই শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে অনেক প্রকল্প বাদ পড়েছে। কিছু প্রকল্পের বরাদ্দ কমানো হয়। অন্যদিকে গণঅভ্যুত্থান কেন্দ্র করে সরকার পরিবর্তন এবং এ নিয়ে আগে পরের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বিদেশি অর্থায়নের প্রকল্পে কাজ করা অনেক বিদেশি কর্মী, ঠিকাদার প্রতিনিধি ও পরামর্শক বাংলাদেশ ছেড়ে যান। তাদের বড় একটা অংশ লম্বা সময় ধরে কাজে অনুপস্থিত ছিলেন। এ কারণেও প্রকল্পের কাজে স্থবিরতা দেখা যায়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলো কতটা প্রয়োজনীয় তা পর্যালোচনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যে অনেক প্রকল্প বাদ পড়েছে। স্থগিত রাখা হয়েছে কিছু প্রকল্প। আবার কিছু প্রকল্পের বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
অন্যদিকে ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে সরকার পরিবর্তন এবং এ নিয়ে আগে-পরের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির ধাক্কা লেগেছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপি বাস্তবায়ন চিত্রে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৪৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাস্তবায়নের হার ৬৮ শতাংশেরও কম। স্বাধীনতার পর এর আগে কবে এত হারে এডিপি কম বাস্তবায়িত হয়েছে সে হিসাব জানা যাচ্ছে না। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ওয়েবসাইট এবং অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪-এর তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা যায়, গত ৪৮ বছরের মধ্যে আগে কখনও এত কম হারে এডিপি বাস্তবায়নের রেকর্ড।
আইএমইডির ওয়েবসাইটে আগের অর্থবছরগুলোর মধ্যে ২০০৪-০৫ অর্থবছর পর্যন্ত পুরোনো তথ্য রয়েছে। আর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় রয়েছে ১৯৭৬-৭৭ পর্যন্ত পুরোনো তথ্য।
রেকর্ড ঘেঁটে দেখা যায়, এর আগে গত ৪৮ বছরের মধ্যে কম বাস্তবায়নের রেকর্ড ছিল গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। ওই অর্থবছর বাস্তবায়নের হার ছিল ৮০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এমনকি অতিমারি করোনাকাল লম্বা সময় লকডাউনে থাকার বছরও এর চেয়ে বেশি হারে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাস্তবায়ন ছিল ৮২ দশমিক ১১ শতাংশ।