alt

অর্থ-বাণিজ্য

মার্কিন শুল্কের চাপ কমাতে ২৫টি বোয়িং কিনবে সরকার

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা বড় অংকের শুল্ক কমানোর জন্য আলোচনার মধ্যেই মার্কিন কোম্পানি বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার ক্রয়াদেশ দেয়ার কথা জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম, সয়াবিন তেল ও তুলা কেনার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা, যাতে ডনাল্ড ট্রাম্প ওই ৩৫ শতাংশ শুল্কের বোঝা থেকে বাংলাদেশকে রেহাই দেয়।

রোববার (২৭ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ইমিডিয়েট কিছু এয়ারক্রাফট দরকার, আমাদের দুয়েক বছরের মধ্যে দরকার, হয়তো আমরা দুয়েক বছরের মধ্যে কিছু পাব। আমাদের বিমানের তো বহর বাড়াতে হবে। সেই পরিকল্পনা সরকারের বেশ আগে থেকেই ছিল। আমরা এ বছরে রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ ইস্যুতে আবার নতুন করে এই আদেশগুলো দিয়েছি, আগে ১৪টা ছিল, পরে ২৫টা করেছি।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘বোয়িংয়ের ব্যবসাটা কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সরকার করে না। বোয়িং কোম্পানি করে। আমরা ২৫টি বোয়িং কেনার জন্য অর্ডার দিয়েছি। এরকম অর্ডার ভারত দিয়েছে ১০০টা। ভিয়েতনাম দিয়েছে ১০০টা, ইন্দোনেশিয়া দিয়েছে ৫০টা। এ রকম বিভিন্ন দেশ দিয়েছে। বোয়িং কোম্পানির ক্যাপাসিটি অনুযায়ী এগুলো সরবরাহ করবে। সুতরাং এগুলো সরবরাহ করতে তারা অনেক সময় নেবে।’

কবে নাগাদ বাংলাদেশ উড়োজাহাজ পাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যবসার ধরন অনুযায়ী প্রথম আদেশ যারা দেয়, তাদেরটা আগে সরবরাহ করে। অথবা প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুযায়ী সরবরাহ করে।’

বোয়িং ও অন্যান্য পণ্য কেনার যুক্তি

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে থাকা বেশিরভাগ উড়োজাহাজই মার্কিন কোম্পানি বোয়িংয়ের। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ফ্রান্সের কোম্পানি এয়ারবাস থেকে ১০টি বড় উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সরকার বদলের পর সে উদ্যোগে তেমন কোনো গতি দেখা যায়নি। আগের সিদ্ধান্ত পাল্টে বাংলাদেশ যে ফের বোয়িং কেনার ক্রয়াদেশ দিয়ে ফেলেছে, সে কথা বাণিজ্য সচিবই প্রথম জানালেন।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষিপণ্য আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, আমরা গম ক্রয়ের জন্য তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছি। আমাদের সয়াবিন যারা আমদানি করে, ওইটা প্রাইভেট সেক্টরে, তারাও প্রচেষ্টা নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অধিক হারে সয়াবিন আমদানি করার চিন্তা করছে। সেজন্য তারা বসবে। আমরা যখন ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনায় বসব, তখন আমাদের ব্যক্তি খাতের যে ব্যবসায়ীরা, তারাও বসবেন ওই সমস্ত অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে। আশা করি যে, সেখানে তাদের মধ্যেও একটা সমঝোতা হবে।’

যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা কেনা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তুলা আমরা এখনও সেখান থেকে আমদানি করি। তিন বছর আগে আমরা প্রায় ১.৮ বিলিয়ন ডলরের তুলা আমদানি করতাম। ওটা কমে গেছে। তো সেটা যদি আবার বেড়ে সেই ১.৮ বিলিয়ন হয়, তাহলে আমাদের এক বিলিয়নের বেশি সেই তুলা খাতেই আমদানি বাড়ে। এভাবে যেটা বাড়বেÑ সেটাই আমাদের প্রজেকশন, আমাদের যে প্রত্যাশা, সেই প্রত্যাশা অনুযায়ী আমাদের আমদানি সেখান থেকে বাড়বে।’

ট্রাম্পের শুল্ক, তিন দিনের বৈঠক

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর গত ২ এপ্রিল শতাধিক দেশের ওপর চড়া হারে শুল্কারোপের ঘোষণা দেন। বাংলাদেশের ওপর তখন বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা আসে। এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে সম্পূরক শুল্ক পুনর্বিবেচনা করতে ডনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি পাঠান বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেয়ার কথা তুলে ধরে শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত তিন মাস স্থগিত রাখার অনুরোধ করা হয় সেখানে। তাতে রাজি হয়েছিলেন ট্রাম্প।

এই তিন মাস সময় ট্রাম্প মূলত দিয়েছিলেন আলোচনার জন্য। বাংলাদেশের তরফ থেকেও সে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ৬২৬টি পণ্যে শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল বাজেটে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। ৩৭ শতাংশের বদলে ট্রাম্প ৩৫ শতাংশ শুল্কের খড়গ নামিয়েছেন বাংলাদেশের ওপর। ১ আগস্ট থেকেই তা কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাতে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক খাত, কারণ যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, শুল্কের বিষয়ে বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আসার চেষ্টা করছে। সেজন্য আলোচনাও চলছে।

সেই দর কষাকষির অংশ হিসেবে পরবর্তী বৈঠক হবে আগামী ২৯, ৩০ ও ৩১ জুলাই। বাণিজ্য সচিব জানিয়েছেন, ওই বৈঠকে অংশ নিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আগামীকাল ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে রওনা হবেন। ইউএসটিআরের কার্যালয়ে ওই বৈঠকে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও উপস্থিত থাকবেন।

সচিব আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে শেষ ৩১ জুলাই আরেকটি বৈঠক হতে পারে এবং ১ আগস্টের মধ্যেই তার ফলাফল আসতে পারে।’

বাংলাদেশে বোয়িং

২০০৮ সালে বাংলাদেশ সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে একটি বড় চুক্তি করে। এই চুক্তির মাধ্যমে ১০টি নতুন বিমান (৪টি বোয়িং সাত-সাত-সাত-তিন-শো ই আর, ২টি সাত-তিন-সাত-আট-শো, এবং ৪টি সাত-আট-সাত-এইট ড্রিমলাইনার) অর্ডার করা হয়। এই বিমানগুলোর মোট মূল্য ছিল প্রায় ২ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বিমানগুলো ২০১১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে সরবরাহ শুরু হয় এবং ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সবই বিমান বহরে যুক্ত হয়। ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিমানের বহরে মোট ২১টি বিমান রয়েছেÑ যার মধ্যে ১৬টি বোয়িং নির্মিত এবং বাকি ৫টি কানাডার ড্যাশ এইট-কিউ ফোর-হান্ড্রেড। এগুলো সরকারি পর্যায়ে সরকার-থেকে-সরকার (জি-টু-জি) ভিত্তিতে কেনা হয়।

২০২৩ এবং ২০২৪ সালে সরকারি পরিকল্পনায় বোয়িং থেকে সরে গিয়ে ফরাসি নির্মাতা এয়ারবাস-এর দিকে ঝুঁকে পড়ে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সফরে জানানো হয়, বাংলাদেশ এয়ারবাস-এর কাছ থেকে ৮টি এ থ্রি-ফাইভ-জিরো যাত্রীবাহী বিমান এবং ২টি কার্গোবিমান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এ নিয়ে অনেক আলোচনা ও মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হয় যে এয়ারবাস-এর প্রস্তাব অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। তবে পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে ফের বোয়িং কেনার জন্য আলোচনা শুরু হলো।

ছবি

২৫টি বোয়িং কেনা হচ্ছে, জানে না বিমান বাংলাদেশ

২০টি ফায়ার স্টেশনসহ একনেকে ১২টি প্রকল্প অনুমোদন

ছবি

শেয়ারবাজারে বড় পতন

লুব্রিক্যান্ট শিল্পে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন

বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক চুক্তি করতে চায় ব্রাজিল

ছবি

ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনে প্রশাসক নিয়োগ

২৮৪০ কোটি টাকার প্রকল্প পেল ঢাবি

ছবি

তিন মডেলের মনিটরে মূল্যহ্রাস করলো ওয়ালটন

ছবি

বাড়ছে চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল, ব্যবসায় প্রভাব পড়ার শঙ্কা

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল বাড়ছে, উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা: ভোক্তা পর্যায়ে প্রভাবের আশঙ্কা

ছবি

পাঁচদিনে বাজার মূলধনে যোগ হলো ২০ হাজার কোটি টাকা

ছবি

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ধীর গতি

ছবি

বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এলে এক বছরে প্রবৃদ্ধি বাড়বে: এসঅ্যান্ডপি

পাল্টা শুল্কের প্রভাবে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমতে পারে: এডিবি

ছবি

এখন সরকার চাইলেই কর অব্যাহতি দিতে পারবে না: এনবিআর চেয়ারম্যান

ছবি

পাল্টা শুল্কে চাপ, কমতে পারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি: এডিবির পূর্বাভাস

ছবি

নারী কর্মকর্তাদের পোশাক নিয়ে নির্দেশনা ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’, বললেন বিশিষ্টজনেরা

বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার বেশি যুক্তরাষ্ট্রে, কম ভারতে

রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিতে মাঠপর্যায়ে নজরদারির নির্দেশনা এনবিআর চেয়ারম্যানের

ওয়ালটন তাকিওন ই-বাইকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাক

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩০ বিলিয়ন ডলার

ছবি

ইইউতে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ১৮ শতাংশ বেড়েছে

ছবি

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তথ্য দিতে হবে

রিজার্ভ নামলো ৩০ বিলিয়নের ঘরে, বিপিএম৬ অনুযায়ী ২৫ বিলিয়ন ডলার

ছবি

গভর্নরের ক্ষোভের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের ড্রেসকোড বাতিল

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ, দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্য করে কোনো কাজ করা হবে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা

দাম বাড়িয়ে ডলার কিনলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

জিআই পণ্য টাঙ্গাইলের আনারসে অধিক ফলন: ২০০ কোটি টাকা বাণিজ্যের সম্ভাবনা

এডিপি বাস্তবায়নের হার সাড়ে ৪ দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম

১০ বছরে ভারতের মোবাইল ফোন রপ্তানি বেড়েছে ১২৭ গুণ

২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় রপ্তানিতে বেপজার অবদান ১৭.০৩ শতাংশ

ছবি

সোনার দাম ভরি ছাড়ালো এক লাখ ৭৩ হাজার

জাপানের পণ্যে শুল্ক কমালো যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

৭ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কিনবে সরকার

২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন

ছবি

শেয়ারবাজারে বড় উত্থান, লেনদেন হাজার কোটি টাকার

tab

অর্থ-বাণিজ্য

মার্কিন শুল্কের চাপ কমাতে ২৫টি বোয়িং কিনবে সরকার

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা বড় অংকের শুল্ক কমানোর জন্য আলোচনার মধ্যেই মার্কিন কোম্পানি বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার ক্রয়াদেশ দেয়ার কথা জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম, সয়াবিন তেল ও তুলা কেনার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা, যাতে ডনাল্ড ট্রাম্প ওই ৩৫ শতাংশ শুল্কের বোঝা থেকে বাংলাদেশকে রেহাই দেয়।

রোববার (২৭ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ইমিডিয়েট কিছু এয়ারক্রাফট দরকার, আমাদের দুয়েক বছরের মধ্যে দরকার, হয়তো আমরা দুয়েক বছরের মধ্যে কিছু পাব। আমাদের বিমানের তো বহর বাড়াতে হবে। সেই পরিকল্পনা সরকারের বেশ আগে থেকেই ছিল। আমরা এ বছরে রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ ইস্যুতে আবার নতুন করে এই আদেশগুলো দিয়েছি, আগে ১৪টা ছিল, পরে ২৫টা করেছি।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘বোয়িংয়ের ব্যবসাটা কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সরকার করে না। বোয়িং কোম্পানি করে। আমরা ২৫টি বোয়িং কেনার জন্য অর্ডার দিয়েছি। এরকম অর্ডার ভারত দিয়েছে ১০০টা। ভিয়েতনাম দিয়েছে ১০০টা, ইন্দোনেশিয়া দিয়েছে ৫০টা। এ রকম বিভিন্ন দেশ দিয়েছে। বোয়িং কোম্পানির ক্যাপাসিটি অনুযায়ী এগুলো সরবরাহ করবে। সুতরাং এগুলো সরবরাহ করতে তারা অনেক সময় নেবে।’

কবে নাগাদ বাংলাদেশ উড়োজাহাজ পাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যবসার ধরন অনুযায়ী প্রথম আদেশ যারা দেয়, তাদেরটা আগে সরবরাহ করে। অথবা প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুযায়ী সরবরাহ করে।’

বোয়িং ও অন্যান্য পণ্য কেনার যুক্তি

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে থাকা বেশিরভাগ উড়োজাহাজই মার্কিন কোম্পানি বোয়িংয়ের। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ফ্রান্সের কোম্পানি এয়ারবাস থেকে ১০টি বড় উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সরকার বদলের পর সে উদ্যোগে তেমন কোনো গতি দেখা যায়নি। আগের সিদ্ধান্ত পাল্টে বাংলাদেশ যে ফের বোয়িং কেনার ক্রয়াদেশ দিয়ে ফেলেছে, সে কথা বাণিজ্য সচিবই প্রথম জানালেন।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষিপণ্য আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, আমরা গম ক্রয়ের জন্য তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছি। আমাদের সয়াবিন যারা আমদানি করে, ওইটা প্রাইভেট সেক্টরে, তারাও প্রচেষ্টা নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অধিক হারে সয়াবিন আমদানি করার চিন্তা করছে। সেজন্য তারা বসবে। আমরা যখন ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনায় বসব, তখন আমাদের ব্যক্তি খাতের যে ব্যবসায়ীরা, তারাও বসবেন ওই সমস্ত অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে। আশা করি যে, সেখানে তাদের মধ্যেও একটা সমঝোতা হবে।’

যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা কেনা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তুলা আমরা এখনও সেখান থেকে আমদানি করি। তিন বছর আগে আমরা প্রায় ১.৮ বিলিয়ন ডলরের তুলা আমদানি করতাম। ওটা কমে গেছে। তো সেটা যদি আবার বেড়ে সেই ১.৮ বিলিয়ন হয়, তাহলে আমাদের এক বিলিয়নের বেশি সেই তুলা খাতেই আমদানি বাড়ে। এভাবে যেটা বাড়বেÑ সেটাই আমাদের প্রজেকশন, আমাদের যে প্রত্যাশা, সেই প্রত্যাশা অনুযায়ী আমাদের আমদানি সেখান থেকে বাড়বে।’

ট্রাম্পের শুল্ক, তিন দিনের বৈঠক

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর গত ২ এপ্রিল শতাধিক দেশের ওপর চড়া হারে শুল্কারোপের ঘোষণা দেন। বাংলাদেশের ওপর তখন বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা আসে। এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে সম্পূরক শুল্ক পুনর্বিবেচনা করতে ডনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি পাঠান বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেয়ার কথা তুলে ধরে শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত তিন মাস স্থগিত রাখার অনুরোধ করা হয় সেখানে। তাতে রাজি হয়েছিলেন ট্রাম্প।

এই তিন মাস সময় ট্রাম্প মূলত দিয়েছিলেন আলোচনার জন্য। বাংলাদেশের তরফ থেকেও সে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ৬২৬টি পণ্যে শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল বাজেটে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। ৩৭ শতাংশের বদলে ট্রাম্প ৩৫ শতাংশ শুল্কের খড়গ নামিয়েছেন বাংলাদেশের ওপর। ১ আগস্ট থেকেই তা কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাতে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক খাত, কারণ যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, শুল্কের বিষয়ে বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আসার চেষ্টা করছে। সেজন্য আলোচনাও চলছে।

সেই দর কষাকষির অংশ হিসেবে পরবর্তী বৈঠক হবে আগামী ২৯, ৩০ ও ৩১ জুলাই। বাণিজ্য সচিব জানিয়েছেন, ওই বৈঠকে অংশ নিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আগামীকাল ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে রওনা হবেন। ইউএসটিআরের কার্যালয়ে ওই বৈঠকে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও উপস্থিত থাকবেন।

সচিব আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে শেষ ৩১ জুলাই আরেকটি বৈঠক হতে পারে এবং ১ আগস্টের মধ্যেই তার ফলাফল আসতে পারে।’

বাংলাদেশে বোয়িং

২০০৮ সালে বাংলাদেশ সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে একটি বড় চুক্তি করে। এই চুক্তির মাধ্যমে ১০টি নতুন বিমান (৪টি বোয়িং সাত-সাত-সাত-তিন-শো ই আর, ২টি সাত-তিন-সাত-আট-শো, এবং ৪টি সাত-আট-সাত-এইট ড্রিমলাইনার) অর্ডার করা হয়। এই বিমানগুলোর মোট মূল্য ছিল প্রায় ২ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বিমানগুলো ২০১১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে সরবরাহ শুরু হয় এবং ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সবই বিমান বহরে যুক্ত হয়। ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিমানের বহরে মোট ২১টি বিমান রয়েছেÑ যার মধ্যে ১৬টি বোয়িং নির্মিত এবং বাকি ৫টি কানাডার ড্যাশ এইট-কিউ ফোর-হান্ড্রেড। এগুলো সরকারি পর্যায়ে সরকার-থেকে-সরকার (জি-টু-জি) ভিত্তিতে কেনা হয়।

২০২৩ এবং ২০২৪ সালে সরকারি পরিকল্পনায় বোয়িং থেকে সরে গিয়ে ফরাসি নির্মাতা এয়ারবাস-এর দিকে ঝুঁকে পড়ে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সফরে জানানো হয়, বাংলাদেশ এয়ারবাস-এর কাছ থেকে ৮টি এ থ্রি-ফাইভ-জিরো যাত্রীবাহী বিমান এবং ২টি কার্গোবিমান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এ নিয়ে অনেক আলোচনা ও মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হয় যে এয়ারবাস-এর প্রস্তাব অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। তবে পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে ফের বোয়িং কেনার জন্য আলোচনা শুরু হলো।

back to top