বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কেরহার ২০ শতাংশের ঘোষণা এলেও দেশটির সঙ্গে এখনও কোনো চুক্তি হয়নি। চুক্তি হতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। চুক্তির খসড়া তৈরির কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর)। খসড়া শেষ করার পর তারা তা বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা দেখে ও মতামত দিয়ে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর দিন ঠিক করে যুক্তরাষ্ট্রে উভয়পক্ষের চুক্তি সই হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে এ কথা জানা গেছে।
ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হবে আগামী ৭ আগস্ট থেকে। পুরো বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি যৌথ বিবৃতি আসতে পারে শিগগির।
পাল্টা শুল্কেরহার কমিয়ে আনার আলোচনা শুরুর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গত জুনের মাঝামাঝি নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট (এনডিএ) করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য উপদেষ্টা এ বিষয়ে বলেন, ‘দুঃখজনক হলো, চুক্তির বিষয় কিছুটা প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল। এতে দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু নেই। আলোচনার মাধ্যমে স্বার্থবিরোধী বিষয়গুলো থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি সাপেক্ষে চুক্তিটি প্রকাশও করা হবে।’
এনডিএর পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে দুটি ব্যবসায়িক সংগঠন বা ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান যখন কোনো চুক্তি করে, তাতেও এনডিএ থাকাটা স্বাভাবিক বিষয়। নিজেদের মধ্যে এর গোপনীয়তা রক্ষার কথা থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত চুক্তি না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তা গোপন রাখা হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির নিয়ামক হিসেবে যখন নিজস্ব নিরাপত্তাকে বেছে নিয়েছে, তখন আলোচনার জন্য গোপনীয়তার শর্ত থাকাটাই অবশ্যম্ভাবী।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিলে সক্ষমতার ঘাটতি ঘটবে। তাতে বাণিজ্য চুক্তি করেও কোনো লাভ হবে না। স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদে যদি বাণিজ্য সক্ষমতা কমে যায় বা ক্ষুদ্র অর্থনীতির কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে তো কোনোভাবেই পালনযোগ্য নয় সেই চুক্তি।’
যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আলোচনায় বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি। কোম্পানিটি গত বছর ১২টি উড়োজাহাজ বানিয়েছে। এ চুক্তি অনুযায়ী তারা হয়তো ২০৩৭ সালে প্রথম উড়োজাহাজ সরবরাহ করতে পারবে। বাংলাদেশ বিমানের পরিচালনা সক্ষমতা না বাড়িয়ে উড়োজাহাজ কিনে তেমন লাভ হবে না। অন্তর্বর্তী সরকার সেই চেষ্টা করছে। বিমানের পক্ষে অতিরিক্ত এক কোটি যাত্রী পরিবহনের সুযোগ আছে। সেই বিবেচনায় ২৫টি বিমান খুব বেশি কিছু নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বরং কৃষিপণ্য নিয়ে ছিল, এমন মন্তব্য করে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশ বছরে ১ হাজার ৫০০ কোটি থেকে ২ হাজার কোটি ডলারের খাদ্যপণ্য আমদানি করে। যুক্তরাষ্ট্রও কৃষিপণ্যের বৃহৎ উৎপাদক।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টারকে আরও বলেছেন, ‘জ্বালানি ও কৃষিপণ্যের ভিত্তিতেই বাণিজ্যঘাটতি কমানোর কথা বলেছে বাংলাদেশ। এসব পণ্য এমনিতেই আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ৬০০ কোটি ডলারের মতো। তুলা, সয়াবিন, ভুট্টা, গমজাতীয় পণ্য আমদানি বাড়িয়ে ২০০ কোটি ডলার ঘাটতি কমানোর চেষ্টা চলছে।’
গত ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চহারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তখন বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। পরে গত ৯ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। এ সময় শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশকে আলোচনার সুযোগ দেয় ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্রের তিন মাসের সময়সীমা গত ৯ জুলাই শেষ হয়। এর আগের দিন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়ে ট্রাম্প জানান, বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। যদিও গত ৯ জুলাইয়ের পর পাল্টা শুল্ক কার্যকর করেনি মার্কিন প্রশাসন। শুল্কেরহার কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির জন্য ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন দেশকে সময় দেয়া হয়।
সেই সময়সীমা শেষে গত শুক্রবার থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। সে হিসাবে এখন থেকে বাংলাদেশকে বর্তমানের গড় ১৫ শতাংশ ও নতুন পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ, অর্থাৎ মোট ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে হবে। তবে এর মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট শুল্কহার কমানোর ঘোষণা দিল। কানাডা বাদে আগামী ৭ আগস্ট থেকে সব দেশে নতুন এই শুল্ক কার্যকর হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের পণ্যে আরোপ করা ২০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে।
রোববার, ০৩ আগস্ট ২০২৫
বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কেরহার ২০ শতাংশের ঘোষণা এলেও দেশটির সঙ্গে এখনও কোনো চুক্তি হয়নি। চুক্তি হতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। চুক্তির খসড়া তৈরির কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর)। খসড়া শেষ করার পর তারা তা বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা দেখে ও মতামত দিয়ে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর দিন ঠিক করে যুক্তরাষ্ট্রে উভয়পক্ষের চুক্তি সই হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে এ কথা জানা গেছে।
ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হবে আগামী ৭ আগস্ট থেকে। পুরো বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি যৌথ বিবৃতি আসতে পারে শিগগির।
পাল্টা শুল্কেরহার কমিয়ে আনার আলোচনা শুরুর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গত জুনের মাঝামাঝি নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট (এনডিএ) করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য উপদেষ্টা এ বিষয়ে বলেন, ‘দুঃখজনক হলো, চুক্তির বিষয় কিছুটা প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল। এতে দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু নেই। আলোচনার মাধ্যমে স্বার্থবিরোধী বিষয়গুলো থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি সাপেক্ষে চুক্তিটি প্রকাশও করা হবে।’
এনডিএর পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে দুটি ব্যবসায়িক সংগঠন বা ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান যখন কোনো চুক্তি করে, তাতেও এনডিএ থাকাটা স্বাভাবিক বিষয়। নিজেদের মধ্যে এর গোপনীয়তা রক্ষার কথা থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত চুক্তি না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তা গোপন রাখা হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির নিয়ামক হিসেবে যখন নিজস্ব নিরাপত্তাকে বেছে নিয়েছে, তখন আলোচনার জন্য গোপনীয়তার শর্ত থাকাটাই অবশ্যম্ভাবী।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিলে সক্ষমতার ঘাটতি ঘটবে। তাতে বাণিজ্য চুক্তি করেও কোনো লাভ হবে না। স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদে যদি বাণিজ্য সক্ষমতা কমে যায় বা ক্ষুদ্র অর্থনীতির কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে তো কোনোভাবেই পালনযোগ্য নয় সেই চুক্তি।’
যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আলোচনায় বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি। কোম্পানিটি গত বছর ১২টি উড়োজাহাজ বানিয়েছে। এ চুক্তি অনুযায়ী তারা হয়তো ২০৩৭ সালে প্রথম উড়োজাহাজ সরবরাহ করতে পারবে। বাংলাদেশ বিমানের পরিচালনা সক্ষমতা না বাড়িয়ে উড়োজাহাজ কিনে তেমন লাভ হবে না। অন্তর্বর্তী সরকার সেই চেষ্টা করছে। বিমানের পক্ষে অতিরিক্ত এক কোটি যাত্রী পরিবহনের সুযোগ আছে। সেই বিবেচনায় ২৫টি বিমান খুব বেশি কিছু নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বরং কৃষিপণ্য নিয়ে ছিল, এমন মন্তব্য করে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশ বছরে ১ হাজার ৫০০ কোটি থেকে ২ হাজার কোটি ডলারের খাদ্যপণ্য আমদানি করে। যুক্তরাষ্ট্রও কৃষিপণ্যের বৃহৎ উৎপাদক।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টারকে আরও বলেছেন, ‘জ্বালানি ও কৃষিপণ্যের ভিত্তিতেই বাণিজ্যঘাটতি কমানোর কথা বলেছে বাংলাদেশ। এসব পণ্য এমনিতেই আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ৬০০ কোটি ডলারের মতো। তুলা, সয়াবিন, ভুট্টা, গমজাতীয় পণ্য আমদানি বাড়িয়ে ২০০ কোটি ডলার ঘাটতি কমানোর চেষ্টা চলছে।’
গত ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চহারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তখন বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। পরে গত ৯ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। এ সময় শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশকে আলোচনার সুযোগ দেয় ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্রের তিন মাসের সময়সীমা গত ৯ জুলাই শেষ হয়। এর আগের দিন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়ে ট্রাম্প জানান, বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। যদিও গত ৯ জুলাইয়ের পর পাল্টা শুল্ক কার্যকর করেনি মার্কিন প্রশাসন। শুল্কেরহার কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির জন্য ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন দেশকে সময় দেয়া হয়।
সেই সময়সীমা শেষে গত শুক্রবার থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। সে হিসাবে এখন থেকে বাংলাদেশকে বর্তমানের গড় ১৫ শতাংশ ও নতুন পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ, অর্থাৎ মোট ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে হবে। তবে এর মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট শুল্কহার কমানোর ঘোষণা দিল। কানাডা বাদে আগামী ৭ আগস্ট থেকে সব দেশে নতুন এই শুল্ক কার্যকর হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের পণ্যে আরোপ করা ২০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে।