alt

অর্থ-বাণিজ্য

অর্থ বছর শেষে লেনদেন ভারসাম্যে বিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : বুধবার, ০৬ আগস্ট ২০২৫

শেষ পর্যন্ত বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট-বিওপি) উদ্বৃত্ত নিয়ে শেষ হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থ বছর। এই অর্থ বছরের প্রায় পুরোটা সময় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে ঘাটতি ছিল। অর্থ বছরের শেষ মাস জুনের শেষ দিকে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ ও এডিবিসহ কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থার প্রায় পৌনে ৪ বিলিয়ন (৪০০ কোটি) ডলার বাজেটে সহায়তার ঋণ এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের উল্লম্ফন ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির কারণে প্রায় ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলারের উদ্বৃত্তের মধ্য দিয়ে অর্থ বছর শেষ হয়েছে।

সেই সঙ্গে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালান্স) ও আর্থিক হিসাবেও (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) বড় উদ্বৃত্ত ধরে রেখে গত অর্থ বছর শেষ করেছে বাংলাদেশ। আর এর মধ্য দিয়ে করোনা মহামারীর পর থেকে গত কয়েক বছর ধরে সংকটের মধ্যে থাকা অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকার। তার সুফলও মিলেছিল। আমদানি ব্যয় বেশ কমে এসেছিল। তাতে বাণিজ্য ঘাটতি বেশ খানিকটা কমে শেষ হয়েছিল ২০২৩-২৪ অর্থ বছর। তবে ব্যালান্স অব পেমেন্টে বড় ঘাটতি ছিল। গত এক বছর ধরে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারও সেই একই পথ অনুসরণ করে চলেছে। এর মধ্যে রপ্তানি আয়ে বেশ ভালো গতি এসেছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতিতে নিম্মমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।

অন্যদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়ে উল্লম্ফন অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবিসহ অন্যান্য দাতা সংস্থার মোটা অঙ্কের বাজেট সহায়তার ঋণে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও সন্তোষজনক অবস্থানে এসেছে। এসবের ফলে বাজারে ডলার সরবরাহ বেড়েছে; বেশ কিছুদিন ডলারের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এমনকি টাকা-ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরও বাজার স্বাভাবিক রয়েছে।

মাঝে কয়েকদিন ডলারের দর কমলেও বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ করে নিলামের মাধ্যমে বেশি দরে ডলার কেনায় বাজার আবার স্থিতিশীল হয়েছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (ব্যালান্স অব পেমেন্ট- বিওপি) বড় ঘাটতি থেকে উদ্বৃত্তের মধ্য অর্থ বছর শেষ হয়েছে।

৩০ জুন শেষ হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থ বছর। গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক এই আর্থিক বছরের (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন) ব্যালান্স অব পেমেন্টের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, গত অর্থ বছরে ব্যালান্স অব পেমেন্টে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৯৮ কোটি (প্রায় ১ বিলিয়ন) ডলার। অথচ ১১ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে ৪৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) এই সূচকে ১৫ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বর শেষে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যালান্স অব পেমেন্টে ৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ঘাটতি দেখা দেয়। ফেব্রুয়ারি শেষে অর্থাৎ আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এই ঘাটতি ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন (১৩০ কোটি) ডলারে ওঠে।

মার্চ শেষে অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়ে সেই ঘাটতি বেশ খানিকটা কমে ৬৫ কোটি ৯০ লাখ ডলারে নেমে আসে। ১০ মাস শেষে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিলে ব্যালান্স অব পেমেন্টে ঘাটতি ফের বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ১৩৪ কোটি ২০ লাখ (১.৩৪ বিলিয়ন) ডলারে ওঠে। ব্যালান্স অব পেমেন্টে ৬৫১ কোটি (৬.৫১ বিলিয়ন) ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২৩-২৪ অর্থ বছর। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ঘাটতি ছিল এক হাজার ১৬৩ কোটি (১১.৬৩ বিলিয়ন) ডলার। ৯ বছর পর গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) ১ বিলিয়ন ডলারের মতো উদ্বৃত্ত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চলতি হিসাবে ২৫০ (২.৫০ বিলিয়ন) কোটি ডলারের মতো উদ্বৃত্ত ছিল।

সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালান্স) ৩২৯ কোটি (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শেষ হয়েছে। ৪৩০ কোটি (৪.৩০ বিলিয়ন) ডলারের বিশাল ঘাটতি নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থ বছর শেষ হয়েছিল। সংকট কাটিয়ে বিদেশের সঙ্গে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত অবস্থায় এসেছে বাংলাদেশ। চার বছর পর সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি থেকে বড় উদ্বৃত্ত হয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থ বছর শেষে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। তবে ঘাটতি নিয়ে শুরু হয় ২০২৪-২৫ অর্থ বছর। অর্থ বছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এই সূচকে ৭৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত দেখা দেয়। নয় মাস শেষে (জুলাই-মার্চ) সেই উদ্বৃত্ত বেড়ে ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ১৩০ কোটি ৭০ লাখ (১.৩১ বিলিয়ন) ডলারে দাঁড়ায়। দশ মাস শেষে (জুলাই-এপ্রিল) তা আরও বেড়ে ১৪৯ কোটি (১.৪৯ বিলিয়ন) ওঠে। তবে ১১ মাস শেষে অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে তা কমে ২৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারে নেমে আসে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ ও এডিবির বাজেট সহায়তার ঋণে শেষ পর্যন্ত আর্থিক হিসাবে ৩২০ কোটি (৩.২০ বিলিয়ন) ডলার উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শেষ হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বাণিজ্য ঘাটতি ৯ শতাংশ কমে দুই হাজার ৪৫ কোটি (২০.৪৫ বিলিয়ন) ডলারে নেমেছে। আগের অর্থ বছরে (২০২৩-২৪) বাণিজ্য ঘাটতি ছিল দুই হাজার ২৪৩ কোটি (২২.৪৩ বিলিয়ন) ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৭৩৮ কোটি (২৭.৩৮ বিলিয়ন) ডলার। আমদানির তুলনায় রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে বাণিজ ঘাটতি কমেছে।

রেমিটেন্সে ভর করে বেশ কিছুদিন ধরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকা অর্থনীতির আরেক গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও সন্তোষজনক অবস্থায় অবস্থান করছে। এমনকি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি বিল পরিশোধের পরও বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করে। গ্রস বা মোট হিসাবে ২৯ বিলিয়ন ডলারের উপরে ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।

গত ৮ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে আকুর মে-জুন মেয়াদের ২ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করে। এরপর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। গ্রস হিসাবে নামে ২৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলারে।

ছবি

এনবিআর দুই ভাগঃ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি হতে পারে, জানালেন অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ফাউন্ডেশনের বোর্ড সভা

ছবি

প্রবাসীদের দ্রুত রেমিট্যান্স সেবা দিতে বাংলাদেশে চালু হলো না’লা

ছবি

ইলিশ চেয়ে ভারতের ব্যবসায়ীদের অনুরোধ বিবেচনাধীন

ছবি

শেয়ারবাজারে ছোট বিনিয়োগকারী কমছে, বড় বিনিয়োগকারী বাড়ছে

ছবি

ব্যবসায় আস্থা ও গতি ফেরানো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

বাংলালিংক ও বিকাশের অংশীদারত্ব

ছবি

এবি ব্যাংক-এর ৪৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

ছবি

ব্যাংকের পর্ষদ সভার যে কোনো দ্বিমত, পর্যবেক্ষণ লিপিবদ্ধ করতে হবে কার্যবিবরণীতে

ছবি

ব্যাংকে পদোন্নতির জন্য তদবির করলে ‘অসদাচরণ’ হিসেবে দেখবে সরকার

ছবি

প্রথম দিনেই ১০ হাজার করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিয়েছেন

ছবি

গুটিকয় লোক আর্থিক খাত ধ্বংস করেছে: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানি ২৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ

ছবি

বিকাশে পরিশোধ করা যাবে একাদশ শ্রেণী, কারিগরিতে ভর্তির আবেদন ও রেজিস্ট্রেশন ফি

ছবি

প্রথম দিনেই ১০ হাজারের বেশি ই-রিটার্ন দাখিল

ছবি

আটাবের কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিল, প্রশাসক নিয়োগ দিলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

ছবি

৫ আগস্ট শোভাযাত্রা: ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা

ছবি

অনেক কনিষ্ঠ অর্থনীতিবিদের সরকারের ভালো কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

রিটার্ন ছাড়া ১০ লাখ টাকার বেশি আমানত ও সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না

তারুণ্যের উৎসবে যোগ দিতে সব ব্যাংককে নির্দেশ

ছবি

মঙ্গলবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ

ছবি

রেমিটেন্সে ২৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শুরু নতুন অর্থ বছর

ছবি

বাজারে স্যামসাংয়ের ভিশন এআই প্রযুক্তির নতুন সিরিজের টিভি

ছবি

ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তিতেও লাগবে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র বাধ্যতামূলক

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি হতে পারে চলতি মাসেই

ছবি

অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা প্রণয়নের দাবি আটাবের

ছবি

ডিএসইতে লেনদেন এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ

ছবি

এক হাজার ওষুধ অনুমোদনের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন ওষুধশিল্পের ব্যবসায়ীরা

ছবি

সব করদাতার জন্য অনলাইনে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক

বাংলাদেশের সঙ্গে দ্রুত অগ্রাধিকার বাণিজ্যচুক্তি হবে: নেপালের রাষ্ট্রদূত

ছবি

বাংলাদেশকে ১৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে এডিবি

ছবি

ডিসিসিআই কর্মশালায় কোম্পানি আইন সংস্কারের তাগিদ

ছবি

বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করল ভিভোর ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন ওয়াই৪০০

ছবি

সাশ্রয়ী ও দ্রুত রেমিট্যান্স সার্ভিস নিয়ে বাংলাদেশে নালা

ছবি

অগাস্টে অটোগ্যাসের দামও কমেছে, কার্যকর সন্ধ্যা ৬টা থেকে

ছবি

ব্যক্তি করদাতাদের জন্য অনলাইন রিটার্ন দাখিল এখন বাধ্যতামূলক

tab

অর্থ-বাণিজ্য

অর্থ বছর শেষে লেনদেন ভারসাম্যে বিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বুধবার, ০৬ আগস্ট ২০২৫

শেষ পর্যন্ত বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট-বিওপি) উদ্বৃত্ত নিয়ে শেষ হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থ বছর। এই অর্থ বছরের প্রায় পুরোটা সময় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে ঘাটতি ছিল। অর্থ বছরের শেষ মাস জুনের শেষ দিকে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ ও এডিবিসহ কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থার প্রায় পৌনে ৪ বিলিয়ন (৪০০ কোটি) ডলার বাজেটে সহায়তার ঋণ এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের উল্লম্ফন ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির কারণে প্রায় ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলারের উদ্বৃত্তের মধ্য দিয়ে অর্থ বছর শেষ হয়েছে।

সেই সঙ্গে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালান্স) ও আর্থিক হিসাবেও (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) বড় উদ্বৃত্ত ধরে রেখে গত অর্থ বছর শেষ করেছে বাংলাদেশ। আর এর মধ্য দিয়ে করোনা মহামারীর পর থেকে গত কয়েক বছর ধরে সংকটের মধ্যে থাকা অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকার। তার সুফলও মিলেছিল। আমদানি ব্যয় বেশ কমে এসেছিল। তাতে বাণিজ্য ঘাটতি বেশ খানিকটা কমে শেষ হয়েছিল ২০২৩-২৪ অর্থ বছর। তবে ব্যালান্স অব পেমেন্টে বড় ঘাটতি ছিল। গত এক বছর ধরে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারও সেই একই পথ অনুসরণ করে চলেছে। এর মধ্যে রপ্তানি আয়ে বেশ ভালো গতি এসেছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতিতে নিম্মমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।

অন্যদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়ে উল্লম্ফন অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবিসহ অন্যান্য দাতা সংস্থার মোটা অঙ্কের বাজেট সহায়তার ঋণে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও সন্তোষজনক অবস্থানে এসেছে। এসবের ফলে বাজারে ডলার সরবরাহ বেড়েছে; বেশ কিছুদিন ডলারের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এমনকি টাকা-ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরও বাজার স্বাভাবিক রয়েছে।

মাঝে কয়েকদিন ডলারের দর কমলেও বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ করে নিলামের মাধ্যমে বেশি দরে ডলার কেনায় বাজার আবার স্থিতিশীল হয়েছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (ব্যালান্স অব পেমেন্ট- বিওপি) বড় ঘাটতি থেকে উদ্বৃত্তের মধ্য অর্থ বছর শেষ হয়েছে।

৩০ জুন শেষ হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থ বছর। গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক এই আর্থিক বছরের (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন) ব্যালান্স অব পেমেন্টের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, গত অর্থ বছরে ব্যালান্স অব পেমেন্টে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৯৮ কোটি (প্রায় ১ বিলিয়ন) ডলার। অথচ ১১ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে ৪৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) এই সূচকে ১৫ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বর শেষে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যালান্স অব পেমেন্টে ৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ঘাটতি দেখা দেয়। ফেব্রুয়ারি শেষে অর্থাৎ আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এই ঘাটতি ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন (১৩০ কোটি) ডলারে ওঠে।

মার্চ শেষে অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়ে সেই ঘাটতি বেশ খানিকটা কমে ৬৫ কোটি ৯০ লাখ ডলারে নেমে আসে। ১০ মাস শেষে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিলে ব্যালান্স অব পেমেন্টে ঘাটতি ফের বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ১৩৪ কোটি ২০ লাখ (১.৩৪ বিলিয়ন) ডলারে ওঠে। ব্যালান্স অব পেমেন্টে ৬৫১ কোটি (৬.৫১ বিলিয়ন) ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২৩-২৪ অর্থ বছর। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ঘাটতি ছিল এক হাজার ১৬৩ কোটি (১১.৬৩ বিলিয়ন) ডলার। ৯ বছর পর গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) ১ বিলিয়ন ডলারের মতো উদ্বৃত্ত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চলতি হিসাবে ২৫০ (২.৫০ বিলিয়ন) কোটি ডলারের মতো উদ্বৃত্ত ছিল।

সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালান্স) ৩২৯ কোটি (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শেষ হয়েছে। ৪৩০ কোটি (৪.৩০ বিলিয়ন) ডলারের বিশাল ঘাটতি নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থ বছর শেষ হয়েছিল। সংকট কাটিয়ে বিদেশের সঙ্গে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত অবস্থায় এসেছে বাংলাদেশ। চার বছর পর সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি থেকে বড় উদ্বৃত্ত হয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থ বছর শেষে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। তবে ঘাটতি নিয়ে শুরু হয় ২০২৪-২৫ অর্থ বছর। অর্থ বছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এই সূচকে ৭৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত দেখা দেয়। নয় মাস শেষে (জুলাই-মার্চ) সেই উদ্বৃত্ত বেড়ে ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ১৩০ কোটি ৭০ লাখ (১.৩১ বিলিয়ন) ডলারে দাঁড়ায়। দশ মাস শেষে (জুলাই-এপ্রিল) তা আরও বেড়ে ১৪৯ কোটি (১.৪৯ বিলিয়ন) ওঠে। তবে ১১ মাস শেষে অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে তা কমে ২৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারে নেমে আসে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ ও এডিবির বাজেট সহায়তার ঋণে শেষ পর্যন্ত আর্থিক হিসাবে ৩২০ কোটি (৩.২০ বিলিয়ন) ডলার উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শেষ হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বাণিজ্য ঘাটতি ৯ শতাংশ কমে দুই হাজার ৪৫ কোটি (২০.৪৫ বিলিয়ন) ডলারে নেমেছে। আগের অর্থ বছরে (২০২৩-২৪) বাণিজ্য ঘাটতি ছিল দুই হাজার ২৪৩ কোটি (২২.৪৩ বিলিয়ন) ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৭৩৮ কোটি (২৭.৩৮ বিলিয়ন) ডলার। আমদানির তুলনায় রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে বাণিজ ঘাটতি কমেছে।

রেমিটেন্সে ভর করে বেশ কিছুদিন ধরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকা অর্থনীতির আরেক গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও সন্তোষজনক অবস্থায় অবস্থান করছে। এমনকি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি বিল পরিশোধের পরও বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করে। গ্রস বা মোট হিসাবে ২৯ বিলিয়ন ডলারের উপরে ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার; গ্রস হিসাবে ছিল ২৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।

গত ৮ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে আকুর মে-জুন মেয়াদের ২ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করে। এরপর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। গ্রস হিসাবে নামে ২৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলারে।

back to top