alt

অর্থ-বাণিজ্য

পাল্টা শুল্ক ও এনবিআরে কর্মবিরতির কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১২ শতাংশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : শনিবার, ০৯ আগস্ট ২০২৫

বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিক এপ্রিল-জুনে দেশ থেকে ৯১১ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি তার আগের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ কম। তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিকে দায়ী করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে।

তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, গত এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে তৈরি পোশাক খাত বেশ কিছু গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হয়। এর মধ্যে ছিল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন, যা ওই প্রান্তিকের রপ্তানি দক্ষতাকে দুর্বল করে দেয়। নীতিগত পরিবর্তনের মধ্যে অন্যতম ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ (পরে কমে হয়েছে ২০ শতাংশ) পাল্টা শুল্ক আরোপ। তখন পর্যন্ত সেটি কার্যকর না হলেও তা ক্রয়াদেশ স্থগিত ও অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিয়েছিল।

মার্কিন প্রশাসন গত ৩১ জুলাই অন্য অনেক দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশি পণ্যেও পাল্টা শুল্কের হার সংশোধন করে। এবারে বাংলাদেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক কমে ২০ শতাংশ হয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। কারণ, এ বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের মূল প্রতিযোগী ভিয়েতনামের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতের ওপর পাল্টা শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। আর চীনের শুল্ক এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধর্মঘটের কারণে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হয়, যা পণ্যের চালান প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। সময়মতো পণ্য পাঠানোকে উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত করে। এদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিকূল পরিস্থিতি, দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন ব্যয় ও রপ্তানি বাজারের বৈচিত্র্যহীনতা ইত্যাদি কারণে রপ্তানির গতি শ্লথ হয়ে পড়ে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধর্মঘটের কারণে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হয়, যা পণ্যের চালান প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। এতে পণ্য পাঠানো ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। আবার বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিকূল পরিস্থিতি, উৎপাদন ব্যয় ও বাজারের বৈচিত্র্যহীনতা রপ্তানির গতি শ্লথ করে দেয়।

গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে প্রায় দুই মাস আন্দোলন করেন। ২৮ ও ২৯ জুন সারা দেশে কাজ বন্ধ করে দেন তারা। এরপর ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। এরপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে এনবিআর কর্তৃপক্ষ। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচি পালনের কারণে যে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণে আন্তমন্ত্রণালয়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন কিছুটা কমেছে। এই প্রান্তিকে দেশ থেকে মোট ৯১১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে ৩৯৪ কোটি ডলারের কাঁচামাল আমদানি হয়। তার মানে মূল্য সংযোজন দাঁড়িয়েছে ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তার আগের প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন ছিল ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, পোশাক রপ্তানি থেকে তুলা, সুতা, কাপড় ও সরঞ্জামের আমদানি ব্যয় বাদ দিয়ে নিট রপ্তানি বা মূল্য সংযোজন হিসাব করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার অনেকে প্রকৃত রপ্তানি আয়কে পোশাক খাতের মূল্য সংযোজন হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন।

গত ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি বাড়িয়ে দেখিয়েছিল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তখন রপ্তানির পাশাপাশি মূল্য সংযোজনও কৃত্রিমভাবে বেড়ে গিয়েছিল। পরিসংখ্যানের গরমিলের বিষয়টি গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সামনে আনে। এরপর রপ্তানির পরিসংখ্যান সংশোধন হয়। তাতে গত দুই অর্থবছরের সাত প্রান্তিকে পোশাক খাতে মূল্য সংযোজন কমে যায়।

রপ্তানি আয় বাড়িয়ে দেখানোর কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন একলাফে ৫৯ থেকে বেড়ে ৬৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। তারপরের পাঁচ প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন আরও বেড়ে ৭০ থেকে ৭২ শতাংশের মধ্যে ছিল। যদিও সংশোধনের পর দেখা যায়, ওই অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ ও এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন কমে ৬২ শতাংশে নেমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চার প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন কমে সাড়ে ৫৭ থেকে সাড়ে ৬১ শতাংশ হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বরে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন ছিল ৫৭ শতাংশ। পরের প্রান্তিকে, অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বরে সেটি বেড়ে ৬১ শতাংশে উন্নীত হয়। তারপরের দুই প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন কমে হয় যথাক্রমে ৫৮ দশমিক ৯০ ও ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

ছবি

টাকা ছাপানো-বণ্টনে বছরে খরচ ২০ হাজার কোটি, ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ানোর আহ্বান গভর্নরের

ছবি

‘শূন্য’ রিটার্ন দিলে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড: এনবিআর

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে ব্রাজিল থেকে আসা কন্টেইনারে তেজস্ক্রিয়া

ছবি

গত তিন বছর সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের চেয়ে সুদ ও আসল পরিশোধের পরিমাণ বেশি

ছবি

টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু রবিবার, ৮০ টাকায় মিলবে চিনি

ছবি

সপ্তাহজুড়ে দরপতনের পরও বাজার মূলধন বেড়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা

ছবি

ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাবে ভারতের শেয়ারবাজারে বড় ধস

ছবি

সুদবিহীন কিস্তিতে স্মার্টফোন কেনার সুযোগ আনল গ্রামীণফোন ও ইবিএল

ছবি

দাম বেড়েছে আলু ছাড়া সব নিত্যপণ্যের

ছবি

সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে ভিভো ওয়াই৪০০ ঝড়

ছবি

এনবিআরের আন্দোলনে ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি জানতে চেয়েছে সরকার

ছবি

বিনিয়োগ করতে আগ্রহী জাপানি কোম্পানি, সচল হতে পারে বেক্সিমকো টেক্সটাইল

ছবি

৫০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক: ভারতে তৈরী পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিত করছে মার্কিন ব্র্যান্ড

ছবি

পুঁজিবাজারের টেকসই সংস্কারে কারিগরি সহযোগিতা করতে চায় এডিবি

ছবি

এবার সেমিকন্ডাক্টরে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প

ছবি

চার মাস পর মূল্যস্ফীতি আবার বাড়লো

ছবি

ছাতক সিমেন্ট কারখানার ভারতীয় অংশের রোপওয়ে নির্মাণ কাজের নীতিগত অনুমোদন

ছবি

সিকিউরিটিজ বন্ধক, অবমুক্তকরণ ও বাজেয়াপ্তকরণ নিয়ে ডিএসই’র কর্মশালা

ছবি

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতির ‘সমন্বিত’ নীতিমালা

ছবি

৭০ হাজার টন সার কেনার অনুমোদন

ছবি

ডেল্টা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানির বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ছবি

ট্রাম্পের শুল্ক থেকে শতভাগ ‘ছাড়’ পাচ্ছে টিএসএমসি

ছবি

তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে সোনালী ব্যাংকের বৃক্ষরোপণ

ছবি

তারল্য সহায়তার দেড় হাজার কোটি টাকা ‘ফেরত দিয়েছে’ ইসলামী ব্যাংক

ছবি

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো

ছবি

জাতীয় সঞ্চয় অধিপ্ততরের রিয়াজুল ইসলাম সাময়িক বরখাস্ত

ছবি

প্রাইম ব্যাংক ও ইএসডিও-এর মধ্যে পে-রোল ব্যাংকিং চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি

দেশের অর্থনীতি ধ্বংসপ্রায় অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

জুলাইয়ে আবারও বাড়ল মূল্যস্ফীতি

ছবি

এনবিআর দুই ভাগঃ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি হতে পারে, জানালেন অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ফাউন্ডেশনের বোর্ড সভা

ছবি

প্রবাসীদের দ্রুত রেমিট্যান্স সেবা দিতে বাংলাদেশে চালু হলো না’লা

ছবি

ইলিশ চেয়ে ভারতের ব্যবসায়ীদের অনুরোধ বিবেচনাধীন

ছবি

শেয়ারবাজারে ছোট বিনিয়োগকারী কমছে, বড় বিনিয়োগকারী বাড়ছে

ছবি

ব্যবসায় আস্থা ও গতি ফেরানো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

অর্থ বছর শেষে লেনদেন ভারসাম্যে বিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত

tab

অর্থ-বাণিজ্য

পাল্টা শুল্ক ও এনবিআরে কর্মবিরতির কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১২ শতাংশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

শনিবার, ০৯ আগস্ট ২০২৫

বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিক এপ্রিল-জুনে দেশ থেকে ৯১১ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি তার আগের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ কম। তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিকে দায়ী করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে।

তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, গত এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে তৈরি পোশাক খাত বেশ কিছু গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হয়। এর মধ্যে ছিল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন, যা ওই প্রান্তিকের রপ্তানি দক্ষতাকে দুর্বল করে দেয়। নীতিগত পরিবর্তনের মধ্যে অন্যতম ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ (পরে কমে হয়েছে ২০ শতাংশ) পাল্টা শুল্ক আরোপ। তখন পর্যন্ত সেটি কার্যকর না হলেও তা ক্রয়াদেশ স্থগিত ও অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিয়েছিল।

মার্কিন প্রশাসন গত ৩১ জুলাই অন্য অনেক দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশি পণ্যেও পাল্টা শুল্কের হার সংশোধন করে। এবারে বাংলাদেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক কমে ২০ শতাংশ হয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। কারণ, এ বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের মূল প্রতিযোগী ভিয়েতনামের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতের ওপর পাল্টা শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। আর চীনের শুল্ক এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধর্মঘটের কারণে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হয়, যা পণ্যের চালান প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। সময়মতো পণ্য পাঠানোকে উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত করে। এদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিকূল পরিস্থিতি, দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন ব্যয় ও রপ্তানি বাজারের বৈচিত্র্যহীনতা ইত্যাদি কারণে রপ্তানির গতি শ্লথ হয়ে পড়ে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধর্মঘটের কারণে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হয়, যা পণ্যের চালান প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। এতে পণ্য পাঠানো ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। আবার বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিকূল পরিস্থিতি, উৎপাদন ব্যয় ও বাজারের বৈচিত্র্যহীনতা রপ্তানির গতি শ্লথ করে দেয়।

গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে প্রায় দুই মাস আন্দোলন করেন। ২৮ ও ২৯ জুন সারা দেশে কাজ বন্ধ করে দেন তারা। এরপর ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। এরপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে এনবিআর কর্তৃপক্ষ। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচি পালনের কারণে যে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণে আন্তমন্ত্রণালয়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন কিছুটা কমেছে। এই প্রান্তিকে দেশ থেকে মোট ৯১১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে ৩৯৪ কোটি ডলারের কাঁচামাল আমদানি হয়। তার মানে মূল্য সংযোজন দাঁড়িয়েছে ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তার আগের প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন ছিল ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, পোশাক রপ্তানি থেকে তুলা, সুতা, কাপড় ও সরঞ্জামের আমদানি ব্যয় বাদ দিয়ে নিট রপ্তানি বা মূল্য সংযোজন হিসাব করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার অনেকে প্রকৃত রপ্তানি আয়কে পোশাক খাতের মূল্য সংযোজন হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন।

গত ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি বাড়িয়ে দেখিয়েছিল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তখন রপ্তানির পাশাপাশি মূল্য সংযোজনও কৃত্রিমভাবে বেড়ে গিয়েছিল। পরিসংখ্যানের গরমিলের বিষয়টি গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সামনে আনে। এরপর রপ্তানির পরিসংখ্যান সংশোধন হয়। তাতে গত দুই অর্থবছরের সাত প্রান্তিকে পোশাক খাতে মূল্য সংযোজন কমে যায়।

রপ্তানি আয় বাড়িয়ে দেখানোর কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন একলাফে ৫৯ থেকে বেড়ে ৬৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। তারপরের পাঁচ প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন আরও বেড়ে ৭০ থেকে ৭২ শতাংশের মধ্যে ছিল। যদিও সংশোধনের পর দেখা যায়, ওই অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ ও এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন কমে ৬২ শতাংশে নেমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চার প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন কমে সাড়ে ৫৭ থেকে সাড়ে ৬১ শতাংশ হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বরে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন ছিল ৫৭ শতাংশ। পরের প্রান্তিকে, অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বরে সেটি বেড়ে ৬১ শতাংশে উন্নীত হয়। তারপরের দুই প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন কমে হয় যথাক্রমে ৫৮ দশমিক ৯০ ও ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

back to top