দেশের সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা রাখে ব্যাংকে। তারপর নিরাপত্তা ও অধিক মুনাফার আশায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ বলা হয়ে থাকে। গত অর্থ বছরে সঞ্চয়পত্রে নতুন বিনিয়োগের চেয়ে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পরিমাণ ৬ হাজার ৬৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বেশি ছিল।
অর্থাৎ ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৬৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ঋণাত্মক। এর মানে হচ্ছে, গত অর্থ বছরে সঞ্চয়পত্র থেকে কোনও ঋণ পায়নি সরকার। উল্টো এই অর্থ সরকারের কোষাগার থেকে অথবা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করতে হয়েছে। শুধু গত অর্থ বছর নয়, গত তিন অর্থ বছর ধরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে কোনও ঋণ পাচ্ছে না সরকার। অথচ বাজেটে এ খাতে মোটা অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রেখে এসেছে সরকার।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের গড়পড়তা আয় কমে গেছে। ফলে সঞ্চয় করতে পারছে না। অন্যদিকে সুদের হার হ্রাস ও নানা কড়াকড়ির কারণেও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমে গেছে। দেশের সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা রাখে ব্যাংকে। তারপর নিরাপত্তা ও অধিক মুনাফার আশায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ বলা হয়ে থাকে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সবশেষ সঞ্চয়পত্র বিক্রির যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের শেষ মাস জুনে সঞ্চয়পত্রের নিট বা প্রকৃত বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৬৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা ঋণাত্মক। আগের মাস মে মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৩৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এপ্রিলে নিট বা প্রকৃত বিক্রির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। আগের মাস মার্চে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
এর আগে টানা পাঁচ মাস (অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ছিল ঋণাত্মক বা নেগেটিভ। অর্থাৎ ওই পাঁচ মাসে যতো টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করেছে সরকার। এই অর্থ সরকারের কোষাগার থেকে অথবা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করা হয়েছে।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের অক্টোবরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২২৫ কোটি টাকা ঋণাত্মক। তেমনি নভেম্বরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা ঋণাত্মক। ডিসেম্বরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ঋণাত্মক। চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৭৬৯ কোটি ঋণাত্মক। ফেব্রুয়ারিতে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা ঋণাত্মক।
সব মিলিয়ে গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে সঞ্চয়পত্রে নিট বা প্রকৃত বিক্রর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা নেগেটিভ বা ঋণাত্মক। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ১২৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ঋণাত্মক। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ছিল ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা ঋণাত্মক। ২০২১-২২ অর্থ বছরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা ধনাত্মক বা পজিটিভ। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ছিল ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা ধনাত্মক।
বিক্রি কমে যাওয়ায় চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ বা মুনাফার হার বাড়ানো হয়। মেয়াদ পূরণ সাপেক্ষে সঞ্চয়পত্রের ধরন অনুসারে এ হার বেড়ে হয় সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ১২ শতাংশ করে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু ছয় মাস না যেতেই সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ফের কমিয়েছে সরকার। ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রথম দিন ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন সুদহার হবে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল গ্রাহকদের পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাহলে বলা যায়, গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে কোনও ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ নিতে পারেনি। উল্টো ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা কোষাগার থেকে গ্রাহকদের সুদ-আসল বাবদ দিতে হয়েছে। গত অর্থ বছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকার নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বিক্রিতে নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকায় সংশোধিত বাজেটে সেটি কমিয়ে ১৪ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
আগের দুই অর্থ বছরেও সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক ধারায় ছিল। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিক্রি ধারাবাহিক কমতে থাকায় সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৭ হাজার ৩১০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। তবে পুরো অর্থ বছরে নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক হয়েছিল ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। আর ২০২২-২৩ অর্থ বছরে নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক হওয়ার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা।
প্রতি বছরই বড় অঙ্কের ঘাটতি রেখে জাতীয় বাজেট পাস করে সরকার। এ ঘাটতি অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিয়ে মেটানো হয়। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে আছে ব্যাংক ব্যবস্থা ও সঞ্চয়পত্র খাত। গত ১ জুলাই শুরু হওয়া ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির নিট লক্ষ্যমাত্রা আরও কমানো হয়েছে। এবার সঞ্চয়পত্র বিক্রির নিট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মাত্র ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এটি গত অর্থ বছরের মূল বাজেটের চেয়ে ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা কম। আর সংশোধিত বাজেটের চেয়ে দেড় হাজার কোটি টাকা কম।
এদিকে চলতি অর্থ বছরে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র দাখিলের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। আগে এই সীমা ছিল ৫ লাখ টাকা। এছাড়া গত অর্থ বছরের মাঝামাঝিতে এসে প্রতিষ্ঠান ব্যতীত ব্যক্তিপর্যায়ের সব সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষে পুনর্বিনিয়োগ সুবিধা চালু করা হয়। ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে মেয়াদি হিসাবের পুনর্বিনিয়োগ সুবিধা আবার চালু করা হয়।
ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডের বিনিয়োগসীমা প্রত্যাহার করা হয়। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে মুনাফা তিন মাসের পরিবর্তে প্রতি মাসে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া গত জানুয়ারি থেকে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে একটি সীমা পর্যন্ত সুদের হার বাড়িয়েছে সরকার। এসব সুবিধা বাড়ানোয় আগামীতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে বলে আশা করছে সরকার।
শনিবার, ০৯ আগস্ট ২০২৫
দেশের সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা রাখে ব্যাংকে। তারপর নিরাপত্তা ও অধিক মুনাফার আশায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ বলা হয়ে থাকে। গত অর্থ বছরে সঞ্চয়পত্রে নতুন বিনিয়োগের চেয়ে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পরিমাণ ৬ হাজার ৬৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বেশি ছিল।
অর্থাৎ ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৬৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ঋণাত্মক। এর মানে হচ্ছে, গত অর্থ বছরে সঞ্চয়পত্র থেকে কোনও ঋণ পায়নি সরকার। উল্টো এই অর্থ সরকারের কোষাগার থেকে অথবা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করতে হয়েছে। শুধু গত অর্থ বছর নয়, গত তিন অর্থ বছর ধরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে কোনও ঋণ পাচ্ছে না সরকার। অথচ বাজেটে এ খাতে মোটা অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রেখে এসেছে সরকার।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের গড়পড়তা আয় কমে গেছে। ফলে সঞ্চয় করতে পারছে না। অন্যদিকে সুদের হার হ্রাস ও নানা কড়াকড়ির কারণেও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমে গেছে। দেশের সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা রাখে ব্যাংকে। তারপর নিরাপত্তা ও অধিক মুনাফার আশায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ বলা হয়ে থাকে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সবশেষ সঞ্চয়পত্র বিক্রির যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের শেষ মাস জুনে সঞ্চয়পত্রের নিট বা প্রকৃত বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৬৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা ঋণাত্মক। আগের মাস মে মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৩৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এপ্রিলে নিট বা প্রকৃত বিক্রির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। আগের মাস মার্চে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
এর আগে টানা পাঁচ মাস (অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ছিল ঋণাত্মক বা নেগেটিভ। অর্থাৎ ওই পাঁচ মাসে যতো টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করেছে সরকার। এই অর্থ সরকারের কোষাগার থেকে অথবা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করা হয়েছে।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের অক্টোবরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২২৫ কোটি টাকা ঋণাত্মক। তেমনি নভেম্বরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা ঋণাত্মক। ডিসেম্বরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ঋণাত্মক। চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৭৬৯ কোটি ঋণাত্মক। ফেব্রুয়ারিতে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা ঋণাত্মক।
সব মিলিয়ে গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে সঞ্চয়পত্রে নিট বা প্রকৃত বিক্রর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা নেগেটিভ বা ঋণাত্মক। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ১২৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ঋণাত্মক। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ছিল ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা ঋণাত্মক। ২০২১-২২ অর্থ বছরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা ধনাত্মক বা পজিটিভ। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ছিল ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা ধনাত্মক।
বিক্রি কমে যাওয়ায় চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ বা মুনাফার হার বাড়ানো হয়। মেয়াদ পূরণ সাপেক্ষে সঞ্চয়পত্রের ধরন অনুসারে এ হার বেড়ে হয় সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ১২ শতাংশ করে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু ছয় মাস না যেতেই সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ফের কমিয়েছে সরকার। ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রথম দিন ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন সুদহার হবে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল গ্রাহকদের পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাহলে বলা যায়, গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে কোনও ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ নিতে পারেনি। উল্টো ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা কোষাগার থেকে গ্রাহকদের সুদ-আসল বাবদ দিতে হয়েছে। গত অর্থ বছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকার নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বিক্রিতে নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকায় সংশোধিত বাজেটে সেটি কমিয়ে ১৪ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
আগের দুই অর্থ বছরেও সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক ধারায় ছিল। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিক্রি ধারাবাহিক কমতে থাকায় সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৭ হাজার ৩১০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। তবে পুরো অর্থ বছরে নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক হয়েছিল ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। আর ২০২২-২৩ অর্থ বছরে নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক হওয়ার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা।
প্রতি বছরই বড় অঙ্কের ঘাটতি রেখে জাতীয় বাজেট পাস করে সরকার। এ ঘাটতি অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিয়ে মেটানো হয়। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে আছে ব্যাংক ব্যবস্থা ও সঞ্চয়পত্র খাত। গত ১ জুলাই শুরু হওয়া ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির নিট লক্ষ্যমাত্রা আরও কমানো হয়েছে। এবার সঞ্চয়পত্র বিক্রির নিট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মাত্র ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এটি গত অর্থ বছরের মূল বাজেটের চেয়ে ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা কম। আর সংশোধিত বাজেটের চেয়ে দেড় হাজার কোটি টাকা কম।
এদিকে চলতি অর্থ বছরে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র দাখিলের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। আগে এই সীমা ছিল ৫ লাখ টাকা। এছাড়া গত অর্থ বছরের মাঝামাঝিতে এসে প্রতিষ্ঠান ব্যতীত ব্যক্তিপর্যায়ের সব সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষে পুনর্বিনিয়োগ সুবিধা চালু করা হয়। ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে মেয়াদি হিসাবের পুনর্বিনিয়োগ সুবিধা আবার চালু করা হয়।
ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডের বিনিয়োগসীমা প্রত্যাহার করা হয়। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে মুনাফা তিন মাসের পরিবর্তে প্রতি মাসে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া গত জানুয়ারি থেকে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে একটি সীমা পর্যন্ত সুদের হার বাড়িয়েছে সরকার। এসব সুবিধা বাড়ানোয় আগামীতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে বলে আশা করছে সরকার।