alt

অর্থ-বাণিজ্য

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে। ৮ আগস্ট শুক্রবার সকাল ১০টা ১ মিনিটের পর কার্যকর হয়েছে বহুল আলোচিত এই শুল্ক। এ সময়ের পর রপ্তানি পণ্যের যেসব কনটেইনার জাহাজে বোঝাই করা হয়েছে, সেসব পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পাল্টা শুল্ক দিতে হচ্ছে। একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে এখন সব মিলিয়ে ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে বলে হিসাব দিয়েছে এ খাতের রপ্তানিকারকদের প্রধান সংগঠন বিজিএমইএ।

ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫ দশমিক ১২ শতাংশ যা শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। জানুয়ারি-জুন সময়ে চীনের প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৬ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। ভিয়েতনামের বেড়েছে ১৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ

তারপরও সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বাংলাদেশ। কেননা, ট্রাম্প শুল্ক কার্যকরের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের হারানো ব্যবসা পাচ্ছে বাংলাদেশ। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, গত কয়েক মাস ধরেই চীনের হারানো ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে আসছে। আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি বেশি আসবে বলে আশা করছেন তারা।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) গত বৃহস্পতিবার হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। অটেক্সার তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৩ হাজার ৮১৫ কোটি ৮১ লাখ (৩৮.১৬ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি।

এই ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫ দশমিক ১২ শতাংশ যা শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। জানুয়ারি-জুন সময়ে চীনের প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৬ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। ভিয়েতনামের বেড়েছে ১৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এই ছয় মাসের মধ্যে জুনে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। চীনের কমেছে ৪০ শতাংশ। ভিয়েতনামের বেড়েছে ২৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। মে মাসে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ কমেছিল। চীনের কমেছিল ৫২ শতাংশ। তবে ভিয়েতনামের বেড়েছিল ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ হচ্ছে ভিয়েতনাম ও চীন। বাংলাদেশের মতো ভিয়েতনামের পণ্যেও ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসিয়েছেন ট্রাম্প।

দীর্ঘদিন ধরে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। ট্রাম্প শুল্ক সেই যুদ্ধকে আরও উসকে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন কোন দেশ কার ওপর কতো শুল্ক বসাবে—তার চূড়ান্ত ঘোষণা এখনও কোনও দেশের পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়নি। এদিকে ভারতের ওপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক বাসিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প; এ নিয়ে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতের ওপর সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মোট পাল্টা শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ।

ভারতের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে বিশ্ববাণিজ্যে নতুন করে ঝড় তুলেছেন ট্রাম্প। দুদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ‘মারাত্মক’ অবনতি হয়েছে। গত ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চহারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা হয়েছিল ৩৭ শতাংশ।

পরে ৯ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। পরে ভারতের ওপর ট্রাম্প শুল্ক ১ শতাংশ কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। বাংলাদেশের ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়। এরপর শুল্কহার কমানো নিয়ে বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের দীর্ঘ আলোচনা হয়; চলে দর-কষাকষি। ভারত সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার ধারণা ছিল ২৫ শতাংশ থেকে শুল্কহার ২০ শতাংশের নিচে নামবে।

কিন্তু সেটা আর হয়নি; ভারতের ওপর শেষ পর্যন্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখেন ট্রাম্প। বাংলাদেশের শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। গত ১ আগস্ট এই ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, এক সপ্তাহ পর ৮ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে নতুন শুল্কহার।

কিন্তু তার আগেই গত ৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ভারতের ওপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনার কারণে ‘জরিমানা’ হিসেবে অতিরিক্ত এই ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে আগের ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কসহ ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। ২১ দিন পর থেকে ভারতীয় পণ্যে এই শুল্ক কার্যকর হবে। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চেয়ারে ফেরার পরপরই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বড় অঙ্কের পাল্টা শুল্ক আরোপ করে বিশ্ববাণিজ্যে ‘ঝড়’ তোলেন। গত ৬ আগস্ট ভারতের ওপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে সেই ‘ঝড়’ নতুন মাত্রা পেয়েছে।

একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় বাজার। ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে এই বাজারে ৮৬৯ কোটি ২৪ লাখ (৮.৬৯ বিলিয়ন) পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশ। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২২ সালে এই বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৩৬ শতাংশ বেড়ে ৯৭৩ কোটি (৯.৭৩ বিলিয়ন) ডলারে উঠেছিল। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি তো দূরের কথা, উল্টো ২৫ শতাংশ কমেছিল। সেই নেতিবাচক ধারা চলে ২০২৪ সালেও। তবে বছরের শেষ দিকে এসে গতি বাড়ায় শেষ পর্যন্ত নামমাত্র প্রবৃদ্ধি দিয়ে শেষ হয়েছিল বছর। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি (৭.৩৪ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।

২০২৫ সাল শুরু হয়েছিল বড় চমক দিয়ে। অটেক্সার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৮০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৭০ কোটি ১০ লাখ ডলার। মার্চে ছিল ৭২ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। এপ্রিলে রপ্তানি হয় ৭৬ কোটি ডলারের পোশাক।

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরের ৩ টার্মিনালে বছরের শেষেই নতুন অপারেটর: বিডা চেয়ারম্যান

ছবি

সুইসকন্ট্রাক্ট ও বিজিএপিএমইএ’র মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই

ছবি

২০৩০ সালের মধ্যে চিকিৎসা সরঞ্জামের বৈশ্বিক বাজার ছাড়াবে ১ ট্রিলিয়ন ডলার

ছবি

এনবিআর বিলুপ্ত করে অধ্যাদেশ জারির বৈধতা নিয়ে রিট খারিজ

ছবি

টাকা ছাপানো-বণ্টনে বছরে খরচ ২০ হাজার কোটি, ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ানোর আহ্বান গভর্নরের

ছবি

‘শূন্য’ রিটার্ন দিলে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড: এনবিআর

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে ব্রাজিল থেকে আসা কন্টেইনারে তেজস্ক্রিয়া

ছবি

গত তিন বছর সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের চেয়ে সুদ ও আসল পরিশোধের পরিমাণ বেশি

ছবি

টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু রবিবার, ৮০ টাকায় মিলবে চিনি

ছবি

সপ্তাহজুড়ে দরপতনের পরও বাজার মূলধন বেড়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা

ছবি

পাল্টা শুল্ক ও এনবিআরে কর্মবিরতির কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১২ শতাংশ

ছবি

ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাবে ভারতের শেয়ারবাজারে বড় ধস

ছবি

সুদবিহীন কিস্তিতে স্মার্টফোন কেনার সুযোগ আনল গ্রামীণফোন ও ইবিএল

ছবি

দাম বেড়েছে আলু ছাড়া সব নিত্যপণ্যের

ছবি

সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে ভিভো ওয়াই৪০০ ঝড়

ছবি

এনবিআরের আন্দোলনে ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি জানতে চেয়েছে সরকার

ছবি

বিনিয়োগ করতে আগ্রহী জাপানি কোম্পানি, সচল হতে পারে বেক্সিমকো টেক্সটাইল

ছবি

৫০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক: ভারতে তৈরী পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিত করছে মার্কিন ব্র্যান্ড

ছবি

পুঁজিবাজারের টেকসই সংস্কারে কারিগরি সহযোগিতা করতে চায় এডিবি

ছবি

এবার সেমিকন্ডাক্টরে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প

ছবি

চার মাস পর মূল্যস্ফীতি আবার বাড়লো

ছবি

ছাতক সিমেন্ট কারখানার ভারতীয় অংশের রোপওয়ে নির্মাণ কাজের নীতিগত অনুমোদন

ছবি

সিকিউরিটিজ বন্ধক, অবমুক্তকরণ ও বাজেয়াপ্তকরণ নিয়ে ডিএসই’র কর্মশালা

ছবি

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতির ‘সমন্বিত’ নীতিমালা

ছবি

৭০ হাজার টন সার কেনার অনুমোদন

ছবি

ডেল্টা লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানির বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ছবি

ট্রাম্পের শুল্ক থেকে শতভাগ ‘ছাড়’ পাচ্ছে টিএসএমসি

ছবি

তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে সোনালী ব্যাংকের বৃক্ষরোপণ

ছবি

তারল্য সহায়তার দেড় হাজার কোটি টাকা ‘ফেরত দিয়েছে’ ইসলামী ব্যাংক

ছবি

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো

ছবি

জাতীয় সঞ্চয় অধিপ্ততরের রিয়াজুল ইসলাম সাময়িক বরখাস্ত

ছবি

প্রাইম ব্যাংক ও ইএসডিও-এর মধ্যে পে-রোল ব্যাংকিং চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি

দেশের অর্থনীতি ধ্বংসপ্রায় অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

জুলাইয়ে আবারও বাড়ল মূল্যস্ফীতি

ছবি

এনবিআর দুই ভাগঃ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি হতে পারে, জানালেন অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ফাউন্ডেশনের বোর্ড সভা

tab

অর্থ-বাণিজ্য

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে। ৮ আগস্ট শুক্রবার সকাল ১০টা ১ মিনিটের পর কার্যকর হয়েছে বহুল আলোচিত এই শুল্ক। এ সময়ের পর রপ্তানি পণ্যের যেসব কনটেইনার জাহাজে বোঝাই করা হয়েছে, সেসব পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পাল্টা শুল্ক দিতে হচ্ছে। একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে এখন সব মিলিয়ে ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে বলে হিসাব দিয়েছে এ খাতের রপ্তানিকারকদের প্রধান সংগঠন বিজিএমইএ।

ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫ দশমিক ১২ শতাংশ যা শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। জানুয়ারি-জুন সময়ে চীনের প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৬ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। ভিয়েতনামের বেড়েছে ১৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ

তারপরও সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বাংলাদেশ। কেননা, ট্রাম্প শুল্ক কার্যকরের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের হারানো ব্যবসা পাচ্ছে বাংলাদেশ। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, গত কয়েক মাস ধরেই চীনের হারানো ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে আসছে। আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি বেশি আসবে বলে আশা করছেন তারা।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) গত বৃহস্পতিবার হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। অটেক্সার তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৩ হাজার ৮১৫ কোটি ৮১ লাখ (৩৮.১৬ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি।

এই ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫ দশমিক ১২ শতাংশ যা শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। জানুয়ারি-জুন সময়ে চীনের প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৬ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। ভিয়েতনামের বেড়েছে ১৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এই ছয় মাসের মধ্যে জুনে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। চীনের কমেছে ৪০ শতাংশ। ভিয়েতনামের বেড়েছে ২৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। মে মাসে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ কমেছিল। চীনের কমেছিল ৫২ শতাংশ। তবে ভিয়েতনামের বেড়েছিল ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ হচ্ছে ভিয়েতনাম ও চীন। বাংলাদেশের মতো ভিয়েতনামের পণ্যেও ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসিয়েছেন ট্রাম্প।

দীর্ঘদিন ধরে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। ট্রাম্প শুল্ক সেই যুদ্ধকে আরও উসকে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন কোন দেশ কার ওপর কতো শুল্ক বসাবে—তার চূড়ান্ত ঘোষণা এখনও কোনও দেশের পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়নি। এদিকে ভারতের ওপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক বাসিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প; এ নিয়ে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতের ওপর সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মোট পাল্টা শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ।

ভারতের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে বিশ্ববাণিজ্যে নতুন করে ঝড় তুলেছেন ট্রাম্প। দুদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ‘মারাত্মক’ অবনতি হয়েছে। গত ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চহারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা হয়েছিল ৩৭ শতাংশ।

পরে ৯ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। পরে ভারতের ওপর ট্রাম্প শুল্ক ১ শতাংশ কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। বাংলাদেশের ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়। এরপর শুল্কহার কমানো নিয়ে বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের দীর্ঘ আলোচনা হয়; চলে দর-কষাকষি। ভারত সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার ধারণা ছিল ২৫ শতাংশ থেকে শুল্কহার ২০ শতাংশের নিচে নামবে।

কিন্তু সেটা আর হয়নি; ভারতের ওপর শেষ পর্যন্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখেন ট্রাম্প। বাংলাদেশের শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। গত ১ আগস্ট এই ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, এক সপ্তাহ পর ৮ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে নতুন শুল্কহার।

কিন্তু তার আগেই গত ৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ভারতের ওপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনার কারণে ‘জরিমানা’ হিসেবে অতিরিক্ত এই ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে আগের ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কসহ ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। ২১ দিন পর থেকে ভারতীয় পণ্যে এই শুল্ক কার্যকর হবে। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চেয়ারে ফেরার পরপরই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বড় অঙ্কের পাল্টা শুল্ক আরোপ করে বিশ্ববাণিজ্যে ‘ঝড়’ তোলেন। গত ৬ আগস্ট ভারতের ওপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে সেই ‘ঝড়’ নতুন মাত্রা পেয়েছে।

একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় বাজার। ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে এই বাজারে ৮৬৯ কোটি ২৪ লাখ (৮.৬৯ বিলিয়ন) পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশ। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২২ সালে এই বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৩৬ শতাংশ বেড়ে ৯৭৩ কোটি (৯.৭৩ বিলিয়ন) ডলারে উঠেছিল। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি তো দূরের কথা, উল্টো ২৫ শতাংশ কমেছিল। সেই নেতিবাচক ধারা চলে ২০২৪ সালেও। তবে বছরের শেষ দিকে এসে গতি বাড়ায় শেষ পর্যন্ত নামমাত্র প্রবৃদ্ধি দিয়ে শেষ হয়েছিল বছর। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি (৭.৩৪ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।

২০২৫ সাল শুরু হয়েছিল বড় চমক দিয়ে। অটেক্সার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৮০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৭০ কোটি ১০ লাখ ডলার। মার্চে ছিল ৭২ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। এপ্রিলে রপ্তানি হয় ৭৬ কোটি ডলারের পোশাক।

back to top