alt

অর্থ-বাণিজ্য

‘জটিল’ বলে ব্যাংক আইনে বাদ যাচ্ছে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ শব্দ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫

দেশের ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ও জবাবদিবিতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বড় পরিবর্তন আসছে ব্যাংক কোম্পানি আইনে। প্রস্তাবিত নতুন সংশোধনীতে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ চিহ্নিত করার বিধানটি বাতিলসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ইতোমধ্যে সংশোধিত খসড়া অনুমোদন করেছে এবং আগামী মাসেই এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি হতে পারে।

কেন বাদ দেওয়া হচ্ছে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির ধারা: ২০২৩ সালের আইনে প্রতিটি ব্যাংককে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তালিকা তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা ছিল। তারপর শুনানি, আপিলসহ নানা ধাপ পেরিয়ে নাম চূড়ান্ত করা যেত। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, এই প্রক্রিয়াটি এতটাই জটিল ও সময়সাপেক্ষ ছিল যে বাস্তবে কাউকে চূড়ান্তভাবে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। তাই, আইনটি অকার্যকর হওয়ায় এটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ঋণখেলাপিদের জন্য বিধিনিষেধ বহাল থাকছে: যদিও ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপির সংজ্ঞা বাতিল হচ্ছে, এর মানে এই নয় যে ঋণখেলাপিরা পুরোপুরি ছাড় পাচ্ছেন। বরং, তাদের ওপর আরোপিত বিভিন্ন বিধিনিষেধ আগের মতোই কার্যকর থাকবে। যেমন- নতুন ঋণ গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা, বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ, ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার অযোগ্যতা ইত্যাদি।

নতুন সংশোধনীতে আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হচ্ছে: আগে কোনো গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি না হলে, একই গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ঋণ নিতে পারতো। নতুন প্রস্তাবনায় এই শিথিলতাটি বাতিল করা হচ্ছে। নতুন আইনে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সর্বোচ্চ পরিচালক সংখ্যা ২০ থেকে কমিয়ে ১৫ করা হচ্ছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৮ জন হবেন স্বতন্ত্র পরিচালক এবং তাদের মধ্য থেকেই চেয়ারম্যান নিয়োগের বিধান থাকছে। এছাড়া পরিচালকের সর্বোচ্চ মেয়াদ ১২ বছর থেকে কমিয়ে ৬ বছর করা হচ্ছে। একই পরিবারের সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা ৩ জন থেকে ২ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে। পরিবারের সংজ্ঞাও প্রসারিত করা হয়েছে, যেখানে শ্বশুরপক্ষ এবং ভাই-বোনের স্বামী বা স্ত্রীকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পরিবর্তনগুলো মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর পরামর্শ অনুযায়ী ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য আনা হচ্ছে। ২০২২ সালে আইএমএফ-এর ঋণ কর্মসূচির অন্যতম শর্ত ছিল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পারিবারিক প্রভাব কমানো এবং পরিচালকদের মেয়াদ সীমিত করা। কেননা, ২০০১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সময় নির্বাচন সামনে রেখে ব্যাংক কোম্পানি আইনে বেশ কিছু শিথিলতা আনা হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি চিহ্নিত না করার সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন প্রশাসনিক জটিলতা কমাবে, অন্যদিকে ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার সুযোগও সীমিত করবে।

অন্যদিকে, আরেক পক্ষ যুক্তি দিচ্ছে যে বাস্তবভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সময় বা প্রক্রিয়ার জটিলতা না থেকে সরাসরি অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সরকার মনে করছে, এই সংশোধনীর মূল লক্ষ্য হলো দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে।

ছবি

জুলাইয়ে রাজস্ব আয় বেড়েছে ২৪ শতাংশ

ছবি

এক্সিম ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি: ৬১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

পুনঃতফসিল ঋণ বেড়ে দাঁড়ালো সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকায়

ছবি

কীসের বাধ্যতামূলক ছুটি, আমি তো অফিস করছি: বিএফআইইউ প্রধান

ছবি

ইইউতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ

ছবি

নভেম্বরে জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা

ছবি

নির্বাচনের আগে ব্যাংক খাতে সাইবার নিরাপত্তা বড় চ্যালেঞ্জ: তৈয়্যব

ছবি

‘ঢাকা বাণিজ্য মেলা’ থেকে খসে পড়লো ‘আন্তর্জাতিক’

ছবি

শিল্প কাঁচামাল আমদানির মূল্য পরিশোধে সময়সীমা বাড়লো

ছবি

বিএফআইইউ প্রধানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে গভর্নরকে স্মারকলিপি

ছবি

শেয়ারবাজারে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়ালো

ছবি

জুলাইয়ে এডিপি বাস্তবায়ন এক শতাংশেরও কম

ছবি

ট্রাস্ট ব্যাংক ও বিকাশের মধ্যে চুক্তি

ছবি

‘রিভো এ১২ এস উইন ব্যাংকক’ ক্যাম্পেইন চালু

ছবি

বারবার যান্ত্রিক ত্রুটি: যেসব পদক্ষেপের কথা জানাল বিমান

ছবি

জুলাইয়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার কমে ০.৬৯ শতাংশে

ছবি

রেকর্ড ৯৩৭ কোটি টাকা মুনাফার তথ্য দিলো বিমান

ছবি

জুনে আমানতের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের নিচে

ছবি

সাড়ে সাত মাসে বিনিয়োগকারীদের ৪৩ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি

ছবি

এনবিআরের আরও চার কর্মকর্তা বরখাস্ত

ছবি

‘পাচারের’ ৪০ হাজার কোটি টাকার ‘সম্পদের’ সন্ধান এনবিআরের কাছে

ছবি

ডিএসইতে লেনদেন প্রায় হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি

ছবি

আগস্টের ১৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫ হাজার কোটি টাকা

ছবি

রেকর্ড ৯৩৭ কোটি টাকা মুনাফার তথ্য দিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স

ছবি

অনার বাজারে নিয়ে এলো প্যাড এক্স৭

ছবি

স্মার্ট আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফি সল্যুশন নিয়ে ভিভো ওয়াই৪০০

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে টেকনো স্পার্ক ৪০ সিরিজ

ছবি

শেষ হলো বিডিঅ্যাপস ইনোভেশন সামিট : চ্যাম্পিয়ন ডা. চাষী, রানার্সআপ চিঠিডটমি

ছবি

এক বছরে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ

ছবি

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নতুন রেকর্ড, এক বছরে গ্রাহক বেড়েছে ১৪ লাখ

ছবি

বন্দরে বিদেশি অপারেটরের বিরোধিতা নয়, সমর্থন করা উচিত: মোহাম্মদ হাতেম

ছবি

সাড়ে পাঁচ মাস পর হিলি স্থলবন্দরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু

ছবি

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য দরকষাকষির কৌশল দরকার, বিসিআই সেমিনারে বক্তারা

ছবি

ধারাবাহিক পতনের পর শেয়ারবাজারে বড় উত্থান

ছবি

একনেকে ১১ প্রকল্প অনুমোদন, ব্যয় ৯৩৬১ কোটি

ছবি

দায়িত্ব নেওয়ার সাড়ে দশ মাস পর সরে দাঁড়ালেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফের 

tab

অর্থ-বাণিজ্য

‘জটিল’ বলে ব্যাংক আইনে বাদ যাচ্ছে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ শব্দ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫

দেশের ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ও জবাবদিবিতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বড় পরিবর্তন আসছে ব্যাংক কোম্পানি আইনে। প্রস্তাবিত নতুন সংশোধনীতে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ চিহ্নিত করার বিধানটি বাতিলসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ইতোমধ্যে সংশোধিত খসড়া অনুমোদন করেছে এবং আগামী মাসেই এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি হতে পারে।

কেন বাদ দেওয়া হচ্ছে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির ধারা: ২০২৩ সালের আইনে প্রতিটি ব্যাংককে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তালিকা তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা ছিল। তারপর শুনানি, আপিলসহ নানা ধাপ পেরিয়ে নাম চূড়ান্ত করা যেত। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, এই প্রক্রিয়াটি এতটাই জটিল ও সময়সাপেক্ষ ছিল যে বাস্তবে কাউকে চূড়ান্তভাবে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। তাই, আইনটি অকার্যকর হওয়ায় এটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ঋণখেলাপিদের জন্য বিধিনিষেধ বহাল থাকছে: যদিও ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপির সংজ্ঞা বাতিল হচ্ছে, এর মানে এই নয় যে ঋণখেলাপিরা পুরোপুরি ছাড় পাচ্ছেন। বরং, তাদের ওপর আরোপিত বিভিন্ন বিধিনিষেধ আগের মতোই কার্যকর থাকবে। যেমন- নতুন ঋণ গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা, বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ, ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার অযোগ্যতা ইত্যাদি।

নতুন সংশোধনীতে আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হচ্ছে: আগে কোনো গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি না হলে, একই গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ঋণ নিতে পারতো। নতুন প্রস্তাবনায় এই শিথিলতাটি বাতিল করা হচ্ছে। নতুন আইনে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সর্বোচ্চ পরিচালক সংখ্যা ২০ থেকে কমিয়ে ১৫ করা হচ্ছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৮ জন হবেন স্বতন্ত্র পরিচালক এবং তাদের মধ্য থেকেই চেয়ারম্যান নিয়োগের বিধান থাকছে। এছাড়া পরিচালকের সর্বোচ্চ মেয়াদ ১২ বছর থেকে কমিয়ে ৬ বছর করা হচ্ছে। একই পরিবারের সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা ৩ জন থেকে ২ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে। পরিবারের সংজ্ঞাও প্রসারিত করা হয়েছে, যেখানে শ্বশুরপক্ষ এবং ভাই-বোনের স্বামী বা স্ত্রীকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পরিবর্তনগুলো মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর পরামর্শ অনুযায়ী ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য আনা হচ্ছে। ২০২২ সালে আইএমএফ-এর ঋণ কর্মসূচির অন্যতম শর্ত ছিল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পারিবারিক প্রভাব কমানো এবং পরিচালকদের মেয়াদ সীমিত করা। কেননা, ২০০১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সময় নির্বাচন সামনে রেখে ব্যাংক কোম্পানি আইনে বেশ কিছু শিথিলতা আনা হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি চিহ্নিত না করার সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন প্রশাসনিক জটিলতা কমাবে, অন্যদিকে ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার সুযোগও সীমিত করবে।

অন্যদিকে, আরেক পক্ষ যুক্তি দিচ্ছে যে বাস্তবভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সময় বা প্রক্রিয়ার জটিলতা না থেকে সরাসরি অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সরকার মনে করছে, এই সংশোধনীর মূল লক্ষ্য হলো দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে।

back to top