alt

অর্থ-বাণিজ্য

গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে অর্থনীতিতে বড় ঝুঁকি তৈরি হবে : সিপিডি

মূল্যস্ফীতির সরকারি তথ্য সঠিক নয়

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : রোববার, ২০ মার্চ ২০২২

জনগণের কষ্ট লাঘবে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম এ মুহূর্তে না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলেছে, এসব পণ্যের দাম বাড়ালে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হবে। এই চাপ সামলানো সরকারের জন্য কঠিন হবে। এছাড়া সরকারের মূল্যস্ফীতির তথ্য সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সিপিডি বলছে, একেকটি পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৬ থেকে ১৫, ২০ ও ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। তারপরও খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি স্থিতিশীল কীভাবে সম্ভব? এটা সঠিক চিত্র নয়।

রোববার (২০ মার্চ) রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজেদের কার্যালয়ে ‘পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন পথে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।

সংস্থাটি বলেছে, বিশ্বের সব দেশেই চাল, ডাল, আটা, মাছ, মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী, কিন্তু বাংলাদেশে এসব পণ্যের দাম বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এর অন্যতম কারণ হলো বাজার বিষয়ে দুর্বল তদারকি ব্যবস্থা। এ মুহূর্তে অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় মূল্যস্ফীতি। গত এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী এবং এ প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।

মূল্যস্ফীতির হার নিয়ে সরকারের তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সিপিডি। সংস্থাটি বলেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য আকাশচুম্বী। সরকারি খাতায় ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এক একটি পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৬ থেকে ১৫, ২০ ও ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। তারপরও খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি স্থিতিশীল কীভাবে সম্ভব? এটা সঠিক চিত্র নয়।

সংস্থাটি মনে করে, চাল, ডাল, আটা, ময়দাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ হয়েছে। এরপরও কীভাবে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল থাকে, তা পরিষ্কার নয়। মানুষের আয় বেড়েছে, কিন্তু যে হারে আয় বেড়েছে, তার তুলনায় জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। চলতি অর্থবছরে আমদানি-রপ্তানি বাড়লেও চলতি লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ঘাটতি আছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের চেয়ে কমে যাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে।

নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেটের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করে সিপিডি। সংস্থাটির অভিযোগ, কারা এসব অপকর্ম করছে, সে বিষয়ে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য থাকলেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। রমজান এলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। কারসাজির মাধ্যমে মূল্য বাড়ায়। এজন্য আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধি যতটা দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী হলো সরকারের দুর্বল তদারকির ব্যবস্থা। এছাড়া আমদানি-রপ্তানির আড়ালে আন্ডার এবং ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে দেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই পাচার রোধ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের যৌথভাবে নীতি তৈরি করতে হবে।

অর্থনীতি এমনিতেই চাপের মুখে ছিল মন্তব্য করে সংস্থাটি বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশীয় অর্থনীতিতে চাপ আরও বেড়েছে। এই চাপ মোকাবিলায় সরকারকে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ম. তামীম, সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক ড. তৌফিকুল ইসলাম, সৈয়দ ইউসুফসহ অনেকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বছরে গড়ে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। কিন্তু ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রকৃত মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ। অন্যদিকে খাদ্য ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ওই সময়ে আয় ৫৩ শতাংশ কমে ৪৬ শতাংশ হয়েছে। এখানে দেখা গেছে, আয় বাড়লেও প্রকৃত আয় কমে যাওয়ায় মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও কমেছে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘দেশের তিন ধরনের চালের (মিনিকেট, পাইজাম ও মোটাচাল) দাম বিবেচনায় নিয়ে দেখা গেছে, চালের বাজার ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের তুলনায় অনেক ঊর্ধ্বমুখী। একইভাবে ময়দা, চিনি, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ, পাউডার মিল্ক, ডিম ও মাংসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক বেশি ফারাক। অসম্ভবভাবে বেড়েছে দাম। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যবৃদ্ধির কারণই একমাত্র দায় নয়। বিপরীতে আমরা দেখতে পাই, সিগারেটের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক কম। স্বাস্থ্যহানিকর পণ্য হিসেবে কর বৃদ্ধি করে করের আওতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। যদিও এখন বেশি আছে, কিন্তু আরও বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সরকার যদি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম না বাড়ায়, তাহলে অর্থনীতিতে চাপ আসবে না। কারণ এই চাপ সামলানোর মতো সক্ষমতা আছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এখন পর্যন্ত যে ঘাটতি আছে, তা সহনীয়। এছাড়া সরকারের কাছে পর্যাপ্ত তারল্য আছে। কাজেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হবে না। এই মুহূর্তে তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ালে অর্থনীতিতে যে চাপ সৃষ্টি হবে, তা সামাল দেয়া সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। সুতরাং এসব পণ্যের দাম বাড়ানো সঠিক হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভর্তুকিতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকারকে কৌশলী হতে হবে। স্মার্ট বা চতুর নীতি গ্রহণ করতে হবে। চতুর ভর্তুকির অর্থ হলো যাদের জন্য ভর্তুকি প্রয়োজন, সেই টার্গেট গ্রুপ যাতে ভর্তুকি পায়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ বাজারভিত্তিক হওয়া উচিত।’

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে, কিন্তু সে অনুযায়ী মূল্য পাচ্ছি না। আবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেশি হচ্ছে। ফলে বাণিজ্যব্যবস্থা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। এটি আমাদের জন্য বর্তমানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, রপ্তানি বাড়ছে, কিন্তু সেই তুলনায় আমদানি বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহও কমে গেছে। কয়েকটি পণ্য আমাদের ও বিশ্ব অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি তেলের মূল্য। কৌশলের অংশ হিসেবে আগেভাগেই জ্বালানি তেলের মজুদ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মূল্যও আস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেটা আরও বেড়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষে তেলের মূল্য ব্যারেল প্রতি ৯৫ দশমিক ৮ ডলার ও মার্চে ১০০ ডলার ছাড়িয়েছে। যেখানে এক বছর আগেও ব্যারেল প্রতি ৬৫ ডলার ছিল। আশঙ্কা হচ্ছে, যুদ্ধ যদি না থামে সামনে দাম আরও বাড়বে।

ছবি

আগামী সপ্তাহে দেশের বাজারে আসছে ওয়ানপ্লাস নর্ড সিই৪ লাইট ফাইভজি

ছবি

দেশের বাজারে মনস্টার ‘এম’ সিরিজের নতুন স্মার্টফোন স্যামসাং গ্যালাক্সি এম১৪ এলটিই

ছবি

মানাবে ওয়াটার পার্কে যাতায়াতে উবার যাত্রীদের জন্য বিশেষ ছাড়

ছবি

প্রিয়শপ পরিদর্শন করলেন জিএফআর ফান্ডের প্রতিনিধি

ছবি

বাজারে ৬০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারির নতুন স্মার্টফোন ভিভো ওয়াই২৮

ছবি

রিয়েলমি ফ্যানদের চীন ভ্রমনের সুযোগ

ছবি

ড্যাফোডিল রেসপন্স সেন্টার উদ্বোধন

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে গুরুত্ব পাবে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত: নসরুল হামিদ

ছবি

উৎস কর প্রত্যাহারের দাবি নওগাঁয় রাইস মিল মালিকদের

ছবি

আইএসও সনদ পেল সেলেক্সট্রা লিমিটেড

ছবি

প্রত্যয় স্কিম বাতিলে শিক্ষকদের আন্দোলন অযৌক্তিক: অর্থমন্ত্রী

ছবি

ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলার

ছবি

আসছে ভিভো’র ৬ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারির স্মার্টফোন

ছবি

আন্তর্জাতিক মানের মোবাইল সেবা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর: জুনাইদ আহমেদ পলক

ছবি

ঢাকায় জিপি এক্সিলারেটরের ‘জেলায় জেলায় স্মার্ট উদ্যোক্তা’ বুটক্যাম্প

ছবি

এশিয়ান পেইন্টস কালার নেক্সট-২০২৪ উদ্বোধন

ছবি

আইসিসিবির ২৯তম বার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত

ছবি

জ্বালানি খাত ‘সঠিক নীতিতে চলছে না’ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা

ছবি

বড় পরিবর্তন ছাড়াই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস

ছবি

নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস,আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা

ছবি

এনবিআরের কর্মকর্তা ফয়সালকে বগুড়ায় বদলি

ছবি

সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস

ছবি

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস আজ

ছবি

লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকার বাজেট

ছবি

পদ্মা সেতুর নদী শাসনে ব্যয় বাড়লো আরও প্রায় ২৫০ কোটি টাকা

ছবি

থাকছে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ

ছবি

বাজার মূলধনে যোগ হলো সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা

ছবি

বাক্কো ও এ্যাসেট প্রকল্পের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি

ছবি

‘গ্লোবাল অ্যান্ড বাংলাদেশ আউটলুক অ্যান্ড রিস্ক’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত

ছবি

জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অটোমেশন কার্যক্রম অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে: জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী

ছবি

যাত্রীদের কথা চিন্তা করেই চালু করা হয়েছে শাটল বাস সেবা

ছবি

টেকনোর শট অন ক্যামন কনটেস্টে প্রাইজমানি ও লন্ডন ট্যুরের সুযোগ

ছবি

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে জাতীয় লজিস্টিক নীতি হবে অন্যতম চালিকাশক্তি: তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া

ছবি

নতুন করে ৬০ জন ফ্রিল্যান্সারকে উদ্যোক্তা হবার প্রশিক্ষণ দিয়েছে বাক্কো

ছবি

চালডাল ও সক্রিয় টেকনোলজিসে বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল

tab

অর্থ-বাণিজ্য

গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে অর্থনীতিতে বড় ঝুঁকি তৈরি হবে : সিপিডি

মূল্যস্ফীতির সরকারি তথ্য সঠিক নয়

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

রোববার, ২০ মার্চ ২০২২

জনগণের কষ্ট লাঘবে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম এ মুহূর্তে না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলেছে, এসব পণ্যের দাম বাড়ালে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হবে। এই চাপ সামলানো সরকারের জন্য কঠিন হবে। এছাড়া সরকারের মূল্যস্ফীতির তথ্য সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সিপিডি বলছে, একেকটি পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৬ থেকে ১৫, ২০ ও ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। তারপরও খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি স্থিতিশীল কীভাবে সম্ভব? এটা সঠিক চিত্র নয়।

রোববার (২০ মার্চ) রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজেদের কার্যালয়ে ‘পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন পথে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।

সংস্থাটি বলেছে, বিশ্বের সব দেশেই চাল, ডাল, আটা, মাছ, মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী, কিন্তু বাংলাদেশে এসব পণ্যের দাম বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এর অন্যতম কারণ হলো বাজার বিষয়ে দুর্বল তদারকি ব্যবস্থা। এ মুহূর্তে অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় মূল্যস্ফীতি। গত এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী এবং এ প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।

মূল্যস্ফীতির হার নিয়ে সরকারের তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সিপিডি। সংস্থাটি বলেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য আকাশচুম্বী। সরকারি খাতায় ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এক একটি পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৬ থেকে ১৫, ২০ ও ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। তারপরও খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি স্থিতিশীল কীভাবে সম্ভব? এটা সঠিক চিত্র নয়।

সংস্থাটি মনে করে, চাল, ডাল, আটা, ময়দাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ হয়েছে। এরপরও কীভাবে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল থাকে, তা পরিষ্কার নয়। মানুষের আয় বেড়েছে, কিন্তু যে হারে আয় বেড়েছে, তার তুলনায় জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। চলতি অর্থবছরে আমদানি-রপ্তানি বাড়লেও চলতি লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ঘাটতি আছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের চেয়ে কমে যাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে।

নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেটের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করে সিপিডি। সংস্থাটির অভিযোগ, কারা এসব অপকর্ম করছে, সে বিষয়ে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য থাকলেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। রমজান এলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। কারসাজির মাধ্যমে মূল্য বাড়ায়। এজন্য আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধি যতটা দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী হলো সরকারের দুর্বল তদারকির ব্যবস্থা। এছাড়া আমদানি-রপ্তানির আড়ালে আন্ডার এবং ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে দেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই পাচার রোধ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের যৌথভাবে নীতি তৈরি করতে হবে।

অর্থনীতি এমনিতেই চাপের মুখে ছিল মন্তব্য করে সংস্থাটি বলেছে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশীয় অর্থনীতিতে চাপ আরও বেড়েছে। এই চাপ মোকাবিলায় সরকারকে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ম. তামীম, সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক ড. তৌফিকুল ইসলাম, সৈয়দ ইউসুফসহ অনেকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বছরে গড়ে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। কিন্তু ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রকৃত মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ। অন্যদিকে খাদ্য ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ওই সময়ে আয় ৫৩ শতাংশ কমে ৪৬ শতাংশ হয়েছে। এখানে দেখা গেছে, আয় বাড়লেও প্রকৃত আয় কমে যাওয়ায় মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও কমেছে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘দেশের তিন ধরনের চালের (মিনিকেট, পাইজাম ও মোটাচাল) দাম বিবেচনায় নিয়ে দেখা গেছে, চালের বাজার ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের তুলনায় অনেক ঊর্ধ্বমুখী। একইভাবে ময়দা, চিনি, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ, পাউডার মিল্ক, ডিম ও মাংসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক বেশি ফারাক। অসম্ভবভাবে বেড়েছে দাম। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যবৃদ্ধির কারণই একমাত্র দায় নয়। বিপরীতে আমরা দেখতে পাই, সিগারেটের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক কম। স্বাস্থ্যহানিকর পণ্য হিসেবে কর বৃদ্ধি করে করের আওতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। যদিও এখন বেশি আছে, কিন্তু আরও বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সরকার যদি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম না বাড়ায়, তাহলে অর্থনীতিতে চাপ আসবে না। কারণ এই চাপ সামলানোর মতো সক্ষমতা আছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এখন পর্যন্ত যে ঘাটতি আছে, তা সহনীয়। এছাড়া সরকারের কাছে পর্যাপ্ত তারল্য আছে। কাজেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হবে না। এই মুহূর্তে তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ালে অর্থনীতিতে যে চাপ সৃষ্টি হবে, তা সামাল দেয়া সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। সুতরাং এসব পণ্যের দাম বাড়ানো সঠিক হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভর্তুকিতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকারকে কৌশলী হতে হবে। স্মার্ট বা চতুর নীতি গ্রহণ করতে হবে। চতুর ভর্তুকির অর্থ হলো যাদের জন্য ভর্তুকি প্রয়োজন, সেই টার্গেট গ্রুপ যাতে ভর্তুকি পায়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ বাজারভিত্তিক হওয়া উচিত।’

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে, কিন্তু সে অনুযায়ী মূল্য পাচ্ছি না। আবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেশি হচ্ছে। ফলে বাণিজ্যব্যবস্থা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। এটি আমাদের জন্য বর্তমানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, রপ্তানি বাড়ছে, কিন্তু সেই তুলনায় আমদানি বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহও কমে গেছে। কয়েকটি পণ্য আমাদের ও বিশ্ব অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি তেলের মূল্য। কৌশলের অংশ হিসেবে আগেভাগেই জ্বালানি তেলের মজুদ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মূল্যও আস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেটা আরও বেড়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষে তেলের মূল্য ব্যারেল প্রতি ৯৫ দশমিক ৮ ডলার ও মার্চে ১০০ ডলার ছাড়িয়েছে। যেখানে এক বছর আগেও ব্যারেল প্রতি ৬৫ ডলার ছিল। আশঙ্কা হচ্ছে, যুদ্ধ যদি না থামে সামনে দাম আরও বাড়বে।

back to top