alt

অর্থ-বাণিজ্য

যৌথ উদ্যোগে বাড়ি নির্মাণ : প্রয়োজন পারস্পরিক সহযোগিতা ও সৎ মানসিকতা

রিয়াজ উদ্দিন : শুক্রবার, ২০ মে ২০২২

বেসরকারি কোম্পানির ছোট পদে চাকরি করেন মোশারেফ। ২০০৫ সালে চাকরিতে যোগদানের সময় ঢাকা শহরে ভাড়া বাসায় ওঠেন। কয়েক বছর চাকরি করার পর কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী বাড়ি করার জন্য বিনিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। পদবী অনুযায়ী ২০১২ সালে ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ পান। এত অল্প টাকায় ঢাকা শহরে ঘরবাড়ি করার স্বপ্ন অবাস্তব। ডেভেলপার কোম্পানিগুলোরও রয়েছে নানান সমস্যা।

অনেক ঘোরাঘুরি করে ঢাকার অদূরে মাতুয়াইলে ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে টিনসেডসহ ২ কাঠা জমি কিনতে সক্ষম হন। জমি কেনার পর নতুন নতুন সমস্যার মুখোমুখি হন। প্রথমত: জমি কিনতে জমানো সব টাকা শেষ। ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ ও সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে টাকা জমানো কঠিন। এ অবস্থা চলতে থাকলে সারা জীবনেও বাড়ি করা সম্ভব হবে না। টিনসেড বাড়িতেই থাকতে হবে।

দ্বিতীয়ত: জমিটি একটি স্টিল মিলের পাশেই। সারাদিন মিলের শব্দ আবাসিকতার পরিবেশ নষ্ট করে দেয়। বড় ধরনের অসুবিধায় পড়ে যান তিনি। সুযোগ খুঁজতে থাকেন ভালো কিছু করার। একই অবস্থা তার অনেক সহকর্মীর। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেন কীভাবে এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

সমমনা ২৫ জন মিলে রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে ৯ কাঠা জমি ঠিক করেন ২ কোটি ৫০ লাখ টাকায়। সে হিসেবে প্রত্যেকের ভাগে জমির জন্য ১০ লাখ টাকা লাগবে। মোশারেফ তার মাতুয়াইলের জমিটি দুই লাখ টাকা লাভে স্টিল মিল কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেন এবং সহকর্মীদের সঙ্গে যাত্রাবাড়ির জমির একটি শেয়ার কিনে নেন। ২০১৮ সালে দশ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। নিজেরা নির্মাণ কাজ তদারকি করে তিন বছরে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করেন। প্রতি ফ্লোরে ৪টি করে মোট ৩৬ টি ফ্ল্যাট। কেউ ১টি কেউ ২টি ফ্ল্যাটের শেয়ার নিয়েছে। নির্মাণ কাজে শেয়ার প্রতি ব্যয় হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের মালিক হতে পেরেছেন তিনি।

মোশারেফের মতো অনেকেই এখন যৌথ উদ্যোগে বাড়ি নির্মাণের দিকে ঝুঁকছেন। ডেভেলপার কোম্পানিগুলোর অধিক মুনাফা ও নানাবিধ ফাঁকির জাল থেকে মুক্তির জন্য বেশিরভাগ মানুষ এ পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন। ঢাকাসহ দেশের অনেক শহরে এ ধরণের অনেক উদ্যোগ চোখে পড়ে। যৌথভাবে বাড়ি নির্মাণ করেছেন এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।

বাড়ি নির্মাণের জন্য জমি নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অভিজ্ঞরা মনে করেন, প্রশস্ত রাস্তার পাশের জমি বাড়ি করার জন্য ভালো। ব্যাংক ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে বাড়ির সকল দলিল, মিউটেশন ও খাজনা পরিশোধের সর্বশেষ রসিদ ব্যাংকে জমা দিতে হয়। অনেক জমি রয়েছে যেগুলোর কাগজপত্র ও মালিকানায় ত্রুটি রয়েছে। ত্রুটিযুক্ত জমি ক্রয়ে ব্যাংকের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না। ত্রুটিপূর্ণ জমি ক্রয় করলে ভোগান্তিতে পড়বেন ও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই জমি ক্রয়ের আগেই জমির মালিকানা সঠিক কি না তা ভূমি অফিস ও আবাসন প্রকল্পের অফিসে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হতে হবে। এছাড়া অভিজ্ঞ আইনজীবির লিখিত মতামত গ্রহণ করতে হবে।

অভিজ্ঞ আর্কিটেক্ট দিয়ে ভবনের চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন করে কাজ শুরু করা উত্তম। অনেক আর্কিটেক্ট রয়েছেন যারা কম খরচে কাজ করে দিতে সম্মত হন কিন্তু তারা ত্রুটিপূর্ণ নকশা দিয়ে গ্রহককে প্রতারিত করেন। তাই অভিজ্ঞ আর্কিটেক্ট দিয়ে ভবনের পূর্ণাঙ্গ নকশা প্রস্তুত করে নিজেদের পছন্দ ও প্রয়োজনের সঙ্গে মিলিয়ে সেগুলো সংশোধন করে নিতে হবে।

নির্মাণ কাজের খরচ সীমার মধ্যে রাখতে সকল প্রকার নির্মাণ সামগ্রী নিজেরা উপস্থিত থেকে ক্রয় করতে হবে। এজন্য অংশীদারদের মধ্য থেকে যারা সময় দিতে পারবেন তাদের কয়েকজনকে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত সবাইকে শতভাগ সততার নীতি অবলম্বন এবং স্বচ্ছতার জন্য সকল লেনদেনের রসিদ সংগ্রহে রাখা ও যথাযথ লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

নির্মাণ কাজ শুরুর আগেই আলোচনা করে ফ্ল্যাটের মালিকানা নির্ধারণ করে নেয়া ভালো। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না হলে লটারির মাধ্যমে ফ্ল্যাট ভাগাভাগি করা যায়। এক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। পছন্দসই ফ্লোরে সবার ফ্ল্যাট নাও হতে পারে। লটারির মাধ্যমে নির্ধারিত সমন্বিত সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে।

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের তালিকা তৈরি করে কাজ করলে পরিস্থিতি মোকাবিলা সহজ হয়। যেমন জরুরি কাজগুলো আগে এবং সৌন্দর্যবর্ধনমূলক কার্যক্রম অর্থের সংকুলান অনুযায়ী করা উত্তম। নির্বাচিত সদস্যরা নিয়মিত নির্মাণ কাজ তদারকি করবেন। ডিজাইন অনুযায়ি যথাযথ কাজ হচ্ছে কি না তা দেখভাল করবেন এবং ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। অন্যান্য সদস্যরাও নিয়মিত খোঁজখবর নিবেন এবং নিয়মিত বিরতিতে কাজের পর্যালোচনা করবেন।

পরামর্শভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ যৌথ উদ্যোগের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদের দৃষ্টি এড়িয়ে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে নকশায় পরিবর্তন বা বড় কোন কাজ করা যাবে না। এক্ষেত্রে ত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সবার পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি। ভুল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে সবাই ক্ষতির সম্মুখীন হবে অনেক ক্ষেত্রে যার কোন সমাধান নেই। এতে পারস্পরিক সম্পর্কে ফাটল ধরার সম্ভাবনা থাকে।

কমন ডিজাইনের জন্য সবার পরামর্শভিত্তিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ব্যক্তিগত ফ্ল্যাটের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা, টাইলস ও ফিটিংয়ের ক্ষেত্রে নিজস্ব পছন্দ অপছন্দের গুরুত্ব দিতে হবে। ভালো কোম্পানির নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে। ভালো মানের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভবনের লিফট, জেনারেটর ও সাবস্টেশন স্থাপন ও পরবর্তী সার্ভিসিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেসব এলাকায় গ্যাস সংযোগ নেই সেখানে ভবনের নির্দিষ্ট স্থানে সেন্ট্রাল লাইন ও সাব মিটার স্থাপন গ্যাস সরবরাহ সহজ হবে। গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে এ ব্যবস্থা করা যায়।

যৌথ বিনিয়োগে কাজের ক্ষেত্রে নানাবিধ বাধা ও প্রতিকূলতা আসতে পারে। বৈরি সময়ে গ্রুপের সদস্যদের সমস্যার ধরণ পর্যালোচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দুঃসময়ে নিজেদের বন্ধনকে আরও মজবুত করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। সকল বৈরি পরিস্থিতি ধৈর্যের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও ত্যাগের মাধ্যমে বড় বড় অর্জন সহজ হয়।

বিশ্বের বড় বড় কোম্পনির বেশিরভাগ যৌথ উদ্যোগেরই ফসল। বিশ্ব সেরা সফল যৌথ উদ্যোক্তা পল এলেন ও বিল গেটস। তারা যৌথভাবে মাইক্রোসফটের যাত্রা শুরু করেছিলেন একটি নড়বড়ে প্রতিষ্ঠান হিসেবে। তাদের প্রচেষ্টায় বর্তমানে মাইক্রোসফটের বাজার মূল্য ৫০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। বিল গেটস বলেন ‘সাফল্যের একটি মূল উপাদান হল ধৈর্য’। সফলতার জন্য ধৈর্যসহকারে চেষ্টা করে যেতে হবে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে নেমে পড়ুন আর তাড়াহুড়ো না করে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিন। আশা করা যায়, সাফল্য ধরা দিবে।

লেখক : ব্যাংকার।

ইমেইল: riyazenglish@gmail.com

ছবি

প্রসাধনী পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবি

ছবি

স্বর্ণের দাম আবার বাড়লো

ছবি

৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ ১০ হাজার টন সার কিনবে সরকার

এফবিসিসিআই নির্বাচন: সময় বাড়লো ৪৫ দিন

ছবি

পাট খাতের উন্নয়নে ‘সাসটেইনেবল মার্কেট এক্সেস বুটক্যাম্প’ কর্মসূচি শুরু

এক বছরে ভারতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন নেমেছে এক-তৃতীয়াংশে

৫ দিন বন্ধ থাকবে রূপালী ও এনসিসি ব্যাংকের সব কার্যক্রম

ছবি

ডলারের বিপরীতে টাকায় ঋণ নেয়ার সুযোগ

গত অর্থবছরে রফতানি আয় ৪৮ বিলিয়ন ডলার

নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার

ছবি

ব্যাগেজ রুলসে মোবাইল ও স্বর্ণ আনায় বড় ছাড়

ছবি

এনবিআরের আন্দোলনে অংশ নেওয়া আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের কথা জানালো দুদক

ছবি

প্রবাসী আয়ে রেকর্ড, রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি

ছবি

দেশের ৩২ বীমা কোম্পানি উচ্চ ঝুঁকিতে: আইডিআরএ চেয়ারম্যান

ছবি

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ৭ শতাংশেরও কম

ছবি

ডিএসইর নতুন সিওও মোহাম্মদ আসাদুর রহমান

ছবি

অর্থবছরের প্রথম দিন ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার

ছবি

ইলিশের দাম নির্ধারণ করে দেবে সরকার

ছবি

এনবিআরে আন্দোলন: এবার চার কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠালো সরকার

ছবি

৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা মায়ানমারকে হারিয়ে ইতিহাসের পথে বাংলাদেশের মেয়েরা

বিইআরসি ঘোষণা করল বেসরকারি এলপিজির নতুন দাম, ১২ কেজিতে ৩৯ টাকা কমতি

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানি আসছে, অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে নৌবাহিনী

ছবি

নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে এফবিসিসিআই নির্বাচন পিছিয়ে গেল

ছবি

রেকর্ড রেমিটেন্সে শেষ হলো অর্থবছর, প্রথমবারের মতো আয় ছাড়াল ৩০ বিলিয়ন ডলার

ছবি

‘শাটডাউন’ কর্মসূচিতে অংশ: চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনার বরখাস্ত

ছবি

প্রসাধনীতে শুল্ক বাড়ায় রাজস্ব নয়, বাড়বে অর্থপাচার-চোরাচালান: বিসিটিআইএ

ছবি

৪০ শতাংশ কৃষক যথাযথ মজুরি পান না: বিবিএসের জরিপ

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ১১ ব্যাংকের সম্পদের মান যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত

চট্টগ্রামে সমন্বিত তৈরি পোশাক শিল্পাঞ্চল গড়ার প্রস্তাব বিজিএমইএর

অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছেন ১৭ লাখের বেশি করদাতা: এনবিআর

ছবি

বাক্কো ও আকিজ টেলিকমের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত

মানবতাবিরোধী অপরাধ: শেখ হাসিনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি সোমবার

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ছয় মাসের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার অনুমোদন

ছবি

সব সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমলো

ছবি

‘শাটডাউন’ এর মধ্যে কাস্টমস চাকরিকে অত্যাবশ্যক ঘোষণা করল সরকার

ছবি

স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করলে তদন্তে ভয় নেই’— এনবিআর ইস্যুতে অর্থ উপদেষ্টার মন্তব্য

tab

অর্থ-বাণিজ্য

যৌথ উদ্যোগে বাড়ি নির্মাণ : প্রয়োজন পারস্পরিক সহযোগিতা ও সৎ মানসিকতা

রিয়াজ উদ্দিন

শুক্রবার, ২০ মে ২০২২

বেসরকারি কোম্পানির ছোট পদে চাকরি করেন মোশারেফ। ২০০৫ সালে চাকরিতে যোগদানের সময় ঢাকা শহরে ভাড়া বাসায় ওঠেন। কয়েক বছর চাকরি করার পর কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী বাড়ি করার জন্য বিনিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। পদবী অনুযায়ী ২০১২ সালে ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ পান। এত অল্প টাকায় ঢাকা শহরে ঘরবাড়ি করার স্বপ্ন অবাস্তব। ডেভেলপার কোম্পানিগুলোরও রয়েছে নানান সমস্যা।

অনেক ঘোরাঘুরি করে ঢাকার অদূরে মাতুয়াইলে ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে টিনসেডসহ ২ কাঠা জমি কিনতে সক্ষম হন। জমি কেনার পর নতুন নতুন সমস্যার মুখোমুখি হন। প্রথমত: জমি কিনতে জমানো সব টাকা শেষ। ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ ও সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে টাকা জমানো কঠিন। এ অবস্থা চলতে থাকলে সারা জীবনেও বাড়ি করা সম্ভব হবে না। টিনসেড বাড়িতেই থাকতে হবে।

দ্বিতীয়ত: জমিটি একটি স্টিল মিলের পাশেই। সারাদিন মিলের শব্দ আবাসিকতার পরিবেশ নষ্ট করে দেয়। বড় ধরনের অসুবিধায় পড়ে যান তিনি। সুযোগ খুঁজতে থাকেন ভালো কিছু করার। একই অবস্থা তার অনেক সহকর্মীর। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেন কীভাবে এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

সমমনা ২৫ জন মিলে রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে ৯ কাঠা জমি ঠিক করেন ২ কোটি ৫০ লাখ টাকায়। সে হিসেবে প্রত্যেকের ভাগে জমির জন্য ১০ লাখ টাকা লাগবে। মোশারেফ তার মাতুয়াইলের জমিটি দুই লাখ টাকা লাভে স্টিল মিল কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেন এবং সহকর্মীদের সঙ্গে যাত্রাবাড়ির জমির একটি শেয়ার কিনে নেন। ২০১৮ সালে দশ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। নিজেরা নির্মাণ কাজ তদারকি করে তিন বছরে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করেন। প্রতি ফ্লোরে ৪টি করে মোট ৩৬ টি ফ্ল্যাট। কেউ ১টি কেউ ২টি ফ্ল্যাটের শেয়ার নিয়েছে। নির্মাণ কাজে শেয়ার প্রতি ব্যয় হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের মালিক হতে পেরেছেন তিনি।

মোশারেফের মতো অনেকেই এখন যৌথ উদ্যোগে বাড়ি নির্মাণের দিকে ঝুঁকছেন। ডেভেলপার কোম্পানিগুলোর অধিক মুনাফা ও নানাবিধ ফাঁকির জাল থেকে মুক্তির জন্য বেশিরভাগ মানুষ এ পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন। ঢাকাসহ দেশের অনেক শহরে এ ধরণের অনেক উদ্যোগ চোখে পড়ে। যৌথভাবে বাড়ি নির্মাণ করেছেন এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।

বাড়ি নির্মাণের জন্য জমি নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অভিজ্ঞরা মনে করেন, প্রশস্ত রাস্তার পাশের জমি বাড়ি করার জন্য ভালো। ব্যাংক ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে বাড়ির সকল দলিল, মিউটেশন ও খাজনা পরিশোধের সর্বশেষ রসিদ ব্যাংকে জমা দিতে হয়। অনেক জমি রয়েছে যেগুলোর কাগজপত্র ও মালিকানায় ত্রুটি রয়েছে। ত্রুটিযুক্ত জমি ক্রয়ে ব্যাংকের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না। ত্রুটিপূর্ণ জমি ক্রয় করলে ভোগান্তিতে পড়বেন ও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই জমি ক্রয়ের আগেই জমির মালিকানা সঠিক কি না তা ভূমি অফিস ও আবাসন প্রকল্পের অফিসে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হতে হবে। এছাড়া অভিজ্ঞ আইনজীবির লিখিত মতামত গ্রহণ করতে হবে।

অভিজ্ঞ আর্কিটেক্ট দিয়ে ভবনের চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন করে কাজ শুরু করা উত্তম। অনেক আর্কিটেক্ট রয়েছেন যারা কম খরচে কাজ করে দিতে সম্মত হন কিন্তু তারা ত্রুটিপূর্ণ নকশা দিয়ে গ্রহককে প্রতারিত করেন। তাই অভিজ্ঞ আর্কিটেক্ট দিয়ে ভবনের পূর্ণাঙ্গ নকশা প্রস্তুত করে নিজেদের পছন্দ ও প্রয়োজনের সঙ্গে মিলিয়ে সেগুলো সংশোধন করে নিতে হবে।

নির্মাণ কাজের খরচ সীমার মধ্যে রাখতে সকল প্রকার নির্মাণ সামগ্রী নিজেরা উপস্থিত থেকে ক্রয় করতে হবে। এজন্য অংশীদারদের মধ্য থেকে যারা সময় দিতে পারবেন তাদের কয়েকজনকে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত সবাইকে শতভাগ সততার নীতি অবলম্বন এবং স্বচ্ছতার জন্য সকল লেনদেনের রসিদ সংগ্রহে রাখা ও যথাযথ লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

নির্মাণ কাজ শুরুর আগেই আলোচনা করে ফ্ল্যাটের মালিকানা নির্ধারণ করে নেয়া ভালো। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না হলে লটারির মাধ্যমে ফ্ল্যাট ভাগাভাগি করা যায়। এক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। পছন্দসই ফ্লোরে সবার ফ্ল্যাট নাও হতে পারে। লটারির মাধ্যমে নির্ধারিত সমন্বিত সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে।

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের তালিকা তৈরি করে কাজ করলে পরিস্থিতি মোকাবিলা সহজ হয়। যেমন জরুরি কাজগুলো আগে এবং সৌন্দর্যবর্ধনমূলক কার্যক্রম অর্থের সংকুলান অনুযায়ী করা উত্তম। নির্বাচিত সদস্যরা নিয়মিত নির্মাণ কাজ তদারকি করবেন। ডিজাইন অনুযায়ি যথাযথ কাজ হচ্ছে কি না তা দেখভাল করবেন এবং ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। অন্যান্য সদস্যরাও নিয়মিত খোঁজখবর নিবেন এবং নিয়মিত বিরতিতে কাজের পর্যালোচনা করবেন।

পরামর্শভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ যৌথ উদ্যোগের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদের দৃষ্টি এড়িয়ে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে নকশায় পরিবর্তন বা বড় কোন কাজ করা যাবে না। এক্ষেত্রে ত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সবার পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি। ভুল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে সবাই ক্ষতির সম্মুখীন হবে অনেক ক্ষেত্রে যার কোন সমাধান নেই। এতে পারস্পরিক সম্পর্কে ফাটল ধরার সম্ভাবনা থাকে।

কমন ডিজাইনের জন্য সবার পরামর্শভিত্তিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ব্যক্তিগত ফ্ল্যাটের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা, টাইলস ও ফিটিংয়ের ক্ষেত্রে নিজস্ব পছন্দ অপছন্দের গুরুত্ব দিতে হবে। ভালো কোম্পানির নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে। ভালো মানের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভবনের লিফট, জেনারেটর ও সাবস্টেশন স্থাপন ও পরবর্তী সার্ভিসিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেসব এলাকায় গ্যাস সংযোগ নেই সেখানে ভবনের নির্দিষ্ট স্থানে সেন্ট্রাল লাইন ও সাব মিটার স্থাপন গ্যাস সরবরাহ সহজ হবে। গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে এ ব্যবস্থা করা যায়।

যৌথ বিনিয়োগে কাজের ক্ষেত্রে নানাবিধ বাধা ও প্রতিকূলতা আসতে পারে। বৈরি সময়ে গ্রুপের সদস্যদের সমস্যার ধরণ পর্যালোচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দুঃসময়ে নিজেদের বন্ধনকে আরও মজবুত করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। সকল বৈরি পরিস্থিতি ধৈর্যের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও ত্যাগের মাধ্যমে বড় বড় অর্জন সহজ হয়।

বিশ্বের বড় বড় কোম্পনির বেশিরভাগ যৌথ উদ্যোগেরই ফসল। বিশ্ব সেরা সফল যৌথ উদ্যোক্তা পল এলেন ও বিল গেটস। তারা যৌথভাবে মাইক্রোসফটের যাত্রা শুরু করেছিলেন একটি নড়বড়ে প্রতিষ্ঠান হিসেবে। তাদের প্রচেষ্টায় বর্তমানে মাইক্রোসফটের বাজার মূল্য ৫০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। বিল গেটস বলেন ‘সাফল্যের একটি মূল উপাদান হল ধৈর্য’। সফলতার জন্য ধৈর্যসহকারে চেষ্টা করে যেতে হবে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে নেমে পড়ুন আর তাড়াহুড়ো না করে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিন। আশা করা যায়, সাফল্য ধরা দিবে।

লেখক : ব্যাংকার।

ইমেইল: riyazenglish@gmail.com

back to top