এবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে আনারস বাগানের পরিত্যাক্ত পাতা থেকে হবে উন্নতমানের সুতা। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের কয়েকটি আনারস বাগান পরিদর্শন ও ঢাকায় নিয়ে পাতা পরীক্ষা করে এমনই প্রমাণ পেয়েছে অ্যাগ্রো ভিশন নামে একটি সংগঠন। ইতিমধ্যেই এর থেকে ফাইভার বের করে রপ্তানি করা হচ্ছে নেদারল্যান্ডসে।
অ্যাগ্রো ভিশনের চেয়ারম্যান রাজীব দেব জানান, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও বড়লেখায় প্রচুর আনারস চাষ হয়। আর আনারসের নিয়ম হলো গাছ থেকে আনারস কাটার পর ওই গাছে আর নতুন করে ফল আসে না। ওই অংশের অধিকাংশ পাতা কেটে ফেলতে হয়। কিন্তু একবার আনারস ধরার পর কেটে ফেলা ডগা বা পাতা থেকেই এখন তৈরি হবে সুতা। পরীক্ষায় এমনই প্রমান পেয়েছেন তারা।
তিনি আরও জানান, এ জেলার প্রচুর আসারস বাগানকে সামনে রেখে তিনি জাপানি কনসালটেন্ট নিয়ে শ্রীমঙ্গলে আসেন। শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন আনারস বাগান পরিদর্শন করেন একাধিক আনারস বাগান মালিক ও শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেন। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে তিনি আশাবাদী এই এলাকার আনারস বাগানকে সামনে রেখে তিনি একটি সুতা তৈরির কারখানা করতে পারবেন।
অ্যাগ্রো ভিশনের জাপানি কনসালটেন্ট টিমের প্রধান ওয়াদা সুহি মাঠে দেখেই তিনি নিশ্চিত করেন, এটি দিয়ে নরমাল নয় উন্নতমানের সুতা হবে। পরে তারা শ্রীমঙ্গলের আনারস উৎপাদনকারী কাজী সামছুল হক ও জলিল খানের মাধ্যমে প্রায় ৫০ কেজি আনারসের পাতা সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে যান।
জাপানি কনসালটেন্ট ওয়াদা সুহি জানান, ঢাকায় এনে তারা প্রাথমিক পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন যা থেকে ভালো ফাইভার পাওয়া গেছে। পূনাঙ্গ পরীক্ষা নিরিক্ষার পর ওই এলাকার আনারসের পাতাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে একটি সুতার কারখানা। আনারসের সুতা খুবই মুলাইম। এর থেকে তৈরি কাপড় আরামদায়ক।
এ বিষয়ে চাষি জলিল খান জানান, অ্যাগ্রো ভিশনের চেয়ারম্যান রাজীব দেব জাপানি কনসালটেন্ট নিয়ে শ্রীমঙ্গলের মহাজেরাবাদ, বিষামনী, ডুলুছড়া, রাধানগরসহ বেশ কিছু এলাকায় আনারস বাগানগুলো পরিদর্শন করেন। বাগান পরিদর্শন কালে জাপানি কনসালটেন্ট আনারসের ডগা ভেঙে এর আস বের করে দেখান যা থেকে সুতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে জানান।
এ বিষয়ে চাষি কাজী সামছুল হক জানান, একটি পরিপূর্ণ আনারস গাছে ৩৬টা পাতা হয়। একটি গাছে একবারই ফলধরে। নতুন করে আবার ডেম দেয় (ওই গাছের গুড়ায় নতুন গাছ গজায়) আনারস কাটার পর ওই গাছের অন্তত ১৫ থেকে ২০টা পাতা কেটে ফেলা হয়। আর ডেম থেকে নতুন গাছ হওয়ার পর পুরোটাই কাটা যায়। এই পাতাগুলো নিচে পড়ে নষ্ট হয়। মাটিতেই পচে মিশে যায়। কেউ কেউ গবাদি পশুর জন্যও নিয়ে যান।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল কৃষি কর্মকর্তা নিলুপার ইয়াসমিন মুনালিসা সুইটি জানান গত মার্চ মাসে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) কৃষিবিদ ড. রাজু আহমদ শ্রীমঙ্গল থেকে পাতা সংগ্রহ করেন পরবর্তীতে পরীক্ষা করে তা সুতা তৈরির জন্য উপযুক্ত বলে জানান। ইতিমধ্যে তারা একটি প্রজেক্ট নিয়ে মধুপুরে কাজ করছেন। শ্রীমঙ্গলে ৪০৯ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়। যদি অ্যাগ্রো ভিশন শ্রীমঙ্গলে সুতার তৈরির কারখানা করে তাহলে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে যে ধরনের সাহায্য প্রয়োজন তারা তা করবেন। কারণ এখানে আনারসের পাতা থেকে সুতা তৈরি হলে তার এলাকার কৃষকেরই উপকার হবে।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর ১২০২ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ২০ হাজার ৮০০ মেট্রিকটন। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রায় ৫শত কৃষক রয়েছেন। যদি এখানে অ্যাগ্রো ভিশন বা অন্যকেউ আনারসের পাতা থেকে সুতা তৈরির উদ্যোগ নেন তাহলে এই কৃষকরা অতিরিক্ত কিছু আয়ের সুযোগ পাবেন এবং এতে উৎসাহিত হয়ে এ এলাকায় আনারসের চাষাবাদও বাড়বে।
বুধবার, ২৫ মে ২০২২
এবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে আনারস বাগানের পরিত্যাক্ত পাতা থেকে হবে উন্নতমানের সুতা। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের কয়েকটি আনারস বাগান পরিদর্শন ও ঢাকায় নিয়ে পাতা পরীক্ষা করে এমনই প্রমাণ পেয়েছে অ্যাগ্রো ভিশন নামে একটি সংগঠন। ইতিমধ্যেই এর থেকে ফাইভার বের করে রপ্তানি করা হচ্ছে নেদারল্যান্ডসে।
অ্যাগ্রো ভিশনের চেয়ারম্যান রাজীব দেব জানান, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও বড়লেখায় প্রচুর আনারস চাষ হয়। আর আনারসের নিয়ম হলো গাছ থেকে আনারস কাটার পর ওই গাছে আর নতুন করে ফল আসে না। ওই অংশের অধিকাংশ পাতা কেটে ফেলতে হয়। কিন্তু একবার আনারস ধরার পর কেটে ফেলা ডগা বা পাতা থেকেই এখন তৈরি হবে সুতা। পরীক্ষায় এমনই প্রমান পেয়েছেন তারা।
তিনি আরও জানান, এ জেলার প্রচুর আসারস বাগানকে সামনে রেখে তিনি জাপানি কনসালটেন্ট নিয়ে শ্রীমঙ্গলে আসেন। শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন আনারস বাগান পরিদর্শন করেন একাধিক আনারস বাগান মালিক ও শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেন। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে তিনি আশাবাদী এই এলাকার আনারস বাগানকে সামনে রেখে তিনি একটি সুতা তৈরির কারখানা করতে পারবেন।
অ্যাগ্রো ভিশনের জাপানি কনসালটেন্ট টিমের প্রধান ওয়াদা সুহি মাঠে দেখেই তিনি নিশ্চিত করেন, এটি দিয়ে নরমাল নয় উন্নতমানের সুতা হবে। পরে তারা শ্রীমঙ্গলের আনারস উৎপাদনকারী কাজী সামছুল হক ও জলিল খানের মাধ্যমে প্রায় ৫০ কেজি আনারসের পাতা সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে যান।
জাপানি কনসালটেন্ট ওয়াদা সুহি জানান, ঢাকায় এনে তারা প্রাথমিক পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন যা থেকে ভালো ফাইভার পাওয়া গেছে। পূনাঙ্গ পরীক্ষা নিরিক্ষার পর ওই এলাকার আনারসের পাতাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে একটি সুতার কারখানা। আনারসের সুতা খুবই মুলাইম। এর থেকে তৈরি কাপড় আরামদায়ক।
এ বিষয়ে চাষি জলিল খান জানান, অ্যাগ্রো ভিশনের চেয়ারম্যান রাজীব দেব জাপানি কনসালটেন্ট নিয়ে শ্রীমঙ্গলের মহাজেরাবাদ, বিষামনী, ডুলুছড়া, রাধানগরসহ বেশ কিছু এলাকায় আনারস বাগানগুলো পরিদর্শন করেন। বাগান পরিদর্শন কালে জাপানি কনসালটেন্ট আনারসের ডগা ভেঙে এর আস বের করে দেখান যা থেকে সুতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে জানান।
এ বিষয়ে চাষি কাজী সামছুল হক জানান, একটি পরিপূর্ণ আনারস গাছে ৩৬টা পাতা হয়। একটি গাছে একবারই ফলধরে। নতুন করে আবার ডেম দেয় (ওই গাছের গুড়ায় নতুন গাছ গজায়) আনারস কাটার পর ওই গাছের অন্তত ১৫ থেকে ২০টা পাতা কেটে ফেলা হয়। আর ডেম থেকে নতুন গাছ হওয়ার পর পুরোটাই কাটা যায়। এই পাতাগুলো নিচে পড়ে নষ্ট হয়। মাটিতেই পচে মিশে যায়। কেউ কেউ গবাদি পশুর জন্যও নিয়ে যান।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল কৃষি কর্মকর্তা নিলুপার ইয়াসমিন মুনালিসা সুইটি জানান গত মার্চ মাসে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) কৃষিবিদ ড. রাজু আহমদ শ্রীমঙ্গল থেকে পাতা সংগ্রহ করেন পরবর্তীতে পরীক্ষা করে তা সুতা তৈরির জন্য উপযুক্ত বলে জানান। ইতিমধ্যে তারা একটি প্রজেক্ট নিয়ে মধুপুরে কাজ করছেন। শ্রীমঙ্গলে ৪০৯ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়। যদি অ্যাগ্রো ভিশন শ্রীমঙ্গলে সুতার তৈরির কারখানা করে তাহলে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে যে ধরনের সাহায্য প্রয়োজন তারা তা করবেন। কারণ এখানে আনারসের পাতা থেকে সুতা তৈরি হলে তার এলাকার কৃষকেরই উপকার হবে।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর ১২০২ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ২০ হাজার ৮০০ মেট্রিকটন। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রায় ৫শত কৃষক রয়েছেন। যদি এখানে অ্যাগ্রো ভিশন বা অন্যকেউ আনারসের পাতা থেকে সুতা তৈরির উদ্যোগ নেন তাহলে এই কৃষকরা অতিরিক্ত কিছু আয়ের সুযোগ পাবেন এবং এতে উৎসাহিত হয়ে এ এলাকায় আনারসের চাষাবাদও বাড়বে।