alt

অর্থ-বাণিজ্য

সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণের আশা

রেজাউল করিম : বুধবার, ০৮ জুন ২০২২

করোনা মহামারীতে গত দুই বছরে অনেক মানুষ বেকার হয়েছিল। এখন ধীরে ধীরে অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলে অনেকে কাজে ফিরেছেন। অনেকে ফিরতে পারেননি। সেই সময় অনেকের বেতন কমেছিল। অনেকে সেই বেতনে ফিরে যেতে পারেননি। এতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের আয় রোজগার কমে গেছে। অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আমদানি পণ্যের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের সব নিত্যপণ্যের বাজারে। একদিকে মানুষের আয় কমেছে, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এই আয়-ব্যয়ের সমীকরণ মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তারা তাকিয়ে আছে আজকের বাজেটে তাদের জন্য কী থাকছে সেদিকে। তাই বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়ার সঙ্গে দেশের নিত্যপণ্যের বাজার কিভাবে সমন্নয় করবেন, সেটিই অর্থমন্ত্রীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

এমন পরিস্থিতিতে আজ ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি দেশের জিডিপির ১৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এবারে বাজেট ৭৪ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ২৮ শতাংশ বাড়ছে। তবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ছিল জিডিপির ১৭.৫ শতাংশ। সেই হিসাবে চলতি বাজেটের চেয়ে আসন্ন বাজেট কমছে। এই বাজেট যেন সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণের জন্য হয়, তা প্রত্যাশা অর্থনীতিবিদদেরও। এবারের বাজেট যেন নিম্ন আয়ের মানুষের কথা মাথায় রেখে করা হয়, সেটি বলেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘প্রতিনিয়ত নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ কষ্টে আছেন। এবারের বাজেটে তাই নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সহায়তার দরকার হবে। নিম্ন আয় ও নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির আওতা ঢাকার বাইরে বিস্তৃত করা দরকার। খাদ্য-সহায়তা ও নগদ সহায়তার মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।’

গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক এমএ রাজ্জাকও বাজেটে সাধারণ জনগণের জন্য কি থাকছে সেটিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এ বছর খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গরিব মানুষ কিভাবে মুল্যস্ফীতির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটি সরকারকে দেখতে হবে। যদি সহজে গরিব মানুষের কাছে খাবার পৌঁছানো যায়, তাহলে অন্তত খাদ্য নিরাপত্তাটা দেয়া যাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাই সবচেয়ে বড় কাজ।’

এজন্য তিনি বাজেটে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে বরাদ্দ আরও বাড়ানোর সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, ‘সরকার সাধারণ মানুষকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৬২ লাখ পরিবারকে ৫ মাস ৩০ কেজি করে চাল দিচ্ছে। এর পেছনে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। এটাকে আগামী বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করছি। এটি হলে ২ কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া সম্ভব হবে। এটা কিন্তু মোট বাজেট বরাদ্দের এক শতাংশের নিচে এবং এবার এটাই সরকারের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।’

নিত্যপণ্যের দাম যে কতটা বেড়েছে তা মূল্যস্ফীতির দিকে তাকালে সহজে আঁচ করা যায়। গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এক প্রতিবেদনে বলেছে, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ শতাংশের বেশি।

অবশ্য সরকারি সংস্থা বিবিএস বলছে, এই সময়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। তবে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান সরকারের এই হিসাবকে অযৌক্তিক মনে করেন। তিনি বলেন, ‘পণ্যমূল্য নিয়ে সরকারি সংস্থা বিবিএস যে তথ্য দিচ্ছে তা বাস্তবের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এ ক্ষেত্রে যদি সঠিক তথ্য তুলে আনা না হয়, তবে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া টেকসই হবে না। বিবিএস পুরোনো ভিত্তি বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হিসাব করছে, যা বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য না।’

শুধু সানেমই নয়, গবেষণা সংস্থা সিপিডিও মনে করে মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ হওয়া অযৌক্তিক কিছু নয়। সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘সরকার ৬ দশমিক ২২ শতাংশের যে মূল্যস্ফীতির কথা বলছে, এ দাবির সঙ্গে বাস্তবতার আদৌ মিল নেই। এ তথ্য বিজ্ঞানসম্মতও নয়। মূল্যস্ফীতি এখন ১২ শতাংশ হওয়াও অস্বাভাবিক নয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

করোনা মহামারী দেশের দারিদ্রের হারকে পাঁচ বছর আগে নিয়ে গেছে। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে দারিদ্রের হার যতটা কমেছিল, এই পাঁচ বছরে বেড়ে আবার সেই জায়গায় চলে গেছে। সরকারের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) যৌথভাবে একটি প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ। এর আগে ২০১৬ সালেও দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল একই।

বর্তমানে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব দরিদ্র মানুষের জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য সরকার সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় কিছু মানুষকে সহায়তা করে। তবে এর আওতা আরও বাড়ানোর পরার্মশ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে এক লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে নতুন বাজেটে পাঁচ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ছে। নতুন বাজেটে বরাদ্দ চলতি বাজেটের তুলনায় ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা রয়েছে।

তবে বাজেটে আকার বড় করে দেখা হলেও জিডিপির তুলনায় তা ২০২০-২১ অর্থবছরের থেকেও এই বরাদ্দ কম। এই অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ছিল ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ০১ শতাংশ। আর চলতি বাজেটে এ খাতে এক লাখ সাত হাজার ৬১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এটি ৬ লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার মোট বাজেটের ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। আর জিডিপির ৩ দশমিক ১১ শতাংশ।

এই সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় ১২৩টি কর্মসূচি রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন করছে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। আটটি কর্মসূচি হচ্ছে নগদ ভাতা, ১১টি খাদ্য সহায়তা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এবারের বাজেট প্রণয়ন সরকারের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং। করোনাপরবর্তী দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে এবার ব্যতিক্রমী বাজেট ঘোষণা করতে হবে। এছাড়া করোনার কারণে পিছিয়ে পড়া মানুষদের নতুন করে বাড়তি সুরক্ষা দিতে বাজেটে থাকতে হবে বিশেষ উদ্যোগ।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ঘোষিত বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এবার ৭৪ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হবে। এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হচ্ছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। মোট বিনিয়োগ ধরা হয়েছে জিডিপির ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি খাত থেকে ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ ও সরকারি খাত থেকে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বিনিয়োগ আসবে।

বাজেটে টাকার অঙ্কে নতুন জিডিপির আকার হচ্ছে ৪৪ লাখ ১২ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া আছে। আগামী অর্থবছরে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয়েছে যা জিডিপির ৮ দশমিক ৪ শতাংশ।

আগামী বাজেটে মোট আয়ের মধ্যে নন-এনবিআর থেকে প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। এবারের বাজেটে করবহির্ভূত রাজস্ব ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ছিল ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা, আসন্ন বাজেটে ২৮ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ঘাটতি ধরা হবে ২ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকা।

ঋণ পুনর্গঠনে ব্যাংকগুলো পেতে যাচ্ছে বিশেষ ছাড়

জুলাইয়ের ১৯ দিনে এলো ১৮ হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স

ছবি

এনবিআরের সিঙ্গেল উইন্ডোর লাইসেন্স সেবা ৪.৩০ লাখ ছাড়িয়ে

ছবি

ডিএসইতে লেনদেন ছাড়ালো ৮০০ কোটি টাকা

সাংহাইয়ে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সেমিনার, অংশ নিচ্ছে ১শ’র বেশি চীনা কোম্পানি

ছবি

পরিবহন চাঁদাবাজি ও বাজার তদারকির দুর্বলতা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণ

আগামী ৫ বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭ লাখ টন করে গম আমদানি করবে বাংলাদেশ

১১ বছর পূর্ণ করেছে ইউএস-বাংলা

৪০ বছরের ব্যবসায় এমন সংকট দেখিনি: এ কে আজাদ

ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের পুনর্মূল্যায়ন দাবি ডিবিএর

ছবি

বিমান মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প নির্ধারিত সময় ও বাজেটের মধ্যেই শেষ করার নির্দেশ

ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড নেয়ার নিয়ম

ছবি

দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আবার কমলো

ঢাকায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কিছু বুথ ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে

ছবি

চালু হলো ব্র্যাক ব্যাংকের ‘ডিজিটাল ফার্স্ট’ শাখা

ছবি

প্রিপেইড কার্ড চালু করল মাস্টারকার্ড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও পাঠাও পে

ছবি

বাংলাদেশের গেমিং দুনিয়ায় এলো ইনফিনিক্স জিটি ৩০ প্রো

ছবি

পরিবেশবান্ধব কারখানার সনদ পেল আরও ৩ পোশাক প্রতিষ্ঠান

ছবি

অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই করতে ‘ভালো অনুশীলন’ বজায় রাখার আহ্বান

ড্রাইডক দায়িত্ব গ্রহণের পর চট্টগ্রাম বন্দরে দৈনিক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে

ছবি

পুঁজিবাজারে রেকর্ড লেনদেন, মূলধন বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা

ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিতে রপ্তানি কমেছে জাপানের

ছবি

সরকার বলছে মজুত পর্যাপ্ত, তবুও চালের দাম বাড়ছে

গতবারের চেয়ে জুনে ১০ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায়

মার্কিন তুলা উৎপাদনকারীরা বাংলাদেশের বস্ত্র খাতের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়

শ্রীলঙ্কার প্যান এশিয়া ব্যাংকিং করপোরেশন কর্মকর্তাদের সম্মাননা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশে দেশে কেন্দ্র্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনা বাড়ছে

ছবি

স্টারলিংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু, অফিসিয়াল রিসেলার বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড

৫ আগস্ট ব্যাংক বন্ধ থাকবে

স্বল্প মেয়াদি বিদেশি ঋণের স্থিতি কমেছে ৭.৪২%

ছবি

তুলাসহ বিভিন্ন গার্মেন্টস পণ্যে উৎসে কর প্রত্যাহার

শেষ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে

রেমিট্যান্স সেবায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও বিকাশের চুক্তি

ঢাকায় ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায়ীদের নিয়ে ভিসার পেমেন্ট সেবা কর্মশালা

ছবি

দুর্বল রাজস্ব, মূল্যস্ফীতি ও বাজেট ঘাটতিতে স্থবির অর্থনীতি

গ্রামীণফোন ৬ মাসে মুনাফা করেছে ১,৫১৩ কোটি টাকা

tab

অর্থ-বাণিজ্য

সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণের আশা

রেজাউল করিম

বুধবার, ০৮ জুন ২০২২

করোনা মহামারীতে গত দুই বছরে অনেক মানুষ বেকার হয়েছিল। এখন ধীরে ধীরে অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলে অনেকে কাজে ফিরেছেন। অনেকে ফিরতে পারেননি। সেই সময় অনেকের বেতন কমেছিল। অনেকে সেই বেতনে ফিরে যেতে পারেননি। এতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের আয় রোজগার কমে গেছে। অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আমদানি পণ্যের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের সব নিত্যপণ্যের বাজারে। একদিকে মানুষের আয় কমেছে, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এই আয়-ব্যয়ের সমীকরণ মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তারা তাকিয়ে আছে আজকের বাজেটে তাদের জন্য কী থাকছে সেদিকে। তাই বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়ার সঙ্গে দেশের নিত্যপণ্যের বাজার কিভাবে সমন্নয় করবেন, সেটিই অর্থমন্ত্রীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

এমন পরিস্থিতিতে আজ ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি দেশের জিডিপির ১৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এবারে বাজেট ৭৪ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ২৮ শতাংশ বাড়ছে। তবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ছিল জিডিপির ১৭.৫ শতাংশ। সেই হিসাবে চলতি বাজেটের চেয়ে আসন্ন বাজেট কমছে। এই বাজেট যেন সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণের জন্য হয়, তা প্রত্যাশা অর্থনীতিবিদদেরও। এবারের বাজেট যেন নিম্ন আয়ের মানুষের কথা মাথায় রেখে করা হয়, সেটি বলেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘প্রতিনিয়ত নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ কষ্টে আছেন। এবারের বাজেটে তাই নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সহায়তার দরকার হবে। নিম্ন আয় ও নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির আওতা ঢাকার বাইরে বিস্তৃত করা দরকার। খাদ্য-সহায়তা ও নগদ সহায়তার মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।’

গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক এমএ রাজ্জাকও বাজেটে সাধারণ জনগণের জন্য কি থাকছে সেটিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এ বছর খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গরিব মানুষ কিভাবে মুল্যস্ফীতির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটি সরকারকে দেখতে হবে। যদি সহজে গরিব মানুষের কাছে খাবার পৌঁছানো যায়, তাহলে অন্তত খাদ্য নিরাপত্তাটা দেয়া যাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাই সবচেয়ে বড় কাজ।’

এজন্য তিনি বাজেটে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে বরাদ্দ আরও বাড়ানোর সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, ‘সরকার সাধারণ মানুষকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৬২ লাখ পরিবারকে ৫ মাস ৩০ কেজি করে চাল দিচ্ছে। এর পেছনে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। এটাকে আগামী বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করছি। এটি হলে ২ কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া সম্ভব হবে। এটা কিন্তু মোট বাজেট বরাদ্দের এক শতাংশের নিচে এবং এবার এটাই সরকারের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।’

নিত্যপণ্যের দাম যে কতটা বেড়েছে তা মূল্যস্ফীতির দিকে তাকালে সহজে আঁচ করা যায়। গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এক প্রতিবেদনে বলেছে, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ শতাংশের বেশি।

অবশ্য সরকারি সংস্থা বিবিএস বলছে, এই সময়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। তবে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান সরকারের এই হিসাবকে অযৌক্তিক মনে করেন। তিনি বলেন, ‘পণ্যমূল্য নিয়ে সরকারি সংস্থা বিবিএস যে তথ্য দিচ্ছে তা বাস্তবের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এ ক্ষেত্রে যদি সঠিক তথ্য তুলে আনা না হয়, তবে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া টেকসই হবে না। বিবিএস পুরোনো ভিত্তি বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হিসাব করছে, যা বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য না।’

শুধু সানেমই নয়, গবেষণা সংস্থা সিপিডিও মনে করে মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ হওয়া অযৌক্তিক কিছু নয়। সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘সরকার ৬ দশমিক ২২ শতাংশের যে মূল্যস্ফীতির কথা বলছে, এ দাবির সঙ্গে বাস্তবতার আদৌ মিল নেই। এ তথ্য বিজ্ঞানসম্মতও নয়। মূল্যস্ফীতি এখন ১২ শতাংশ হওয়াও অস্বাভাবিক নয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

করোনা মহামারী দেশের দারিদ্রের হারকে পাঁচ বছর আগে নিয়ে গেছে। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে দারিদ্রের হার যতটা কমেছিল, এই পাঁচ বছরে বেড়ে আবার সেই জায়গায় চলে গেছে। সরকারের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) যৌথভাবে একটি প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ। এর আগে ২০১৬ সালেও দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল একই।

বর্তমানে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব দরিদ্র মানুষের জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য সরকার সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় কিছু মানুষকে সহায়তা করে। তবে এর আওতা আরও বাড়ানোর পরার্মশ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে এক লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে নতুন বাজেটে পাঁচ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ছে। নতুন বাজেটে বরাদ্দ চলতি বাজেটের তুলনায় ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা রয়েছে।

তবে বাজেটে আকার বড় করে দেখা হলেও জিডিপির তুলনায় তা ২০২০-২১ অর্থবছরের থেকেও এই বরাদ্দ কম। এই অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ছিল ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ০১ শতাংশ। আর চলতি বাজেটে এ খাতে এক লাখ সাত হাজার ৬১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এটি ৬ লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার মোট বাজেটের ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। আর জিডিপির ৩ দশমিক ১১ শতাংশ।

এই সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় ১২৩টি কর্মসূচি রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন করছে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। আটটি কর্মসূচি হচ্ছে নগদ ভাতা, ১১টি খাদ্য সহায়তা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এবারের বাজেট প্রণয়ন সরকারের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং। করোনাপরবর্তী দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে এবার ব্যতিক্রমী বাজেট ঘোষণা করতে হবে। এছাড়া করোনার কারণে পিছিয়ে পড়া মানুষদের নতুন করে বাড়তি সুরক্ষা দিতে বাজেটে থাকতে হবে বিশেষ উদ্যোগ।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ঘোষিত বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এবার ৭৪ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হবে। এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হচ্ছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। মোট বিনিয়োগ ধরা হয়েছে জিডিপির ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি খাত থেকে ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ ও সরকারি খাত থেকে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বিনিয়োগ আসবে।

বাজেটে টাকার অঙ্কে নতুন জিডিপির আকার হচ্ছে ৪৪ লাখ ১২ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া আছে। আগামী অর্থবছরে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয়েছে যা জিডিপির ৮ দশমিক ৪ শতাংশ।

আগামী বাজেটে মোট আয়ের মধ্যে নন-এনবিআর থেকে প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। এবারের বাজেটে করবহির্ভূত রাজস্ব ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ছিল ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা, আসন্ন বাজেটে ২৮ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ঘাটতি ধরা হবে ২ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকা।

back to top