বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসেবে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত মে মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। যা এপ্রিলে ছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা ১৮ মাসে সর্বোচ্চ। এবার সে রেকর্ড ভেঙে ৮ বছরের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি মে মাসে।
রোববার (১৯ জুন) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া মে মাসের ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) হালনাগাদ তথ্যে এমনটা বলা হয়েছে।
বিবিএস জানায়, মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। গত কয়েক মাসের মতো মে মাসে শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এই মাসে গ্রামে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আর শহরে হয়েছে ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ শহরের চেয়ে গ্রাম এলাকায় পণ্যমূল্য ও অন্যান্য সেবার দাম বেড়েছে বেশি।
বিবিএস আরও জানায়, নিত্যপণ্যের প্রভাবে মে মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, যা গত মাসে ছিল মাত্র ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। তবে একই মাসে খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ, যা গত মাসে ছিল ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মে মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। গত মাসে যা ছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ।
এদিকে বাজারে লাগাম ছাড়া নিত্যপণ্যের দাম। তবুও ক্রেতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার প্রত্যাশা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অথচ বাজেট ঘোষণার পরেই রেকর্ড হারে বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম।
বিবিএস এর প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ৪৭টি অত্যাবশ্যক পণ্যের মধ্যে অধিকাংশের দাম বেড়েছে এক মাসের ব্যবধানে। মে মাসে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ টাকা ১৫ পয়সা, গত মাসে যা ছিল ৬৯ টাকা ১১ পয়সা। একইভাবে পাইজাম বেড়ে হয়েছে ৬২ টাকা ৭২ পয়সা, গত মাসে যা ছিল ৫৮ টাকা ০৫ পয়সা। দাম বেড়েছে বোরো, আটা, মুগডাল, গুড়, রুই মাছ, ইলিশ, শিং মাছ, মাংস, ডিম, দুধের দাম। সয়াবিন, শুকনা মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, আলু, কাঁচা মরিচ, পেঁপে, দুধ, কাপড়, মেলামাইনের বাসনের দামও চড়া। সিমেন্ট, কেরোসিন, নারকেল তেল, সিগারেট ও সাদা কাগজের দামও চড়া। তবে বিবিএস এর হিসেবে দেখা গেছে, ম্যাচ ও ব্লেডের দাম বাড়েনি।
এর আগে ২০১৪ সালের মে মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এরপর আর কখনও এতটা চড়েনি অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অভ্যন্তরীণ বাজারে কঠোর তদারকি করে দেশে উৎপাদিত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো সম্ভব। প্রয়োজন চালের দাম সহনীয় রাখতে বাজার কৌশল নির্ধারণ করা; পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গরিব মানুষের বাজেটের মাধ্যমে নগদ ও খাদ্যসহায়তা দিয়ে সুরক্ষা দিতে হবে। কেননা, মূল্যস্ফীতি একধরনের করের মতো। জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মজুরি বা আয় না বাড়লে সীমিত আয়ের মানুষের ওপর চাপ বাড়ে। তাদের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
আশপাশের দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি তুলনামূলক কম। গত এপ্রিলে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে গত এপ্রিলে ভারতে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ ও নেপালে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। আর গত এপ্রিলে যুক্তরাজ্যে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি উঠেছে সাড়ে ৮ শতাংশে।
সাম্প্রতিক সময়
রোববার, ১৯ জুন ২০২২
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসেবে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত মে মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। যা এপ্রিলে ছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা ১৮ মাসে সর্বোচ্চ। এবার সে রেকর্ড ভেঙে ৮ বছরের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি মে মাসে।
রোববার (১৯ জুন) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া মে মাসের ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) হালনাগাদ তথ্যে এমনটা বলা হয়েছে।
বিবিএস জানায়, মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। গত কয়েক মাসের মতো মে মাসে শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এই মাসে গ্রামে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আর শহরে হয়েছে ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ শহরের চেয়ে গ্রাম এলাকায় পণ্যমূল্য ও অন্যান্য সেবার দাম বেড়েছে বেশি।
বিবিএস আরও জানায়, নিত্যপণ্যের প্রভাবে মে মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, যা গত মাসে ছিল মাত্র ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। তবে একই মাসে খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ, যা গত মাসে ছিল ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মে মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। গত মাসে যা ছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ।
এদিকে বাজারে লাগাম ছাড়া নিত্যপণ্যের দাম। তবুও ক্রেতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার প্রত্যাশা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অথচ বাজেট ঘোষণার পরেই রেকর্ড হারে বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম।
বিবিএস এর প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ৪৭টি অত্যাবশ্যক পণ্যের মধ্যে অধিকাংশের দাম বেড়েছে এক মাসের ব্যবধানে। মে মাসে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ টাকা ১৫ পয়সা, গত মাসে যা ছিল ৬৯ টাকা ১১ পয়সা। একইভাবে পাইজাম বেড়ে হয়েছে ৬২ টাকা ৭২ পয়সা, গত মাসে যা ছিল ৫৮ টাকা ০৫ পয়সা। দাম বেড়েছে বোরো, আটা, মুগডাল, গুড়, রুই মাছ, ইলিশ, শিং মাছ, মাংস, ডিম, দুধের দাম। সয়াবিন, শুকনা মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, আলু, কাঁচা মরিচ, পেঁপে, দুধ, কাপড়, মেলামাইনের বাসনের দামও চড়া। সিমেন্ট, কেরোসিন, নারকেল তেল, সিগারেট ও সাদা কাগজের দামও চড়া। তবে বিবিএস এর হিসেবে দেখা গেছে, ম্যাচ ও ব্লেডের দাম বাড়েনি।
এর আগে ২০১৪ সালের মে মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এরপর আর কখনও এতটা চড়েনি অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অভ্যন্তরীণ বাজারে কঠোর তদারকি করে দেশে উৎপাদিত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো সম্ভব। প্রয়োজন চালের দাম সহনীয় রাখতে বাজার কৌশল নির্ধারণ করা; পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গরিব মানুষের বাজেটের মাধ্যমে নগদ ও খাদ্যসহায়তা দিয়ে সুরক্ষা দিতে হবে। কেননা, মূল্যস্ফীতি একধরনের করের মতো। জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মজুরি বা আয় না বাড়লে সীমিত আয়ের মানুষের ওপর চাপ বাড়ে। তাদের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
আশপাশের দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি তুলনামূলক কম। গত এপ্রিলে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে গত এপ্রিলে ভারতে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ ও নেপালে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। আর গত এপ্রিলে যুক্তরাজ্যে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি উঠেছে সাড়ে ৮ শতাংশে।
সাম্প্রতিক সময়