অসহায় ও দিশেহারা সাধারণ মানুষ
বৈশ্বিক মহামারীর পর বিশ্ববাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, সর্বোপরি দেশে সব ধরনেরে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্য পরিবহনে ভাড়া বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে গত কয়েক মাস ধরে দেশের নিত্যপণ্যের বাজার হয়ে পড়ে টালমাটাল। এসব কারণে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত নিত্যপণ্যসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম। অস্বাভাবিকভাবে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অসহায় ও দিশেহারা হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ সবজির দামই বেড়েছে। কাঁচা মরিচের ঝাঁজ কমলেও কমেনি শিম, বেগুন, করলা, গাজর ও টমেটোর দাম। টমেটো ১২০ টাকা ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। আর আলু আগের দামে কেজি প্রতি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজির দাম বাড়ার স্পষ্ট কারণ জানা নেই। অধিকাংশ সবজির দামই তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ২০ টাকা।
সবজি বিক্রেতা বেলায়েত মিয়া বলেন, তিনদিন আগেও যে বেগুন কিনেছি ৬৫ টাকায়। আজ তা কিনতে হয়েছে ৭৫ টাকায়। তাই ৮০ টাকার নিচে বিক্রি করা যাচ্ছে না। লাল গোল বেগুন ১০০, সাদা গোল বেগুন ও লম্বা বেগুন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, দু’দিন আগেও যে ঢেঁড়সের দাম কেজি ছিল ৫০ টাকা, আজ তা ৬০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। কাকরোলে কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। তিনদিন আগে যা ছিল ৫০ টাকা, আজ ৭০ টাকা। তবে শশার দাম বিশ টাকা কমে কজিপ্রতি এখন ৬০ টাকা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিম কেজি ২৪০ টাকা, করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৪০ টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের ছোট বাঁধা কপির পিস ৫০ টাকা, ঝিঙ্গা ৮০, চিচিঙ্গা ৭০, পটোল ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ ৫০ থেকে ৬০, কচুর লতি ৬০ টাকা, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা। এসব সবজি গত সপ্তাহে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে পাওয়া গেছে। তবে শুধু পেঁপেই মিলছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। পাশাপাশি লাউয়ের দামও প্রতি পিচ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। চাল কুমড়া প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।
শরিফুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, বাড়তে সময় লাগে না, কিন্তু বেড়ে গেলে যেন আর কমে না সবজির দাম। আমাদের মতো মধ্যবিত্তের ৬ সদস্যের পরিবারের জন্য সবজির জন্য খরচ বেড়ে গেছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।
সবজির পশিাপাশি দাম বেড়েছে শাকেরও। পাট শাকের আঁটি ২৫ টাকা, কলমি শাক আঁটি ২০ টাকা, কচু শাক দুই আঁটি ২০ টাকা, মূলা শাক দুই আঁটি ৩০ টাকা, লাল শাকের জোড়া আঁটি ৩০ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা, শাপলা ১৫ টাকা। আর ধনিয়ার পাতা ১০০ গ্রাম ৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। লেবুর হালি ১৫ থেকে ২০ টাকায় মিলছে। সবজি বিক্রেতা আজমল বলেন, টমেটো ও গাজরের দাম শুনে অনেক ক্রেতা ফিরে যাচ্ছেন। যারা কিনছেন তারাও অল্প করে কিনছেন। হাইব্রিড সবজি আমদানি করায় খরচ বেশি।
বাজার করতে আসা সাইদুল বলছেন, সামর্থ্যরে মধ্যে রয়েছে কেবল কিছু শাক ও পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া আর মরিচ। লাউয়ের দামও বাড়তি। আলুও ৩৫ টাকা, বাকি সবই ৬০ টাকার ওপরে। ২০০ টাকার সবজি কিনলে দু’দিন যায় না ফিরতে হয় ফের সবজির বাজারে।
সবজি বিক্রেতা মানিক মিয়া বলেন, সবজির বাজারে কোন সরকারি মনিটরিং নেই। যে যেমন পারছেন দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। আমরা খুচরা বেচি। পাইকারিতেই যদি বাড়তি দামে কিনতে হয় তাহলে তো লোকসান করে খুচরায় সবজি বিক্রি করা যায় না।
চালের কয়েকটি খুচরা বাজার ও দেকান ঘুরে দেখা গেছে, বিআর-২৮ চাল প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকা, মিনিকেট ৭০-৭৫ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৫০ টাকা, পাইজাম স্বর্ণা ৫৮ টাকা, নাজিরশাইল ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাশাপাশি বাজারে খোলা আটা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। আর খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
রাজধানীর মদিনা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘সব কিছুর দাম বেড়েছে, চালের দাম কমার কোন সম্ভাবনা দেখছি না’।
তিনি বলেন, ‘ উল্টা-পাল্টা নিউজ করার কারণে ক্রেতাদের সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা কাটাকাটি হয়’
উল্টা-পাল্টা নিউজ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে এক মিডিয়ার নিউজের সঙ্গে আরেক মিডিয়ার নিউজের মিল থাকে না। নিম্নআয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকা মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকায়। তবে ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭০ টাকা। এছাড়া বাজারে লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা কেজি এবং সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের বাড়তি দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে সাইফুল আলম নামের এক দোকানি জানান, ডিমের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়েছে। দাম বাড়ায় বিক্রিও কিছুটা কমেছে।
বাজারে মাছের দামও বাড়তি বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০ টাকা, রুই ২৫০ টাকা, পাঙাশ ১৬০ টাকা, সিলভার কার্প ১৪০ টাকা, শিং মাছ আকার ভেদে ৫০০-৭৫০ টাকা এবং চিংড়ি মাছ ৬০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া বাজারে পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, রসুন ৮০ থেকে ১৪০ টাকা আর আদা ১০০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে পাম তেল ও চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগে সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণের সময় পাম সুপার তেলের দাম বেঁধে দিত সরকার।
এবার সেখানে নতুন করে চিনির দামও যুক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি ৯টি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেয়া নিয়ে সরকার কাজ করছে, এমন আলোচনার মধ্যে এ ঘোষণা এলো।
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক প্রজ্ঞাপনে খোলা পাম সুপার তেল, পরিশোধিত খোলা চিনি ও পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির সর্বোচ্চ খুচরা দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
সেখানে খোলা পাম সুপার তেলের লিটার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৩৩ টাকা, প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনি ৮৪ টাকা ও পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির দাম ৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন এ মূল্য কার্যকর হবে।
শুক্রবার ঢাকার বাজারে খোলা চিনি ৯০ টাকার আশপাশে ও প্যাকেটজাত চিনি ৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। চিনির দাম কয়েক মাস ধরে বাড়তি। এর মধ্যে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে চিনির দাম বাড়ানোর আনুষ্ঠানিক একটি প্রস্তাবও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছিল। ডলারের বিপরীতে টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়নের বিষয়টি সামনে এনে ওই প্রস্তাব করা হয়।
এদিকে নতুন এ দাম বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের পাশাপাশি এসব পণ্যের মিলগেটের মূল্য ও পরিবেশক মূল্যও বেঁধে দেয়া হয়েছে। তবে বড় কোম্পানিগুলো বলছে, চিনির দাম বেঁধে দেয়ার বিষয়টি নিয়ে সরকার তাদের সঙ্গে আলোচনা করেনি।
এ বিষয়ে সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কোন ধরনের আলোচনা ছাড়াই চিনির দাম বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা যে ১০৮ থেকে ১১০ টাকায় ডলার কিনে পণ্য আমদানি করছি, সেটা বিবেচনায় আনা হয়নি।’
এর আগে গত ৩০ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল চাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, সিমেন্ট, রডসহ মোট ৯ পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেবে সরকার। এসব পণ্যের যৌক্তিক দাম কত হওয়া উচিত, তা ঠিক করতে ইতোমধ্যে কয়েকটি বৈঠকও হয়েছে।
অসহায় ও দিশেহারা সাধারণ মানুষ
শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
বৈশ্বিক মহামারীর পর বিশ্ববাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, সর্বোপরি দেশে সব ধরনেরে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্য পরিবহনে ভাড়া বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে গত কয়েক মাস ধরে দেশের নিত্যপণ্যের বাজার হয়ে পড়ে টালমাটাল। এসব কারণে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত নিত্যপণ্যসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম। অস্বাভাবিকভাবে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অসহায় ও দিশেহারা হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ সবজির দামই বেড়েছে। কাঁচা মরিচের ঝাঁজ কমলেও কমেনি শিম, বেগুন, করলা, গাজর ও টমেটোর দাম। টমেটো ১২০ টাকা ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। আর আলু আগের দামে কেজি প্রতি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজির দাম বাড়ার স্পষ্ট কারণ জানা নেই। অধিকাংশ সবজির দামই তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ২০ টাকা।
সবজি বিক্রেতা বেলায়েত মিয়া বলেন, তিনদিন আগেও যে বেগুন কিনেছি ৬৫ টাকায়। আজ তা কিনতে হয়েছে ৭৫ টাকায়। তাই ৮০ টাকার নিচে বিক্রি করা যাচ্ছে না। লাল গোল বেগুন ১০০, সাদা গোল বেগুন ও লম্বা বেগুন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, দু’দিন আগেও যে ঢেঁড়সের দাম কেজি ছিল ৫০ টাকা, আজ তা ৬০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। কাকরোলে কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। তিনদিন আগে যা ছিল ৫০ টাকা, আজ ৭০ টাকা। তবে শশার দাম বিশ টাকা কমে কজিপ্রতি এখন ৬০ টাকা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিম কেজি ২৪০ টাকা, করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৪০ টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের ছোট বাঁধা কপির পিস ৫০ টাকা, ঝিঙ্গা ৮০, চিচিঙ্গা ৭০, পটোল ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ ৫০ থেকে ৬০, কচুর লতি ৬০ টাকা, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা। এসব সবজি গত সপ্তাহে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে পাওয়া গেছে। তবে শুধু পেঁপেই মিলছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। পাশাপাশি লাউয়ের দামও প্রতি পিচ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। চাল কুমড়া প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।
শরিফুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, বাড়তে সময় লাগে না, কিন্তু বেড়ে গেলে যেন আর কমে না সবজির দাম। আমাদের মতো মধ্যবিত্তের ৬ সদস্যের পরিবারের জন্য সবজির জন্য খরচ বেড়ে গেছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।
সবজির পশিাপাশি দাম বেড়েছে শাকেরও। পাট শাকের আঁটি ২৫ টাকা, কলমি শাক আঁটি ২০ টাকা, কচু শাক দুই আঁটি ২০ টাকা, মূলা শাক দুই আঁটি ৩০ টাকা, লাল শাকের জোড়া আঁটি ৩০ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা, শাপলা ১৫ টাকা। আর ধনিয়ার পাতা ১০০ গ্রাম ৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। লেবুর হালি ১৫ থেকে ২০ টাকায় মিলছে। সবজি বিক্রেতা আজমল বলেন, টমেটো ও গাজরের দাম শুনে অনেক ক্রেতা ফিরে যাচ্ছেন। যারা কিনছেন তারাও অল্প করে কিনছেন। হাইব্রিড সবজি আমদানি করায় খরচ বেশি।
বাজার করতে আসা সাইদুল বলছেন, সামর্থ্যরে মধ্যে রয়েছে কেবল কিছু শাক ও পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া আর মরিচ। লাউয়ের দামও বাড়তি। আলুও ৩৫ টাকা, বাকি সবই ৬০ টাকার ওপরে। ২০০ টাকার সবজি কিনলে দু’দিন যায় না ফিরতে হয় ফের সবজির বাজারে।
সবজি বিক্রেতা মানিক মিয়া বলেন, সবজির বাজারে কোন সরকারি মনিটরিং নেই। যে যেমন পারছেন দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। আমরা খুচরা বেচি। পাইকারিতেই যদি বাড়তি দামে কিনতে হয় তাহলে তো লোকসান করে খুচরায় সবজি বিক্রি করা যায় না।
চালের কয়েকটি খুচরা বাজার ও দেকান ঘুরে দেখা গেছে, বিআর-২৮ চাল প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকা, মিনিকেট ৭০-৭৫ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৫০ টাকা, পাইজাম স্বর্ণা ৫৮ টাকা, নাজিরশাইল ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাশাপাশি বাজারে খোলা আটা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। আর খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
রাজধানীর মদিনা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘সব কিছুর দাম বেড়েছে, চালের দাম কমার কোন সম্ভাবনা দেখছি না’।
তিনি বলেন, ‘ উল্টা-পাল্টা নিউজ করার কারণে ক্রেতাদের সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা কাটাকাটি হয়’
উল্টা-পাল্টা নিউজ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে এক মিডিয়ার নিউজের সঙ্গে আরেক মিডিয়ার নিউজের মিল থাকে না। নিম্নআয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকা মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকায়। তবে ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭০ টাকা। এছাড়া বাজারে লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা কেজি এবং সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের বাড়তি দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে সাইফুল আলম নামের এক দোকানি জানান, ডিমের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়েছে। দাম বাড়ায় বিক্রিও কিছুটা কমেছে।
বাজারে মাছের দামও বাড়তি বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০ টাকা, রুই ২৫০ টাকা, পাঙাশ ১৬০ টাকা, সিলভার কার্প ১৪০ টাকা, শিং মাছ আকার ভেদে ৫০০-৭৫০ টাকা এবং চিংড়ি মাছ ৬০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া বাজারে পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, রসুন ৮০ থেকে ১৪০ টাকা আর আদা ১০০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে পাম তেল ও চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগে সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণের সময় পাম সুপার তেলের দাম বেঁধে দিত সরকার।
এবার সেখানে নতুন করে চিনির দামও যুক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি ৯টি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেয়া নিয়ে সরকার কাজ করছে, এমন আলোচনার মধ্যে এ ঘোষণা এলো।
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক প্রজ্ঞাপনে খোলা পাম সুপার তেল, পরিশোধিত খোলা চিনি ও পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির সর্বোচ্চ খুচরা দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
সেখানে খোলা পাম সুপার তেলের লিটার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৩৩ টাকা, প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনি ৮৪ টাকা ও পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির দাম ৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন এ মূল্য কার্যকর হবে।
শুক্রবার ঢাকার বাজারে খোলা চিনি ৯০ টাকার আশপাশে ও প্যাকেটজাত চিনি ৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। চিনির দাম কয়েক মাস ধরে বাড়তি। এর মধ্যে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে চিনির দাম বাড়ানোর আনুষ্ঠানিক একটি প্রস্তাবও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছিল। ডলারের বিপরীতে টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়নের বিষয়টি সামনে এনে ওই প্রস্তাব করা হয়।
এদিকে নতুন এ দাম বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের পাশাপাশি এসব পণ্যের মিলগেটের মূল্য ও পরিবেশক মূল্যও বেঁধে দেয়া হয়েছে। তবে বড় কোম্পানিগুলো বলছে, চিনির দাম বেঁধে দেয়ার বিষয়টি নিয়ে সরকার তাদের সঙ্গে আলোচনা করেনি।
এ বিষয়ে সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কোন ধরনের আলোচনা ছাড়াই চিনির দাম বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা যে ১০৮ থেকে ১১০ টাকায় ডলার কিনে পণ্য আমদানি করছি, সেটা বিবেচনায় আনা হয়নি।’
এর আগে গত ৩০ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল চাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, সিমেন্ট, রডসহ মোট ৯ পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেবে সরকার। এসব পণ্যের যৌক্তিক দাম কত হওয়া উচিত, তা ঠিক করতে ইতোমধ্যে কয়েকটি বৈঠকও হয়েছে।