ব্যবসায়ীদের এক সমাবেশে বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের ভোগান্তি কথা বলতে গিয়ে এক ব্যবসায়ী বললেন, ব্যবসা করার চেয়ে এদেশ ছেড়ে চলে যাওয়াই শ্রেয়তর। তার একথার মধ্যদিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, বাংলাদেশে উদ্যোক্তাদের ভোগান্তির শেষ নেই।
ব্যবসায়ীদের মুখে ভোগান্তির নানা কথা উঠে আসে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি ও জার্মানভিত্তিক সহযোগী সংস্থা জিআইজেড’র যৌথ উদ্যোগে তৈরি ওয়েবসাইটের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে। রোববার এ ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়। পোশাক, ওষুধ, খাদ্য ও চামড়া প্রক্রিয়াজাত খাতে কারখানা স্থাপনের প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে এ ওয়েবসাইট।
পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তা মো. হাতেম আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতা, ঘুষ-দুর্নীতির নানা অভিযোগ তুলে ধরার মধ্যে এক পর্যায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্যবসা করার চেয়ে এদেশ ছেড়ে চলে যাওয়াই শ্রেয়তর।
অনুষ্ঠানে এপেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠানের দেখার প্রয়োজন হয়- এমন নথি কেবল একটি প্রতিষ্ঠানে জমার বিধান করার সুপারিশ করে তিনি বলেন, “রাজউক, তিতাস, বিইআরই ও পরিবেশ অধিদপ্তর, সবার কেন মেমোরেন্ডাম দরকার হচ্ছে। কী করছে তারা এত মেমোরেন্ডাম দিয়ে? অথচ এক জায়গায় মেমোরেন্ডাম দিলে সবাই সেটা দেখার সুযোগ রয়েছে।”
তিনি বলেন, “সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যবসা করার জন্য যেসব কাগজপত্র দরকার নেই, সেসব কাগজপত্রও চাওয়া হয়। যেখানে কোনো এখতিয়ার নাই, সেখানেও ডকুমেন্ট চাওয়া হয়।”
তিনি বলেন, “কেন প্রতিবছর আমার ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। পৃথিবীর কোথাও এই প্রক্রিয়া নাই। প্রয়োজনে আমরা তিন বা পাঁচ বছরের ফি একসাথে দিয়ে দেব। তারপরও মেয়াদটা তিন বা পাঁচ বছরের জন্য করে দেন।”
“সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দরকারি নয়, এমন কাগজপত্রও চাওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, “বিপুল পণ্য রপ্তানির তথ্য শুনতে ভালো লাগলেও আসলে আমরা অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি।“
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম সরকারি অফিসগুলোতে ঘুষের অভিযোগ তুলে ধরেন । নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সম্প্রতি নতুন একজন উদ্যোক্তার প্রত্যয়নপত্রের জন্য বিসিকে যাই, কিন্তু এক মাসেও সেই প্রত্যয়নপত্র দেয়নি। উল্টো ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছেন সেই দপ্তরের কর্মকর্তারা।
তিনি জানান, “পরে আমি সেখানকার পরিচালককে ফোন করলে তিনি প্রত্যয়নপত্রে স্বাক্ষর করে দিয়েছেন জানিয়ে পরের দিন নিয়ে আসতে বলেন। কিন্তু সেই স্বাক্ষর করা প্রত্যয়নপত্রটিও ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে আনতে হয়েছে।” ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এই দেশে না জন্মালে অনেক আগেই এই দেশ ছেড়ে চলে যেতাম।”
এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন নিজের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে অনুষ্ঠানে বলেন, “রিসেন্টলি বন্ড কমিশনারেট দপ্তরে একটা কাজের জন্য গিয়েছিলাম। সেখানকার এক শীর্ষ কর্মকর্তা আমার বন্ধু। তিনি আমার কাজটা করে দিতে বললেন কর্মকর্তাদের। পরে ফাইলের জন্য গেলে অন্য কর্মকর্তা বলেন, ‘স্যার আপনার বন্ধু, আপনার বন্ধুর অংশের টাকা না দিতে পারেন, কিন্তু আমাদের টাকা দিতে হবে’।”
তিনি বলেন, শুধু ওই দপ্তর নয়, সব দপ্তরেই এভাবে ব্যবসায়ীদের টাকা দিতে হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সহযোগী গবেষক হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী। তিনি জানান, উদ্বোধন হওয়া ওয়েবসাইট ফ্যাক্টরিসেটআপবিডি ডটকমে পোশাক, ওষুধ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত এবং চামড়া প্রক্রিয়াজাত- এই চার খাতের কারখানা স্থাপনে প্রয়োজনীয় সব তথ্য পাওয়া যাবে।
“মূলত এই চার খাতে ব্যবসা শুরু করতে লাইসেন্স কোথা থেকে নিতে হবে, রেজিস্ট্রেশন কিভাবে করতে হবে, রেজিস্ট্রেশন পেতে কী কী কাগজপত্র লাগবে; সার্বিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক চাহিদা, পরিচালন এবং আইনি চাহিদাসহ প্রয়োজনীয় সকল তথ্য এই ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।”
ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় কারখানা স্থাপনের প্রয়োজনীয় তথ্য ওয়েবসাইটটিতে দেওয়া হয়েছে বলে জানান মাশিয়াত প্রিয়তী।
“আবার দেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাগুলোতে (ইপিজেড) বিনিয়োগ করতে হলে কিভাবে কোথায় এবং কী করতে হবে সেসব তথ্যও দেওয়া হয়েছে।”
এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা বা দেশের অন্য কোথাও বিনিয়োগ করতে চাইলে কোথায় যেতে হবে, কী দরকার হবে, এসব তথ্যও এই ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জিআইজেড’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাইকেল ক্লোড।
সোমবার, ০৩ অক্টোবর ২০২২
ব্যবসায়ীদের এক সমাবেশে বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের ভোগান্তি কথা বলতে গিয়ে এক ব্যবসায়ী বললেন, ব্যবসা করার চেয়ে এদেশ ছেড়ে চলে যাওয়াই শ্রেয়তর। তার একথার মধ্যদিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, বাংলাদেশে উদ্যোক্তাদের ভোগান্তির শেষ নেই।
ব্যবসায়ীদের মুখে ভোগান্তির নানা কথা উঠে আসে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি ও জার্মানভিত্তিক সহযোগী সংস্থা জিআইজেড’র যৌথ উদ্যোগে তৈরি ওয়েবসাইটের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে। রোববার এ ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়। পোশাক, ওষুধ, খাদ্য ও চামড়া প্রক্রিয়াজাত খাতে কারখানা স্থাপনের প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে এ ওয়েবসাইট।
পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তা মো. হাতেম আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতা, ঘুষ-দুর্নীতির নানা অভিযোগ তুলে ধরার মধ্যে এক পর্যায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্যবসা করার চেয়ে এদেশ ছেড়ে চলে যাওয়াই শ্রেয়তর।
অনুষ্ঠানে এপেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠানের দেখার প্রয়োজন হয়- এমন নথি কেবল একটি প্রতিষ্ঠানে জমার বিধান করার সুপারিশ করে তিনি বলেন, “রাজউক, তিতাস, বিইআরই ও পরিবেশ অধিদপ্তর, সবার কেন মেমোরেন্ডাম দরকার হচ্ছে। কী করছে তারা এত মেমোরেন্ডাম দিয়ে? অথচ এক জায়গায় মেমোরেন্ডাম দিলে সবাই সেটা দেখার সুযোগ রয়েছে।”
তিনি বলেন, “সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যবসা করার জন্য যেসব কাগজপত্র দরকার নেই, সেসব কাগজপত্রও চাওয়া হয়। যেখানে কোনো এখতিয়ার নাই, সেখানেও ডকুমেন্ট চাওয়া হয়।”
তিনি বলেন, “কেন প্রতিবছর আমার ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। পৃথিবীর কোথাও এই প্রক্রিয়া নাই। প্রয়োজনে আমরা তিন বা পাঁচ বছরের ফি একসাথে দিয়ে দেব। তারপরও মেয়াদটা তিন বা পাঁচ বছরের জন্য করে দেন।”
“সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দরকারি নয়, এমন কাগজপত্রও চাওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, “বিপুল পণ্য রপ্তানির তথ্য শুনতে ভালো লাগলেও আসলে আমরা অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি।“
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম সরকারি অফিসগুলোতে ঘুষের অভিযোগ তুলে ধরেন । নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সম্প্রতি নতুন একজন উদ্যোক্তার প্রত্যয়নপত্রের জন্য বিসিকে যাই, কিন্তু এক মাসেও সেই প্রত্যয়নপত্র দেয়নি। উল্টো ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছেন সেই দপ্তরের কর্মকর্তারা।
তিনি জানান, “পরে আমি সেখানকার পরিচালককে ফোন করলে তিনি প্রত্যয়নপত্রে স্বাক্ষর করে দিয়েছেন জানিয়ে পরের দিন নিয়ে আসতে বলেন। কিন্তু সেই স্বাক্ষর করা প্রত্যয়নপত্রটিও ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে আনতে হয়েছে।” ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এই দেশে না জন্মালে অনেক আগেই এই দেশ ছেড়ে চলে যেতাম।”
এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন নিজের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে অনুষ্ঠানে বলেন, “রিসেন্টলি বন্ড কমিশনারেট দপ্তরে একটা কাজের জন্য গিয়েছিলাম। সেখানকার এক শীর্ষ কর্মকর্তা আমার বন্ধু। তিনি আমার কাজটা করে দিতে বললেন কর্মকর্তাদের। পরে ফাইলের জন্য গেলে অন্য কর্মকর্তা বলেন, ‘স্যার আপনার বন্ধু, আপনার বন্ধুর অংশের টাকা না দিতে পারেন, কিন্তু আমাদের টাকা দিতে হবে’।”
তিনি বলেন, শুধু ওই দপ্তর নয়, সব দপ্তরেই এভাবে ব্যবসায়ীদের টাকা দিতে হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সহযোগী গবেষক হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী। তিনি জানান, উদ্বোধন হওয়া ওয়েবসাইট ফ্যাক্টরিসেটআপবিডি ডটকমে পোশাক, ওষুধ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত এবং চামড়া প্রক্রিয়াজাত- এই চার খাতের কারখানা স্থাপনে প্রয়োজনীয় সব তথ্য পাওয়া যাবে।
“মূলত এই চার খাতে ব্যবসা শুরু করতে লাইসেন্স কোথা থেকে নিতে হবে, রেজিস্ট্রেশন কিভাবে করতে হবে, রেজিস্ট্রেশন পেতে কী কী কাগজপত্র লাগবে; সার্বিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক চাহিদা, পরিচালন এবং আইনি চাহিদাসহ প্রয়োজনীয় সকল তথ্য এই ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।”
ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় কারখানা স্থাপনের প্রয়োজনীয় তথ্য ওয়েবসাইটটিতে দেওয়া হয়েছে বলে জানান মাশিয়াত প্রিয়তী।
“আবার দেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাগুলোতে (ইপিজেড) বিনিয়োগ করতে হলে কিভাবে কোথায় এবং কী করতে হবে সেসব তথ্যও দেওয়া হয়েছে।”
এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা বা দেশের অন্য কোথাও বিনিয়োগ করতে চাইলে কোথায় যেতে হবে, কী দরকার হবে, এসব তথ্যও এই ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জিআইজেড’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাইকেল ক্লোড।