গত আগস্ট মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৫ শতাংশে উঠেছিল। সেপ্টেম্বরে তা কমে ৯ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এসেছে। কমার পরও এই সূচক ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ। এরপর আর এই সূচক ৯ শতাংশের ওপরে উঠেনি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায বিশ্বের গত কয়েক মাস ধরেই দেশে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির প্রবণতা ছিল। ঠিক এ রকম এক সময়ে, গত ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা, অকটেনের দাম লিটারে ৪৬ টাকা ও পেট্রলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়। এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক লাফে জ্বালানি তেলের দাম এত বাড়ানো হয়নি।
এর পরপরই সব ধরনের পরিবহন ভাড়া বাড়ানো হয়। এই দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। এরপর গত ২৯ আগস্ট খানিকটা মুখ রক্ষা করতে জ্বালানি তেলের দাম ৫ টাকা কমায় সরকার। তবে তাতে বাজারে খুব একটা প্রভাব দেখা যায়নি। বরং এর সামগ্রিক প্রভাবে খাদ্যপণ্য ছাড়াও যাতায়াত, পোশাক-আশাক, শিক্ষাসামগ্রীসহ খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দামও বেশ বেড়ে যায়। তখন থেকেই আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বৃদ্ধির শঙ্কা করা হচ্ছিল। একাধিক অর্থনীতিবিদের প্রাক্কলন ছিল মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
কিন্তু সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সেপ্টেম্বর মাস চলে গেলেও আগস্ট মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করেনি। সাধারণত প্রথম সপ্তাহেই আগের মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য তৈরি করে পরিসংখ্যান ব্যুরো। সেই ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মূল্যস্ফীতির তথ্য তৈরি করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয় বিবিএস। কিন্তু সরকারের উচ্চপর্যায়ের ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়া যায়নি। ফলে মূল্যস্ফীতির আগস্ট মাসের তথ্য প্রকাশ করেনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বা পরিসংখ্যান ব্যুরো। এরই মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসও শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু কোন মাসের তথ্যই প্রকাশ করা হচ্ছিল না।
এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে বলেই বিবিএস সেই তথ্য প্রকাশ করছে না। শিরোনামে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছিল। অর্থনীতিবিদরাও একই কথা বলছিলেন।
তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলের দাম একসঙ্গে বেশ খানিকটা বাড়ানোর ফলে সব কিছুর ওপর এর প্রভাব পড়েছিল। সে কারণে আগস্টে মূল্যস্ফীতি অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। তবে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কারণে সেপ্টেম্বরে তা নিম্মমূখী হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখন ৯ দশমিক ১ শতাংশ। এর অর্থ হলো গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিলেন, এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে তা কিনতে ১০৯ টাকা ১০ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। আগস্টে একই পরিমাণ পণ্য কিনতে তাদের লেগেছিল ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর সব দেশের অর্থনীতির উদ্বেগজনক ও স্পর্শকাতর সূচক এখন মূল্যস্ফীতি। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠে ৯ শতাংশে পৌঁছেছে।
গত জুলাইয়ে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে সেটা আড়াই শতাংশ পয়েন্টের মতো বেড়ে আগস্টে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠেছিল। সেপ্টেম্বরে তা কমে ৯ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক অনুষ্ঠানে সোমবার (৩ অক্টোবর) পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া বা মূল্যস্ফীতি বাগে এসেছে। চলতি বছরের আগস্টে মূল্যস্ফীতি অনেক বাড়লেও সেপ্টেম্বরে তা কমে এসেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’ তবে কোন মাসে কতো মূল্যস্ফীতি হয়েছে, সে তথ্য তিনি ওই অনুষ্ঠানে প্রকাশ করেননি।
মূল্যস্ফীতি কমার কারণ ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, ‘কেন কমেছে? কারণ আমাদের সরকারের কৌশলগত ব্যবস্থা। তেলের দাম বেড়েছিল, কিন্তু এখন কমেছে। কারণ এক কোটি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। সেখানে কম দামে বিক্রি হচ্ছে চাল, তেল। ফলে আমরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরাসরি আঘাত করতে পেরেছি। এতে দাম কমে এসেছে। শুধু কমেনি; ভালো কমেছে। বিশ্ববাজারেও কমেছে। কয়েক দিনের মধ্যে আপনারা মূল্যস্ফীতির পুরোটা তথ্য পেয়ে যাবেন।’
গত কয়েক মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশের সময়কাল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কোন মাসের মূল্যস্ফীতি কমলে পরের মাসের প্রথম সপ্তাহেই তা প্রকাশ করা হয়। আবার বাড়লে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশে পরের মাসের তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
বুধবার, ০৫ অক্টোবর ২০২২
গত আগস্ট মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৫ শতাংশে উঠেছিল। সেপ্টেম্বরে তা কমে ৯ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এসেছে। কমার পরও এই সূচক ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ। এরপর আর এই সূচক ৯ শতাংশের ওপরে উঠেনি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায বিশ্বের গত কয়েক মাস ধরেই দেশে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির প্রবণতা ছিল। ঠিক এ রকম এক সময়ে, গত ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা, অকটেনের দাম লিটারে ৪৬ টাকা ও পেট্রলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়। এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক লাফে জ্বালানি তেলের দাম এত বাড়ানো হয়নি।
এর পরপরই সব ধরনের পরিবহন ভাড়া বাড়ানো হয়। এই দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। এরপর গত ২৯ আগস্ট খানিকটা মুখ রক্ষা করতে জ্বালানি তেলের দাম ৫ টাকা কমায় সরকার। তবে তাতে বাজারে খুব একটা প্রভাব দেখা যায়নি। বরং এর সামগ্রিক প্রভাবে খাদ্যপণ্য ছাড়াও যাতায়াত, পোশাক-আশাক, শিক্ষাসামগ্রীসহ খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দামও বেশ বেড়ে যায়। তখন থেকেই আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বৃদ্ধির শঙ্কা করা হচ্ছিল। একাধিক অর্থনীতিবিদের প্রাক্কলন ছিল মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
কিন্তু সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সেপ্টেম্বর মাস চলে গেলেও আগস্ট মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করেনি। সাধারণত প্রথম সপ্তাহেই আগের মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য তৈরি করে পরিসংখ্যান ব্যুরো। সেই ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মূল্যস্ফীতির তথ্য তৈরি করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয় বিবিএস। কিন্তু সরকারের উচ্চপর্যায়ের ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়া যায়নি। ফলে মূল্যস্ফীতির আগস্ট মাসের তথ্য প্রকাশ করেনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বা পরিসংখ্যান ব্যুরো। এরই মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসও শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু কোন মাসের তথ্যই প্রকাশ করা হচ্ছিল না।
এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে বলেই বিবিএস সেই তথ্য প্রকাশ করছে না। শিরোনামে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছিল। অর্থনীতিবিদরাও একই কথা বলছিলেন।
তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলের দাম একসঙ্গে বেশ খানিকটা বাড়ানোর ফলে সব কিছুর ওপর এর প্রভাব পড়েছিল। সে কারণে আগস্টে মূল্যস্ফীতি অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। তবে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কারণে সেপ্টেম্বরে তা নিম্মমূখী হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখন ৯ দশমিক ১ শতাংশ। এর অর্থ হলো গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিলেন, এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে তা কিনতে ১০৯ টাকা ১০ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। আগস্টে একই পরিমাণ পণ্য কিনতে তাদের লেগেছিল ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর সব দেশের অর্থনীতির উদ্বেগজনক ও স্পর্শকাতর সূচক এখন মূল্যস্ফীতি। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠে ৯ শতাংশে পৌঁছেছে।
গত জুলাইয়ে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে সেটা আড়াই শতাংশ পয়েন্টের মতো বেড়ে আগস্টে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠেছিল। সেপ্টেম্বরে তা কমে ৯ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক অনুষ্ঠানে সোমবার (৩ অক্টোবর) পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া বা মূল্যস্ফীতি বাগে এসেছে। চলতি বছরের আগস্টে মূল্যস্ফীতি অনেক বাড়লেও সেপ্টেম্বরে তা কমে এসেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’ তবে কোন মাসে কতো মূল্যস্ফীতি হয়েছে, সে তথ্য তিনি ওই অনুষ্ঠানে প্রকাশ করেননি।
মূল্যস্ফীতি কমার কারণ ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, ‘কেন কমেছে? কারণ আমাদের সরকারের কৌশলগত ব্যবস্থা। তেলের দাম বেড়েছিল, কিন্তু এখন কমেছে। কারণ এক কোটি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। সেখানে কম দামে বিক্রি হচ্ছে চাল, তেল। ফলে আমরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরাসরি আঘাত করতে পেরেছি। এতে দাম কমে এসেছে। শুধু কমেনি; ভালো কমেছে। বিশ্ববাজারেও কমেছে। কয়েক দিনের মধ্যে আপনারা মূল্যস্ফীতির পুরোটা তথ্য পেয়ে যাবেন।’
গত কয়েক মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশের সময়কাল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কোন মাসের মূল্যস্ফীতি কমলে পরের মাসের প্রথম সপ্তাহেই তা প্রকাশ করা হয়। আবার বাড়লে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশে পরের মাসের তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।