alt

অর্থ-বাণিজ্য

শীতের শুরুতেই বাজার গরম

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ০৭ অক্টোবর ২০২২

স্বাদ পাল্টাতে খাবারের তালিকার বড় একটা অংশ দখলে থাকে শীতকালীন সবজি। শীত রান্নাঘরে এক ধরনের ‘পরিবর্তন’ আনলেও চলতি মৌসুমে সবজির দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে সে তালিকা অনেকটাই ‘আঁটসাঁট’ হয়ে গেছে। রাজধানীর বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সবজি, চাল ও মুরগির দাম। বাজার ঘুরে জানা গেছে, আকারভেদে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, বেগুনসহ অন্য সবজি বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে যা গতবছরের তুলনায় অনেক চড়া।

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কথা উল্লেখ করেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘একদিকে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য যেমন বেশি অন্যদিকে আমাদের যে কাঁচা পণ্য এগুলোর পিজারভেশনের ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত। কিন্তু সেটা আমাদের পরিবহনের ক্ষেত্রেও হয়নি, বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রেও হয়নি। কারণ আমাদের নিত্যপণ্যগুলোর হাতবদল বেশি হয়।’

তিনি মনে করেন, যদি ‘কমার্স কো-অপারেটিভ’ গড়ে তোলা যায় তবে উৎপাদক ও ভোক্তারা লাভবান হবেন।

তিনি আরও বলেন, ‘এই দ্রব্যমূল্যের চড়া বাজারের মধ্যে মানুষের আয় রোজগার যদি বেশি না হয় তাহলে মানুষের জীবনমানে এটার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জীবনমান দিনদিনই নিচের দিকে যাচ্ছে। যেটা শুভ লক্ষণ নয়। সরকার যদিও অনেক প্রচেষ্টা নিচ্ছে, যেমন নিম্নআয়ের এক কোটি মানুষকে অল্পমূল্যে কিছু পণ্য দেয়া, কিন্তু তাতেও শামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। যদি সম্ভব হয় এই কার্যক্রমের পরিধি আর একটু বাড়ানোর তবে ভালো হয়।’

দুই দিন আগেও যেখানে ব্রয়লার মুরগির মাংস বিক্রি হয়েছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে, সেখানে শুক্রবারের (৭ অক্টোবর) বাজারে এই মাংস বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। আর গরুর মাংসর কেজি ৭০০ টাকা ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ৯৮০ টাকা কেজি দরে।

বাজারে এসব পণ্যের দাম মেটাতে গিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে প্রায়ই বাগ-বিতন্ডা হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় মৌসুমের শুরুতেই সবজির দাম বেড়েছে। অন্যদিকে দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে না পেরে চাহিদার থেকেও কম পণ্য কিনে বাড়ি ফিরছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ক্রেতারা। ক্রেতারা বলছেন, মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় আমাদের ‘হাত-পা বেঁধে রেখেছে’ যাতে আমরা বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হই।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব চিত্র উঠে এসেছে। চিনিতে ৬ টাকা বাড়িয়ে ও পাম তেলে ৮ টাকা কমিয়ে নতুন দর নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এর ফলে খোলা চিনি প্রতি কেজি ৯০ টাকা, সুপার পাম অয়েল প্রতি লিটার ১২৫ টাকা নির্ধারণ হয়েছে। এর আগেই প্রতি লিটার সয়াবিনে ১৪ টাকা কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দাম পুনর্নির্ধারণের এ ঘোষণার পর বাজারে চিনির দাম বেড়েছে। তবে সয়াবিন তেল আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাঁচা বাজারে শীতকালীন সবজির দাম শুনে অবাক হয়েছেন রাহেলা বেগম। একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করা রাহেলা বেগম জানান, সপ্তাহে একদিন বাজারে আসি। কিন্তু গত সপ্তাহের চেয়ে আজকে বাজারের দাম দেখে অবাক হচ্ছি। সবকিছুরই বাড়তি দাম, কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে এসেছে টাউন হলে আশরাফুল ইসলাম, তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহেও যেখানে তিনি মুরগির মাংস কিনেছেন ১৭০ টাকা কেজি।’ এ সপ্তাহে বাড়তি দাম দেখে অনেকটাই হতাশ। তিনি বলেন, আমরা যারা গরিব বা মধ্যবিত্ত আছি, মুরগির মাংসটাই সবচেয়ে বেশি খাই। কিন্তু এত দাম হলে কিভাবে কিনব? দামটা একটু কমলে তো ভালো হয়।

টঙ্গীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আরিফুর রহমান পরাগ টেলিফোনে সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমানে যে হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তাতে সন্তানদের নিয়ে রাজধানীতে থাকাই দায়। গত কয়েকদিনে মাংসের যে দাম, সবার পক্ষে মাংস কিনে খাওয়া সম্ভব না। আমরা তো চাকরি করি, মাংস কিনতে গিয়ে আমাদেরই টানাপোড়েনে পড়তে হয়, যাদের আয় আরও কম তাদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন।’

রাজধানীর ফার্মগেটের আল আমিন বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে ব্যবসায়ীরা আমাদের হাত-পা বেঁধে রেখেছে। তারা যে দামে বিক্রি করতে চায় সেই দামেই কিনতে হয়। যা রুজি করি তার চেয়ে বেশি খরচ হয়ে যায়। বাজারে গেলেই পকেট ফাঁকা হয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি বগুড়া মহাস্তানে। সেখানে কাঁচা সবজির যে দাম ঢাকা আসতে আসতে কয়েকগুণ বেড়ে যায় এগুলোর নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। যারা পাওয়ার তারা পাচ্ছে না অথচ আমাদের পকেটের পয়সা সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা কাটছে।’

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঢেঁড়শ প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, লম্বা বেগুনের কেজি ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, গোল বেগুনের কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, বরবটি ৬৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি, করলা ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা, শিমের কেজি ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকা, টমেটো ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি, মুলা ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা, গাজর ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, শসা কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, কচুরলতি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচকলার হালি ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা, লেবু ২৫ থেকে ৩০ টাকা হালি, চালকুমড়া প্রতিটি আকার ভেদে ৫০ থেকে ৬৫ টাকা, লাউ আকার ভেদে ৬০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব সবজির দাম এক মাসে ৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।

মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিং মাছ আকার ভেদে ৫২০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, রুই ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা, ট্যাংরা মাছের কেজি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল আকার ভেদে ৪৯০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, পাঙাশ ১৯০ থেকে ২১৫ টাকা, তেলাপিয়া ২১০ থেকে ২২০ টাকা, শোল মাছ কেজি ৪২০ থেকে ৬১০ টাকা, কই মাছের কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার থেকে দেশে ইলিশ আহরণ, বহন ও বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও বাজারে মিলছে প্রচুর ইলিশ। দামও কম নয়। ৫০০ গ্রামের বেশি ওজনের ইলিশ ৭০০ টাকা কেজি, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, ৮০০ থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছের দাম ১০০০ থেকে ১২৫০ টাকা কেজি, এক কেজির বেশি ওজনের হলে কেজি ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, দেড় থেকে ২ কেজি ওজনের ইলিশ ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা কেজি, ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছের কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া মসুর ডাল চিকন কেজি ১৫০ টাকা, মসুর ডাল মোটা ১২০ টাকা, কেজি, মুগডাল ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত একমাসে ডালের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

অন্যদিকে, ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগির দাম ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি, গরুর মাংস ৬৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

ডিম প্রতিটি ১৩ টাকা, এক হালি ৫০ টাকা ও ডজন ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে বাজারে আদার দাম বেড়েছে। চীন থেকে আমদানি করা আদার দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। গত এক মাসে আদার দাম ৬১ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। আদার কেজি ১২০-১৪০ থেকে ৮০-১০০ টাকা বেড়ে ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে আমদানি করা রসুনের চেয়ে দেশি রসুনের দাম বেশি বেড়েছে। গত এক মাস আগে দেশি রসুনের কেজি ৬০-৭০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। তবে অক্টোবর মাসের শুরুতেই ১০-৩০ টাকা বেড়ে ৭০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে দফায় দফায় প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে। তবে চলতি মাসে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ পর্যন্ত।

দিন দিন নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। গত এক মাস চাল, ডাল, ডিম, রসুন, আদা, মাছ, মুরগি ও সবজির দাম বেড়েই চলছে। নিম্নআয়ের মানুষ সংসারের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা দুষছেন জ্বালানি তেল ও ডলারের দাম বৃদ্ধিকে।

টাউন হলের ব্যবসায়ী ইমদাদুল হক বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে আদার দাম বাড়ছিল। গত সপ্তাহেও খুচরা বাজারে আদার দাম ছিল ১৭০ টাকা, সেটা এক লাফে ২০ টাকা বেড়েছে এ সপ্তাহে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। তবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ দামটা বেড়ে চলছে।

গত সপ্তাহেও গরুর মাংস ৬৮০ টাকা হলেও শুক্রবার কেন বেশি এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, দাম বাড়ানোর পেছনে আমাদের কোন হাত নেই। তবে গরুর খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কৃষকরা গরুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যাপারীরা বলেন ‘বেশি দামে কেনার ফলে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়’ এজন্যই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।

ছবি

সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ১৪ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা

ছবি

ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকার দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের কর্মসূচি

অক্টোবরেও বাড়ছে ঋণের সুদহার

২০ খাতে বিনিয়োগে মিলবে কর রেয়াত

সপ্তাহের শুরুতে পুঁজিবাজারে বড় দরপতন

ছবি

১২ প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার

ছবি

সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ১৪ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা

ছবি

সপ্তাহের শুরুতে পুঁজিবাজারে বড় দরপতন

ছবি

অক্টোবরেও বাড়ছে ঋণের সুদহার

ছবি

ফ্রিল্যান্সারদের রেমিট্যান্সের ওপর কর আরোপ করা হয়নি : এনবিআর

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নকল পোশাক বিক্রির অভিযোগ, বিজিএমইএ’-এর নাকচ

ফ্রিল্যান্সারদের রেমিট্যান্সে ১০ শতাংশ করের তথ্য সঠিক নয় : বাংলাদেশ ব্যাংক

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পে ১৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে জাপান

ছবি

পোশাকের দাম বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের প্রতি অনুরোধ

লেনদেন অর্ধেকে নেমেছে শেয়ারবাজারে

ছবি

পোশাকের দাম বাড়াতে এএএফএ ক্রেতাদের অনুরোধ বিজিএমইএর

ছবি

নিয়ন্ত্রণ নেই বাজারে, বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ডিম-আলু-পেঁয়াজ

ছবি

বড় কোম্পানি মুড়ি-চানাচুর তৈরি করলে ছোটরা কি করবে, প্রশ্ন শিল্পমন্ত্রীর

জিআইআই সূচকে তিন ধাপ পেছালো বাংলাদেশ

বাংলাদেশে হালাল মাংস রপ্তানিতে আগ্রহী মেক্সিকো

ছবি

তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের মানববন্ধন

ফ্রিল্যান্সারদেরও দিতে হবে ১০ শতাংশ কর

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েই চলেছে

ছবি

বাজারে আগাম শীতকালীন সবজি, চড়া দামে ক্রেতাদের অস্বস্তি

ছবি

রিজার্ভ কমে দাঁড়ালো ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার

এমএফএসের ২২ হাজার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে বিএফআইইউ

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা : আকু সচিবালয়ের চিঠির অপেক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংক

নামমাত্র উত্থান শেয়ারবাজারে

জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ব্যয় বাড়লো ২৭০ কোটি টাকা

ছবি

জরিমানা নয়, নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান কাজ : নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ

ছবি

পোশাক রপ্তানিতে ভিসানীতির প্রভাব পড়বে না : বিজিএমইএ সভাপতি

ছবি

বাংলাদেশের ঋণমান ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘নেতিবাচক’-এ নামলো

ডিম আমদানি বন্ধের দাবি পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের

সূচক ও লেনদেনে নামমাত্র উত্থান শেয়ারবাজারে

ছবি

বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন ও সহসভাপতি মো. ফায়জুর রহমান ভূঁইয়া নির্বাচিত

ছবি

আতঙ্ক কাটিয়ে বিমায় ভর করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার

tab

অর্থ-বাণিজ্য

শীতের শুরুতেই বাজার গরম

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ০৭ অক্টোবর ২০২২

স্বাদ পাল্টাতে খাবারের তালিকার বড় একটা অংশ দখলে থাকে শীতকালীন সবজি। শীত রান্নাঘরে এক ধরনের ‘পরিবর্তন’ আনলেও চলতি মৌসুমে সবজির দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে সে তালিকা অনেকটাই ‘আঁটসাঁট’ হয়ে গেছে। রাজধানীর বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সবজি, চাল ও মুরগির দাম। বাজার ঘুরে জানা গেছে, আকারভেদে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, বেগুনসহ অন্য সবজি বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে যা গতবছরের তুলনায় অনেক চড়া।

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কথা উল্লেখ করেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘একদিকে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য যেমন বেশি অন্যদিকে আমাদের যে কাঁচা পণ্য এগুলোর পিজারভেশনের ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত। কিন্তু সেটা আমাদের পরিবহনের ক্ষেত্রেও হয়নি, বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রেও হয়নি। কারণ আমাদের নিত্যপণ্যগুলোর হাতবদল বেশি হয়।’

তিনি মনে করেন, যদি ‘কমার্স কো-অপারেটিভ’ গড়ে তোলা যায় তবে উৎপাদক ও ভোক্তারা লাভবান হবেন।

তিনি আরও বলেন, ‘এই দ্রব্যমূল্যের চড়া বাজারের মধ্যে মানুষের আয় রোজগার যদি বেশি না হয় তাহলে মানুষের জীবনমানে এটার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জীবনমান দিনদিনই নিচের দিকে যাচ্ছে। যেটা শুভ লক্ষণ নয়। সরকার যদিও অনেক প্রচেষ্টা নিচ্ছে, যেমন নিম্নআয়ের এক কোটি মানুষকে অল্পমূল্যে কিছু পণ্য দেয়া, কিন্তু তাতেও শামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। যদি সম্ভব হয় এই কার্যক্রমের পরিধি আর একটু বাড়ানোর তবে ভালো হয়।’

দুই দিন আগেও যেখানে ব্রয়লার মুরগির মাংস বিক্রি হয়েছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে, সেখানে শুক্রবারের (৭ অক্টোবর) বাজারে এই মাংস বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। আর গরুর মাংসর কেজি ৭০০ টাকা ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ৯৮০ টাকা কেজি দরে।

বাজারে এসব পণ্যের দাম মেটাতে গিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে প্রায়ই বাগ-বিতন্ডা হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় মৌসুমের শুরুতেই সবজির দাম বেড়েছে। অন্যদিকে দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে না পেরে চাহিদার থেকেও কম পণ্য কিনে বাড়ি ফিরছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ক্রেতারা। ক্রেতারা বলছেন, মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় আমাদের ‘হাত-পা বেঁধে রেখেছে’ যাতে আমরা বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হই।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব চিত্র উঠে এসেছে। চিনিতে ৬ টাকা বাড়িয়ে ও পাম তেলে ৮ টাকা কমিয়ে নতুন দর নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এর ফলে খোলা চিনি প্রতি কেজি ৯০ টাকা, সুপার পাম অয়েল প্রতি লিটার ১২৫ টাকা নির্ধারণ হয়েছে। এর আগেই প্রতি লিটার সয়াবিনে ১৪ টাকা কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দাম পুনর্নির্ধারণের এ ঘোষণার পর বাজারে চিনির দাম বেড়েছে। তবে সয়াবিন তেল আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাঁচা বাজারে শীতকালীন সবজির দাম শুনে অবাক হয়েছেন রাহেলা বেগম। একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করা রাহেলা বেগম জানান, সপ্তাহে একদিন বাজারে আসি। কিন্তু গত সপ্তাহের চেয়ে আজকে বাজারের দাম দেখে অবাক হচ্ছি। সবকিছুরই বাড়তি দাম, কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে এসেছে টাউন হলে আশরাফুল ইসলাম, তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহেও যেখানে তিনি মুরগির মাংস কিনেছেন ১৭০ টাকা কেজি।’ এ সপ্তাহে বাড়তি দাম দেখে অনেকটাই হতাশ। তিনি বলেন, আমরা যারা গরিব বা মধ্যবিত্ত আছি, মুরগির মাংসটাই সবচেয়ে বেশি খাই। কিন্তু এত দাম হলে কিভাবে কিনব? দামটা একটু কমলে তো ভালো হয়।

টঙ্গীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আরিফুর রহমান পরাগ টেলিফোনে সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমানে যে হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তাতে সন্তানদের নিয়ে রাজধানীতে থাকাই দায়। গত কয়েকদিনে মাংসের যে দাম, সবার পক্ষে মাংস কিনে খাওয়া সম্ভব না। আমরা তো চাকরি করি, মাংস কিনতে গিয়ে আমাদেরই টানাপোড়েনে পড়তে হয়, যাদের আয় আরও কম তাদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন।’

রাজধানীর ফার্মগেটের আল আমিন বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে ব্যবসায়ীরা আমাদের হাত-পা বেঁধে রেখেছে। তারা যে দামে বিক্রি করতে চায় সেই দামেই কিনতে হয়। যা রুজি করি তার চেয়ে বেশি খরচ হয়ে যায়। বাজারে গেলেই পকেট ফাঁকা হয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি বগুড়া মহাস্তানে। সেখানে কাঁচা সবজির যে দাম ঢাকা আসতে আসতে কয়েকগুণ বেড়ে যায় এগুলোর নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। যারা পাওয়ার তারা পাচ্ছে না অথচ আমাদের পকেটের পয়সা সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা কাটছে।’

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঢেঁড়শ প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, লম্বা বেগুনের কেজি ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, গোল বেগুনের কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, বরবটি ৬৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি, করলা ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা, শিমের কেজি ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকা, টমেটো ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি, মুলা ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা, গাজর ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, শসা কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, কচুরলতি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচকলার হালি ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা, লেবু ২৫ থেকে ৩০ টাকা হালি, চালকুমড়া প্রতিটি আকার ভেদে ৫০ থেকে ৬৫ টাকা, লাউ আকার ভেদে ৬০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব সবজির দাম এক মাসে ৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।

মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিং মাছ আকার ভেদে ৫২০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, রুই ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা, ট্যাংরা মাছের কেজি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল আকার ভেদে ৪৯০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, পাঙাশ ১৯০ থেকে ২১৫ টাকা, তেলাপিয়া ২১০ থেকে ২২০ টাকা, শোল মাছ কেজি ৪২০ থেকে ৬১০ টাকা, কই মাছের কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার থেকে দেশে ইলিশ আহরণ, বহন ও বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও বাজারে মিলছে প্রচুর ইলিশ। দামও কম নয়। ৫০০ গ্রামের বেশি ওজনের ইলিশ ৭০০ টাকা কেজি, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, ৮০০ থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছের দাম ১০০০ থেকে ১২৫০ টাকা কেজি, এক কেজির বেশি ওজনের হলে কেজি ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, দেড় থেকে ২ কেজি ওজনের ইলিশ ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা কেজি, ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছের কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া মসুর ডাল চিকন কেজি ১৫০ টাকা, মসুর ডাল মোটা ১২০ টাকা, কেজি, মুগডাল ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত একমাসে ডালের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

অন্যদিকে, ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগির দাম ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি, গরুর মাংস ৬৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

ডিম প্রতিটি ১৩ টাকা, এক হালি ৫০ টাকা ও ডজন ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে বাজারে আদার দাম বেড়েছে। চীন থেকে আমদানি করা আদার দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। গত এক মাসে আদার দাম ৬১ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। আদার কেজি ১২০-১৪০ থেকে ৮০-১০০ টাকা বেড়ে ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে আমদানি করা রসুনের চেয়ে দেশি রসুনের দাম বেশি বেড়েছে। গত এক মাস আগে দেশি রসুনের কেজি ৬০-৭০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। তবে অক্টোবর মাসের শুরুতেই ১০-৩০ টাকা বেড়ে ৭০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে দফায় দফায় প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে। তবে চলতি মাসে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ পর্যন্ত।

দিন দিন নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। গত এক মাস চাল, ডাল, ডিম, রসুন, আদা, মাছ, মুরগি ও সবজির দাম বেড়েই চলছে। নিম্নআয়ের মানুষ সংসারের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা দুষছেন জ্বালানি তেল ও ডলারের দাম বৃদ্ধিকে।

টাউন হলের ব্যবসায়ী ইমদাদুল হক বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে আদার দাম বাড়ছিল। গত সপ্তাহেও খুচরা বাজারে আদার দাম ছিল ১৭০ টাকা, সেটা এক লাফে ২০ টাকা বেড়েছে এ সপ্তাহে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। তবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ দামটা বেড়ে চলছে।

গত সপ্তাহেও গরুর মাংস ৬৮০ টাকা হলেও শুক্রবার কেন বেশি এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, দাম বাড়ানোর পেছনে আমাদের কোন হাত নেই। তবে গরুর খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কৃষকরা গরুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যাপারীরা বলেন ‘বেশি দামে কেনার ফলে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়’ এজন্যই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।

back to top