alt

অর্থ-বাণিজ্য

ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ে পাচার হচ্ছে টাকা : গভর্নর

২০-২০০ শতাংশ অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে পণ্য আমদানি, ১০০ এলসি বন্ধ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : বৃহস্পতিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২২

ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যম বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেছেন, ‘পণ্য আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ার আড়ালে দেশের বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। ২০-২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েসিং বা অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এরকম একশ’ এলসি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বিআইডিএস আয়োজিত তিন দিনের বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনের প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ।

গভর্নর বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব নেয়ার পর দেখলাম, ২০-২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েসিং (অতিরিক্ত মূল্য দেখানো) করে পণ্য আমদানি করা হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে পণ্যের দাম কম বা বেশি দেখিয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ‘ট্রেড বেজড মানি লন্ডারিং’ বন্ধ করা সম্ভব। এ রকম ১০০ এলসি বন্ধ করেছি আমরা। এই কারণে এলসিও কমে গেছে।’

পণ্য আমদানিতে ‘ওভার ইনভয়েসিং’ মানে হলো অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংক চ্যানেলেই বিদেশে পাচার হচ্ছে। পণ্যের মূল্যের নামে পাঠানো অতিরিক্ত অর্থ পরে বিদেশে আমদানিকারকের পক্ষে কেউ গ্রহণ করছে। আর ‘আন্ডার ইনভয়েসিং’ ব্যবহার করা হয় পণ্য রপ্তানিতে। পণ্য রপ্তানির সময়ে যে পরিমাণ অর্থ কম দেখানো হয়, তা বিদেশে রপ্তানিকারকের পক্ষে বুঝে নেয়া হয়। এতে পণ্যের বাকি দাম সেখানে থাকা এজেন্টরা গ্রহণ করে থাকে। অর্থাৎ সেই অর্থ যদি দেশে আসতো তাহলে সরকার লাভবান হতো।

অনেকে গুজব ছড়াচ্ছে ডলারের অভাবে এলসি খোলা যাচ্ছে না। কিন্তু বিষয়টি সত্য নয়। গভর্নর বলেন, ‘আমরা কোন এলসি বন্ধ করিনি, এটি সত্য নয়। আমরা ‘প্রাইস কন্ট্রোল’ (মূল্য নিয়ন্ত্রণ) করছি যেন সঠিক দামে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হয়। এটি করতে যেয়ে আমরা দেখলাম, এলসির পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। অর্র্থাৎ যে এলসিগুলো কমছে তারা ওভার বা আন্ডার ইনভয়েসিং করতো।’

বিলাস পণ্যের শুল্ক বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিলাসী পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে মাত্র। কারণ হচ্ছে, আপাতত এসব বিলাসী পণ্য কম এলেও কোন সমস্যা হবে না।’

ওভার ইনভয়েসিং হচ্ছে কি না, তা দেখতে গত বছর এবং এবছরের অনেক এলসির তথ্য নিয়ে গত জুলাই থেকে যাচাই-বাছাই শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখনই ২০-২০০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে পণ্য আমদানির বিষয়টি তারা জানতে পারেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এক লাখ ডলার মূল্যের গাড়ি আমদানি করা হয়েছে মাত্র ২০ হাজার ডলারে। এতে বোঝা যায়, বাকি অর্থ তারা হুন্ডির মাধ্যমে দিয়েছে। বাজারে যে দরে আপেল বিক্রি হচ্ছে, তার চেয়ে কম দরে আমদানি করা হচ্ছে। দর কম দেখানোতে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমছে এখান থেকে। এভাবে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যম পণ্য আমদানি হচ্ছে, যে দর কম দেখানো হচ্ছে, তা হুন্ডির মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে। হুন্ডিতে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রবাসীদের না পাঠানো রেমিট্যান্স।’

উল্লেখ্য, ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক তথ্যে দেখা যায়, ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিস ইনভয়েসিং বা অস্বচ্ছ লেনদেনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৮০৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

ব্যাংক ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহার বেঁধে দেয়ার বিষয়টি নিয়েও অনুষ্ঠানে কথা বলেন গভর্নর। তিনি বলেন, ‘কৃষি খাতে অনেক দেশই কম সুদে ঋণ দেয়। এটি সরকারের দিক থেকে করা হয়। আর ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে সিএমএসএমই খাতে সুদহার বড়িয়ে ৯ শতাংশের ‘ক্যাপ’ তুলে দেয়ার দাবি করা হয়। তখন খরচ বৃদ্ধির বিষয়টিকে তারা যুক্তি হিসেবে দেখায়। এ খাতের খরচ কমিয়ে আনার কৌশল হিসেবে সিএমএসএমই খাতে ব্যাংকগুলোকে ২ শতাংশ সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ অর্থ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে। এখন তারা কম সুদের তহবিল পাওয়ায় এ খাতে সুদহার তুলে দেয়ার প্রয়োজন নেই।’

রিজার্ভ ও মূল্যস্ফীতির সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, ‘মহামারী-পরবর্তী সময়ে যে দুটো সমস্যা অর্থনীতিতে দেখা যাচ্ছে, তার একটি হচ্ছে রিজার্ভ, অন্যটি মূল্যস্ফীতি। এই মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধি মুদ্রা সরবরাহ থেকে আসেনি। এটি আমদানি দর বেড়ে যাওয়ার ঘটনা থেকে হয়েছে।’

ডলারে দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজার অনুযায়ী হওয়া উচিত। এখন তা বাজারে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ কারণেই খোলা বাজারে ১২১ টাকায় উঠে যাওয়া ডলার এখন ১১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর আমদানি পর্যায়ে ডলারের দর এখন ১০৩-১০৪ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। যা কয়েক মাস আগেও বেশি ছিল। আমরা দর নিয়ন্ত্রণ (রেগুলেটেড ম্যানেজমেন্ট) ব্যবস্তাপনায় যাব না। আমরা বাজারমুখী করব ধীরে ধীরে। শীঘ্রই ভিন্ন ভিন্ন দর একটি সমন্বিত দরে চলে আসবে। এত বেশি ব্যবধান থাকবে না।’

হুন্ডির কারণে রেমিট্যান্স কমছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রেমিট্যান্স কমার বড় কারণ হলো হুন্ডি। এজন্য রেমিট্যান্স আনা সহজ ও আমদানিতে ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ করা হচ্ছে। রেমিট্যান্স আনা সহজ করতে মোবাইলে আনার সুযোগ হচ্ছে। রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ বন্ধ করা হয়েছে। আগামী ৩-৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে। প্রবাসীরা নিজেই রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবেন। তখন রেমিট্যান্সে একটি বড় উল্লম্ফন দেখা যাবে।’

ছবি

বাংলাদেশসহ ১৪ দেশে নতুন শুল্কের সময়সীমা ‘চূড়ান্ত নয়’ আলোচনার দরজা খোলা

ছবি

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

ছবি

বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে, ভারত ছয় নম্বরে

পাঁচ কার্যদিবসে বিদেশি ও প্রবাসী বিও হিসাব কমেছে প্রায় পাঁচশ’

সূচকের উত্থানে সপ্তাহ শুরু, লেনদেন ৫৭৩ কোটি

ছবি

ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন আদিল চৌধুরী

ছবি

খাদ্যপণ্যের দাম কমায় স্বস্তি, জুনে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৮.৪৮%

২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে গড় ব্যয় ৩০ পয়সা

রিটার্ন জমায় যেসব খাতে মিলবে করছাড়

ছবি

সেলসফোর্স বাজারে আনল এজেন্টফোর্স ৩ এআই এজেন্ট পরিচালনায় সহজ সমাধান

ছবি

আড়াই মাস পর ডিএসইএক্স ছুঁই ছুঁই পাঁচ হাজারের কাছে

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দর: বিদেশি অপারেটর আসার আগে এনসিটির ভার নিল ড্রাইডক

ছবি

স্থানীয় শিল্পে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার

ছবি

তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার চান টেক্সটাইল মালিকরা

বাজার মূলধনে যোগ হলো সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা

বিকাশ, রকেট, নগদসহ এমএফএসের মাধ্যমে শুল্ক-কর জমা দেয়া যাবে

ছবি

ব্রাদার পার্টনার ডে ২০২৫ অনুষ্ঠিত

ছবি

বিকাশ-রকেট-নগদে কাস্টমস শুল্ক পরিশোধ সুবিধা চালু, ঘরে বসেই পণ্য খালাসের পথ খুলল

ছবি

তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার চান ব্যবসায়ীরা

ছবি

কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে মাশুল বাড়বে না

সেমিকন্ডাক্টর খাতে ১০ বছরের কর অব্যাহতি ও শুল্ক ছাড়ের সুপারিশ

ছবি

প্রথম প্রান্তিকে বিমাদাবি নিষ্পত্তিতে গার্ডিয়ান লাইফ ইনস্যুরেন্সের ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’

৮৫ ব্রোকারেজ হাউসকে আগস্টের মধ্যে চালু করতে হবে ব্যাক অফিস সফটওয়্যার

ছবি

প্রসাধনী পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবি

ছবি

স্বর্ণের দাম আবার বাড়লো

ছবি

৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ ১০ হাজার টন সার কিনবে সরকার

এফবিসিসিআই নির্বাচন: সময় বাড়লো ৪৫ দিন

ছবি

পাট খাতের উন্নয়নে ‘সাসটেইনেবল মার্কেট এক্সেস বুটক্যাম্প’ কর্মসূচি শুরু

এক বছরে ভারতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন নেমেছে এক-তৃতীয়াংশে

৫ দিন বন্ধ থাকবে রূপালী ও এনসিসি ব্যাংকের সব কার্যক্রম

ছবি

ডলারের বিপরীতে টাকায় ঋণ নেয়ার সুযোগ

গত অর্থবছরে রফতানি আয় ৪৮ বিলিয়ন ডলার

নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার

ছবি

ব্যাগেজ রুলসে মোবাইল ও স্বর্ণ আনায় বড় ছাড়

ছবি

এনবিআরের আন্দোলনে অংশ নেওয়া আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের কথা জানালো দুদক

ছবি

প্রবাসী আয়ে রেকর্ড, রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি

tab

অর্থ-বাণিজ্য

ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ে পাচার হচ্ছে টাকা : গভর্নর

২০-২০০ শতাংশ অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে পণ্য আমদানি, ১০০ এলসি বন্ধ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বৃহস্পতিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২২

ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যম বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেছেন, ‘পণ্য আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ার আড়ালে দেশের বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। ২০-২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েসিং বা অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এরকম একশ’ এলসি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বিআইডিএস আয়োজিত তিন দিনের বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনের প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ।

গভর্নর বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব নেয়ার পর দেখলাম, ২০-২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েসিং (অতিরিক্ত মূল্য দেখানো) করে পণ্য আমদানি করা হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে পণ্যের দাম কম বা বেশি দেখিয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ‘ট্রেড বেজড মানি লন্ডারিং’ বন্ধ করা সম্ভব। এ রকম ১০০ এলসি বন্ধ করেছি আমরা। এই কারণে এলসিও কমে গেছে।’

পণ্য আমদানিতে ‘ওভার ইনভয়েসিং’ মানে হলো অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংক চ্যানেলেই বিদেশে পাচার হচ্ছে। পণ্যের মূল্যের নামে পাঠানো অতিরিক্ত অর্থ পরে বিদেশে আমদানিকারকের পক্ষে কেউ গ্রহণ করছে। আর ‘আন্ডার ইনভয়েসিং’ ব্যবহার করা হয় পণ্য রপ্তানিতে। পণ্য রপ্তানির সময়ে যে পরিমাণ অর্থ কম দেখানো হয়, তা বিদেশে রপ্তানিকারকের পক্ষে বুঝে নেয়া হয়। এতে পণ্যের বাকি দাম সেখানে থাকা এজেন্টরা গ্রহণ করে থাকে। অর্থাৎ সেই অর্থ যদি দেশে আসতো তাহলে সরকার লাভবান হতো।

অনেকে গুজব ছড়াচ্ছে ডলারের অভাবে এলসি খোলা যাচ্ছে না। কিন্তু বিষয়টি সত্য নয়। গভর্নর বলেন, ‘আমরা কোন এলসি বন্ধ করিনি, এটি সত্য নয়। আমরা ‘প্রাইস কন্ট্রোল’ (মূল্য নিয়ন্ত্রণ) করছি যেন সঠিক দামে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হয়। এটি করতে যেয়ে আমরা দেখলাম, এলসির পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। অর্র্থাৎ যে এলসিগুলো কমছে তারা ওভার বা আন্ডার ইনভয়েসিং করতো।’

বিলাস পণ্যের শুল্ক বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিলাসী পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে মাত্র। কারণ হচ্ছে, আপাতত এসব বিলাসী পণ্য কম এলেও কোন সমস্যা হবে না।’

ওভার ইনভয়েসিং হচ্ছে কি না, তা দেখতে গত বছর এবং এবছরের অনেক এলসির তথ্য নিয়ে গত জুলাই থেকে যাচাই-বাছাই শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখনই ২০-২০০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে পণ্য আমদানির বিষয়টি তারা জানতে পারেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এক লাখ ডলার মূল্যের গাড়ি আমদানি করা হয়েছে মাত্র ২০ হাজার ডলারে। এতে বোঝা যায়, বাকি অর্থ তারা হুন্ডির মাধ্যমে দিয়েছে। বাজারে যে দরে আপেল বিক্রি হচ্ছে, তার চেয়ে কম দরে আমদানি করা হচ্ছে। দর কম দেখানোতে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমছে এখান থেকে। এভাবে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যম পণ্য আমদানি হচ্ছে, যে দর কম দেখানো হচ্ছে, তা হুন্ডির মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে। হুন্ডিতে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রবাসীদের না পাঠানো রেমিট্যান্স।’

উল্লেখ্য, ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক তথ্যে দেখা যায়, ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিস ইনভয়েসিং বা অস্বচ্ছ লেনদেনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৮০৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

ব্যাংক ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহার বেঁধে দেয়ার বিষয়টি নিয়েও অনুষ্ঠানে কথা বলেন গভর্নর। তিনি বলেন, ‘কৃষি খাতে অনেক দেশই কম সুদে ঋণ দেয়। এটি সরকারের দিক থেকে করা হয়। আর ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে সিএমএসএমই খাতে সুদহার বড়িয়ে ৯ শতাংশের ‘ক্যাপ’ তুলে দেয়ার দাবি করা হয়। তখন খরচ বৃদ্ধির বিষয়টিকে তারা যুক্তি হিসেবে দেখায়। এ খাতের খরচ কমিয়ে আনার কৌশল হিসেবে সিএমএসএমই খাতে ব্যাংকগুলোকে ২ শতাংশ সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ অর্থ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে। এখন তারা কম সুদের তহবিল পাওয়ায় এ খাতে সুদহার তুলে দেয়ার প্রয়োজন নেই।’

রিজার্ভ ও মূল্যস্ফীতির সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, ‘মহামারী-পরবর্তী সময়ে যে দুটো সমস্যা অর্থনীতিতে দেখা যাচ্ছে, তার একটি হচ্ছে রিজার্ভ, অন্যটি মূল্যস্ফীতি। এই মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধি মুদ্রা সরবরাহ থেকে আসেনি। এটি আমদানি দর বেড়ে যাওয়ার ঘটনা থেকে হয়েছে।’

ডলারে দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজার অনুযায়ী হওয়া উচিত। এখন তা বাজারে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ কারণেই খোলা বাজারে ১২১ টাকায় উঠে যাওয়া ডলার এখন ১১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর আমদানি পর্যায়ে ডলারের দর এখন ১০৩-১০৪ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। যা কয়েক মাস আগেও বেশি ছিল। আমরা দর নিয়ন্ত্রণ (রেগুলেটেড ম্যানেজমেন্ট) ব্যবস্তাপনায় যাব না। আমরা বাজারমুখী করব ধীরে ধীরে। শীঘ্রই ভিন্ন ভিন্ন দর একটি সমন্বিত দরে চলে আসবে। এত বেশি ব্যবধান থাকবে না।’

হুন্ডির কারণে রেমিট্যান্স কমছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রেমিট্যান্স কমার বড় কারণ হলো হুন্ডি। এজন্য রেমিট্যান্স আনা সহজ ও আমদানিতে ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ করা হচ্ছে। রেমিট্যান্স আনা সহজ করতে মোবাইলে আনার সুযোগ হচ্ছে। রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ বন্ধ করা হয়েছে। আগামী ৩-৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে। প্রবাসীরা নিজেই রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবেন। তখন রেমিট্যান্সে একটি বড় উল্লম্ফন দেখা যাবে।’

back to top