alt

অর্থ-বাণিজ্য

ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ে পাচার হচ্ছে টাকা : গভর্নর

২০-২০০ শতাংশ অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে পণ্য আমদানি, ১০০ এলসি বন্ধ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : বৃহস্পতিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২২

ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যম বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেছেন, ‘পণ্য আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ার আড়ালে দেশের বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। ২০-২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েসিং বা অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এরকম একশ’ এলসি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বিআইডিএস আয়োজিত তিন দিনের বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনের প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ।

গভর্নর বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব নেয়ার পর দেখলাম, ২০-২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েসিং (অতিরিক্ত মূল্য দেখানো) করে পণ্য আমদানি করা হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে পণ্যের দাম কম বা বেশি দেখিয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ‘ট্রেড বেজড মানি লন্ডারিং’ বন্ধ করা সম্ভব। এ রকম ১০০ এলসি বন্ধ করেছি আমরা। এই কারণে এলসিও কমে গেছে।’

পণ্য আমদানিতে ‘ওভার ইনভয়েসিং’ মানে হলো অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংক চ্যানেলেই বিদেশে পাচার হচ্ছে। পণ্যের মূল্যের নামে পাঠানো অতিরিক্ত অর্থ পরে বিদেশে আমদানিকারকের পক্ষে কেউ গ্রহণ করছে। আর ‘আন্ডার ইনভয়েসিং’ ব্যবহার করা হয় পণ্য রপ্তানিতে। পণ্য রপ্তানির সময়ে যে পরিমাণ অর্থ কম দেখানো হয়, তা বিদেশে রপ্তানিকারকের পক্ষে বুঝে নেয়া হয়। এতে পণ্যের বাকি দাম সেখানে থাকা এজেন্টরা গ্রহণ করে থাকে। অর্থাৎ সেই অর্থ যদি দেশে আসতো তাহলে সরকার লাভবান হতো।

অনেকে গুজব ছড়াচ্ছে ডলারের অভাবে এলসি খোলা যাচ্ছে না। কিন্তু বিষয়টি সত্য নয়। গভর্নর বলেন, ‘আমরা কোন এলসি বন্ধ করিনি, এটি সত্য নয়। আমরা ‘প্রাইস কন্ট্রোল’ (মূল্য নিয়ন্ত্রণ) করছি যেন সঠিক দামে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হয়। এটি করতে যেয়ে আমরা দেখলাম, এলসির পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। অর্র্থাৎ যে এলসিগুলো কমছে তারা ওভার বা আন্ডার ইনভয়েসিং করতো।’

বিলাস পণ্যের শুল্ক বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিলাসী পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে মাত্র। কারণ হচ্ছে, আপাতত এসব বিলাসী পণ্য কম এলেও কোন সমস্যা হবে না।’

ওভার ইনভয়েসিং হচ্ছে কি না, তা দেখতে গত বছর এবং এবছরের অনেক এলসির তথ্য নিয়ে গত জুলাই থেকে যাচাই-বাছাই শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখনই ২০-২০০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে পণ্য আমদানির বিষয়টি তারা জানতে পারেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এক লাখ ডলার মূল্যের গাড়ি আমদানি করা হয়েছে মাত্র ২০ হাজার ডলারে। এতে বোঝা যায়, বাকি অর্থ তারা হুন্ডির মাধ্যমে দিয়েছে। বাজারে যে দরে আপেল বিক্রি হচ্ছে, তার চেয়ে কম দরে আমদানি করা হচ্ছে। দর কম দেখানোতে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমছে এখান থেকে। এভাবে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যম পণ্য আমদানি হচ্ছে, যে দর কম দেখানো হচ্ছে, তা হুন্ডির মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে। হুন্ডিতে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রবাসীদের না পাঠানো রেমিট্যান্স।’

উল্লেখ্য, ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক তথ্যে দেখা যায়, ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিস ইনভয়েসিং বা অস্বচ্ছ লেনদেনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৮০৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

ব্যাংক ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহার বেঁধে দেয়ার বিষয়টি নিয়েও অনুষ্ঠানে কথা বলেন গভর্নর। তিনি বলেন, ‘কৃষি খাতে অনেক দেশই কম সুদে ঋণ দেয়। এটি সরকারের দিক থেকে করা হয়। আর ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে সিএমএসএমই খাতে সুদহার বড়িয়ে ৯ শতাংশের ‘ক্যাপ’ তুলে দেয়ার দাবি করা হয়। তখন খরচ বৃদ্ধির বিষয়টিকে তারা যুক্তি হিসেবে দেখায়। এ খাতের খরচ কমিয়ে আনার কৌশল হিসেবে সিএমএসএমই খাতে ব্যাংকগুলোকে ২ শতাংশ সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ অর্থ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে। এখন তারা কম সুদের তহবিল পাওয়ায় এ খাতে সুদহার তুলে দেয়ার প্রয়োজন নেই।’

রিজার্ভ ও মূল্যস্ফীতির সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, ‘মহামারী-পরবর্তী সময়ে যে দুটো সমস্যা অর্থনীতিতে দেখা যাচ্ছে, তার একটি হচ্ছে রিজার্ভ, অন্যটি মূল্যস্ফীতি। এই মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধি মুদ্রা সরবরাহ থেকে আসেনি। এটি আমদানি দর বেড়ে যাওয়ার ঘটনা থেকে হয়েছে।’

ডলারে দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজার অনুযায়ী হওয়া উচিত। এখন তা বাজারে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ কারণেই খোলা বাজারে ১২১ টাকায় উঠে যাওয়া ডলার এখন ১১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর আমদানি পর্যায়ে ডলারের দর এখন ১০৩-১০৪ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। যা কয়েক মাস আগেও বেশি ছিল। আমরা দর নিয়ন্ত্রণ (রেগুলেটেড ম্যানেজমেন্ট) ব্যবস্তাপনায় যাব না। আমরা বাজারমুখী করব ধীরে ধীরে। শীঘ্রই ভিন্ন ভিন্ন দর একটি সমন্বিত দরে চলে আসবে। এত বেশি ব্যবধান থাকবে না।’

হুন্ডির কারণে রেমিট্যান্স কমছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রেমিট্যান্স কমার বড় কারণ হলো হুন্ডি। এজন্য রেমিট্যান্স আনা সহজ ও আমদানিতে ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ করা হচ্ছে। রেমিট্যান্স আনা সহজ করতে মোবাইলে আনার সুযোগ হচ্ছে। রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ বন্ধ করা হয়েছে। আগামী ৩-৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে। প্রবাসীরা নিজেই রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবেন। তখন রেমিট্যান্সে একটি বড় উল্লম্ফন দেখা যাবে।’

ছবি

সবজির বাজার অপরিবর্তিত, তবে কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের নির্বিঘ্ন প্রবেশাধিকার দাবি ডিআরইউর

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা স্বেচ্ছাচারিতামূলক আচরণ: টিআইবি

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রন আনতে বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো সঠিক : আইএমএফ

ছবি

বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন পাঁচ ও ভারত নয়ে

ছবি

বিআইসিএমের উদ্যোগে হবে পুঁজিবাজার সম্মেলন

ছবি

যমুনা ব্যাংক ও ডেল্টা লাইফের মধ্যে চুক্তি

ছবি

সোনার দাম আরও কমলো

ছবি

ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি পেলেন মোঃ নুরুল ইসলাম মজুমদার

ছবি

রিজার্ভ কমায় উদ্বেগ ও আতঙ্ক বাড়ছে

ছবি

তড়িঘড়ি ব্যাংক একীভূতকরণ খেলাপিদের দায়মুক্তির নতুন মুখোশ: টিআইবি

ছবি

হঠাৎ ঝলকের পর আবার পতন, বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ

ছবি

শেয়ারবাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ

ছবি

পদত্যাগ করেছেন পদ্মা ব্যাংকের এমডি তারেক রিয়াজ

ঈদের পর শেয়ারবাজার কিছুটা ভালো হতে শুরু করেছে

ছবি

দিনাজপুরে বাঁশ ফুলের চাল তৈরি

ছবি

অভিনেতা ওয়ালিউল হক রুমি মারা গেছেন

ছবি

বিআইপিডি’র অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করছে : এফএফআইএল

ছবি

চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেলেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সরকার বদ্ধপরিকর

ছবি

রাজধানীতে ঈদের পরও চড়া সবজির বাজার

ছবি

সয়াবিন তেলের লিটার প্রতি দাম বাড়ল ৪ টাকা

ছবি

সূচকের পতনে পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন

ছবি

ব্যাংক এশিয়া কিনবে পাকিস্তানি ব্যাংক আলফালাহর বাংলাদেশ অংশ

ছবি

এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.৭%: আইএমএফ

ছবি

একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যাংক চাইলে সরে যেতে পারবে, তবে শর্তসাপেক্ষে : কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি

পণ্যের দাম ঠিক রাখতে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে : প্রতিমন্ত্রী

ছবি

একীভূত ব্যাংক : পাঁচটির বাইরে আপাতত আর না

ছবি

ঈদে মানুষের মাঝে স্বস্তি দেখেছি : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বিশ্ব ব্যাংকের চেয়ে বেশি দেখছে এডিবি

ছবি

মার্চে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.৮১ শতাংশ

ছবি

ঈদের আগে পাঁচ দিনে দেশে এলো ৪৬ কোটি ডলার

ছবি

শিল্পাঞ্চলের বাইরের কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ আর নয়, পাবেনা ঋণও

এবার ঈদে পর্যটন খাত চাঙ্গা হওয়ার আশা

ছবি

জাতীয় লজিস্টিক নীতির খসড়ার অনুমোদন

সোনালীতে একীভূত হচ্ছে বিডিবিএল

ছবি

সোনার দাম আবার বাড়লো, ভরি ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা

tab

অর্থ-বাণিজ্য

ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ে পাচার হচ্ছে টাকা : গভর্নর

২০-২০০ শতাংশ অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে পণ্য আমদানি, ১০০ এলসি বন্ধ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বৃহস্পতিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২২

ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যম বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেছেন, ‘পণ্য আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ার আড়ালে দেশের বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। ২০-২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েসিং বা অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এরকম একশ’ এলসি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বিআইডিএস আয়োজিত তিন দিনের বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনের প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ।

গভর্নর বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব নেয়ার পর দেখলাম, ২০-২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েসিং (অতিরিক্ত মূল্য দেখানো) করে পণ্য আমদানি করা হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে পণ্যের দাম কম বা বেশি দেখিয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ‘ট্রেড বেজড মানি লন্ডারিং’ বন্ধ করা সম্ভব। এ রকম ১০০ এলসি বন্ধ করেছি আমরা। এই কারণে এলসিও কমে গেছে।’

পণ্য আমদানিতে ‘ওভার ইনভয়েসিং’ মানে হলো অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংক চ্যানেলেই বিদেশে পাচার হচ্ছে। পণ্যের মূল্যের নামে পাঠানো অতিরিক্ত অর্থ পরে বিদেশে আমদানিকারকের পক্ষে কেউ গ্রহণ করছে। আর ‘আন্ডার ইনভয়েসিং’ ব্যবহার করা হয় পণ্য রপ্তানিতে। পণ্য রপ্তানির সময়ে যে পরিমাণ অর্থ কম দেখানো হয়, তা বিদেশে রপ্তানিকারকের পক্ষে বুঝে নেয়া হয়। এতে পণ্যের বাকি দাম সেখানে থাকা এজেন্টরা গ্রহণ করে থাকে। অর্থাৎ সেই অর্থ যদি দেশে আসতো তাহলে সরকার লাভবান হতো।

অনেকে গুজব ছড়াচ্ছে ডলারের অভাবে এলসি খোলা যাচ্ছে না। কিন্তু বিষয়টি সত্য নয়। গভর্নর বলেন, ‘আমরা কোন এলসি বন্ধ করিনি, এটি সত্য নয়। আমরা ‘প্রাইস কন্ট্রোল’ (মূল্য নিয়ন্ত্রণ) করছি যেন সঠিক দামে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হয়। এটি করতে যেয়ে আমরা দেখলাম, এলসির পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। অর্র্থাৎ যে এলসিগুলো কমছে তারা ওভার বা আন্ডার ইনভয়েসিং করতো।’

বিলাস পণ্যের শুল্ক বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিলাসী পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে মাত্র। কারণ হচ্ছে, আপাতত এসব বিলাসী পণ্য কম এলেও কোন সমস্যা হবে না।’

ওভার ইনভয়েসিং হচ্ছে কি না, তা দেখতে গত বছর এবং এবছরের অনেক এলসির তথ্য নিয়ে গত জুলাই থেকে যাচাই-বাছাই শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখনই ২০-২০০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে পণ্য আমদানির বিষয়টি তারা জানতে পারেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এক লাখ ডলার মূল্যের গাড়ি আমদানি করা হয়েছে মাত্র ২০ হাজার ডলারে। এতে বোঝা যায়, বাকি অর্থ তারা হুন্ডির মাধ্যমে দিয়েছে। বাজারে যে দরে আপেল বিক্রি হচ্ছে, তার চেয়ে কম দরে আমদানি করা হচ্ছে। দর কম দেখানোতে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমছে এখান থেকে। এভাবে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যম পণ্য আমদানি হচ্ছে, যে দর কম দেখানো হচ্ছে, তা হুন্ডির মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে। হুন্ডিতে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রবাসীদের না পাঠানো রেমিট্যান্স।’

উল্লেখ্য, ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক তথ্যে দেখা যায়, ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিস ইনভয়েসিং বা অস্বচ্ছ লেনদেনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৮০৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

ব্যাংক ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহার বেঁধে দেয়ার বিষয়টি নিয়েও অনুষ্ঠানে কথা বলেন গভর্নর। তিনি বলেন, ‘কৃষি খাতে অনেক দেশই কম সুদে ঋণ দেয়। এটি সরকারের দিক থেকে করা হয়। আর ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে সিএমএসএমই খাতে সুদহার বড়িয়ে ৯ শতাংশের ‘ক্যাপ’ তুলে দেয়ার দাবি করা হয়। তখন খরচ বৃদ্ধির বিষয়টিকে তারা যুক্তি হিসেবে দেখায়। এ খাতের খরচ কমিয়ে আনার কৌশল হিসেবে সিএমএসএমই খাতে ব্যাংকগুলোকে ২ শতাংশ সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ অর্থ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে। এখন তারা কম সুদের তহবিল পাওয়ায় এ খাতে সুদহার তুলে দেয়ার প্রয়োজন নেই।’

রিজার্ভ ও মূল্যস্ফীতির সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, ‘মহামারী-পরবর্তী সময়ে যে দুটো সমস্যা অর্থনীতিতে দেখা যাচ্ছে, তার একটি হচ্ছে রিজার্ভ, অন্যটি মূল্যস্ফীতি। এই মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধি মুদ্রা সরবরাহ থেকে আসেনি। এটি আমদানি দর বেড়ে যাওয়ার ঘটনা থেকে হয়েছে।’

ডলারে দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজার অনুযায়ী হওয়া উচিত। এখন তা বাজারে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ কারণেই খোলা বাজারে ১২১ টাকায় উঠে যাওয়া ডলার এখন ১১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর আমদানি পর্যায়ে ডলারের দর এখন ১০৩-১০৪ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। যা কয়েক মাস আগেও বেশি ছিল। আমরা দর নিয়ন্ত্রণ (রেগুলেটেড ম্যানেজমেন্ট) ব্যবস্তাপনায় যাব না। আমরা বাজারমুখী করব ধীরে ধীরে। শীঘ্রই ভিন্ন ভিন্ন দর একটি সমন্বিত দরে চলে আসবে। এত বেশি ব্যবধান থাকবে না।’

হুন্ডির কারণে রেমিট্যান্স কমছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রেমিট্যান্স কমার বড় কারণ হলো হুন্ডি। এজন্য রেমিট্যান্স আনা সহজ ও আমদানিতে ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ করা হচ্ছে। রেমিট্যান্স আনা সহজ করতে মোবাইলে আনার সুযোগ হচ্ছে। রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ বন্ধ করা হয়েছে। আগামী ৩-৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে। প্রবাসীরা নিজেই রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবেন। তখন রেমিট্যান্সে একটি বড় উল্লম্ফন দেখা যাবে।’

back to top