গতমাসে প্যাকেটজাত চিনির দাম কেজিতে ১৩ টাকা বাড়িয়ে ১০৮ টাকা করা হয়। বেঁধে দেয়া নতুন বাড়তি দামেও বাজারে মিলছে না চিনি। যেসব দোকানে চিনি পাওয়া যাচ্ছে তারা বেঁধে দেয়া দামের চেয়েও অনেক বেশি দামে বিক্রি করছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, তাদেরই বেশি দামে চিনি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
আর যেসব দোকানে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না কারণ হিসেবে তারা বলছেন নতুন বেঁধে দেয়া দামে তারা কিনতে পারছেন না। বাড়তি দামে কিনে বিক্রি করলে ঝামেলাও জরিমানার ভয় থাকায় দোকানে চিনি রাখছেন না।
এর আগে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দেশি চিনির দাম কেজিতে ১৪ টাকা বাড়িয়ে খুচরা দর ৯৯ টাকা নির্ধারণ করে।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই সরকার খোলা চিনির কেজি ৯০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ৯৫ টাকা করে সর্বোচ্চ দর বেঁধে দেয়। তবে সেইদামে কোথাও চিনি পাওয়া যাচ্ছিল না।
পরে নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে কেজিতে ১৩ টাকা করে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এবারও বাজারে সরবরাহ বাড়েনি।
রাজধানী শ্যামলীর বকুল জেনারেল স্টোরে স্বত্বাধিকারী বকুল মিয়া সংবাদকে বলেন, ‘সাদা খোলা ও ইগলু প্যাকেট চিনি যেটাই নেন কেজি ১২০ টাকা। আর সোনালী ব্যান্ডের লাল চিনি প্যাকেটের গায়ে লেখা ১৫০ টাকা কেজি দামেই বিক্রি করছি।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে ক্রেতা এসে প্যাকেট উল্টে পাল্টে দেখেন কত লেখা আছে। প্যাকেটের গায়ের লেখা দামের চেয়ে আমাদের বেশি দামে কিতে হয়। তাহলে কি লস দিয়ে বিক্রি করবো। দোকানের সমন্বয় ও কাস্টমার ধরে রাখতে ঝুঁকি নিয়ে চিনি উঠাই।’
কারওয়ান বাজারের মাসুদ জেনারেল স্টোরের বিক্রয়কর্মী আরমান বলেন, ‘মাশিরা লাল চিনি এক কেজির প্যাকেট ১৪০ টাকা আর সাদা খোলা চিনি ১২০ টাকায় বিক্রি করছি।’
পাশের দোকানে গিয়ে চিনি পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে এ দোকানি সংবাদকে বলেন, ‘চিনির বাজার টালমাটাল। বেশি দামে চিনি কিনে বেশি দামে বিক্রি করলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। কাস্টমারের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় তাই আপাতত চিনি দোকানে উঠাচ্ছি না’
কারওয়ান বাজারের শাহপরান জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘কোম্পানি/ডিলারদের কাছে থেকে মাল পাই না। প্যাকেটের গায়ে লেখা আছে ১০৭ টাকা। ট্রাকে যখন চিনি বিক্রি হয় তখন কিছু টোকাইও চিনি কেনে। আমাদের টোকাইয়ের কাছ থেকে কেনা লাগে ১১০ টাকা, কতটা বেচুম বলেন এখন।’
কারওয়ান বাজারের মান্নান এন্টারপ্রাইজের মানান্ন মিয়া বলেন, ‘চিনি মোটামুটি পাওয়া যায়, দাম একটু বেশি। খোলা লাল চিনি ১৩০ টাকা দামে বিক্রি করছি।’
কারওয়ান বাজারের গ্রিন জেনারেল স্টোরের বিক্রয়কর্মী জামাল বলেন, ‘চিনির সমস্যা নেই। আপনার ৫০ বস্তা চিনি লাগলেও দেয়া যাবে। তবে যেখান থেকে এনে দিবো তিনি মেমো দিবে না। আর আমিও আপনাকে মেমো দিতে পারবো না। খোলা লাল চিনি ১৩০ টাকায় আর সাদা খোলা চিনি বিক্রি করছি ১১০ টাকা কেজিতে। আমাদের ৫০ কেজির এক বস্তা লাল চিনি কিনতে পড়ে ছয় হাজার তিনশ’ আর সাদা চিনির বস্তা কিতে পড়ে পাঁচ হাজার চারশ’ টাকা।’
বি. বাড়িয়া জেনারেল স্টোরের বিক্রয়কর্মী শমসের সংবাদকে বলেন, ‘পরিচিত লোক ছাড়া চিনি বিক্রি করি না। একজন অফিসের জন্য ৫ কেজি চিনি কিনতে এসেছিল, বিক্রি করি নাই। কারণ তিনি মেমো চায়। আর মেমো দিলে তো জরিমানা খাইতে হবে ৫ বস্তা চিনির। আমরা এক বস্তা করে চিনি কিনে বিক্রি করি।’
তিনি বলেন, ‘ডিলারদের কাছ থেকে এক কেজির এক প্যাকেট চিনি কিনতে পড়ে ১১২ টাকা। বিক্রি করছি ১১৫ টাকা। ডিলারদেরও করার কিছু নেই, কারণ তারাও কোম্পানির থেকে বেশি দামে চিনি আনে। মিলাররা নির্ধারিত দামে না দিলে কোন স্তরের ব্যবসায়ীরা বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি করতে পারবে না। মিলারদের লাভ না হলে তারাও বিক্রি করবে না।’
তবে কারওয়ান বাজারের আমিন জেনারেল স্টোরে প্যাকেট চিনি ১০৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাজারে চিনির চাহিদার প্রায় পুরোটাই আসে বেসরকারি চিনি পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো থেকে। নিজেরা ঘোষণা দিয়ে দাম বাড়িয়ে দিলেও ‘সরবরাহ না বাড়ানোর’ কারণেই খুচরায় চিনির সংকটের কথা বলছেন দোকানিরা।
সরবরাহ সংকট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান বলেন, ‘বাজারে চিনির যে সংকট তার কারণ এক কথায় বর্ণনা করা যাবে না। এর পেছনে বহু কারণ জড়িত দাবি করে তিনি বলেন, ‘একদিকে ডলার সংকটের কারণে চিনির কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। গ্যাস সংকটের কারণে পর্যাপ্ত চিনি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। আবার উৎপাদিত চিনির দাম বেশি হলেও সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন মূল্য তালিকা ঘোষণা করছে না। আমরা এ নিয়ে দুই মাস ধরে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে আসছি। কিন্তু একটি সমস্যারও সমাধান দেয়া হয়নি।’
চিনির দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন বাজারে আসা এক কেজি চিনিতে বিভিন্ন ধাপে ৩৩ টাকার শুল্ক জড়িয়ে আছে। আমরা এখানে সরকারকে ছাড় দিতে বলে আসছি। কিন্তু কোন সিদ্ধান্তই নেয়া হচ্ছে না। অনেকে হয়তো মনে করে থাকেন, কোম্পানিগুলো সংকট সৃষ্টি করছে। কিন্তু এতগুলো দৃশ্যমান সংকট থাকার পরে আবার নতুন করে সংকট সৃষ্টি করতে যাবে কে? আমরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সরবরাহ দেয়ার চেষ্টা করছি।’
এলসির ক্ষেত্রে ডলার সংকটের কথা তুলে ধরে গোলাম রহমান জানান, ‘ব্যক্তিগত সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে চিনির কাঁচামালবাহী একটি জাহাজ দেড় মাস আগে চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ানো হয়েছে। কিন্তু ডলারের অভাবে সেখানে থাকা ৫৫ হাজার টন চিনি এখনও খালাস করে শেষ করা যায়নি। জাহাজ বসে থাকার কারণে জরিমানা গুনতে হচ্ছে। একটু একটু করে চিনি খালাস করা হচ্ছে।’
চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান অপু একমাস আগে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের চিনির যে মোট চাহিদা, স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে তা মেটানো সম্ভব নয়। এর জন্য চিনি আমদানি করতে হয়। এখন ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে কিছু সমস্যা হচ্ছে। ফলে চিনি আমদানি কমেছে বলে শুনেছি। চিনি আমদানির বিষয়টি আগে আমরা দেখতাম। কিন্তু এখন তা বেসরকারি খাতে চলে যাওয়ায় তা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আমাদের কাছেও এখন চিনির মজুদ কম আছে।’
রোববার (৪ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভা শেষে সাংবাদিকদের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘চিনির দামটা যেটুকু বেশি আছে সেটা কমে আসবে। কথা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে যে আসছে তাকে বলেছি চিনির ওপর ডিউটি যদি একটু কমানো যায় বা কন্সিডার করা যায় তাহলে দামের ওপর প্রভাব পড়বে বা দাম কমে যাবে।’
গত নভেম্বরে চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। তারপরও বাজারে এখন ১২০ টাকা দরে চিনি বিক্রি হচ্ছে। এর কারণ জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা ঠিক বাজারে যারা ব্যবসায়ী তারা ফেরেশতা নয়। কিন্তু আমরা যে দাম নির্ধারণ করে দিই সেটাই বিক্রি করতে হবে বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। দাম কত হওয়া উচিত সেটা নির্ধারণ করে দেই আমরা। তারপরও দেখি কোথাও কোথাও চিনি নিয়ে কিছু ব্যবসায়ী কারসাজি করেছেন। তবে আমাদের কাগজপত্র বলে প্রচুর পরিমাণ চিনি রয়েছে, পাইপলাইনেও আছে। আমাদের ভোক্তা অধিকার বিভিন্ন জায়গায় হানা দিচ্ছে, জরিমানা করছেঅ এখন আমরা চিন্তা করছি, এর বাইরে যদি প্রয়োজন হয় জেলের ব্যবস্থা করে কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।’
চিনি আমদানিতে অনুমোদন দেয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ চিনি আছে। অন্য বছরের তুলনায় প্রচুর চিনি রয়েছে। আর আমদানি তো ওপেন আছে। বাজারে যা মজুদ আছে সেটা কোন অবস্থায় দেশের জন্য বিপজ্জনক নয়। আমরা শুধু সাধারণ মানুষ যাতে কম দামে চিনি পায় সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’
রোববার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২২
গতমাসে প্যাকেটজাত চিনির দাম কেজিতে ১৩ টাকা বাড়িয়ে ১০৮ টাকা করা হয়। বেঁধে দেয়া নতুন বাড়তি দামেও বাজারে মিলছে না চিনি। যেসব দোকানে চিনি পাওয়া যাচ্ছে তারা বেঁধে দেয়া দামের চেয়েও অনেক বেশি দামে বিক্রি করছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, তাদেরই বেশি দামে চিনি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
আর যেসব দোকানে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না কারণ হিসেবে তারা বলছেন নতুন বেঁধে দেয়া দামে তারা কিনতে পারছেন না। বাড়তি দামে কিনে বিক্রি করলে ঝামেলাও জরিমানার ভয় থাকায় দোকানে চিনি রাখছেন না।
এর আগে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দেশি চিনির দাম কেজিতে ১৪ টাকা বাড়িয়ে খুচরা দর ৯৯ টাকা নির্ধারণ করে।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই সরকার খোলা চিনির কেজি ৯০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ৯৫ টাকা করে সর্বোচ্চ দর বেঁধে দেয়। তবে সেইদামে কোথাও চিনি পাওয়া যাচ্ছিল না।
পরে নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে কেজিতে ১৩ টাকা করে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এবারও বাজারে সরবরাহ বাড়েনি।
রাজধানী শ্যামলীর বকুল জেনারেল স্টোরে স্বত্বাধিকারী বকুল মিয়া সংবাদকে বলেন, ‘সাদা খোলা ও ইগলু প্যাকেট চিনি যেটাই নেন কেজি ১২০ টাকা। আর সোনালী ব্যান্ডের লাল চিনি প্যাকেটের গায়ে লেখা ১৫০ টাকা কেজি দামেই বিক্রি করছি।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে ক্রেতা এসে প্যাকেট উল্টে পাল্টে দেখেন কত লেখা আছে। প্যাকেটের গায়ের লেখা দামের চেয়ে আমাদের বেশি দামে কিতে হয়। তাহলে কি লস দিয়ে বিক্রি করবো। দোকানের সমন্বয় ও কাস্টমার ধরে রাখতে ঝুঁকি নিয়ে চিনি উঠাই।’
কারওয়ান বাজারের মাসুদ জেনারেল স্টোরের বিক্রয়কর্মী আরমান বলেন, ‘মাশিরা লাল চিনি এক কেজির প্যাকেট ১৪০ টাকা আর সাদা খোলা চিনি ১২০ টাকায় বিক্রি করছি।’
পাশের দোকানে গিয়ে চিনি পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে এ দোকানি সংবাদকে বলেন, ‘চিনির বাজার টালমাটাল। বেশি দামে চিনি কিনে বেশি দামে বিক্রি করলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। কাস্টমারের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় তাই আপাতত চিনি দোকানে উঠাচ্ছি না’
কারওয়ান বাজারের শাহপরান জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘কোম্পানি/ডিলারদের কাছে থেকে মাল পাই না। প্যাকেটের গায়ে লেখা আছে ১০৭ টাকা। ট্রাকে যখন চিনি বিক্রি হয় তখন কিছু টোকাইও চিনি কেনে। আমাদের টোকাইয়ের কাছ থেকে কেনা লাগে ১১০ টাকা, কতটা বেচুম বলেন এখন।’
কারওয়ান বাজারের মান্নান এন্টারপ্রাইজের মানান্ন মিয়া বলেন, ‘চিনি মোটামুটি পাওয়া যায়, দাম একটু বেশি। খোলা লাল চিনি ১৩০ টাকা দামে বিক্রি করছি।’
কারওয়ান বাজারের গ্রিন জেনারেল স্টোরের বিক্রয়কর্মী জামাল বলেন, ‘চিনির সমস্যা নেই। আপনার ৫০ বস্তা চিনি লাগলেও দেয়া যাবে। তবে যেখান থেকে এনে দিবো তিনি মেমো দিবে না। আর আমিও আপনাকে মেমো দিতে পারবো না। খোলা লাল চিনি ১৩০ টাকায় আর সাদা খোলা চিনি বিক্রি করছি ১১০ টাকা কেজিতে। আমাদের ৫০ কেজির এক বস্তা লাল চিনি কিনতে পড়ে ছয় হাজার তিনশ’ আর সাদা চিনির বস্তা কিতে পড়ে পাঁচ হাজার চারশ’ টাকা।’
বি. বাড়িয়া জেনারেল স্টোরের বিক্রয়কর্মী শমসের সংবাদকে বলেন, ‘পরিচিত লোক ছাড়া চিনি বিক্রি করি না। একজন অফিসের জন্য ৫ কেজি চিনি কিনতে এসেছিল, বিক্রি করি নাই। কারণ তিনি মেমো চায়। আর মেমো দিলে তো জরিমানা খাইতে হবে ৫ বস্তা চিনির। আমরা এক বস্তা করে চিনি কিনে বিক্রি করি।’
তিনি বলেন, ‘ডিলারদের কাছ থেকে এক কেজির এক প্যাকেট চিনি কিনতে পড়ে ১১২ টাকা। বিক্রি করছি ১১৫ টাকা। ডিলারদেরও করার কিছু নেই, কারণ তারাও কোম্পানির থেকে বেশি দামে চিনি আনে। মিলাররা নির্ধারিত দামে না দিলে কোন স্তরের ব্যবসায়ীরা বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি করতে পারবে না। মিলারদের লাভ না হলে তারাও বিক্রি করবে না।’
তবে কারওয়ান বাজারের আমিন জেনারেল স্টোরে প্যাকেট চিনি ১০৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাজারে চিনির চাহিদার প্রায় পুরোটাই আসে বেসরকারি চিনি পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো থেকে। নিজেরা ঘোষণা দিয়ে দাম বাড়িয়ে দিলেও ‘সরবরাহ না বাড়ানোর’ কারণেই খুচরায় চিনির সংকটের কথা বলছেন দোকানিরা।
সরবরাহ সংকট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান বলেন, ‘বাজারে চিনির যে সংকট তার কারণ এক কথায় বর্ণনা করা যাবে না। এর পেছনে বহু কারণ জড়িত দাবি করে তিনি বলেন, ‘একদিকে ডলার সংকটের কারণে চিনির কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। গ্যাস সংকটের কারণে পর্যাপ্ত চিনি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। আবার উৎপাদিত চিনির দাম বেশি হলেও সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন মূল্য তালিকা ঘোষণা করছে না। আমরা এ নিয়ে দুই মাস ধরে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে আসছি। কিন্তু একটি সমস্যারও সমাধান দেয়া হয়নি।’
চিনির দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন বাজারে আসা এক কেজি চিনিতে বিভিন্ন ধাপে ৩৩ টাকার শুল্ক জড়িয়ে আছে। আমরা এখানে সরকারকে ছাড় দিতে বলে আসছি। কিন্তু কোন সিদ্ধান্তই নেয়া হচ্ছে না। অনেকে হয়তো মনে করে থাকেন, কোম্পানিগুলো সংকট সৃষ্টি করছে। কিন্তু এতগুলো দৃশ্যমান সংকট থাকার পরে আবার নতুন করে সংকট সৃষ্টি করতে যাবে কে? আমরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সরবরাহ দেয়ার চেষ্টা করছি।’
এলসির ক্ষেত্রে ডলার সংকটের কথা তুলে ধরে গোলাম রহমান জানান, ‘ব্যক্তিগত সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে চিনির কাঁচামালবাহী একটি জাহাজ দেড় মাস আগে চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ানো হয়েছে। কিন্তু ডলারের অভাবে সেখানে থাকা ৫৫ হাজার টন চিনি এখনও খালাস করে শেষ করা যায়নি। জাহাজ বসে থাকার কারণে জরিমানা গুনতে হচ্ছে। একটু একটু করে চিনি খালাস করা হচ্ছে।’
চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান অপু একমাস আগে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের চিনির যে মোট চাহিদা, স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে তা মেটানো সম্ভব নয়। এর জন্য চিনি আমদানি করতে হয়। এখন ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে কিছু সমস্যা হচ্ছে। ফলে চিনি আমদানি কমেছে বলে শুনেছি। চিনি আমদানির বিষয়টি আগে আমরা দেখতাম। কিন্তু এখন তা বেসরকারি খাতে চলে যাওয়ায় তা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আমাদের কাছেও এখন চিনির মজুদ কম আছে।’
রোববার (৪ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভা শেষে সাংবাদিকদের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘চিনির দামটা যেটুকু বেশি আছে সেটা কমে আসবে। কথা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে যে আসছে তাকে বলেছি চিনির ওপর ডিউটি যদি একটু কমানো যায় বা কন্সিডার করা যায় তাহলে দামের ওপর প্রভাব পড়বে বা দাম কমে যাবে।’
গত নভেম্বরে চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। তারপরও বাজারে এখন ১২০ টাকা দরে চিনি বিক্রি হচ্ছে। এর কারণ জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা ঠিক বাজারে যারা ব্যবসায়ী তারা ফেরেশতা নয়। কিন্তু আমরা যে দাম নির্ধারণ করে দিই সেটাই বিক্রি করতে হবে বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। দাম কত হওয়া উচিত সেটা নির্ধারণ করে দেই আমরা। তারপরও দেখি কোথাও কোথাও চিনি নিয়ে কিছু ব্যবসায়ী কারসাজি করেছেন। তবে আমাদের কাগজপত্র বলে প্রচুর পরিমাণ চিনি রয়েছে, পাইপলাইনেও আছে। আমাদের ভোক্তা অধিকার বিভিন্ন জায়গায় হানা দিচ্ছে, জরিমানা করছেঅ এখন আমরা চিন্তা করছি, এর বাইরে যদি প্রয়োজন হয় জেলের ব্যবস্থা করে কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।’
চিনি আমদানিতে অনুমোদন দেয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ চিনি আছে। অন্য বছরের তুলনায় প্রচুর চিনি রয়েছে। আর আমদানি তো ওপেন আছে। বাজারে যা মজুদ আছে সেটা কোন অবস্থায় দেশের জন্য বিপজ্জনক নয়। আমরা শুধু সাধারণ মানুষ যাতে কম দামে চিনি পায় সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’