alt

অর্থ-বাণিজ্য

সাত মাসেই ৮৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩

আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে, সেই হারে বাড়েনি রপ্তানি। আশানুরূপ রেমিট্যান্সও আসেনি। ফলে দেশের বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। চাহিদা অনুযায়ী ডলারের জোগান না থাকায় প্রয়োজনীয় এলসি (ঋণ পত্র) খুলতে পারছে না ব্যাংকগুলো। আবার আমদানির অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে অনেক ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে বাজার ‘স্থিতিশীল’ রাখতে রেকর্ড পরিমাণ ডলার বিক্রি করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপরও ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। বাড়ছে ডলারের দাম আর বিপরীতে কমছে টাকার মান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সমস্যা সমাধানে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাত মাস শেষ না হতেই আমদানি দায় পরিশোধের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৮৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে পুরো অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এই পরিমাণ ডলার বিক্রি করেনি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২১-২২ অর্থবছরে মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল।

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় দর ধরে রাখতে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়াও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছরের আগে সেটিই ছিল সর্বোচ্চ ডলার কেনার রেকর্ড।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ডলারের মূল্য বাড়লে মুদ্রা বিনিময় হারের মাধ্যমে দেশে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। এজন্য ডলারের চাহিদা বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে প্রচুর পরিমাণ ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবশেষ ২৩ জানুয়ারি রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৫ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ার পরও রিজার্ভ সাড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। দিনশেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার।

আন্তর্জাতিক মানদন্ডে যদি রিজার্ভ হিসাব করা হয় তাহলে এটি আরও আট বিলিয়নের মতো কমে যাবে। সেই হিসাবে এখন প্রকৃত রিজার্ভ আছে সাড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলার যা গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর থেকে রিজার্ভ কমে এ পর্যায়ে নেমেছে। এর আগে ধারাবাহিকভাবে যা বাড়ছিল। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে আরও বেড়ে ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে দেশের রিজার্ভ। এরপর তা বেড়ে ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার হয়। রিজার্ভের এ অঙ্ক ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এরপর আর রিজার্ভ ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময় ধরে চলে এই ডলার বিক্রি। রিজার্ভ থেকে ডলার বাজারে না ছাড়লে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম আরও বেড়ে যাবে- এ বিবেচনায় ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শেষ পর্যন্ত ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রির মধ্য দিয়ে অর্থবছর শেষ হয়।

গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে সব ব্যাংকের কাছে প্রয়োজনীয় ডলার বিক্রি করলেও গত তিন মাস ধরে শুধু সরকারি কেনাকাটা ও জ্বালানি তেল, স্যারসহ অন্যান্য অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য এলসি বা ঋণপত্র খুলতে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ডলার কিনে আমদানি খরচ মেটাচ্ছে।

এদিকে ডলার সংকট প্রকট হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এই দায়িত্ব দেয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বাফেদার ওপর। এরপর দুই সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ ক?রে আস?ছে। শুরুতে রপ্তানি আয়ে ডলারের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৯৯ টাকা ও প্রবাসী আয়ে ১০৮ টাকা। আর ডলারের পাঁচ দিনের গড় খরচের চেয়ে ১ টাকা বেশি দামে আমদানি দায় শোধ করতে বলা হয়। পরে বিভিন্ন সময় দফায় দফায় বৈঠক করে নতুন দর নির্ধারণ করা হচ্ছে।

সবশেষ ১ জানুয়া?রি রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম আরও ১ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। এবিবি ও বাফেদা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম ১০২ টাকা। প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ১০৭ টাকা।

এবিবি ও বাফেদা নয় সংকটে ডলারের দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। এখন প্রতি ডলার ১০০ টাকা করে বিক্রি করছে। অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক জরুরি পণ্য আমদানিতে যে ডলার বিক্রি করছে, তার প্রতি ডলারের মূল্য ১০০ টাকা।

গত সোমবার এই দরেই রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৫ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা। এক বছর আগেও এই ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। তবে খোলা বাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১১ টাকা। গেল বছর কার্ব মার্কেটে ডলার ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। সব ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী ডলার বিক্রি করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সঞ্চিত রিজার্ভ আরও কমে যাবে। সেজন্য সরকারের প্রয়োজনেই এখন শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে।

সবচেয়ে নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগ ‘ট্রেজারি বন্ড’

আগামী ৯ এপ্রিল থেকে নতুন নোট পাওয়া যাবে

বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ আছে

ছবি

চলতি বছর এশিয়ায় প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ

সূচক উত্থানে শেয়ারবাজার

যশোরের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে বছরে বিক্রি ১৬২ কোটি টাকার পণ্য

ছবি

কার্ডে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন

ছবি

বড় লোকসানে ইনটেক লিমিটেড

ছয় মাসে পারিবারিক খরচ বেড়েছে ১৩ দশমিক ১ শতাংশ

জনপ্রিয়তা বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের

আমদানি পর্যায়ে আগাম কর প্রত্যাহারের দাবি এফবিসিসিআইর

শেয়ারবাজারে সামান্য উত্থান, বেড়েছে সূচক ও লেনদেন

ছবি

জ্বালানি তেলের সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ, দাম বাড়ছেই

ছবি

ভেঙে ছয় টুকরা হচ্ছে চীনের আলিবাবা

ছবি

কর্মীদের বোনাস কম দেবে মেটা

ছবি

লাইসেন্স নেই, অবৈধভাবে তৈরি হচ্ছিল ললিপপ-জুস

ছবি

আমাদের তরুণ উদ্ভাবকেরা শুধু দেশের নয় বিশ্বেরও সমস্যা সমাধান করবে: আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক

ছবি

২৪ দিনে প্রায় ১৬০ কোটি ডলার পাঠিয়েছে প্রবাসীরা

তারল্য সংকট দূর করতে পুঁজিবাজারে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ দেবে বিএসইসি

শেয়ারদর, সূচক ও লেনদেন সবই কমেছে

‘ব্যাংক কোম্পানি আইন-২০২৩’ সংশোধনী মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

ছবি

বাংলাদেশের ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’ প্রস্তাবকে স্বাগত মৌরিতানিয়ার

ছবি

২০০ টাকায় ঠেকলো ব্রয়লারের দাম

ছবি

এক পরিবারে ৩ ব্যাংক পরিচালকের বেশি নয়, আইন অনুমোদন

ছবি

পোশাক শ্রমিকদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বিজিএমইএর নির্দেশনা

ছবি

২৪ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭ হাজার ৯৩ কোটি টাকা

ছবি

ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে পাঠানো রেমিটেন্স তোলা যাবে বিকাশ এজেন্ট পয়েন্টে

ছবি

‘কৃষকের বাজার’ পরিধি বাড়িয়ে স্থায়ী করার দাবি

ছবি

রোজায় বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ

ছবি

জানুয়ারিতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

ছবি

আজ থেকে নতুন সময়সূচিতে অফিস-ব্যাংক

সাত মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে তিন হাজার ৬৯ কোটি টাকার

অননুমোদিত পণ্য বিক্রি করায় ক্যারি ফ্যামেলিকে জরিমানা

শেয়ারবাজারে আস্থা তৈরিতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান

ছবি

পদ্মা ব্যাংকে মানুষের আস্থা বাড়ছে : এমডি ও সিইও তারেক রিয়াজ খান

ছবি

বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি: বাণিজ্যমন্ত্রী

tab

অর্থ-বাণিজ্য

সাত মাসেই ৮৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩

আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে, সেই হারে বাড়েনি রপ্তানি। আশানুরূপ রেমিট্যান্সও আসেনি। ফলে দেশের বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। চাহিদা অনুযায়ী ডলারের জোগান না থাকায় প্রয়োজনীয় এলসি (ঋণ পত্র) খুলতে পারছে না ব্যাংকগুলো। আবার আমদানির অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে অনেক ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে বাজার ‘স্থিতিশীল’ রাখতে রেকর্ড পরিমাণ ডলার বিক্রি করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপরও ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। বাড়ছে ডলারের দাম আর বিপরীতে কমছে টাকার মান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সমস্যা সমাধানে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাত মাস শেষ না হতেই আমদানি দায় পরিশোধের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৮৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে পুরো অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এই পরিমাণ ডলার বিক্রি করেনি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২১-২২ অর্থবছরে মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল।

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় দর ধরে রাখতে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়াও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছরের আগে সেটিই ছিল সর্বোচ্চ ডলার কেনার রেকর্ড।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ডলারের মূল্য বাড়লে মুদ্রা বিনিময় হারের মাধ্যমে দেশে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। এজন্য ডলারের চাহিদা বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে প্রচুর পরিমাণ ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবশেষ ২৩ জানুয়ারি রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৫ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ার পরও রিজার্ভ সাড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। দিনশেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার।

আন্তর্জাতিক মানদন্ডে যদি রিজার্ভ হিসাব করা হয় তাহলে এটি আরও আট বিলিয়নের মতো কমে যাবে। সেই হিসাবে এখন প্রকৃত রিজার্ভ আছে সাড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলার যা গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর থেকে রিজার্ভ কমে এ পর্যায়ে নেমেছে। এর আগে ধারাবাহিকভাবে যা বাড়ছিল। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে আরও বেড়ে ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে দেশের রিজার্ভ। এরপর তা বেড়ে ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার হয়। রিজার্ভের এ অঙ্ক ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এরপর আর রিজার্ভ ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময় ধরে চলে এই ডলার বিক্রি। রিজার্ভ থেকে ডলার বাজারে না ছাড়লে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম আরও বেড়ে যাবে- এ বিবেচনায় ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শেষ পর্যন্ত ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রির মধ্য দিয়ে অর্থবছর শেষ হয়।

গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে সব ব্যাংকের কাছে প্রয়োজনীয় ডলার বিক্রি করলেও গত তিন মাস ধরে শুধু সরকারি কেনাকাটা ও জ্বালানি তেল, স্যারসহ অন্যান্য অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য এলসি বা ঋণপত্র খুলতে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ডলার কিনে আমদানি খরচ মেটাচ্ছে।

এদিকে ডলার সংকট প্রকট হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এই দায়িত্ব দেয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বাফেদার ওপর। এরপর দুই সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ ক?রে আস?ছে। শুরুতে রপ্তানি আয়ে ডলারের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৯৯ টাকা ও প্রবাসী আয়ে ১০৮ টাকা। আর ডলারের পাঁচ দিনের গড় খরচের চেয়ে ১ টাকা বেশি দামে আমদানি দায় শোধ করতে বলা হয়। পরে বিভিন্ন সময় দফায় দফায় বৈঠক করে নতুন দর নির্ধারণ করা হচ্ছে।

সবশেষ ১ জানুয়া?রি রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম আরও ১ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। এবিবি ও বাফেদা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম ১০২ টাকা। প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ১০৭ টাকা।

এবিবি ও বাফেদা নয় সংকটে ডলারের দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। এখন প্রতি ডলার ১০০ টাকা করে বিক্রি করছে। অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক জরুরি পণ্য আমদানিতে যে ডলার বিক্রি করছে, তার প্রতি ডলারের মূল্য ১০০ টাকা।

গত সোমবার এই দরেই রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৫ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা। এক বছর আগেও এই ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। তবে খোলা বাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১১ টাকা। গেল বছর কার্ব মার্কেটে ডলার ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। সব ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী ডলার বিক্রি করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সঞ্চিত রিজার্ভ আরও কমে যাবে। সেজন্য সরকারের প্রয়োজনেই এখন শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে।

back to top