গ্যাসের দাম ১৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি করায় পাইকারি বিদ্যুতের দাম গড়ে প্রতি ইউনিটে ৫০ পয়সা (৮.০৬ শতাংশ) বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বর্তমানে গড়ে প্রতি ইউনিট পাইকারি বিদ্যুতের দাম ৬ টাকা ২০ পয়সা। পিডিবি বলছে, দাম না বাড়ালে সরকারের ভর্তুকি বেড়ে যাবে। ভর্তুকি কমাতেই সংস্থাটি এই প্রস্তাব করেছে।
রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থা পিডিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শীতের এই সময় প্রতিদিন বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসে খরচ হচ্ছে গড়ে ১২ কোটি টাকার বেশি। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হলে এই খরচ প্রতিদিন গড়ে ২১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বেড়ে যাবে। সে হিসাবে বছরে খরচ বাড়বে ৭ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা।
তবে গরমে বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়লে পেট্রোবাংলা যদি গ্যাসের যোগান বাড়ায় তাহলে এই খরচ আরও বাড়বে।
পিডিবি বলছে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এক বছরে তাদের ১০ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা খরচ বাড়বে।
সর্বশেষ গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯.৯২ শতাংশ বাড়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ওই সময় ইউনিটপ্রতি গড় পাইকারি দাম দাঁড়ায় ৬ টাকা ২০ পয়সা।
এরপর নতুন বছরের শুরুতেই গত ১২ জানুয়ারি সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। এরপর ১৮ জানুয়ারি সরকারের নির্বাহী আদেশেই গ্যাসের দাম বাড়ে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১৭৯ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। ফলে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বেড়ে হয় ১৪ টাকা।
এখন পিডিবি প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) পাইকারি বিদ্যুতের দাম ৬ টাকা ৭০ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
পিডিবি নিজে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এবং বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পাইকারি দরে বিদ্যুৎ ক্রয় করে তা বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করে। বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো এই বিদ্যুৎ খুচরা গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করে।
পিডিবির প্রস্তাব আমলে নিলে খুচরা বিদ্যুতের দামও আবার বাড়াতে হবে।
পিডিবির প্রস্তাব : বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো পিডিবির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের অবমূল্যায়ন এবং ফার্নেস অয়েলের শুল্ক সুবিধা প্রত্যাহার করায় পিডিবির উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
২০২১-২২ অর্থবছরে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের সরবরাহ খরচ ছিল ৯ টাকা ৪৪ পয়সা। এই অর্থবছর তা বেড়ে হয়েছে ১১ টাকা ৫৪ পয়সা। ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি ধরে গত নভেম্বরে দাম বাড়ার পর পাইকারি বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য এখন ৬ টাকা ২০ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটে পিডিবির লোকসান হচ্ছে ৫ টাকা ৩৪ পয়সা।
এর মধ্যে গ্যাসের দর ১৭৯ শতাংশ বাড়ায় বছরে পিডিবির ১০ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা খরচ বাড়বে। ফলে এ খাতে বাড়বে সরকারের ভর্তুকিও। ভর্তুকি কমাতে পিডিবি প্রতি ইউনিটে পাইকারি দর গড়ে ৫০ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।
পিডিবির প্রস্তাব অনুযায়ী, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এবং নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানিকে (নেসকো) বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হবে।
বিতরণ কোম্পানিগুলোর ২৩০ কেভি (কিলোভোল্ট) লাইনে প্রতি ইউনিটের পাইকারি দাম ৭.৬০৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮.১০৪০ টাকা এবং ১৩২ কেভিতে ৭.৬৩৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮.১৩৩৫ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে পিডিবি।
৩৩ কেভি লাইনে পিডিবির বিতরণ অঞ্চলের দাম ৬.৭৮৯৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭.২৮৯৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ৩৩ কেভিতে আরইবির জন্য ৫.৩৯২৫ টাকা থেকে ৫.৮৯২ টাকা, ডিপিডিসির জন্য ৭.৭২ টাকা থেকে ৮.২২ টাকা, ডেসকোর ৭.৭৪৮০ টাকা থেকে ৮.২৪৮০ টাকা, ওজোপাডিকোর ৬.৬২৭৫ টাকা থেকে ৭.১২৭৫ টাকা এবং নেসকোর ৬.২০৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬.৭০৫০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সরকারের নির্বাহী আদেশে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর বিদ্যুতের খুচরা দর ৫ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে।
এজন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোকে কোন প্রস্তাব দিতে হবে না, বিইআরসির গণশুনানি করারও প্রয়োজন হবে না। বিইআরসি আইন সংশোধন করে সরকার নিজের হাতে এই ক্ষমতা নিয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ও খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ায় ভোক্তা ও উদ্যোক্তাদের খরচ বেড়েছে, তবে তা ছিল সহনীয়। তবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর মাত্রা ছিল ভয়াবহ। শিল্প খাত এই দাম বাড়ার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারবে কি না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এর মধ্যে আবার বিদ্যুতের দাম বাড়লে তা খরচ আরেক দফা বাড়িয়ে দেবে।
তারা বলছেন, এভাবে লাগাতার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে সাধারণ মানুষ, উদ্যোক্তা কারও জন্যই সুখকর হবে না। এতে উৎপাদন খরচ বাড়বে, জীবনযাত্রার খরচ বাড়বে। যা অর্থনীতির জন্য শুভ হবে না।
শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৩
গ্যাসের দাম ১৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি করায় পাইকারি বিদ্যুতের দাম গড়ে প্রতি ইউনিটে ৫০ পয়সা (৮.০৬ শতাংশ) বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বর্তমানে গড়ে প্রতি ইউনিট পাইকারি বিদ্যুতের দাম ৬ টাকা ২০ পয়সা। পিডিবি বলছে, দাম না বাড়ালে সরকারের ভর্তুকি বেড়ে যাবে। ভর্তুকি কমাতেই সংস্থাটি এই প্রস্তাব করেছে।
রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থা পিডিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শীতের এই সময় প্রতিদিন বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসে খরচ হচ্ছে গড়ে ১২ কোটি টাকার বেশি। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হলে এই খরচ প্রতিদিন গড়ে ২১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বেড়ে যাবে। সে হিসাবে বছরে খরচ বাড়বে ৭ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা।
তবে গরমে বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়লে পেট্রোবাংলা যদি গ্যাসের যোগান বাড়ায় তাহলে এই খরচ আরও বাড়বে।
পিডিবি বলছে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এক বছরে তাদের ১০ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা খরচ বাড়বে।
সর্বশেষ গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯.৯২ শতাংশ বাড়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ওই সময় ইউনিটপ্রতি গড় পাইকারি দাম দাঁড়ায় ৬ টাকা ২০ পয়সা।
এরপর নতুন বছরের শুরুতেই গত ১২ জানুয়ারি সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। এরপর ১৮ জানুয়ারি সরকারের নির্বাহী আদেশেই গ্যাসের দাম বাড়ে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১৭৯ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। ফলে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বেড়ে হয় ১৪ টাকা।
এখন পিডিবি প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) পাইকারি বিদ্যুতের দাম ৬ টাকা ৭০ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
পিডিবি নিজে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এবং বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পাইকারি দরে বিদ্যুৎ ক্রয় করে তা বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করে। বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো এই বিদ্যুৎ খুচরা গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করে।
পিডিবির প্রস্তাব আমলে নিলে খুচরা বিদ্যুতের দামও আবার বাড়াতে হবে।
পিডিবির প্রস্তাব : বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো পিডিবির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের অবমূল্যায়ন এবং ফার্নেস অয়েলের শুল্ক সুবিধা প্রত্যাহার করায় পিডিবির উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
২০২১-২২ অর্থবছরে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের সরবরাহ খরচ ছিল ৯ টাকা ৪৪ পয়সা। এই অর্থবছর তা বেড়ে হয়েছে ১১ টাকা ৫৪ পয়সা। ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি ধরে গত নভেম্বরে দাম বাড়ার পর পাইকারি বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য এখন ৬ টাকা ২০ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটে পিডিবির লোকসান হচ্ছে ৫ টাকা ৩৪ পয়সা।
এর মধ্যে গ্যাসের দর ১৭৯ শতাংশ বাড়ায় বছরে পিডিবির ১০ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা খরচ বাড়বে। ফলে এ খাতে বাড়বে সরকারের ভর্তুকিও। ভর্তুকি কমাতে পিডিবি প্রতি ইউনিটে পাইকারি দর গড়ে ৫০ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।
পিডিবির প্রস্তাব অনুযায়ী, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এবং নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানিকে (নেসকো) বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হবে।
বিতরণ কোম্পানিগুলোর ২৩০ কেভি (কিলোভোল্ট) লাইনে প্রতি ইউনিটের পাইকারি দাম ৭.৬০৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮.১০৪০ টাকা এবং ১৩২ কেভিতে ৭.৬৩৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮.১৩৩৫ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে পিডিবি।
৩৩ কেভি লাইনে পিডিবির বিতরণ অঞ্চলের দাম ৬.৭৮৯৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭.২৮৯৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ৩৩ কেভিতে আরইবির জন্য ৫.৩৯২৫ টাকা থেকে ৫.৮৯২ টাকা, ডিপিডিসির জন্য ৭.৭২ টাকা থেকে ৮.২২ টাকা, ডেসকোর ৭.৭৪৮০ টাকা থেকে ৮.২৪৮০ টাকা, ওজোপাডিকোর ৬.৬২৭৫ টাকা থেকে ৭.১২৭৫ টাকা এবং নেসকোর ৬.২০৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬.৭০৫০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সরকারের নির্বাহী আদেশে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর বিদ্যুতের খুচরা দর ৫ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে।
এজন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোকে কোন প্রস্তাব দিতে হবে না, বিইআরসির গণশুনানি করারও প্রয়োজন হবে না। বিইআরসি আইন সংশোধন করে সরকার নিজের হাতে এই ক্ষমতা নিয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ও খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ায় ভোক্তা ও উদ্যোক্তাদের খরচ বেড়েছে, তবে তা ছিল সহনীয়। তবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর মাত্রা ছিল ভয়াবহ। শিল্প খাত এই দাম বাড়ার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারবে কি না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এর মধ্যে আবার বিদ্যুতের দাম বাড়লে তা খরচ আরেক দফা বাড়িয়ে দেবে।
তারা বলছেন, এভাবে লাগাতার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে সাধারণ মানুষ, উদ্যোক্তা কারও জন্যই সুখকর হবে না। এতে উৎপাদন খরচ বাড়বে, জীবনযাত্রার খরচ বাড়বে। যা অর্থনীতির জন্য শুভ হবে না।