alt

ডলার সংকটে ‘কিছুটা স্বস্তি’, বলছেন ব্যাংকার ও আমদানিকারকরা

রমজান আলী : বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩

ডলারের সংকটে আর আগের মতো ‘ভুগতে হচ্ছে না’ বলে বলছেন আমদানিকারকরা। আর ব্যাংকারা বলছেন তারা এখন আগের চেয়ে ‘বেশি’ আমদানির চাহিদাপত্র বা এলসির অনুমোদন দিচ্ছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জানুয়ারির চেয়ে মার্চ মাসে দেশের সবগুলো ব্যাংকে ডলারের মজুদ বেড়েছে। এই মজুদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বা রিজার্ভ তার বাইরের হিসাব।

গত ৫ জানুয়ারি দেশের সব ব্যাংকের কাছে মোট ডলারের মজুদ ছিল দুই দশমিক পাঁচ বিলিয়ন বা দুইশ’ পাঁচ কোটি ডলার। আর ১৩ মার্চে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন দশমিক পাঁচ বিলিয়ন বা তিনশ’ পাঁচ কোটি ডলার। ফলে দুই মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর কাছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বেড়েছে এক বিলিয়ন বা একশ’ কোটি ডলার।

একাধিক ব্যাংকের কর্মকর্তা জানান, এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ডলারের জোগান দিয়েছে। তবে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে তেমন ডলার দরকার হয় না। ব্যাংকের প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় যা আসছে তাতে আমদানির জন্য এলসি খুলতে তেমন কোন ‘সমস্যা হচ্ছে না’।

দেশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিভাগেরই কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান হ্যাভেন নিট গার্মেন্টস লিমিটেডে। রপ্তানির পোশাক তৈরির জন্য কাঁচামাল আমাদানি করতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা জামাল পাশা সংবাদকে বলেন, ‘এক বছর আগে যেভাবে এলসি খুলতে পারতাম, এখন ঠিক সেভাবে পারছি না। তবে ৬/৭ মাসের আগের তুলনায় এখন এলসি খুলতে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি। তবে একটু সময় লাগে।

‘এক বছর আগে সঙ্গে সঙ্গে এলসি খুলতে পারতাম, এখন বড় অঙ্কের হলে ৫-৬ দিন সময় লাগে,’ বলেন পাশা। তিনি জানান, তার প্রতিষ্ঠানের মেশিনের যন্ত্রপাতি ও কিছু ফ্রেবিক্স বা কাপড় দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। এগুলোর আমদানিতে তার এখন এলসি খুলতে ব্যাংকে ‘তেমন কোন সমস্যায়’ পড়তে হয় না।

এরকমই রপ্তানিকারক একটি প্রতিষ্ঠান অনন্যা নিটেক্স লিমিটেড। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আছাদুজ্জামান চুন্নু বলেন, ‘প্রয়োজন অনুযায়ী কাঁচামাল আমদানি করতে পারছি।’

একই কথা জানালেন লাইথ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন, বললেন ‘আগের চেয়ে ডলার সংকট অনেকটা কমেছে। এখন মোটামুটিভাবে এলসি খুলতে পারছি।’

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা সংবাদকে বলেন, ‘সিরামিকের অধিকাংশ কাঁচামালই আমদানি করতে হয়। গত ৭-৮ মাসে আগে ডলার সংকটে কাঁচামাল খুব একটা আমদানি করতে পারিনি। তবে এখন সেই সংকট নেই। এখন এলসি খুলতে পারছি।’

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে রেমিট্যান্স ও রপ্তানির আয় প্রবাহ সম্প্রতি বেড়েছে। ২০২২ সালে জানুয়ারি মাসের চেয়ে এ বছর জানুয়ারিতে ১৫ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এ বছর জানুয়ারিতে ১৯৬ কোটি ২৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার।

এ বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসীরা আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থায় পাঠিয়েছেন ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলার। ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। সে হিসাবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

আর ডিসেম্বর মাসে রপ্তানি আয়ে রেকর্ড হয়েছে। ইপিবির তথ্যমতে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ৫৩৬ কোটি ৫১ লাখ ৯০ হাজার ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে। যা ২০২১ সালের একই মাসের তুলনায় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ৪৯০ কোটি ৭৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার রপ্তানি আয় এসেছিল।

ডলার সংকটে আমদানির চাহিদা মেটাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারির ২৩ তারিখ পর্যন্ত) ৮৫০ কোটি বা ৮ দশমিক ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের ইতিহাসে এর আগে কোন এক পুরো অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এত পরিমাণ ডলার বিক্রি হয়নি। সবশেষ গত ২০২১-২২ অর্থবছরের ১২ মাসে রিজার্ভ থেকে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন বা ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০২১ সালে আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন বা চার হাজার ৮০৪ কোটি ডলার, যা অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি। এরপর আর রিজার্ভ বাড়েনি।

২০২২ সালে রিজার্ভ থেকে ১২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সংবাদকে বলেন, ‘ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামীতে দুটি বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা রয়েছে। এ কারণে আগামীতে রেমিট্যান্স বেশি পরিমাণ আসবে। ফলে ডলারে যেটুকু সমস্যা রয়েছে সেটুকুও থাকবে না।’

শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার ধার করতে হচ্ছে না। প্রবাসী ও রপ্তানি আয় যা আসে, তাতে আমার ব্যাংকের গ্রাহকের আমদানি ব্যয় মিটাতে কোন সমস্যা হচ্ছে না।’

স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী জাফর আলম বলেন, ‘ব্যাংকে ডলারের এক ধরনের চাপ ছিল, এখন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এছাড়া ঢালাওভাবে না খুলে প্রয়োজন অনুযায়ী এলসি খোলা হচ্ছে। ফলে কোন রকম সমস্যা হচ্ছে না।’

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুরের মতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স ‘যেভাবে বাড়ছে’, এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ডলার সংকট ‘অনেকটাই কেটে যাবে’। তিনি বলেন, ‘গত বছর রেকর্ড পরিমাণ কর্মী বাইরে গেছেন। তাই প্রবাসীদের আয় বাড়ার সম্ভবনাই বেশি, কমার শঙ্কা নেই।’

ছবি

বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ, সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম কমেছে

ছবি

আইএমএফ থেকে পরের কিস্তি পাওয়ার আলোচনা হবে নতুন সরকারের সঙ্গে

ছবি

পাঁচ ব্যাংক নয়, সরকারের টাকা পাবে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’

ছবি

খেলাপি হার ২০ শতাংশ হলেও তহবিল পরিচালনায় যোগ্য হবে ব্যাংক

ছবি

এবার স্বর্ণের দাম ভরিতে বাড়লো ৫ হাজার টাকা

ছবি

সার ডিলার নিয়োগ ও বিতরণ নীতিমালা অনুমোদন

ছবি

ঠিকায় কাজ করা পোশাক কারখানাও প্রণোদনা পাবে

ছবি

রমজান-নির্বাচন উপলক্ষে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর তাগিদ

ছবি

বাকিতে আমদানি করা যাবে রোজার পণ্য

ছবি

সুমিটোমো থার্ড টার্মিনালের অপারেশনস-মেইটেনেন্স কাজ করতে আগ্রহী জাপান

ছবি

চলমান গ্যাস সংকট কমাতে দীর্ঘ পরিকল্পনা পেট্রোবাংলার

ছবি

প্রথম প্রান্তিকে ওয়ালটনের মুনাফায় ৪৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

ছবি

সয়াবিন তেল ও চিনি কিনছে সরকার

ছবি

১৬৪ টাকায় সয়াবিন তেল, ৯৪ টাকায় চিনি কিনবে সরকার

ছবি

ভারতে মূল্যস্ফীতি শূন্যের কাছাকাছি

ছবি

সিএমএসএমইর তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ল

ছবি

সরকারের জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ, অর্থবিভাগ-এর সাথে সর্বজনীন পেনশন স্কিমসমুহে রেজিস্ট্রেশন

ছবি

মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা নিয়ে গেজেট, থাকছে না মেয়াদি ফান্ড

ছবি

মেট্রোরেল প্রকল্প বাতিল হয়নি, ব্যয় কমানোর চেষ্টা চলছে: ডিএমটিসিএল এমডি

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে চিঠি

ছবি

নতুন পে-স্কেলের ফ্রেমওয়ার্ক দিয়ে যাবে বর্তমান সরকার: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

চট্টগ্রামে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল: ৩০ বছর চালাবে ডেনমার্কের কোম্পানি

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানত নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার অনুরোধ প্রশাসকদের

ছবি

বৃহস্পতিবার দোকান ও বিপণিবিতান খোলা রাখার ঘোষণা ব্যবসায়ীদের

ছবি

চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চান ব্যবসায়ীরা

ছবি

তিন শতাধিক শেয়ারের দরপতনে তলানিতে লেনদেন শেয়ারবাজারে

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা একতরফা সিদ্ধান্ত: বিএমবিএ

ছবি

সাবেক এমপিদের ৩১ বিলাসবহুল গাড়ি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দিল এনবিআর

ছবি

তরূণদের অংশগ্রহনে নারায়ণগঞ্জে উদ্যোক্তা সম্মেলন হলো

ছবি

বাজারে নতুন স্মার্টফোন হেলিও ৪৫

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে রিয়েলমি সি৮৫ প্রো উন্মোচন

ছবি

এলডিসি উত্তরণ ৩ বছর পিছিয়ে দেয়ার অনুরোধ ব্যবসায়ীদের

ছবি

শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করবে আরএসসি, সায় দিচ্ছে না বিজিএমইএ

ছবি

শেয়ারবাজারে ৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন

ছবি

বাংলাদেশের তৈরি ফ্যাশনেবল পোশাকের আমদানি বাড়াবে জাপান

ছবি

স্বর্ণের দাম আবার বাড়লো

tab

ডলার সংকটে ‘কিছুটা স্বস্তি’, বলছেন ব্যাংকার ও আমদানিকারকরা

রমজান আলী

বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩

ডলারের সংকটে আর আগের মতো ‘ভুগতে হচ্ছে না’ বলে বলছেন আমদানিকারকরা। আর ব্যাংকারা বলছেন তারা এখন আগের চেয়ে ‘বেশি’ আমদানির চাহিদাপত্র বা এলসির অনুমোদন দিচ্ছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জানুয়ারির চেয়ে মার্চ মাসে দেশের সবগুলো ব্যাংকে ডলারের মজুদ বেড়েছে। এই মজুদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বা রিজার্ভ তার বাইরের হিসাব।

গত ৫ জানুয়ারি দেশের সব ব্যাংকের কাছে মোট ডলারের মজুদ ছিল দুই দশমিক পাঁচ বিলিয়ন বা দুইশ’ পাঁচ কোটি ডলার। আর ১৩ মার্চে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন দশমিক পাঁচ বিলিয়ন বা তিনশ’ পাঁচ কোটি ডলার। ফলে দুই মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর কাছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বেড়েছে এক বিলিয়ন বা একশ’ কোটি ডলার।

একাধিক ব্যাংকের কর্মকর্তা জানান, এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ডলারের জোগান দিয়েছে। তবে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে তেমন ডলার দরকার হয় না। ব্যাংকের প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় যা আসছে তাতে আমদানির জন্য এলসি খুলতে তেমন কোন ‘সমস্যা হচ্ছে না’।

দেশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিভাগেরই কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান হ্যাভেন নিট গার্মেন্টস লিমিটেডে। রপ্তানির পোশাক তৈরির জন্য কাঁচামাল আমাদানি করতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা জামাল পাশা সংবাদকে বলেন, ‘এক বছর আগে যেভাবে এলসি খুলতে পারতাম, এখন ঠিক সেভাবে পারছি না। তবে ৬/৭ মাসের আগের তুলনায় এখন এলসি খুলতে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি। তবে একটু সময় লাগে।

‘এক বছর আগে সঙ্গে সঙ্গে এলসি খুলতে পারতাম, এখন বড় অঙ্কের হলে ৫-৬ দিন সময় লাগে,’ বলেন পাশা। তিনি জানান, তার প্রতিষ্ঠানের মেশিনের যন্ত্রপাতি ও কিছু ফ্রেবিক্স বা কাপড় দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। এগুলোর আমদানিতে তার এখন এলসি খুলতে ব্যাংকে ‘তেমন কোন সমস্যায়’ পড়তে হয় না।

এরকমই রপ্তানিকারক একটি প্রতিষ্ঠান অনন্যা নিটেক্স লিমিটেড। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আছাদুজ্জামান চুন্নু বলেন, ‘প্রয়োজন অনুযায়ী কাঁচামাল আমদানি করতে পারছি।’

একই কথা জানালেন লাইথ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন, বললেন ‘আগের চেয়ে ডলার সংকট অনেকটা কমেছে। এখন মোটামুটিভাবে এলসি খুলতে পারছি।’

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা সংবাদকে বলেন, ‘সিরামিকের অধিকাংশ কাঁচামালই আমদানি করতে হয়। গত ৭-৮ মাসে আগে ডলার সংকটে কাঁচামাল খুব একটা আমদানি করতে পারিনি। তবে এখন সেই সংকট নেই। এখন এলসি খুলতে পারছি।’

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে রেমিট্যান্স ও রপ্তানির আয় প্রবাহ সম্প্রতি বেড়েছে। ২০২২ সালে জানুয়ারি মাসের চেয়ে এ বছর জানুয়ারিতে ১৫ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এ বছর জানুয়ারিতে ১৯৬ কোটি ২৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার।

এ বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসীরা আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থায় পাঠিয়েছেন ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ডলার। ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। সে হিসাবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

আর ডিসেম্বর মাসে রপ্তানি আয়ে রেকর্ড হয়েছে। ইপিবির তথ্যমতে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ৫৩৬ কোটি ৫১ লাখ ৯০ হাজার ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে। যা ২০২১ সালের একই মাসের তুলনায় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ৪৯০ কোটি ৭৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার রপ্তানি আয় এসেছিল।

ডলার সংকটে আমদানির চাহিদা মেটাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারির ২৩ তারিখ পর্যন্ত) ৮৫০ কোটি বা ৮ দশমিক ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের ইতিহাসে এর আগে কোন এক পুরো অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এত পরিমাণ ডলার বিক্রি হয়নি। সবশেষ গত ২০২১-২২ অর্থবছরের ১২ মাসে রিজার্ভ থেকে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন বা ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০২১ সালে আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন বা চার হাজার ৮০৪ কোটি ডলার, যা অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি। এরপর আর রিজার্ভ বাড়েনি।

২০২২ সালে রিজার্ভ থেকে ১২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সংবাদকে বলেন, ‘ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামীতে দুটি বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা রয়েছে। এ কারণে আগামীতে রেমিট্যান্স বেশি পরিমাণ আসবে। ফলে ডলারে যেটুকু সমস্যা রয়েছে সেটুকুও থাকবে না।’

শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার ধার করতে হচ্ছে না। প্রবাসী ও রপ্তানি আয় যা আসে, তাতে আমার ব্যাংকের গ্রাহকের আমদানি ব্যয় মিটাতে কোন সমস্যা হচ্ছে না।’

স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী জাফর আলম বলেন, ‘ব্যাংকে ডলারের এক ধরনের চাপ ছিল, এখন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এছাড়া ঢালাওভাবে না খুলে প্রয়োজন অনুযায়ী এলসি খোলা হচ্ছে। ফলে কোন রকম সমস্যা হচ্ছে না।’

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুরের মতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স ‘যেভাবে বাড়ছে’, এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ডলার সংকট ‘অনেকটাই কেটে যাবে’। তিনি বলেন, ‘গত বছর রেকর্ড পরিমাণ কর্মী বাইরে গেছেন। তাই প্রবাসীদের আয় বাড়ার সম্ভবনাই বেশি, কমার শঙ্কা নেই।’

back to top