alt

অর্থ-বাণিজ্য

বিদেশের বাজারে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষিপন্য

জেলা বাতার্ পরিবেশক,রাজশাহী : শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩

বরেন্দ্রঅঞ্চলের কৃষি পন্য শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। চলে যাচ্ছে বিদেশেও। এই অঞ্চলের বিভিন্য মওসুমের ফল সজ্বি খ্যাতি ইউরোপ ও মধ্য প্রচ্যরদেশ দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ায় সেখানেও ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে।

গত ১৫ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলামের বাগান থেকে ১৪ মেট্রিক টন পেয়ারা গেল দুবাইতে। তিনি গ্যালাক্সি ফ্রেশ প্রোডাক্ট লিমিটেডের মাধ্যমে পেয়ারা দুবাইতে রপ্তানি করছেন। জেলার নাচোল উপজেলার কেন্দুয়া এলাকায় বিশাল পেয়ারা বাগান গড়ে তুলেছেন রফিকুল। এই বাগানের উৎপাদিত পেয়ারা বুধবার ১৫ মার্চ বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।

কৃষি উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগে বাগান থেকে ৮ হাজার কেজি পেয়ারা দুবাইতে রপ্তানি করা হয়েছে। তখন দেশের বাজারে পেয়ারার প্রতি মণ মাত্র ১৪০০ টাকা, কিন্তু বিশ্ববাজারে এই পেয়ারার দাম ২৩০০ টাকা মণ। দুবাইতে অন্যান্য দেশের পেয়ারার চেয়ে আমাদের পেয়ারা বেশি দামে বিক্রি হয়।’

তিনি আরও বলেন, আমরা দেশের পেয়ারা ব্র্যান্ডিং করতে পেরেছি। আমাদের মতো কৃষকদের যথাযথ ট্রেনিং দিয়ে সাহায্য করলে কাক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। ব্যবসায়ীদের পেয়ারা রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পেলে অন্য দেশের চেয়ে বেশি এগিয়ে যাব।’

গ্যালাক্সি ফ্রেশ প্রোডাক্ট লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার হেমায়েত হোসাইন শিপলু বলেন, ‘আমরা যখন একটা বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করি, সব কিছু খেয়াল রাখি। পেয়ারাতে দাগ থাকা যাবে না, পোকা মাকড় থাকা যাবে না, পেয়ারার গাঁ থেকে ছাল উঠে গেলে সেই পেয়ারা নেব না। আমরা সব সময় সুন্দর আর টেস্টি পেয়ারা বিদেশে রপ্তানি করে থাকি। আমরা দুবাইতে চড়ামূল্যে এই পেয়ারা বিক্রি করছি। আগামীতে সেখানে পেয়ারার দাম আরও বাড়বে।’

নাচোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘এই উপজেলায় উৎপাদিত ১৪ মেট্রিক টন পেয়ারা বিদেশে যাচ্ছে, এটা খুশির খবর। কৃষি দপ্তরের আশা, আমাদের দেশে উৎপাদিত সকল পণ্যই বিদেশে যাক, তাহলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবে এবং চাষাবাদেও আগ্রহ বাড়বে।

কয়েক বছর ধরেই ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে আম পাঠিয়েছেন রাজশাহী বাঘা অঞ্চলের আম ব্যবসায়ীরা । এছাড়া বাগমারা তাহেরপুর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হচ্ছে কাচা মরিচ । এবার আম , কাঁচা মরিচের পর রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চরের পেয়ারা ও বরই যাচ্ছে ইতালিতে।

কৃষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে গে¬াবাল গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসের বৈশ্বিক নীতিমালা অনুসরণ করে আম উৎপাদন করা গেলে শুধু আম থেকেই হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।

১৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আদাব ইন্টারন্যাশনালের মাধমে প্যাকেজিং করে এই পেয়ারা ইতালিতে প্রথম চালান হিসেবে পাঠানো হয়েছে । আধা মেট্রিক টন পেয়ারার প্রথম চালান বাঘা গ্রামের সাদি এন্টারপ্রাইজের কার্যালয় বাঘা থেকে পাঠানো হয়েছে। সাদি এন্টারপ্রাইজ এসব পেয়ারা চাষ করেছে। এ বিষয়ে নিশ্চিত করেন বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়ার সাদি এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলাম ছানা।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কেন্দ্রীয় প্যাকেজিং হাউসে পেয়ারাগুলো মোড়কজাত করা হবে। তারপর কার্গো ফ্লাইটে এসব পেয়ারা সরাসরি প্রথম চালানে অল্প পরিমাণে পেয়ারা পাঠানো হয়েছে। আরও বেশি পরিমাণে যেন রপ্তানি করা যায়, এ জন্য ঢাকার বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। পেয়ারার পর বাঘার বরই রপ্তানির একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাঘায় ভালো বরই চাষ হচ্ছে। বরইও বিদেশে যাবে।

সাদি এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী ও বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম ছানা বলেন, ৫০ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ করেছেন। এর মধ্যে বাঘার পলাশীর চরে ৩০ বিঘা জমিতে পেয়ারা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, একসময় চরের এই বালুচটকা জমিতে কোনো আবাদ হতো না। তারা এসব জমি ইজারা নিয়ে ধীরে ধীরে পরিচর্যা করে আবাদে তুলেছেন। এখন এসব জমিতে আম, বরই ও পেয়ারা চাষ করা হচ্ছে। ফলনও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। চরের এসব জমিতে পেয়ারা চাষ হওয়ার কারণে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। একশ্রেণির মানুষ আধুনিক চাষ শিখে নিয়েছেন। কন্টাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে যাওয়ার কারণে বিদেশে রপ্তানির উপযোগী আম, পেয়ারা ও বরই বাঘায় উৎপাদিত হচ্ছে। এ জন্য উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে ১৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আদাব ইন্টারন্যাশনালের মাধমে প্যাকেজিং করে কোম্পানীর মাধ্যমে শফিকুল ইসলাম সানা ও বাউসা এলাকার তরুন উদ্যোক্তা শাহিন ইকবালের বাগান থেকে রপ্তানি হয় দেড়’শ কেজি করে মোট তিন’শ কেজি থাই বরই ইতালী পাঠিয়েছে। তরুন উদ্যোক্তা শাহিন ইকবাল ও শফিকুল ইসলাম সানা ব্যাবসায়ীরা জানান , এই অঞ্চলের বরই কাঁচা অবস্থায় সবুজ, আর পাকলে লাল, এ ফলটি প্রায় সবারই খুব প্রিয়। আমরা যে বরই এর চাষ করি , যেটা কাঁচা হোক বা পাকা হোক, যে কোনো অবস্থাতেই খাওয়ার যায়। এ কারণে দেশের গন্ডি পেরিয়ে এবার স্থানীয় সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলা থেকে আমের পর পেয়ারার ও বরই রপ্তানি শুরু হয়েছে।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সফিউল্লাহ সুলতান বলেন, বাঘার চাষিরা এর আগে কন্টাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে আম চাষ করে বিদেশে আম রপ্তানি করেছেন। একইভাবে তারা পেয়ারা চাষ করেছেন। প্রথম চালানে আধা মেট্রিক টন পেয়ারা পাঠানো হয়েছে। ঢাকার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আদাব ইন্টারন্যাশনাল এই পেয়ারা ও বরই ইতালিতে

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, আমাদের কাছে থাকা তালিকাভুক্ত চুক্তিবদ্ধ আম চাষিদের সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদের বাগানের সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা শেখানো হয়। ব্যাগিং পদ্ধতিতে ফ্রেশ আম উৎপাদনের বিষয়টিও তাদের শেখানো হয়। এভাবেই আম রপ্তানির পথ খুলছে । এদিকে গত বছর নভেম্বর মাস থেকে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর হাট থেকে সপ্তাহে ২১ টন কাঁচা মরিচ যাচ্ছে বিশ্বের চারটি দেশে। এ হাটের আরিমা এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান স্বপন এ অঞ্চলের কাঁচা মরিচ কিনে দুবাই, কাতার, কুয়েত ও মালেশিয়ায় রপ্তানি করছেন। এতে এ অঞ্চলের কৃষকেরা মরিচের ভালো দাম পাচ্ছেন।

এদিকে আম পেয়ারা বরই পর কাঁচা মরিচ যাচ্ছে মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্য দেশে রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলায় মরিচ বিক্রির বিখ্যাত হাট তাহেরপুর। এই হাট বাগমারা, দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলার একদম মাঝখানে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এই হাটে তিন উপজেলার কৃষকেরা কৃষিপণ্য বিক্রি করেন। এই হাট থেকে তিন উপজেলার কৃষকের কাঁচা মরিচ কিনে এখন প্রতি সপ্তাহে ২১ টন কাঁচা মরিচ রপ্তানি ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান স্বপন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মরিচের হাট নামে খ্যাত তাহেরপুরে বাগমারা, দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলার কৃষকেরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বস্তা ভর্তি মরিচ নিয়ে আসছেন।

বাজার দর অনুযায়ী পাইকাররা দাম দিয়ে কিনছেন সেই মরিচ। এসব মরিচ নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। দুবাই, কুয়েত, কাতার ও মালয়েশিয়া রপ্তানি হয় এখানকার মরিচ।

হাটে দুপুরের পর থেকে কার্টনে মরিচ ভর্তি করে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হয়। মরিচ ভর্তির পর যে দেশে যাবে সেদেশের সিল মারা হয় সেই কার্টনে। এই হাট প্রতিদিন গড়ে তিন টন মরিচ দেশের বাইরে যায়।

তাহেরপুর হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসা দুর্গাপুর উপজেলার গোপালপাড়া গ্রামের আকছেদ আলী বলেন, ‘দুর্গাপুরে বাড়ি হলেও তাহেরপুর হাটে মরিচ বিক্রি করি। এতে আমাদের যাতায়াত সুবিধা হয়। এ বছর এক বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করছি। এ বছর অবশ্য মরিচের দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে।’

তাহেরপুর বাজারের আরিমা এন্টার প্রাইজের স্বত্তাধিকারি আতিকুর রহমান স্বপন বলেন, ‘এই অঞ্চলের বিন্দু ও কারেন্ট জাতের কাঁচা মরিচের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশের বাইরে। প্রতি সপ্তাহে তাহেরপুর বাজার থেকে ২১ টন কাঁচা মরিচ দুবাই, কুয়েত, কাতার ও মালেশিয়ায় রপ্তানি করছি। এখন রাজশাহীতে বিন্দু জাতের কাঁচা মরিচ একটু কম পাওয়া যাচ্ছে। ফলে চাহিদা মিটাতে এখন বগুড়া থেকেও কাঁচা মরিচ কিনছি।’

ব্যবসায়ী আতিকুর আরও বলেন, ‘দুবাই কুয়েত কাতার ও মালয়েশিয়া থেকে সেখানকার ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুয়ায়ী আমার কাছে ইমেইল করেন। কাঁচা মরিচ কেনার জন্য মোকামে ১০ জন কর্মচারী রেখেছি। প্রতিদিন হাটে কৃষকদের থেকে দরদাম করে ৩ টনের বেশি কাঁচা মরিচ কিনি। তারপর প্যাকেটজাত করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে দিয়ে ওই সব দেশে রপ্তানি করি।’

নোয়াখালীর দুবাই প্রবাসী ইউনুছ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলেন, ‘দুবাইয়ে রাজশাহী ও বগুড়ার কাঁচা মরিচের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমি তাহেরপুর থেকে যে মরিচ আমদানি করি সেগুলো আবার আমি প্রায় ১০ জায়গায় সরবরাহ করি। এখানে প্রচুর পরিমাণ বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছে। তাঁরা দেশীয় মরিচ খুব পছন্দ করেন।’

রাজশাহী ও বগুড়ার মরিচের খ্যাতি দেশ জুড়ে। তাই নামীদামি মসলা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও বিদেশেও রপ্তানি হয়। এ কারণে চাহিদা অনেক বেশি তাই দামও ভালো পায় কৃষকেরা।’

এদিকে ফলে আম ছাড়াও রপ্তানির উদ্দেশ্যে শাক-সবজিও প্রক্রিয়াজাত করা যাবে রাজশাহীতে স্থাপন করা হচ্ছে ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প¬্যান্ট। এই প¬্যান্টে রপ্তানির দুয়ার খুলছে এবার। রাজশাহীতেই প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি বিদেশ যাবে এ অঞ্চলের আম। অর্থনীতি পাল্টে দেবে ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প¬্যান্ট।

কেবল আম প্রক্রিয়াজাত করেই প¬্যান্ট থেকে মৌসুমে আয় হবে অন্তত অন্তত: কোটি টাকা। । এই বিপুল কর্মযজ্ঞ এই অঞ্চলের অর্থনীতির গতি পাল্টে দেবে। এই প¬্যান্ট স্থাপণ হলে নিরাপদ আম রপ্তানি বাড়বে। রপ্তানিকারক ও কৃষক আম রপ্তানিতে উদ্বুদ্ধ হবে। বাড়বে কর্মসংস্থান।

আমের অঞ্চল খ্যাত রাজশাহীতে ভিএইচটি নির্মাণে কৃষি মন্ত্রণালয় গুরুত্ব দিচ্ছে। রাজশাহীর পবায় ট্রিটমেন্ট প¬্যান্টটি স্থাপন করবে বরে›ন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। প্রায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির সম্ভাব্য মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।

বিএমডিএর সংশি¬ষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, তারা যে প¬্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সেটি ঘণ্টায় ৩ হাজার কেজি ধরে দৈনিক প্রায় ৫০ টন আম প্রক্রিয়াজাত করতে সক্ষম। মৌসুমের প্রায় ৫ হাজার টন আম প্রক্রিয়াজাত করা যাবে এখানে। যার রপ্তানিমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকার উপরে। রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে রাজশাহী বিমানবন্দর সংলগ্ন তকিপুর মৌজায় এই প¬্যান্ট স্থাপনের কথা। এ জন্য ৬০ শতক জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন পড়বে। রাজশাহী বিমানবন্দরে কার্গো সুবিধা চালু হলে এখান থেকে সহজেই রপ্তানি করা যাবে আমসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য।

এই প্রকল্পটি নিয়ে কাজ করছেন বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটি একটি সমন্বিত প¬্যান্ট। একই সাথে এটি আধুনিক ও সয়ংক্রিয়। আম সংগ্রহের পর প্রথম ধাপে পরিপক্কতা যাচাই করা হয়। এরপর বিচ্ছিন্ন করা হবে বোটা। পরের ধাপে আকার অনুযায়ী বাছাই। এরপর ধৌতকরণ। এর পরের ধাপে গরম পানির ধারায় রোগ-জীবানুমুক্তকরণ। এরপর ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট। এই ধাপেরই কোয়ারেন্টাইন জীবানুমুক্তকরণ হবে। লেবেলিং বা মোড়ানোর পর চলে যাবে প্যাকেটজাতকরণে।

রাজশাহী এগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটির সভাপতি আনোয়ারুল হকের। সমাধান হিসেবে আম উৎপাদন এলাকায় সমন্বিত প্যাকিং হাউজ জান তিনি। পাশাপাশি রপ্তানি প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন করতে রাজশাহীতে কোয়ারেন্টাইন সুবিধা এবং রাজশাহী বিমানবন্দরে কার্গো সুবিধাও চান।

এটি সময়োপযোগী উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক প্রধান ড. আলীম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমাদের হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প¬্যান্ট আছে। আপাতত আমরা হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট করে আম বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে থাকি। কিন্তু ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প্লান্টে মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করা আমের প্রচুর চাহিদা জাপানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। রাজশাহীতে ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প¬্যান্ট হলে এসব দেশে আম রপ্তানির সুযোগ মিলবে। কৃষকরা আমের ভালো দাম পাবেন।

ছবি

একই দিনে দুই দফায় বাড়লো পেঁয়াজের দাম

বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপে সুফল মিলছে, ৪ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৬০ শতাংশ

এক সপ্তাহে রিজার্ভ কমছে ২৭ কোটি ডলার

ট্রেড লাইসেন্সের পরিবর্তে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেজিস্ট্রেশন চান ব্যবসায়ীরা

২০২৪ সালে বৈশ্বিক খাদ্যশস্য মূল্য ৬ দশমিক ৫ শতাংশ কমার পূর্বাভাস

স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি সহায়তায় বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার এমওইউ সই

ছবি

পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করল ভারত

বিএপিএলসির সভাপতি হলেন রুপালী চৌধুরী, সহ-সভাপতি আলতাফ হোসাইন

মোবাইলে রেমিট্যান্স বিতরণে সীমা বাড়লো

সৌদি-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা ব্যাপক : ডিসিসিআই সভাপতি

সুইচ সমস্যার কারণে এনপিএসবির অর্থ স্থানান্তরে বিলম্ব

ছবি

সেরা করদাতা নির্বাচিত হলেন ব্যারিস্টার নিহাদ কবির

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে জোর

ছবি

মার্কিন ‘বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা’র বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলো বিজিএমইএ

ছবি

মার্কিন ‘বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা’র বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলো বিজিএমইএ

ছবি

বাংলাদেশে খাদ্য-পুষ্টি নিরাপত্তার উন্নয়নে এফএও ও ইআরডির ৪ চুক্তি সই

ছবি

টেসলাকে ছাড়িয়ে চীনের বিওয়াইডি কেন বিশ্ববাজার মাত করছে

চলতি বছরেই রিজার্ভে যোগ হবে এক বিলিয়ন ডলার

২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিদেশি ঋণের সুদে কর অব্যাহতি

একমাসের মধ্যে আলুর দাম কমবে : বাণিজ্যমন্ত্রী

সেরা করদাতা গোলাম দস্তগীর গাজী ও গোলাম মূর্তজা

সারাদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসেছে ১৮ হাজার ইএফডি মেশিন

ছবি

মোবাইলে রেমিট্যান্স লেনদেনের সীমা বাড়ল আড়াই লাখ টাকা

ছবি

ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ১ জানুয়ারি থেকে চলবে আরও একটি ট্রেন

ছবি

আয় বৈষম্য বেড়ে যাওয়া উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে: বিনায়ক সেন

ব্যাংক বিপর্যয় ঠেকাতে সংশোধনী পদক্ষেপের নির্দেশ

দেশে উদ্বেগজনক হারে আয় বৈষম্য বেড়েছে : বিনায়ক সেন

চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানিরও সম্ভাবনা আছে লোহা ও লোহাজাত পণ্য

ঢাকায় প্রবাসী আয় সবচেয়ে বেশি, কম লালমনিরহাটে

এলডব্লিউজি সনদ পেলো তিনটি ট্যানারি

ছবি

ব্যাংক বিপর্যয় ঠেকাতে সংশোধনী পদক্ষেপের নির্দেশ

ছবি

বিশ্বের ইতিহাসে সোনার দাম সর্বোচ্চ

ছবি

ডিএসইর পরিদর্শন: বন্ধ আছে পাঁচ কোম্পানির উৎপাদন

ছবি

সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন

এলপি গ্যাস : পাঁচ মাসে ৫ দফা দাম বাড়লো

পোশাক শিল্প : এক বছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশ

tab

অর্থ-বাণিজ্য

বিদেশের বাজারে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষিপন্য

জেলা বাতার্ পরিবেশক,রাজশাহী

শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩

বরেন্দ্রঅঞ্চলের কৃষি পন্য শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। চলে যাচ্ছে বিদেশেও। এই অঞ্চলের বিভিন্য মওসুমের ফল সজ্বি খ্যাতি ইউরোপ ও মধ্য প্রচ্যরদেশ দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ায় সেখানেও ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে।

গত ১৫ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলামের বাগান থেকে ১৪ মেট্রিক টন পেয়ারা গেল দুবাইতে। তিনি গ্যালাক্সি ফ্রেশ প্রোডাক্ট লিমিটেডের মাধ্যমে পেয়ারা দুবাইতে রপ্তানি করছেন। জেলার নাচোল উপজেলার কেন্দুয়া এলাকায় বিশাল পেয়ারা বাগান গড়ে তুলেছেন রফিকুল। এই বাগানের উৎপাদিত পেয়ারা বুধবার ১৫ মার্চ বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।

কৃষি উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগে বাগান থেকে ৮ হাজার কেজি পেয়ারা দুবাইতে রপ্তানি করা হয়েছে। তখন দেশের বাজারে পেয়ারার প্রতি মণ মাত্র ১৪০০ টাকা, কিন্তু বিশ্ববাজারে এই পেয়ারার দাম ২৩০০ টাকা মণ। দুবাইতে অন্যান্য দেশের পেয়ারার চেয়ে আমাদের পেয়ারা বেশি দামে বিক্রি হয়।’

তিনি আরও বলেন, আমরা দেশের পেয়ারা ব্র্যান্ডিং করতে পেরেছি। আমাদের মতো কৃষকদের যথাযথ ট্রেনিং দিয়ে সাহায্য করলে কাক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। ব্যবসায়ীদের পেয়ারা রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পেলে অন্য দেশের চেয়ে বেশি এগিয়ে যাব।’

গ্যালাক্সি ফ্রেশ প্রোডাক্ট লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার হেমায়েত হোসাইন শিপলু বলেন, ‘আমরা যখন একটা বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করি, সব কিছু খেয়াল রাখি। পেয়ারাতে দাগ থাকা যাবে না, পোকা মাকড় থাকা যাবে না, পেয়ারার গাঁ থেকে ছাল উঠে গেলে সেই পেয়ারা নেব না। আমরা সব সময় সুন্দর আর টেস্টি পেয়ারা বিদেশে রপ্তানি করে থাকি। আমরা দুবাইতে চড়ামূল্যে এই পেয়ারা বিক্রি করছি। আগামীতে সেখানে পেয়ারার দাম আরও বাড়বে।’

নাচোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘এই উপজেলায় উৎপাদিত ১৪ মেট্রিক টন পেয়ারা বিদেশে যাচ্ছে, এটা খুশির খবর। কৃষি দপ্তরের আশা, আমাদের দেশে উৎপাদিত সকল পণ্যই বিদেশে যাক, তাহলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবে এবং চাষাবাদেও আগ্রহ বাড়বে।

কয়েক বছর ধরেই ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে আম পাঠিয়েছেন রাজশাহী বাঘা অঞ্চলের আম ব্যবসায়ীরা । এছাড়া বাগমারা তাহেরপুর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হচ্ছে কাচা মরিচ । এবার আম , কাঁচা মরিচের পর রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চরের পেয়ারা ও বরই যাচ্ছে ইতালিতে।

কৃষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে গে¬াবাল গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসের বৈশ্বিক নীতিমালা অনুসরণ করে আম উৎপাদন করা গেলে শুধু আম থেকেই হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।

১৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আদাব ইন্টারন্যাশনালের মাধমে প্যাকেজিং করে এই পেয়ারা ইতালিতে প্রথম চালান হিসেবে পাঠানো হয়েছে । আধা মেট্রিক টন পেয়ারার প্রথম চালান বাঘা গ্রামের সাদি এন্টারপ্রাইজের কার্যালয় বাঘা থেকে পাঠানো হয়েছে। সাদি এন্টারপ্রাইজ এসব পেয়ারা চাষ করেছে। এ বিষয়ে নিশ্চিত করেন বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়ার সাদি এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলাম ছানা।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কেন্দ্রীয় প্যাকেজিং হাউসে পেয়ারাগুলো মোড়কজাত করা হবে। তারপর কার্গো ফ্লাইটে এসব পেয়ারা সরাসরি প্রথম চালানে অল্প পরিমাণে পেয়ারা পাঠানো হয়েছে। আরও বেশি পরিমাণে যেন রপ্তানি করা যায়, এ জন্য ঢাকার বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। পেয়ারার পর বাঘার বরই রপ্তানির একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাঘায় ভালো বরই চাষ হচ্ছে। বরইও বিদেশে যাবে।

সাদি এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী ও বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম ছানা বলেন, ৫০ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ করেছেন। এর মধ্যে বাঘার পলাশীর চরে ৩০ বিঘা জমিতে পেয়ারা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, একসময় চরের এই বালুচটকা জমিতে কোনো আবাদ হতো না। তারা এসব জমি ইজারা নিয়ে ধীরে ধীরে পরিচর্যা করে আবাদে তুলেছেন। এখন এসব জমিতে আম, বরই ও পেয়ারা চাষ করা হচ্ছে। ফলনও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। চরের এসব জমিতে পেয়ারা চাষ হওয়ার কারণে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। একশ্রেণির মানুষ আধুনিক চাষ শিখে নিয়েছেন। কন্টাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে যাওয়ার কারণে বিদেশে রপ্তানির উপযোগী আম, পেয়ারা ও বরই বাঘায় উৎপাদিত হচ্ছে। এ জন্য উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে ১৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আদাব ইন্টারন্যাশনালের মাধমে প্যাকেজিং করে কোম্পানীর মাধ্যমে শফিকুল ইসলাম সানা ও বাউসা এলাকার তরুন উদ্যোক্তা শাহিন ইকবালের বাগান থেকে রপ্তানি হয় দেড়’শ কেজি করে মোট তিন’শ কেজি থাই বরই ইতালী পাঠিয়েছে। তরুন উদ্যোক্তা শাহিন ইকবাল ও শফিকুল ইসলাম সানা ব্যাবসায়ীরা জানান , এই অঞ্চলের বরই কাঁচা অবস্থায় সবুজ, আর পাকলে লাল, এ ফলটি প্রায় সবারই খুব প্রিয়। আমরা যে বরই এর চাষ করি , যেটা কাঁচা হোক বা পাকা হোক, যে কোনো অবস্থাতেই খাওয়ার যায়। এ কারণে দেশের গন্ডি পেরিয়ে এবার স্থানীয় সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলা থেকে আমের পর পেয়ারার ও বরই রপ্তানি শুরু হয়েছে।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সফিউল্লাহ সুলতান বলেন, বাঘার চাষিরা এর আগে কন্টাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে আম চাষ করে বিদেশে আম রপ্তানি করেছেন। একইভাবে তারা পেয়ারা চাষ করেছেন। প্রথম চালানে আধা মেট্রিক টন পেয়ারা পাঠানো হয়েছে। ঢাকার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আদাব ইন্টারন্যাশনাল এই পেয়ারা ও বরই ইতালিতে

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, আমাদের কাছে থাকা তালিকাভুক্ত চুক্তিবদ্ধ আম চাষিদের সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদের বাগানের সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা শেখানো হয়। ব্যাগিং পদ্ধতিতে ফ্রেশ আম উৎপাদনের বিষয়টিও তাদের শেখানো হয়। এভাবেই আম রপ্তানির পথ খুলছে । এদিকে গত বছর নভেম্বর মাস থেকে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর হাট থেকে সপ্তাহে ২১ টন কাঁচা মরিচ যাচ্ছে বিশ্বের চারটি দেশে। এ হাটের আরিমা এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান স্বপন এ অঞ্চলের কাঁচা মরিচ কিনে দুবাই, কাতার, কুয়েত ও মালেশিয়ায় রপ্তানি করছেন। এতে এ অঞ্চলের কৃষকেরা মরিচের ভালো দাম পাচ্ছেন।

এদিকে আম পেয়ারা বরই পর কাঁচা মরিচ যাচ্ছে মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্য দেশে রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলায় মরিচ বিক্রির বিখ্যাত হাট তাহেরপুর। এই হাট বাগমারা, দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলার একদম মাঝখানে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এই হাটে তিন উপজেলার কৃষকেরা কৃষিপণ্য বিক্রি করেন। এই হাট থেকে তিন উপজেলার কৃষকের কাঁচা মরিচ কিনে এখন প্রতি সপ্তাহে ২১ টন কাঁচা মরিচ রপ্তানি ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান স্বপন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মরিচের হাট নামে খ্যাত তাহেরপুরে বাগমারা, দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলার কৃষকেরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বস্তা ভর্তি মরিচ নিয়ে আসছেন।

বাজার দর অনুযায়ী পাইকাররা দাম দিয়ে কিনছেন সেই মরিচ। এসব মরিচ নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। দুবাই, কুয়েত, কাতার ও মালয়েশিয়া রপ্তানি হয় এখানকার মরিচ।

হাটে দুপুরের পর থেকে কার্টনে মরিচ ভর্তি করে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হয়। মরিচ ভর্তির পর যে দেশে যাবে সেদেশের সিল মারা হয় সেই কার্টনে। এই হাট প্রতিদিন গড়ে তিন টন মরিচ দেশের বাইরে যায়।

তাহেরপুর হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসা দুর্গাপুর উপজেলার গোপালপাড়া গ্রামের আকছেদ আলী বলেন, ‘দুর্গাপুরে বাড়ি হলেও তাহেরপুর হাটে মরিচ বিক্রি করি। এতে আমাদের যাতায়াত সুবিধা হয়। এ বছর এক বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করছি। এ বছর অবশ্য মরিচের দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে।’

তাহেরপুর বাজারের আরিমা এন্টার প্রাইজের স্বত্তাধিকারি আতিকুর রহমান স্বপন বলেন, ‘এই অঞ্চলের বিন্দু ও কারেন্ট জাতের কাঁচা মরিচের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশের বাইরে। প্রতি সপ্তাহে তাহেরপুর বাজার থেকে ২১ টন কাঁচা মরিচ দুবাই, কুয়েত, কাতার ও মালেশিয়ায় রপ্তানি করছি। এখন রাজশাহীতে বিন্দু জাতের কাঁচা মরিচ একটু কম পাওয়া যাচ্ছে। ফলে চাহিদা মিটাতে এখন বগুড়া থেকেও কাঁচা মরিচ কিনছি।’

ব্যবসায়ী আতিকুর আরও বলেন, ‘দুবাই কুয়েত কাতার ও মালয়েশিয়া থেকে সেখানকার ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুয়ায়ী আমার কাছে ইমেইল করেন। কাঁচা মরিচ কেনার জন্য মোকামে ১০ জন কর্মচারী রেখেছি। প্রতিদিন হাটে কৃষকদের থেকে দরদাম করে ৩ টনের বেশি কাঁচা মরিচ কিনি। তারপর প্যাকেটজাত করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে দিয়ে ওই সব দেশে রপ্তানি করি।’

নোয়াখালীর দুবাই প্রবাসী ইউনুছ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলেন, ‘দুবাইয়ে রাজশাহী ও বগুড়ার কাঁচা মরিচের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমি তাহেরপুর থেকে যে মরিচ আমদানি করি সেগুলো আবার আমি প্রায় ১০ জায়গায় সরবরাহ করি। এখানে প্রচুর পরিমাণ বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছে। তাঁরা দেশীয় মরিচ খুব পছন্দ করেন।’

রাজশাহী ও বগুড়ার মরিচের খ্যাতি দেশ জুড়ে। তাই নামীদামি মসলা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও বিদেশেও রপ্তানি হয়। এ কারণে চাহিদা অনেক বেশি তাই দামও ভালো পায় কৃষকেরা।’

এদিকে ফলে আম ছাড়াও রপ্তানির উদ্দেশ্যে শাক-সবজিও প্রক্রিয়াজাত করা যাবে রাজশাহীতে স্থাপন করা হচ্ছে ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প¬্যান্ট। এই প¬্যান্টে রপ্তানির দুয়ার খুলছে এবার। রাজশাহীতেই প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি বিদেশ যাবে এ অঞ্চলের আম। অর্থনীতি পাল্টে দেবে ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প¬্যান্ট।

কেবল আম প্রক্রিয়াজাত করেই প¬্যান্ট থেকে মৌসুমে আয় হবে অন্তত অন্তত: কোটি টাকা। । এই বিপুল কর্মযজ্ঞ এই অঞ্চলের অর্থনীতির গতি পাল্টে দেবে। এই প¬্যান্ট স্থাপণ হলে নিরাপদ আম রপ্তানি বাড়বে। রপ্তানিকারক ও কৃষক আম রপ্তানিতে উদ্বুদ্ধ হবে। বাড়বে কর্মসংস্থান।

আমের অঞ্চল খ্যাত রাজশাহীতে ভিএইচটি নির্মাণে কৃষি মন্ত্রণালয় গুরুত্ব দিচ্ছে। রাজশাহীর পবায় ট্রিটমেন্ট প¬্যান্টটি স্থাপন করবে বরে›ন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। প্রায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির সম্ভাব্য মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।

বিএমডিএর সংশি¬ষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, তারা যে প¬্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সেটি ঘণ্টায় ৩ হাজার কেজি ধরে দৈনিক প্রায় ৫০ টন আম প্রক্রিয়াজাত করতে সক্ষম। মৌসুমের প্রায় ৫ হাজার টন আম প্রক্রিয়াজাত করা যাবে এখানে। যার রপ্তানিমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকার উপরে। রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে রাজশাহী বিমানবন্দর সংলগ্ন তকিপুর মৌজায় এই প¬্যান্ট স্থাপনের কথা। এ জন্য ৬০ শতক জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন পড়বে। রাজশাহী বিমানবন্দরে কার্গো সুবিধা চালু হলে এখান থেকে সহজেই রপ্তানি করা যাবে আমসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য।

এই প্রকল্পটি নিয়ে কাজ করছেন বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটি একটি সমন্বিত প¬্যান্ট। একই সাথে এটি আধুনিক ও সয়ংক্রিয়। আম সংগ্রহের পর প্রথম ধাপে পরিপক্কতা যাচাই করা হয়। এরপর বিচ্ছিন্ন করা হবে বোটা। পরের ধাপে আকার অনুযায়ী বাছাই। এরপর ধৌতকরণ। এর পরের ধাপে গরম পানির ধারায় রোগ-জীবানুমুক্তকরণ। এরপর ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট। এই ধাপেরই কোয়ারেন্টাইন জীবানুমুক্তকরণ হবে। লেবেলিং বা মোড়ানোর পর চলে যাবে প্যাকেটজাতকরণে।

রাজশাহী এগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটির সভাপতি আনোয়ারুল হকের। সমাধান হিসেবে আম উৎপাদন এলাকায় সমন্বিত প্যাকিং হাউজ জান তিনি। পাশাপাশি রপ্তানি প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন করতে রাজশাহীতে কোয়ারেন্টাইন সুবিধা এবং রাজশাহী বিমানবন্দরে কার্গো সুবিধাও চান।

এটি সময়োপযোগী উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক প্রধান ড. আলীম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমাদের হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প¬্যান্ট আছে। আপাতত আমরা হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট করে আম বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে থাকি। কিন্তু ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প্লান্টে মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করা আমের প্রচুর চাহিদা জাপানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। রাজশাহীতে ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প¬্যান্ট হলে এসব দেশে আম রপ্তানির সুযোগ মিলবে। কৃষকরা আমের ভালো দাম পাবেন।

back to top