সিপিডি ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সংলাপ
নাগরিক সমাজের মতামত না নিয়ে আইএমএফ এর কর্মসূচি বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করলে বৈষম্য আরও বাড়বে। তাই যাদের জন্য আইএমএফের ঋণ নেয়া হয়েছে, তাদের সঙ্গে অথবা তাদের কল্যাণে যারা চিন্তা করে, সেসব প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলা জরুরি। সোমবার (১৫ মে) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সিপিডি ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের এক সংলাপে এসব কথা বলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সভার বিষয় ছিল, ‘আইএমএফের সময়কালে অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের কথা জাতীয় বাজেটে কীভাবে প্রতিফলিত হতে পারে।’
সংলাপে অংশ নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আইএমএফের সঙ্গে বাজেটের সম্পর্ক কী? তারা সাইড অ্যাক্টর, বাজেট আমাদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে আইএমএফের কিছু শর্ত থাকে। প্রয়োজনে হাত পাতি, দেয়ার দায়িত্ব আইএমএফের। অনেকে বলে দাতাগোষ্ঠী, এ শব্দের আমি ঘোরবিরোধী। কারণ তারা উন্নয়ন সহযোগী, আমরা ঋণ নিয়ে থাকি এবং সুদ আসলে পরিশোধ করি। বাজেটে উন্নয়ন সহযোগীদের অবদান মাত্র ২ শতাংশ।’
আইএমএফ কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘যাদের জন্য আইএমএফ এর কর্মসূচি নেয়া হয়, তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাদের প্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এদের মতামত না নিয়ে আইএমএফ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশ আরও একটি বৈষম্যপূর্ণ দেশে পরিণত হবে।’
এর আগেও সরকার এমন অনেক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সেগুলো কার্যকর হয়নি। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সুলভ মূল্যে চাল দেয়ার কর্মসূচির উদারহণ দিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে ১৫ টাকা কেজিতে ৩০ কেজি চাল দেয়ার কর্মসূচি নিয়ে সবাই অবগত নয়। এটা কীভাবে কাজ করছে আমরা দেখেছি। আমরা দেখেছি, চাহিদা মতো চালের সরবরাহ নেই। অনেক চালের বস্তা ওজনে কম, মুখ খোলা। চালের মান ভালো না। পরিমাণে দেয়া হয় কম। গরিব মানুষের সংযোগ হয়নি। অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের জন্য বেশি বরাদ্দ দিতে হবে।’
সংলাপে আরও অংশ নেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা প্রমুখ।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান আরও বলেন, ‘আমরা আইএমএফের ওপর নির্ভরশীল নই, তারা ঋণ দিতে কোন শর্ত দেয়নি। তবে কিছু রিকুইয়ারমেন্ট দেয়।’
দারিদ্র্য প্রসঙ্গে এম এ মান্নান বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের দরিদ্ররা বঞ্চিত। পদ্ধতিগতভাবে তারা বছরের পর বছর বঞ্চিত হচ্ছে। আমি গ্রামে যাই, সরকারি মালামাল নিয়ে, এগুলো কোথায় যায় জানি না। এটা খুঁজে বের করাও কঠিন।’
রেমিট্যান্সপ্রবাহ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘৩০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স মন্দ নয়। এটার খবর একসময় কেউ রাখতো না। ৫০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স একসময় হয়েছিল, তাই এটা নজরে আসছে। হুন্ডির সঙ্গে পারি না। হুন্ডি নিয়ন্ত্রণে আমাদের চাপ অব্যাহত থাকবে। এছাড়া আমরা রিজার্ভ নিয়ে বাড়াবাড়ি করি না। কারণ ৫-৭ বছর আগে আমি নিজেও রিজার্ভ সম্পর্কে জানতামই না। ইদানীং যেহেতু রিজার্ভের পরিমাণটা বেড়ে গিয়েছিল সেজন্য সবার চোখে পড়েছে। আমরা কোনভাবেই মানতে চাই না রিজার্ভ কমবে। এটা চলমান প্রথা। রিজার্ভ বাড়বে, কমবে এটাই স্বাভাবিক। আগে তো কেউ খবরও রাখত না। এখন যেই রিজার্ভ আছে সেটা মন্দ নয়। আমাদের বর্তমানে ৪ থেকে পাঁচ মাসের আমদানি-রপ্তানির টাকা রিজার্ভে আছে।’
সংলাপের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদ খাতুন বলেন, ‘পাঁচ দশকে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে এটা ঠিক, কিন্তু সমতা বিধান করা যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে এটা বেড়ে চলেছে।’
সিপিডির আরেকজন বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাজেটের আকার নিয়ে অনেক বড় বড় কথা হয় থাকে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের বাজেট অনেক ছোট। বাজেটে ঋণখেলাপি ও কর ফাঁকির সঙ্গে জড়িতদের প্রণোদনা না দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে প্রণোদনা দিতে হবে। তা না হলে দেশের একটি বড় জনগোষ্ঠী পিছিয়েই থাকবে। আর বড় অংশকে পেছনে রেখে দেশের উন্নতি করা সম্ভব না।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা সরকারের ভর্তুকির নামে জ্বালানি খাতে অর্থ অপচয়ের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘ক্যাপাসিটি চার্জের নামে ভর্তুকি দিয়ে দেশের জ্বালানি খাতকে সংকটে ফেলে দেয়া হয়েছে। বিভিন্নভাবে টাকা পচারকারীদের পরিচয় গোপান করা হয়েছে।’
সংসদ সদস্য ও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল বলেছেন, ‘রিজার্ভসহ কিছু সমস্যার কারণে আইএমএফ থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে। তবে আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়ন করলে বৈষম্য বাড়বে।’
এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে তাদের মতামত তুলে ধরেন। সিপিডি ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ অনুষ্ঠানে ছিলেন।
সিপিডি ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সংলাপ
সোমবার, ১৫ মে ২০২৩
নাগরিক সমাজের মতামত না নিয়ে আইএমএফ এর কর্মসূচি বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করলে বৈষম্য আরও বাড়বে। তাই যাদের জন্য আইএমএফের ঋণ নেয়া হয়েছে, তাদের সঙ্গে অথবা তাদের কল্যাণে যারা চিন্তা করে, সেসব প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলা জরুরি। সোমবার (১৫ মে) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সিপিডি ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের এক সংলাপে এসব কথা বলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সভার বিষয় ছিল, ‘আইএমএফের সময়কালে অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের কথা জাতীয় বাজেটে কীভাবে প্রতিফলিত হতে পারে।’
সংলাপে অংশ নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আইএমএফের সঙ্গে বাজেটের সম্পর্ক কী? তারা সাইড অ্যাক্টর, বাজেট আমাদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে আইএমএফের কিছু শর্ত থাকে। প্রয়োজনে হাত পাতি, দেয়ার দায়িত্ব আইএমএফের। অনেকে বলে দাতাগোষ্ঠী, এ শব্দের আমি ঘোরবিরোধী। কারণ তারা উন্নয়ন সহযোগী, আমরা ঋণ নিয়ে থাকি এবং সুদ আসলে পরিশোধ করি। বাজেটে উন্নয়ন সহযোগীদের অবদান মাত্র ২ শতাংশ।’
আইএমএফ কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘যাদের জন্য আইএমএফ এর কর্মসূচি নেয়া হয়, তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাদের প্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এদের মতামত না নিয়ে আইএমএফ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশ আরও একটি বৈষম্যপূর্ণ দেশে পরিণত হবে।’
এর আগেও সরকার এমন অনেক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সেগুলো কার্যকর হয়নি। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সুলভ মূল্যে চাল দেয়ার কর্মসূচির উদারহণ দিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে ১৫ টাকা কেজিতে ৩০ কেজি চাল দেয়ার কর্মসূচি নিয়ে সবাই অবগত নয়। এটা কীভাবে কাজ করছে আমরা দেখেছি। আমরা দেখেছি, চাহিদা মতো চালের সরবরাহ নেই। অনেক চালের বস্তা ওজনে কম, মুখ খোলা। চালের মান ভালো না। পরিমাণে দেয়া হয় কম। গরিব মানুষের সংযোগ হয়নি। অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের জন্য বেশি বরাদ্দ দিতে হবে।’
সংলাপে আরও অংশ নেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা প্রমুখ।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান আরও বলেন, ‘আমরা আইএমএফের ওপর নির্ভরশীল নই, তারা ঋণ দিতে কোন শর্ত দেয়নি। তবে কিছু রিকুইয়ারমেন্ট দেয়।’
দারিদ্র্য প্রসঙ্গে এম এ মান্নান বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের দরিদ্ররা বঞ্চিত। পদ্ধতিগতভাবে তারা বছরের পর বছর বঞ্চিত হচ্ছে। আমি গ্রামে যাই, সরকারি মালামাল নিয়ে, এগুলো কোথায় যায় জানি না। এটা খুঁজে বের করাও কঠিন।’
রেমিট্যান্সপ্রবাহ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘৩০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স মন্দ নয়। এটার খবর একসময় কেউ রাখতো না। ৫০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স একসময় হয়েছিল, তাই এটা নজরে আসছে। হুন্ডির সঙ্গে পারি না। হুন্ডি নিয়ন্ত্রণে আমাদের চাপ অব্যাহত থাকবে। এছাড়া আমরা রিজার্ভ নিয়ে বাড়াবাড়ি করি না। কারণ ৫-৭ বছর আগে আমি নিজেও রিজার্ভ সম্পর্কে জানতামই না। ইদানীং যেহেতু রিজার্ভের পরিমাণটা বেড়ে গিয়েছিল সেজন্য সবার চোখে পড়েছে। আমরা কোনভাবেই মানতে চাই না রিজার্ভ কমবে। এটা চলমান প্রথা। রিজার্ভ বাড়বে, কমবে এটাই স্বাভাবিক। আগে তো কেউ খবরও রাখত না। এখন যেই রিজার্ভ আছে সেটা মন্দ নয়। আমাদের বর্তমানে ৪ থেকে পাঁচ মাসের আমদানি-রপ্তানির টাকা রিজার্ভে আছে।’
সংলাপের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদ খাতুন বলেন, ‘পাঁচ দশকে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে এটা ঠিক, কিন্তু সমতা বিধান করা যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে এটা বেড়ে চলেছে।’
সিপিডির আরেকজন বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাজেটের আকার নিয়ে অনেক বড় বড় কথা হয় থাকে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের বাজেট অনেক ছোট। বাজেটে ঋণখেলাপি ও কর ফাঁকির সঙ্গে জড়িতদের প্রণোদনা না দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে প্রণোদনা দিতে হবে। তা না হলে দেশের একটি বড় জনগোষ্ঠী পিছিয়েই থাকবে। আর বড় অংশকে পেছনে রেখে দেশের উন্নতি করা সম্ভব না।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা সরকারের ভর্তুকির নামে জ্বালানি খাতে অর্থ অপচয়ের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘ক্যাপাসিটি চার্জের নামে ভর্তুকি দিয়ে দেশের জ্বালানি খাতকে সংকটে ফেলে দেয়া হয়েছে। বিভিন্নভাবে টাকা পচারকারীদের পরিচয় গোপান করা হয়েছে।’
সংসদ সদস্য ও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল বলেছেন, ‘রিজার্ভসহ কিছু সমস্যার কারণে আইএমএফ থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে। তবে আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়ন করলে বৈষম্য বাড়বে।’
এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে তাদের মতামত তুলে ধরেন। সিপিডি ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ অনুষ্ঠানে ছিলেন।