alt

অর্থ-বাণিজ্য

দেশে ব্যবসায় বড় বাধা এনবিআর

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : শনিবার, ২৭ মে ২০২৩

দেশে ব্যবসায় সবচেয়ে বড় বাধা এনবিআর। বাংলাদেশের মতো এত অকার্যকর শুল্ক বিভাগ (কাস্টমস) বিশ্বের আর কোথাও নেই। এনবিআর একজন ব্যবসায়ীকে নানাভাবে সমস্যায় ফেলেন। শনিবার (২৭ মে) এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) এর সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ। এর সঙ্গে একমত পোষণ করেন উপস্থিত ব্যবসায়ীরা।

শনিবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে ‘আইসিসি রাউন্ড টেবিল অন ইনভেস্টমেন্ট ফর ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দেশে ব্যাবসার বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা।

অনুষ্ঠানে হামীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ বর্তমানে ব্যবসার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘যখন আমি এই অনুষ্ঠানে আসার জন্য তৈরি হলাম তখন একটা ফোন আসলো। একজন ব্যাংকার বলল, স্যার আমি কখন আসব? তিনি আসলে ব্যাংকের কিস্তি নিতে আসতে চান। আমার কাছে টাকা নাই। আমি তাকে আসতে বলতে পারলাম না। কারণ আমি খুব সংকটে আছি। প্রতিনিয়ত অর্ডার কমছে। আয় কমছে। এভাবে চলতে থাকলে টিকে থাকতে পারব না।’

এই পরিস্থিতিতে আর বড় প্রকল্প না নিয়ে টিকে থাকার জন্য যা দরকার সেদিকে লক্ষ রাখার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে অনেক কিছু করা যাবে। সেটা ভবিষ্যতে করতে হবে। কিন্তু আজ যদি আমরা টিকে না থাকতে পারি তাহলে ভবিষ্যৎ দিয়ে কী করব? আজ যেন ব্যাবসা-বাণিজ্য করতে পারি সেটা আগে নিশ্চিত করতে হবে।’

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রকল্পে অর্থায়ন করতে গিয়ে সেসব সমস্যায় পড়েন, তা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন একটা প্রকল্পে অর্থায়ন করি তখন প্রথমে জানতে পারি সেটা ৫ বা ১০ বছরের জন্য করা হচ্ছে। কিন্তু সেটা শেষ হতে প্রায় দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ সময় লেগে যায়। এই সময়ে আমাদের টাকাটা আটকে থাকে। এভাবে যদি বড় কয়েকটা প্রকল্প আটকে থাকে তাহলেই তো তারল্য সংকট দেখা দেবে।’

অনুষ্ঠানে দেশের অবকাঠামোর বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) এর পরিচালক ও বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক।

তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবেই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বেহাল অবস্থায় রয়েছে। প্রতিনিয়ত যানজট হচ্ছে, কিছুদিন আগের নির্মিত রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, প্রচুর পরিমাণ কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে, এক ঘণ্টার রাস্তা ১০ ঘণ্টা সময় লাগছে। ‘বোটলনেক’ সমস্যার কারণে চার লেন, ছয় লেন, আট লেন করেও সমস্যার সমাধান হয় না।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে পূর্ণ-অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রিত অবকাঠামোর অভাব রয়েছে যা মানসম্পন্ন রাস্তার তীব্র ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়। শুধু চার লেন, ছয় লেন করলেই হবে না। রাস্তার মোড়গুলো কীভাবে নির্মাণ করা হবে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। কারণ আমরা যদি লেন বাড়াই কিন্তু মোড়গুলো আধুনিক না করি, তাহলে ‘বোটলনেক প্রবলেম’ হবে। যানজট আরও বাড়বে। ’

মূলবক্তব্য উপস্থাপনায় দেশের সড়ক ব্যবস্থার বিভিন্ন অবস্থাপনা তুলে ধরেন। সেখানে তিনি দেখান, হাইওয়েতে এমন কিছু যানবাহন চলাচল করছে, যেগুলো হাইওয়েতে চলাচল করার কথা নয়। এসব যানবাহনের কারণে বড় যানবাহনগুলো চলাচলের গতি বাড়াতে পারছে না। এতে যাতায়াতে সময় বেশি লাগছে। আবার কিছু ছবিতে দেখান, রাস্তাগুলো চার লেন করা হয়েছে, কিন্তু তার একটা লেনও পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কোন কোন হাইওয়েতে ভ্যান, নছিমন, করিমন চলছে যেগুলো অনুমোদনই নেই। কোন কোন রাস্তায় পানি চলাচল করার কার্লভার্ট নেই। আবার অনেক হাইওয়েতে ছোট যানবাহন চলাচল করার রাস্তা নেই। তখন সেই ছোট যানবাহনগুলোতেই হাইওয়ে দখল করে রেখেছে।

তিনি দেশের অবকাঠামো নির্মাণের অনিয়ম তুলে ধরে বলেন, ‘একটা চার লেনের রাস্তা যেদিন উদ্বোধন করা হয়, তার পর দিনই বিটুমিন খসে খসে আলাদা হয়ে যায়। আবার সেটাকে বৃষ্টির মধ্যে মেরামত করে। একদিক থেকে মেরামত করা হয়, অন্যদিক থেকে আবার নষ্ট হয়ে যায়। এসব অনিয়ম রোধ করা না হলে অবকাঠামো উন্নয়ন সম্ভব নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এতে আমদানি-রপ্তানি উভয় ক্ষেত্রেই খরচ ও সময় কমাতে সাহায্য করবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সাশ্রয়ী ও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আমাদের অতি প্রয়োজনীয় কৃষিজমি বাঁচাবে। অন্য সব উন্নয়নশীল দেশের মতো অবকাঠামোতে মোট বিনিয়োগের কমপক্ষে ৬ শতাংশ বা ৭ শতাংশ হওয়া উচিত। ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াবে।’

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এম মান্নান বিভিন্ন ঋণদানকারী সংস্থাগুলোর সমালোচনা করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘আমরা বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে থেকে ঋণ নিই। তারপর তা যথা সময়ে সুদসহ ফেরত দেয়। তাহলে এই ‘ঋণ’কে ‘সহায়তা’ বলা হবে কেন?’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘যেহেতু আমরা কম সুদে ঋণ নিয়ে থাকি, এজন্য অনেক বিষয় মেনে নিতে হয়। ঋণ নিই, সুদে-আসলে ফেরতও দিই। আমরা কখনো ব্যর্থ হইনি। উন্নয়ন সহযোগীদের বলব আপনারা শর্ত কমান। আমরা রাষ্ট্র, আপনারা সংস্থা।’

উন্নয়নপ্রকল্পে পরামর্শক না নিলে বিদেশি ঋণ মেলে না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পরামর্শক খাতে বড় অঙ্কের অর্থ চলে যায়। লেনডার্সের শর্তের খাতিরে কনসালটেন্ট নিতে হয়। আগে দেখেছি- নোট কিনলেই মূল বই পাওয়া যেত। বাংলাবাজারে নোট না কিনলে বিক্রেতা বই বেচত না। এখানেও ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, যদি কনসালটেন্ট (পরামর্শক) না নিই, তাহলে উন্নয়ন সহযোগীরা লোন (ঋণ) দেবেন না।’

উন্নয়নপ্রকল্প প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আরও একটি বিষয় আমি বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী বার বার বলছেন, প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় খরচ করবেন না। সবার জন্য এটা সাধারণ বার্তা। আমাদের কাছে বার্তা এসেছে, আমরাও খরচ কমানোর চেষ্টা করছি। প্রকল্পের অনেক জায়গায় অপ্রয়োজনীয় খরচ হয়ে যায়। অনেক সময় পরিকল্পনা কমিশনও ধরতে পারে না। আমাদেরও লিমিটেড ক্ষমতা। একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা দুই-তিন বছরের কাঠখড় পুড়িয়ে এমন গতিতে আমাদের কাছে পৌঁছে, ওর (প্রকল্প) সামনে দাঁড়ালে আমারই মৃত্যু হয়ে যাবে। এর পেছনে অনেক উন্নয়ন সহযোগী আছে।’

পরিবেশের ক্ষতি করে উন্নয়ন নয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘জাতি হিসেবে আমরা সচেতন ছিলাম না। এখন সচেতনভাবে কাজ করছি। ধানের জমি নষ্ট করব না। সামান্য রেডিও ট্রান্সমিশন অফিস হবে অথচ বিশাল জায়গা নিয়ে বসে আছে- এমনটা হতে দেবো না। জমির সর্বোত্তম ব্যবহার করব। দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখব না। জলাভূমি ও প্লাবনভূমির ক্ষতি করব না। প্লাবনভূমিতে ফ্লাইওভার করব। হাওর অঞ্চলে ফ্লাইওভার করে দেবো। প্লাবনভূমি নষ্ট করব না। দিরাই-শাল্লা এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। প্লাবন, চরে পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে- এমন অবকাঠামো করব না।’

ছবি

সবজির বাজারে আগুন, বাড়তি ফার্মের মুরগির দামও

আরও ৬ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি

সূচকের সামান্য পতন, কমেছে লেনদেনও

এসএমই ফাউন্ডেশনের ‘ন্যাচারাল ডাইং’ প্রশিক্ষণে পোশাকে প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহার করা শিখছেন উদ্যোক্তারা

অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি : বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

দুই মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৪ হাজার ৮৭ কোটি টাকা

পিপলস লিজিংয়ের লেনদেন বন্ধের মেয়াদ বেড়েছে ৯৫ দফা

রিজার্ভ কমে ২ হাজার ১৪৫ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে

ছবি

সাউথইস্ট ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হলেন মো. আকিকুর রহমান

ছবি

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানতের চেয়ে ঋণ বেশি

ছবি

শেষ কার্যদিবসে দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন কমেছে

ছবি

বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে : এডিবি

ছবি

সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে আলু আমদানির সুপারিশ

ছবি

মামলা নিষ্পত্তি বাড়লেও ঋণ আদায় কম

ব্যাংকের ৪৩ শতাংশ আমানত কোটি টাকার হিসাবধারীদের

ছবি

বেশি দামে ডলার বেচায় ১০ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

বীমা খাতে ধস, শেয়ারবাজারে পতন

রিজার্ভ চুরির প্রতিবেদন পেছালো

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী সুইস উদ্যোক্তারা

ছবি

শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে ২৫.৯৯ কোটি টাকা জমা দিয়েছে গ্রামীণফোন

ছবি

কোটি টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তিন মাসে বেড়েছে ৩৩৬২টি

ছবি

আয় ৫ লাখ টাকার কম হলেই এক পাতার রিটার্ন

ছবি

ডিমের দামে ওঠা-নামা, ১২-১৩ প্রতিষ্ঠানের হাতে নিয়ন্ত্রণ, বলছেন খামারিরা

ছবি

ব্যাংক খাতে নারী কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে

বীমার দাপটে শেয়ারবাজারে উত্থান

আমদানির তথ্য যাচাইয়ে কড়াকড়ি আরোপ

রপ্তানিতে ৩৮ পণ্যে মিলবে নগদ সহায়তা

ছবি

ফের উৎপাদনে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

ছবি

দেশে প্রচুর কোটিপতি, আয়কর রাজস্বের মূল উৎস হওয়া উচিত: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

ছবি

থাকছে না তিন দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ, বাড়বে মেয়াদ

ছবি

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে পোশাক রপ্তানি বাড়ছে

ছবি

ডিএসইর এমডি হিসেবে যোগ দিলেন তারিকুজ্জামান

বিক্রির চাপে লেনদেন আটশ’ কোটির ঘরে

জমে উঠেছে বৈশ্বিক অস্ত্রের বাজার

ছবি

পুঁজিবাজারে উত্থান, বেড়েছে লেনদেন

ছবি

এলপি গ্যাস : সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও নেই

tab

অর্থ-বাণিজ্য

দেশে ব্যবসায় বড় বাধা এনবিআর

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

শনিবার, ২৭ মে ২০২৩

দেশে ব্যবসায় সবচেয়ে বড় বাধা এনবিআর। বাংলাদেশের মতো এত অকার্যকর শুল্ক বিভাগ (কাস্টমস) বিশ্বের আর কোথাও নেই। এনবিআর একজন ব্যবসায়ীকে নানাভাবে সমস্যায় ফেলেন। শনিবার (২৭ মে) এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) এর সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ। এর সঙ্গে একমত পোষণ করেন উপস্থিত ব্যবসায়ীরা।

শনিবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে ‘আইসিসি রাউন্ড টেবিল অন ইনভেস্টমেন্ট ফর ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দেশে ব্যাবসার বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা।

অনুষ্ঠানে হামীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ বর্তমানে ব্যবসার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘যখন আমি এই অনুষ্ঠানে আসার জন্য তৈরি হলাম তখন একটা ফোন আসলো। একজন ব্যাংকার বলল, স্যার আমি কখন আসব? তিনি আসলে ব্যাংকের কিস্তি নিতে আসতে চান। আমার কাছে টাকা নাই। আমি তাকে আসতে বলতে পারলাম না। কারণ আমি খুব সংকটে আছি। প্রতিনিয়ত অর্ডার কমছে। আয় কমছে। এভাবে চলতে থাকলে টিকে থাকতে পারব না।’

এই পরিস্থিতিতে আর বড় প্রকল্প না নিয়ে টিকে থাকার জন্য যা দরকার সেদিকে লক্ষ রাখার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে অনেক কিছু করা যাবে। সেটা ভবিষ্যতে করতে হবে। কিন্তু আজ যদি আমরা টিকে না থাকতে পারি তাহলে ভবিষ্যৎ দিয়ে কী করব? আজ যেন ব্যাবসা-বাণিজ্য করতে পারি সেটা আগে নিশ্চিত করতে হবে।’

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রকল্পে অর্থায়ন করতে গিয়ে সেসব সমস্যায় পড়েন, তা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন একটা প্রকল্পে অর্থায়ন করি তখন প্রথমে জানতে পারি সেটা ৫ বা ১০ বছরের জন্য করা হচ্ছে। কিন্তু সেটা শেষ হতে প্রায় দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ সময় লেগে যায়। এই সময়ে আমাদের টাকাটা আটকে থাকে। এভাবে যদি বড় কয়েকটা প্রকল্প আটকে থাকে তাহলেই তো তারল্য সংকট দেখা দেবে।’

অনুষ্ঠানে দেশের অবকাঠামোর বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) এর পরিচালক ও বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক।

তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবেই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বেহাল অবস্থায় রয়েছে। প্রতিনিয়ত যানজট হচ্ছে, কিছুদিন আগের নির্মিত রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, প্রচুর পরিমাণ কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে, এক ঘণ্টার রাস্তা ১০ ঘণ্টা সময় লাগছে। ‘বোটলনেক’ সমস্যার কারণে চার লেন, ছয় লেন, আট লেন করেও সমস্যার সমাধান হয় না।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে পূর্ণ-অ্যাক্সেস নিয়ন্ত্রিত অবকাঠামোর অভাব রয়েছে যা মানসম্পন্ন রাস্তার তীব্র ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়। শুধু চার লেন, ছয় লেন করলেই হবে না। রাস্তার মোড়গুলো কীভাবে নির্মাণ করা হবে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। কারণ আমরা যদি লেন বাড়াই কিন্তু মোড়গুলো আধুনিক না করি, তাহলে ‘বোটলনেক প্রবলেম’ হবে। যানজট আরও বাড়বে। ’

মূলবক্তব্য উপস্থাপনায় দেশের সড়ক ব্যবস্থার বিভিন্ন অবস্থাপনা তুলে ধরেন। সেখানে তিনি দেখান, হাইওয়েতে এমন কিছু যানবাহন চলাচল করছে, যেগুলো হাইওয়েতে চলাচল করার কথা নয়। এসব যানবাহনের কারণে বড় যানবাহনগুলো চলাচলের গতি বাড়াতে পারছে না। এতে যাতায়াতে সময় বেশি লাগছে। আবার কিছু ছবিতে দেখান, রাস্তাগুলো চার লেন করা হয়েছে, কিন্তু তার একটা লেনও পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কোন কোন হাইওয়েতে ভ্যান, নছিমন, করিমন চলছে যেগুলো অনুমোদনই নেই। কোন কোন রাস্তায় পানি চলাচল করার কার্লভার্ট নেই। আবার অনেক হাইওয়েতে ছোট যানবাহন চলাচল করার রাস্তা নেই। তখন সেই ছোট যানবাহনগুলোতেই হাইওয়ে দখল করে রেখেছে।

তিনি দেশের অবকাঠামো নির্মাণের অনিয়ম তুলে ধরে বলেন, ‘একটা চার লেনের রাস্তা যেদিন উদ্বোধন করা হয়, তার পর দিনই বিটুমিন খসে খসে আলাদা হয়ে যায়। আবার সেটাকে বৃষ্টির মধ্যে মেরামত করে। একদিক থেকে মেরামত করা হয়, অন্যদিক থেকে আবার নষ্ট হয়ে যায়। এসব অনিয়ম রোধ করা না হলে অবকাঠামো উন্নয়ন সম্ভব নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এতে আমদানি-রপ্তানি উভয় ক্ষেত্রেই খরচ ও সময় কমাতে সাহায্য করবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সাশ্রয়ী ও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আমাদের অতি প্রয়োজনীয় কৃষিজমি বাঁচাবে। অন্য সব উন্নয়নশীল দেশের মতো অবকাঠামোতে মোট বিনিয়োগের কমপক্ষে ৬ শতাংশ বা ৭ শতাংশ হওয়া উচিত। ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াবে।’

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এম মান্নান বিভিন্ন ঋণদানকারী সংস্থাগুলোর সমালোচনা করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘আমরা বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে থেকে ঋণ নিই। তারপর তা যথা সময়ে সুদসহ ফেরত দেয়। তাহলে এই ‘ঋণ’কে ‘সহায়তা’ বলা হবে কেন?’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘যেহেতু আমরা কম সুদে ঋণ নিয়ে থাকি, এজন্য অনেক বিষয় মেনে নিতে হয়। ঋণ নিই, সুদে-আসলে ফেরতও দিই। আমরা কখনো ব্যর্থ হইনি। উন্নয়ন সহযোগীদের বলব আপনারা শর্ত কমান। আমরা রাষ্ট্র, আপনারা সংস্থা।’

উন্নয়নপ্রকল্পে পরামর্শক না নিলে বিদেশি ঋণ মেলে না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পরামর্শক খাতে বড় অঙ্কের অর্থ চলে যায়। লেনডার্সের শর্তের খাতিরে কনসালটেন্ট নিতে হয়। আগে দেখেছি- নোট কিনলেই মূল বই পাওয়া যেত। বাংলাবাজারে নোট না কিনলে বিক্রেতা বই বেচত না। এখানেও ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, যদি কনসালটেন্ট (পরামর্শক) না নিই, তাহলে উন্নয়ন সহযোগীরা লোন (ঋণ) দেবেন না।’

উন্নয়নপ্রকল্প প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আরও একটি বিষয় আমি বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী বার বার বলছেন, প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় খরচ করবেন না। সবার জন্য এটা সাধারণ বার্তা। আমাদের কাছে বার্তা এসেছে, আমরাও খরচ কমানোর চেষ্টা করছি। প্রকল্পের অনেক জায়গায় অপ্রয়োজনীয় খরচ হয়ে যায়। অনেক সময় পরিকল্পনা কমিশনও ধরতে পারে না। আমাদেরও লিমিটেড ক্ষমতা। একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা দুই-তিন বছরের কাঠখড় পুড়িয়ে এমন গতিতে আমাদের কাছে পৌঁছে, ওর (প্রকল্প) সামনে দাঁড়ালে আমারই মৃত্যু হয়ে যাবে। এর পেছনে অনেক উন্নয়ন সহযোগী আছে।’

পরিবেশের ক্ষতি করে উন্নয়ন নয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘জাতি হিসেবে আমরা সচেতন ছিলাম না। এখন সচেতনভাবে কাজ করছি। ধানের জমি নষ্ট করব না। সামান্য রেডিও ট্রান্সমিশন অফিস হবে অথচ বিশাল জায়গা নিয়ে বসে আছে- এমনটা হতে দেবো না। জমির সর্বোত্তম ব্যবহার করব। দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখব না। জলাভূমি ও প্লাবনভূমির ক্ষতি করব না। প্লাবনভূমিতে ফ্লাইওভার করব। হাওর অঞ্চলে ফ্লাইওভার করে দেবো। প্লাবনভূমি নষ্ট করব না। দিরাই-শাল্লা এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। প্লাবন, চরে পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে- এমন অবকাঠামো করব না।’

back to top