alt

অর্থ-বাণিজ্য

পাঁচ চ্যালেঞ্জের মুখে এবারের জাতীয় বাজেট

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : রোববার, ২৮ মে ২০২৩

এ বছর এমন সময়ে বাজেট ঘোষণা হচ্ছে যখন চরম মূল্যস্ফীতি এবং আর্থিক সংকট চলছে। সেই সঙ্গে বছর শেষে শুরু হতে যাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন, অন্যসব বছরের তুলনায় এ বছরের বাজেট কিছুটা চ্যালেঞ্জের হয়ে উঠবে। সরকারকে একদিকে জাতীয় নির্বাচনের কথা বিবেচনায় রেখে জনতুষ্টির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্তগুলো বাস্তবায়নেরও চাপ থাকবে।

এই অবস্থায় বাজেট পেসে মোট পাঁচটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে সরকারের। এগুলো হলো- নির্বাচন সামনে রেখে জনগণের মন রক্ষা, মূল্যস্ফীতি কমানো, রাজস্ব আয় বাড়ানো, বাণিজ্য ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঠিক রাখা ও আর্থিক খাত সংস্কার করার কৌশল নির্ধারণ করা।

সামনে নির্বাচন, জনগণের মন রক্ষার চেষ্টা : অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নির্বাচন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি কারণে এই বছরের বাজেটের সামনে বড় কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অতীতে দেখা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে যেসব বাজেট দেয়া হয়, সেখানে অর্থনীতির উন্নতির তুলনায় জনতুষ্টিকে প্রাধান্য দিয়ে বাজেট ঘোষণা করা হয়।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলছেন, ‘আগের নির্বাচনী বছরগুলোকে যদি দেখেন, সেই সময় অর্থনীতি তেমন একটা সংকটের মধ্যে ছিল না। ফলে সে সময় জনতুষ্টির বাজেট করেও অর্থনীতির ক্ষেত্রে নতুন বড় ধরনের কোন চাপ তৈরি হয়নি। কিন্তু এবার যদি নির্বাচনকে সামনে রেখে শুধু জনতুষ্টির কথা বিবেচনা করেই বাজেট করা হয়, সেটা অর্থনীতির ওপর নতুন চাপ তৈরি করবে।’

তিনি মনে করেন, বাজেটে এই ক্ষেত্রে একটা ভারসাম্য রাখতে হবে। সেজন্য অতিরিক্ত খরচ এড়িয়ে চলা, এখনি প্রয়োজন হবে না এমন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ না করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

তবে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কেবল জনতুষ্টিমূলক বাজেট দেয়ার সুযোগ খুব সীমিত বলে মনে করেন বেসরকারি আরেকটা গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলছেন, ‘নির্বাচনের আগে আগে সব সরকারই জনতুষ্টিমূলক বাজেট দিতে চায়। কিন্তু আর্থিক অবস্থা, রাজস্ব ঘাটতি, বৈদেশিক ঘাটতির কারণে সরকারের সামনে সেজন্য সুযোগ খুব সীমিত। সে রকম বড় কোন চেষ্টা করতে গেলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরে। মনে রাখা দরকার, এই বাজেট কিন্তু দুটি সরকার বাস্তবায়ন করবে। এই বাজেটে সে নমনীয়তাও রক্ষা করতে হবে। কারণ সরকার যদি বড় কোন প্রতিশ্রুতিও দেয়, সেটা কতটা কার্যকর করতে পারবে, সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এ বছরের বাজেটে আইএমএফের শর্তগুলো অনেকটা ‘ছায়া’ আকারে থাকবে। আইএমএফের ঋণ অব্যাহত রাখতে যতটা সম্ভব তাদের শর্তগুলোও অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা থাকবে। সেখানে কী সমন্বয় আনা হবে, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা : দেশে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য এ বছরের বাজেটে কী ধরনের প্রস্তাবনা করা হয়, সেটির দিকে অর্থনীতিবিদ এবং সাধারণ মানুষ সবাই তাকিয়ে রয়েছেন। সেটা রক্ষা করাই এই বাজেটের জন্য অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন অর্থনীতি বিশ্লেষকেরা।

সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলছেন, ‘অন্য যেকোন বছরের তুলনায় এবারের বাজেট অনেক জটিল পরিস্থিতিতে তৈরি করতে হয়েছে। কারণ আগে দেখা যেতো, দেশে আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকতো, কিন্তু বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে তুলনামূলক স্বস্তি থাকতো। কিন্তু এবার সেটা নেই। প্রবৃদ্ধির যে ধারা ছিল, সেক্ষেত্রে বড় ধরনের ব্যত্যয় এসেছে। এটা আরও কমে যাচ্ছে, কারণ টাকাও নেই, ডলারও নেই। দুইটি ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঘাটতি একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হচ্ছে।’

মহামারীর কারণে ২০২০ এবং ২০২১ সালে পরপর দুই বছর অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছিল, সেটা ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বের অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়েছে, বাংলাদেশের মতো অনেক দেশে ডলার সংকট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এ বছরেও সে অবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। এজন্য দেশের অর্থনৈতিক নীতি ও কৌশলগত ত্রুটিকেও দায়ী করেন অর্থনীতিবিদেরা। বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার ছিল নয় দশমিক ৩৩ শতাংশ।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক রায়হান বলছেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কী করা হচ্ছে, বাজেটে সেটার পরিষ্কার ধারণা তৈরি করতে হবে। বিশ্বের বাজারে অনেক কিছুর দাম কমে আসলেও তার প্রভাব বাংলাদেশের বাজারে দেখা যাচ্ছে না। এসব সংকট কীভাবে সামলানো হবে, তার সুস্পষ্ট পরিকল্পনা বাজেটে থাকা দরকার। না হলে বড় সংখ্যক একটা জনগোষ্ঠী মূল্যস্ফীতির চাপে বড় ধরনের বিপদে পড়ে যাবে।’

গত বাজেটে প্রথমে ভর্তুকি ৮৫ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হলেও পরবর্তীতে বাড়িয়ে ১ লাখ ২ হাজার কোটি করা হয়েছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের এক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেছেন, ‘আগামী বাজেটের মূল্যস্ফীতিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বাজেট হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার। সেই সঙ্গে করোনার আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়াই বাজেটের মূল লক্ষ্য।’

রাজস্ব আয় বাড়ানো : অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ‘বাংলাদেশে বরাবরই বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, কখনোই সেটা পুরোপুরি সফল করা যায় না। এ জন্য দেশের রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থাপনাকে যেমন দায়ী করা হচ্ছে। তেমনি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে নানারকম ছাড় দেয়াকেও দায়ী করা হয়।’

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফও রাজস্ব আদায় ব্যবস্থাপনা সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে। প্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে, নতুন করদাতাদের শনাক্ত করে কর আদায়, মূল্য সংযোজন কর আদায়ে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।

সেলিম রায়হান বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ের জায়গায় আমাদের সাফল্য খুবই কম। বরং আমার মনে হয় আমরা পিছন দিকে হাঁটছি। এটা কম হওয়ার কারণে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক কর্মসূচির মতো খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু সামাজিক খাতে আমরা সেভাবে ব্যয় করতে পারছি না।’

এই অর্থ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হলেও সেখানে এখনো ৩০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এ বছর আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে কর্মকর্তাদের বক্তব্যে। আইএমএফের শর্তে জিডিপির অতিরিক্ত দশমিক পাঁচ শতাংশ রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী অর্থ বছরের বাজেটে বেশ কিছু শুল্ক-কর ছাড় সুবিধা বাতিল, কর অবকাশ সুবিধা কমানোর প্রস্তাবনা আসতে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বেশ কিছু খাতের ওপর থেকে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা তুলে দেয়া হতে পারে।

বাণিজ্য ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঠিক রাখা : অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, যেহেতু বৈদেশিক লেনদেনের ওপর ঘাটতি বড় আকারে এসেছে, সেজন্য টাকার বিনিময় হারের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। টাকার আরও পতন হলে তো আমদানি করা পণ্যের দাম আরও বাড়বে।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আশঙ্কা করছেন, ‘বৈশ্বিক মন্দা অবস্থার কথা বিবেচনা রেখে, উন্নত দেশগুলোয় পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক বিনিয়োগে। এ সবগুলো খাতই কিছুটা সংকটের মধ্যে রয়েছে। তার প্রভাব পড়তে পারে রাজস্ব আদায়ে। বাজেটে এসব বিষয় ঠিকমতো বিবেচনায় রাখা না হলে পরবর্তীতে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।’

গত বছরের এই সময়ে যেখানে দেশে রিজার্ভ ছিল সাড়ে চার হাজার কোটি ডলারের বেশি, এই বছরে সেটি তিন হাজার ১০০ ডলারে এসে ঠেকেছে। ফলে বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। রিজার্ভ কমে যাওয়া ঠেকাতে কোন পদক্ষেপ চলতি বাজেটে এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে নজর দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

আর্থিক খাত সংস্কারের কৌশল ঠিক করা : অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলছেন, ‘বর্তমান আর্থিক সংকটের জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করা হলেও, আসলে আমাদের দেশেই দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক যেসব নীতি ও কৌশল নেয়া হচ্ছিল, সেগুলোর অনেক প্রভাব রয়েছে। আর্থিক খাতে ঋণ খেলাপি, সুশাসনের অভাব, ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি রয়েছে।

বিভিন্ন সময় সংস্কারের যেসব তাগিদ দেয়া হয়েছে, অনেক দিন ধরেই সেসব অবহেলিত রয়েছে। আইএমএফ কিছু সংস্কারের কথা বললেও তার কিছু বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, কিছু এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলছেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায় করা, ভর্তুকি কমানোসহ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের যেসব শর্ত রয়েছে, এই বাজেটে নেপথ্য ছায়া আকারে সেটাও বেশ গুরুত্ব পাবে। কিন্তু সরকার ঘনিষ্ঠ নানা মহলের কারণে সরকার এসব ক্ষেত্রে কতটা কঠোর নীতিতে যেতে পারবে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে।’

ছবি

বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন পাঁচ ও ভারত নয়ে

ছবি

বিআইসিএমের উদ্যোগে হবে পুঁজিবাজার সম্মেলন

ছবি

যমুনা ব্যাংক ও ডেল্টা লাইফের মধ্যে চুক্তি

ছবি

সোনার দাম আরও কমলো

ছবি

ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি পেলেন মোঃ নুরুল ইসলাম মজুমদার

ছবি

রিজার্ভ কমায় উদ্বেগ ও আতঙ্ক বাড়ছে

ছবি

তড়িঘড়ি ব্যাংক একীভূতকরণ খেলাপিদের দায়মুক্তির নতুন মুখোশ: টিআইবি

ছবি

হঠাৎ ঝলকের পর আবার পতন, বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ

ছবি

শেয়ারবাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ

ছবি

পদত্যাগ করেছেন পদ্মা ব্যাংকের এমডি তারেক রিয়াজ

ঈদের পর শেয়ারবাজার কিছুটা ভালো হতে শুরু করেছে

ছবি

দিনাজপুরে বাঁশ ফুলের চাল তৈরি

ছবি

অভিনেতা ওয়ালিউল হক রুমি মারা গেছেন

ছবি

বিআইপিডি’র অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করছে : এফএফআইএল

ছবি

চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেলেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সরকার বদ্ধপরিকর

ছবি

রাজধানীতে ঈদের পরও চড়া সবজির বাজার

ছবি

সয়াবিন তেলের লিটার প্রতি দাম বাড়ল ৪ টাকা

ছবি

সূচকের পতনে পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন

ছবি

ব্যাংক এশিয়া কিনবে পাকিস্তানি ব্যাংক আলফালাহর বাংলাদেশ অংশ

ছবি

এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.৭%: আইএমএফ

ছবি

একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যাংক চাইলে সরে যেতে পারবে, তবে শর্তসাপেক্ষে : কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি

পণ্যের দাম ঠিক রাখতে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে : প্রতিমন্ত্রী

ছবি

একীভূত ব্যাংক : পাঁচটির বাইরে আপাতত আর না

ছবি

ঈদে মানুষের মাঝে স্বস্তি দেখেছি : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বিশ্ব ব্যাংকের চেয়ে বেশি দেখছে এডিবি

ছবি

মার্চে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.৮১ শতাংশ

ছবি

ঈদের আগে পাঁচ দিনে দেশে এলো ৪৬ কোটি ডলার

ছবি

শিল্পাঞ্চলের বাইরের কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ আর নয়, পাবেনা ঋণও

এবার ঈদে পর্যটন খাত চাঙ্গা হওয়ার আশা

ছবি

জাতীয় লজিস্টিক নীতির খসড়ার অনুমোদন

সোনালীতে একীভূত হচ্ছে বিডিবিএল

ছবি

সোনার দাম আবার বাড়লো, ভরি ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা

ছবি

সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় বেসিক ব্যাংক

ছবি

বিজিএমইএর দায়িত্ব নিলেন এস এম মান্নান কচি

ছবি

বাজার মূলধন কিছুটা বাড়লো, তবু লাখ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি

ছবি

নতুন বিদেশী ঋণ নিয়ে পুরনো ঋণ শোধ করছে সরকার : সিপিডি

tab

অর্থ-বাণিজ্য

পাঁচ চ্যালেঞ্জের মুখে এবারের জাতীয় বাজেট

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

রোববার, ২৮ মে ২০২৩

এ বছর এমন সময়ে বাজেট ঘোষণা হচ্ছে যখন চরম মূল্যস্ফীতি এবং আর্থিক সংকট চলছে। সেই সঙ্গে বছর শেষে শুরু হতে যাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন, অন্যসব বছরের তুলনায় এ বছরের বাজেট কিছুটা চ্যালেঞ্জের হয়ে উঠবে। সরকারকে একদিকে জাতীয় নির্বাচনের কথা বিবেচনায় রেখে জনতুষ্টির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্তগুলো বাস্তবায়নেরও চাপ থাকবে।

এই অবস্থায় বাজেট পেসে মোট পাঁচটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে সরকারের। এগুলো হলো- নির্বাচন সামনে রেখে জনগণের মন রক্ষা, মূল্যস্ফীতি কমানো, রাজস্ব আয় বাড়ানো, বাণিজ্য ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঠিক রাখা ও আর্থিক খাত সংস্কার করার কৌশল নির্ধারণ করা।

সামনে নির্বাচন, জনগণের মন রক্ষার চেষ্টা : অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নির্বাচন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি কারণে এই বছরের বাজেটের সামনে বড় কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অতীতে দেখা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে যেসব বাজেট দেয়া হয়, সেখানে অর্থনীতির উন্নতির তুলনায় জনতুষ্টিকে প্রাধান্য দিয়ে বাজেট ঘোষণা করা হয়।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলছেন, ‘আগের নির্বাচনী বছরগুলোকে যদি দেখেন, সেই সময় অর্থনীতি তেমন একটা সংকটের মধ্যে ছিল না। ফলে সে সময় জনতুষ্টির বাজেট করেও অর্থনীতির ক্ষেত্রে নতুন বড় ধরনের কোন চাপ তৈরি হয়নি। কিন্তু এবার যদি নির্বাচনকে সামনে রেখে শুধু জনতুষ্টির কথা বিবেচনা করেই বাজেট করা হয়, সেটা অর্থনীতির ওপর নতুন চাপ তৈরি করবে।’

তিনি মনে করেন, বাজেটে এই ক্ষেত্রে একটা ভারসাম্য রাখতে হবে। সেজন্য অতিরিক্ত খরচ এড়িয়ে চলা, এখনি প্রয়োজন হবে না এমন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ না করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

তবে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কেবল জনতুষ্টিমূলক বাজেট দেয়ার সুযোগ খুব সীমিত বলে মনে করেন বেসরকারি আরেকটা গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলছেন, ‘নির্বাচনের আগে আগে সব সরকারই জনতুষ্টিমূলক বাজেট দিতে চায়। কিন্তু আর্থিক অবস্থা, রাজস্ব ঘাটতি, বৈদেশিক ঘাটতির কারণে সরকারের সামনে সেজন্য সুযোগ খুব সীমিত। সে রকম বড় কোন চেষ্টা করতে গেলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরে। মনে রাখা দরকার, এই বাজেট কিন্তু দুটি সরকার বাস্তবায়ন করবে। এই বাজেটে সে নমনীয়তাও রক্ষা করতে হবে। কারণ সরকার যদি বড় কোন প্রতিশ্রুতিও দেয়, সেটা কতটা কার্যকর করতে পারবে, সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এ বছরের বাজেটে আইএমএফের শর্তগুলো অনেকটা ‘ছায়া’ আকারে থাকবে। আইএমএফের ঋণ অব্যাহত রাখতে যতটা সম্ভব তাদের শর্তগুলোও অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা থাকবে। সেখানে কী সমন্বয় আনা হবে, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা : দেশে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য এ বছরের বাজেটে কী ধরনের প্রস্তাবনা করা হয়, সেটির দিকে অর্থনীতিবিদ এবং সাধারণ মানুষ সবাই তাকিয়ে রয়েছেন। সেটা রক্ষা করাই এই বাজেটের জন্য অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন অর্থনীতি বিশ্লেষকেরা।

সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলছেন, ‘অন্য যেকোন বছরের তুলনায় এবারের বাজেট অনেক জটিল পরিস্থিতিতে তৈরি করতে হয়েছে। কারণ আগে দেখা যেতো, দেশে আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকতো, কিন্তু বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে তুলনামূলক স্বস্তি থাকতো। কিন্তু এবার সেটা নেই। প্রবৃদ্ধির যে ধারা ছিল, সেক্ষেত্রে বড় ধরনের ব্যত্যয় এসেছে। এটা আরও কমে যাচ্ছে, কারণ টাকাও নেই, ডলারও নেই। দুইটি ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঘাটতি একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হচ্ছে।’

মহামারীর কারণে ২০২০ এবং ২০২১ সালে পরপর দুই বছর অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছিল, সেটা ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বের অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়েছে, বাংলাদেশের মতো অনেক দেশে ডলার সংকট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এ বছরেও সে অবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। এজন্য দেশের অর্থনৈতিক নীতি ও কৌশলগত ত্রুটিকেও দায়ী করেন অর্থনীতিবিদেরা। বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার ছিল নয় দশমিক ৩৩ শতাংশ।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক রায়হান বলছেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কী করা হচ্ছে, বাজেটে সেটার পরিষ্কার ধারণা তৈরি করতে হবে। বিশ্বের বাজারে অনেক কিছুর দাম কমে আসলেও তার প্রভাব বাংলাদেশের বাজারে দেখা যাচ্ছে না। এসব সংকট কীভাবে সামলানো হবে, তার সুস্পষ্ট পরিকল্পনা বাজেটে থাকা দরকার। না হলে বড় সংখ্যক একটা জনগোষ্ঠী মূল্যস্ফীতির চাপে বড় ধরনের বিপদে পড়ে যাবে।’

গত বাজেটে প্রথমে ভর্তুকি ৮৫ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হলেও পরবর্তীতে বাড়িয়ে ১ লাখ ২ হাজার কোটি করা হয়েছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের এক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেছেন, ‘আগামী বাজেটের মূল্যস্ফীতিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বাজেট হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার। সেই সঙ্গে করোনার আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়াই বাজেটের মূল লক্ষ্য।’

রাজস্ব আয় বাড়ানো : অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ‘বাংলাদেশে বরাবরই বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, কখনোই সেটা পুরোপুরি সফল করা যায় না। এ জন্য দেশের রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থাপনাকে যেমন দায়ী করা হচ্ছে। তেমনি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে নানারকম ছাড় দেয়াকেও দায়ী করা হয়।’

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফও রাজস্ব আদায় ব্যবস্থাপনা সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে। প্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে, নতুন করদাতাদের শনাক্ত করে কর আদায়, মূল্য সংযোজন কর আদায়ে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।

সেলিম রায়হান বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ের জায়গায় আমাদের সাফল্য খুবই কম। বরং আমার মনে হয় আমরা পিছন দিকে হাঁটছি। এটা কম হওয়ার কারণে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক কর্মসূচির মতো খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু সামাজিক খাতে আমরা সেভাবে ব্যয় করতে পারছি না।’

এই অর্থ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হলেও সেখানে এখনো ৩০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এ বছর আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে কর্মকর্তাদের বক্তব্যে। আইএমএফের শর্তে জিডিপির অতিরিক্ত দশমিক পাঁচ শতাংশ রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী অর্থ বছরের বাজেটে বেশ কিছু শুল্ক-কর ছাড় সুবিধা বাতিল, কর অবকাশ সুবিধা কমানোর প্রস্তাবনা আসতে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বেশ কিছু খাতের ওপর থেকে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা তুলে দেয়া হতে পারে।

বাণিজ্য ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঠিক রাখা : অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, যেহেতু বৈদেশিক লেনদেনের ওপর ঘাটতি বড় আকারে এসেছে, সেজন্য টাকার বিনিময় হারের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। টাকার আরও পতন হলে তো আমদানি করা পণ্যের দাম আরও বাড়বে।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আশঙ্কা করছেন, ‘বৈশ্বিক মন্দা অবস্থার কথা বিবেচনা রেখে, উন্নত দেশগুলোয় পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক বিনিয়োগে। এ সবগুলো খাতই কিছুটা সংকটের মধ্যে রয়েছে। তার প্রভাব পড়তে পারে রাজস্ব আদায়ে। বাজেটে এসব বিষয় ঠিকমতো বিবেচনায় রাখা না হলে পরবর্তীতে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।’

গত বছরের এই সময়ে যেখানে দেশে রিজার্ভ ছিল সাড়ে চার হাজার কোটি ডলারের বেশি, এই বছরে সেটি তিন হাজার ১০০ ডলারে এসে ঠেকেছে। ফলে বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। রিজার্ভ কমে যাওয়া ঠেকাতে কোন পদক্ষেপ চলতি বাজেটে এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে নজর দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

আর্থিক খাত সংস্কারের কৌশল ঠিক করা : অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলছেন, ‘বর্তমান আর্থিক সংকটের জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করা হলেও, আসলে আমাদের দেশেই দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক যেসব নীতি ও কৌশল নেয়া হচ্ছিল, সেগুলোর অনেক প্রভাব রয়েছে। আর্থিক খাতে ঋণ খেলাপি, সুশাসনের অভাব, ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি রয়েছে।

বিভিন্ন সময় সংস্কারের যেসব তাগিদ দেয়া হয়েছে, অনেক দিন ধরেই সেসব অবহেলিত রয়েছে। আইএমএফ কিছু সংস্কারের কথা বললেও তার কিছু বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, কিছু এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলছেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায় করা, ভর্তুকি কমানোসহ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের যেসব শর্ত রয়েছে, এই বাজেটে নেপথ্য ছায়া আকারে সেটাও বেশ গুরুত্ব পাবে। কিন্তু সরকার ঘনিষ্ঠ নানা মহলের কারণে সরকার এসব ক্ষেত্রে কতটা কঠোর নীতিতে যেতে পারবে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে।’

back to top