alt

অর্থ-বাণিজ্য

কেমন বাজেট চাই

রাসেল টি আহমেদ : মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩

বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল যুগ পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

‘রূপকল্প ২০৪১’ অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে উৎসাহ প্রদান, ২০২৫ সাল নাগাদ সরকারের ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, স্থানীয় বাজার সম্প্রসারণ, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিশ্বমানের সক্ষমতা তৈরি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিশ্চিতকরণ এখন সময়ের দাবি। তাই এসব লক্ষ্য অর্জনে সরকারের ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় আনতে হবে। বেসিস মনে করে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কাক্সিক্ষত উন্নয়নে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রথমত : ২০৩০ সাল নাগাদ করপোরেট ট্যাক্স এক্সেম্পশন সুবিধা বলবৎ রাখতে হবে।

দ্বিতীয়ত : সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা রপ্তানিকে উৎসাহ দিতে এ খাতের রপ্তানি আয়ের ওপরে আর্থিক প্রণোদনা ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করতে হবে।

তৃতীয়ত : দেশি সফটওয়্যার ব্যবহারে উৎসাহ প্রদানের জন্য দেশীয় সফটওয়্যার ক্রয়ে বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা চালু করতে হবে।

চতুর্থত : তথ্যপ্রযুক্তিশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল তৈরির জন্য সুচিন্তিত ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

পঞ্চমত : স্থানীয় সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সব পর্যায়, অর্থাৎ আমদানি, উৎপাদন, সেবা ও ব্যবসায়ী পর্যায় থেকে সম্পূর্ণভাবে উঠিয়ে দেয়া প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীরা এখন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। টেকসই ব্যবসার জন্য বাজার সৃষ্টির বিষয়টি অনেকাংশেই চ্যালেঞ্জিং। করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারী, চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং তার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাবের কারণেও ব্যবসায়ীরা কয়েক বছর পিছিয়ে পড়েছেন। বৈদেশিক বাজার সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও তেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়নি। বর্তমানে কর অব্যাহতির মেয়াদ মাত্র এক বছর থাকায় বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি কোন বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। সামগ্রিকভাবে সরকারঘোষিত অগ্রাধিকার খাত ও শিল্প হিসেবে বিবেচিত এই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায় তরুণ উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীদের এবং বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে এ অব্যাহতির সময়সীমা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। অন্যদিকে ২০২৬ সালের পর যখন আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হব, তখন আমরা কিছু সুযোগ পাব। আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং দেশের আরও উন্নয়ন করতে আমাদের সেই সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে হবে, রপ্তানি ক্ষেত্রে পণ্যসেবা এবং বাজার বহুমুখীকরণে যেতে হবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি স্থানীয়ভাবে মূল্য সংযোজনকারী খাত হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির রপ্তানি বাড়িয়ে দেশেই রপ্তানি আয়ের পুরোটাই রাখার এ সুযোগ কাজে লাগানোর তাই অন্য কোন বিকল্প নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ ১০ শতাংশ রপ্তানি আর্থিক প্রণোদনা বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা রপ্তানির পরিমাণকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ১৪০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৯৫ শতাংশ। বেসিসের গবেষণা অনুযায়ী এ খাতের রপ্তানি আয় ২০২৫ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০৩১ নাগাদ ২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার সম্ভাবনা রয়েছে। সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা খাতের এ অগ্রযাত্রায় রপ্তানি আয়ের ওপর বহাল ১০ শতাংশ নগদ প্রণোদনাকে বৃদ্ধি করে ২০ শতাংশ করা প্রয়োজন এবং একই সঙ্গে নতুন নতুন সফটওয়্যার বা তথ্যপ্রযুক্তির উদ্ভাবন ও নতুন বাজার সম্প্রসারণে মনোযোগী হতে হবে।

বর্তমানে দেশীয় সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তির প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক মানের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা তৈরি এবং বাজারজাত করছে। বেসিসের তথ্যানুযায়ী, আইসিটি খাতের স্থানীয় বাজারের আকার প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার। বৈদেশিক মুদ্রার এ সংকটকালে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এবং তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবার প্রতি স্থানীয় করপোরেট গ্রাহকদের আগ্রহ বাড়াতে বাংলাদেশি উৎস থেকে কেনা সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবার ওপর ৫ শতাংশ নগদ আর্থিক প্রণোদনা ক্রয়কারী স্থানীয় করপোরেট গ্রাহকদের প্রদান করা যেতে পারে।

এছাড়া সব মন্ত্রণালয় ও তাদের অধিভুক্ত সংস্থাগুলোর অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের জন্য যে বাজেট রয়েছে, তার অন্তত ১০ শতাংশ দেশি সফটওয়্যার ও আইটিইএস কেনার জন্য বরাদ্দ করা যেতে পারে। আমরা এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মধ্যে বাস করছি। এই শিল্পবিপ্লবের কথা মাথায় রেখেই আমাদের তথ্যপ্রযুক্তিশিল্পের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বিনিয়োগ করতে হবে। দেশের মানুষকে কারিগরি ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে দক্ষ করে তুলতে হবে, যাতে তারা পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সমানতালে চলতে পারে। দক্ষ জনশক্তি আমাদের দেশের উন্নয়ন খাতে অবদান রাখতে পারবে। এ ক্ষেত্রে বাজেটে সরকারি থোক বরাদ্দের মাধ্যমে বেসিসকে দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির দায়িত্ব দেয়া হলে বেসিস তার অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনসম্পদ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবে।

লেখক : সভাপতি, বেসিস

ছবি

প্রসাধনী পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবি

ছবি

স্বর্ণের দাম আবার বাড়লো

ছবি

৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ ১০ হাজার টন সার কিনবে সরকার

এফবিসিসিআই নির্বাচন: সময় বাড়লো ৪৫ দিন

ছবি

পাট খাতের উন্নয়নে ‘সাসটেইনেবল মার্কেট এক্সেস বুটক্যাম্প’ কর্মসূচি শুরু

এক বছরে ভারতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন নেমেছে এক-তৃতীয়াংশে

৫ দিন বন্ধ থাকবে রূপালী ও এনসিসি ব্যাংকের সব কার্যক্রম

ছবি

ডলারের বিপরীতে টাকায় ঋণ নেয়ার সুযোগ

গত অর্থবছরে রফতানি আয় ৪৮ বিলিয়ন ডলার

নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার

ছবি

ব্যাগেজ রুলসে মোবাইল ও স্বর্ণ আনায় বড় ছাড়

ছবি

এনবিআরের আন্দোলনে অংশ নেওয়া আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের কথা জানালো দুদক

ছবি

প্রবাসী আয়ে রেকর্ড, রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি

ছবি

দেশের ৩২ বীমা কোম্পানি উচ্চ ঝুঁকিতে: আইডিআরএ চেয়ারম্যান

ছবি

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ৭ শতাংশেরও কম

ছবি

ডিএসইর নতুন সিওও মোহাম্মদ আসাদুর রহমান

ছবি

অর্থবছরের প্রথম দিন ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার

ছবি

ইলিশের দাম নির্ধারণ করে দেবে সরকার

ছবি

এনবিআরে আন্দোলন: এবার চার কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠালো সরকার

ছবি

৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা মায়ানমারকে হারিয়ে ইতিহাসের পথে বাংলাদেশের মেয়েরা

বিইআরসি ঘোষণা করল বেসরকারি এলপিজির নতুন দাম, ১২ কেজিতে ৩৯ টাকা কমতি

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানি আসছে, অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে নৌবাহিনী

ছবি

নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে এফবিসিসিআই নির্বাচন পিছিয়ে গেল

ছবি

রেকর্ড রেমিটেন্সে শেষ হলো অর্থবছর, প্রথমবারের মতো আয় ছাড়াল ৩০ বিলিয়ন ডলার

ছবি

‘শাটডাউন’ কর্মসূচিতে অংশ: চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনার বরখাস্ত

ছবি

প্রসাধনীতে শুল্ক বাড়ায় রাজস্ব নয়, বাড়বে অর্থপাচার-চোরাচালান: বিসিটিআইএ

ছবি

৪০ শতাংশ কৃষক যথাযথ মজুরি পান না: বিবিএসের জরিপ

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ১১ ব্যাংকের সম্পদের মান যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত

চট্টগ্রামে সমন্বিত তৈরি পোশাক শিল্পাঞ্চল গড়ার প্রস্তাব বিজিএমইএর

অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছেন ১৭ লাখের বেশি করদাতা: এনবিআর

ছবি

বাক্কো ও আকিজ টেলিকমের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত

মানবতাবিরোধী অপরাধ: শেখ হাসিনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি সোমবার

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ছয় মাসের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার অনুমোদন

ছবি

সব সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমলো

ছবি

‘শাটডাউন’ এর মধ্যে কাস্টমস চাকরিকে অত্যাবশ্যক ঘোষণা করল সরকার

ছবি

স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করলে তদন্তে ভয় নেই’— এনবিআর ইস্যুতে অর্থ উপদেষ্টার মন্তব্য

tab

অর্থ-বাণিজ্য

কেমন বাজেট চাই

রাসেল টি আহমেদ

মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩

বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল যুগ পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

‘রূপকল্প ২০৪১’ অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে উৎসাহ প্রদান, ২০২৫ সাল নাগাদ সরকারের ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, স্থানীয় বাজার সম্প্রসারণ, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিশ্বমানের সক্ষমতা তৈরি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিশ্চিতকরণ এখন সময়ের দাবি। তাই এসব লক্ষ্য অর্জনে সরকারের ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় আনতে হবে। বেসিস মনে করে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কাক্সিক্ষত উন্নয়নে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রথমত : ২০৩০ সাল নাগাদ করপোরেট ট্যাক্স এক্সেম্পশন সুবিধা বলবৎ রাখতে হবে।

দ্বিতীয়ত : সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা রপ্তানিকে উৎসাহ দিতে এ খাতের রপ্তানি আয়ের ওপরে আর্থিক প্রণোদনা ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করতে হবে।

তৃতীয়ত : দেশি সফটওয়্যার ব্যবহারে উৎসাহ প্রদানের জন্য দেশীয় সফটওয়্যার ক্রয়ে বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা চালু করতে হবে।

চতুর্থত : তথ্যপ্রযুক্তিশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল তৈরির জন্য সুচিন্তিত ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

পঞ্চমত : স্থানীয় সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সব পর্যায়, অর্থাৎ আমদানি, উৎপাদন, সেবা ও ব্যবসায়ী পর্যায় থেকে সম্পূর্ণভাবে উঠিয়ে দেয়া প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীরা এখন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। টেকসই ব্যবসার জন্য বাজার সৃষ্টির বিষয়টি অনেকাংশেই চ্যালেঞ্জিং। করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারী, চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং তার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাবের কারণেও ব্যবসায়ীরা কয়েক বছর পিছিয়ে পড়েছেন। বৈদেশিক বাজার সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও তেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়নি। বর্তমানে কর অব্যাহতির মেয়াদ মাত্র এক বছর থাকায় বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি কোন বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। সামগ্রিকভাবে সরকারঘোষিত অগ্রাধিকার খাত ও শিল্প হিসেবে বিবেচিত এই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায় তরুণ উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীদের এবং বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে এ অব্যাহতির সময়সীমা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। অন্যদিকে ২০২৬ সালের পর যখন আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হব, তখন আমরা কিছু সুযোগ পাব। আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং দেশের আরও উন্নয়ন করতে আমাদের সেই সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে হবে, রপ্তানি ক্ষেত্রে পণ্যসেবা এবং বাজার বহুমুখীকরণে যেতে হবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি স্থানীয়ভাবে মূল্য সংযোজনকারী খাত হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির রপ্তানি বাড়িয়ে দেশেই রপ্তানি আয়ের পুরোটাই রাখার এ সুযোগ কাজে লাগানোর তাই অন্য কোন বিকল্প নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ ১০ শতাংশ রপ্তানি আর্থিক প্রণোদনা বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা রপ্তানির পরিমাণকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ১৪০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৯৫ শতাংশ। বেসিসের গবেষণা অনুযায়ী এ খাতের রপ্তানি আয় ২০২৫ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০৩১ নাগাদ ২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার সম্ভাবনা রয়েছে। সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা খাতের এ অগ্রযাত্রায় রপ্তানি আয়ের ওপর বহাল ১০ শতাংশ নগদ প্রণোদনাকে বৃদ্ধি করে ২০ শতাংশ করা প্রয়োজন এবং একই সঙ্গে নতুন নতুন সফটওয়্যার বা তথ্যপ্রযুক্তির উদ্ভাবন ও নতুন বাজার সম্প্রসারণে মনোযোগী হতে হবে।

বর্তমানে দেশীয় সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তির প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক মানের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা তৈরি এবং বাজারজাত করছে। বেসিসের তথ্যানুযায়ী, আইসিটি খাতের স্থানীয় বাজারের আকার প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার। বৈদেশিক মুদ্রার এ সংকটকালে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এবং তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবার প্রতি স্থানীয় করপোরেট গ্রাহকদের আগ্রহ বাড়াতে বাংলাদেশি উৎস থেকে কেনা সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবার ওপর ৫ শতাংশ নগদ আর্থিক প্রণোদনা ক্রয়কারী স্থানীয় করপোরেট গ্রাহকদের প্রদান করা যেতে পারে।

এছাড়া সব মন্ত্রণালয় ও তাদের অধিভুক্ত সংস্থাগুলোর অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের জন্য যে বাজেট রয়েছে, তার অন্তত ১০ শতাংশ দেশি সফটওয়্যার ও আইটিইএস কেনার জন্য বরাদ্দ করা যেতে পারে। আমরা এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মধ্যে বাস করছি। এই শিল্পবিপ্লবের কথা মাথায় রেখেই আমাদের তথ্যপ্রযুক্তিশিল্পের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বিনিয়োগ করতে হবে। দেশের মানুষকে কারিগরি ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে দক্ষ করে তুলতে হবে, যাতে তারা পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সমানতালে চলতে পারে। দক্ষ জনশক্তি আমাদের দেশের উন্নয়ন খাতে অবদান রাখতে পারবে। এ ক্ষেত্রে বাজেটে সরকারি থোক বরাদ্দের মাধ্যমে বেসিসকে দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির দায়িত্ব দেয়া হলে বেসিস তার অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনসম্পদ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবে।

লেখক : সভাপতি, বেসিস

back to top