‘স্মার্ট’ বাংলাদেশ হওয়ার লক্ষ্যে যে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ার কথা সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, তার বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সেই ধারণা দিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
তিনি জানালেন, আগামী চার বছরের মধ্যে দেশের ৭৫ শতাংশ অর্থিক লেনদেন কাগজের টাকার পরিবর্তে ভার্চুয়াল মাধ্যমে নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ার লক্ষ্যের কথা বলেন। শুক্রবার বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা এ নিয়ে প্রশ্ন করলে অর্থমন্ত্রীর পক্ষে উত্তর দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২৭ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ ক্যাশলেস লেনদেন চালু করা। সেই লক্ষ্যে প্রান্তিক পর্যায়ে চারটি জেলায় পাইলট কর্মসূচি চলছে।
“আগে বড় বড় শপিং সেন্টারে কিউআর কোড দিয়ে পেমেন্ট করা যেত। উচ্চ পর্যায়ে থেকে এটাকে আমরা তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। রাস্তার পাশে যিনি চা বিক্রি করেন, ডাব বিক্রি করেন, উনিও ক্যাশলেস লেনদেনের একটা সুবিধা নিতে পারেন।”
ক্যাশলেস লেনদেনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক কিছু উদ্যোগের কথা তুলে ধরে গভর্নর বলেন, আগে ‘ইন্টার অপারেবল’ প্ল্যাটফর্ম ছিল না। সম্প্রতি আইডিটিপি বা ইন্টারঅপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন করা হয়েছে।
“তার ফলে একটা মাত্র মেশিনে যে কোনো পেমেন্ট কোম্পানি থেকে একটা কোড দিয়ে টাকা নেওয়া যায়। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা ব্যাংক একাউন্ট যার আছে, উনি সরাসরি এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে টাকা পরিশোধ করতে পারেন।”
তৃতীয় পদক্ষেপ হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড প্রণয়নের উদ্যোগের কথা জানান গভর্নর।
“আমাদের দেশে ভিসা, মাস্টার বা বাইরের কোম্পানিগুলোর ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড আছে। আমাদের নিজস্ব কোনো কার্ড ছিল না। এর ইউজার ছিল রেস্ট্রিকটেড। যে ফি দেওয়া হয়- এটা অনেকটা বাইরে চলে যায়।
“আমরা ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড তৈরি করছি। সব ব্যাংক এবং ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন এক কার্ড ব্যবহার করবে। এটার প্রচলন হলে আমরা মনে করি টাকার পরিবর্তে এই কার্ডের ব্যবহার বেড়ে যাবে।”
বর্তমানে ভিসা, মাস্টার কার্ডের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের ব্যাংকগুলোতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লেনদেন করতে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড সেবা দিচ্ছে। এতে প্রতিবছর দেশ থেকে মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যাচ্ছে তারা লভ্যাংশ হিসেবে। বাংলাদেশের নিজস্ব ডেবিট কার্ড চালু হলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরতা কমে যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে ডেবিট কার্ডের গ্রাহকরা দৈনিক ১ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন এটিএম বুথ ও পস মেশিনের মাধ্যমে। ওই মাসে মোট লেনেদন হয়েছে ৪২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা।
গত মার্চ পর্যন্ত তিন কোটি ৯ লাখ ৯৭ হাজারের বেশি কার্ড ইস্যু করেছে বিভিন্ন ব্যাংক।
নিজস্ব ডেবিট কার্ডের বাইরে বহির্বিশ্বে প্রচলিত থাকা ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা চালুর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে গভর্নর বলেন, “আমরা ডিজিটাল ব্যাংক তৈরির পথে আছি, যেটা পুরোপুরি ভার্চুয়াল হবে। কাস্টমার ব্যাংককারকে দেখবে না, ব্যাংক কাস্টমারকে দেখবে না। এটা অলরেডি উন্নত বিশ্বে শুরু হয়েছে।
“আমরা ইতোমধ্যে এটার কাজ শুরু করেছি। ডিজিটাল ব্যাংক যদি হয়ে যায়, তখন দেখবেন যে- তরুণ সমাজ, স্মার্টফোন ইউজার এটাতে যুক্ত হবে। এই মুহূর্তে ছয় কোটি মানুষ স্মার্টফোন ইউজ করে। আমাদের ছয় কোটি কাস্টমার কিন্তু রেডি আছে।”
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, “আমাদের অন্যান্য যেসব ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন আছে, সেটা এবং এই ডিজিটাল ব্যাংক– দুই মিলে ক্যাশলেস ট্রানজেকশনের গতি আরও বৃদ্ধি পাবে।
“আমাদের টার্গেট হচ্ছে ২০২৭ সালে ৭৫ শতাংশ ক্যাশলেস ট্রানজেকশন। আমরা মনে করি, তার আগেই এ কয়েকটা উদ্যোগের মাধ্যমে সেই লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।”
শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩
‘স্মার্ট’ বাংলাদেশ হওয়ার লক্ষ্যে যে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ার কথা সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, তার বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সেই ধারণা দিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
তিনি জানালেন, আগামী চার বছরের মধ্যে দেশের ৭৫ শতাংশ অর্থিক লেনদেন কাগজের টাকার পরিবর্তে ভার্চুয়াল মাধ্যমে নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ার লক্ষ্যের কথা বলেন। শুক্রবার বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা এ নিয়ে প্রশ্ন করলে অর্থমন্ত্রীর পক্ষে উত্তর দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২৭ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ ক্যাশলেস লেনদেন চালু করা। সেই লক্ষ্যে প্রান্তিক পর্যায়ে চারটি জেলায় পাইলট কর্মসূচি চলছে।
“আগে বড় বড় শপিং সেন্টারে কিউআর কোড দিয়ে পেমেন্ট করা যেত। উচ্চ পর্যায়ে থেকে এটাকে আমরা তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। রাস্তার পাশে যিনি চা বিক্রি করেন, ডাব বিক্রি করেন, উনিও ক্যাশলেস লেনদেনের একটা সুবিধা নিতে পারেন।”
ক্যাশলেস লেনদেনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক কিছু উদ্যোগের কথা তুলে ধরে গভর্নর বলেন, আগে ‘ইন্টার অপারেবল’ প্ল্যাটফর্ম ছিল না। সম্প্রতি আইডিটিপি বা ইন্টারঅপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন করা হয়েছে।
“তার ফলে একটা মাত্র মেশিনে যে কোনো পেমেন্ট কোম্পানি থেকে একটা কোড দিয়ে টাকা নেওয়া যায়। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা ব্যাংক একাউন্ট যার আছে, উনি সরাসরি এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে টাকা পরিশোধ করতে পারেন।”
তৃতীয় পদক্ষেপ হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড প্রণয়নের উদ্যোগের কথা জানান গভর্নর।
“আমাদের দেশে ভিসা, মাস্টার বা বাইরের কোম্পানিগুলোর ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড আছে। আমাদের নিজস্ব কোনো কার্ড ছিল না। এর ইউজার ছিল রেস্ট্রিকটেড। যে ফি দেওয়া হয়- এটা অনেকটা বাইরে চলে যায়।
“আমরা ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড তৈরি করছি। সব ব্যাংক এবং ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন এক কার্ড ব্যবহার করবে। এটার প্রচলন হলে আমরা মনে করি টাকার পরিবর্তে এই কার্ডের ব্যবহার বেড়ে যাবে।”
বর্তমানে ভিসা, মাস্টার কার্ডের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের ব্যাংকগুলোতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লেনদেন করতে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড সেবা দিচ্ছে। এতে প্রতিবছর দেশ থেকে মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যাচ্ছে তারা লভ্যাংশ হিসেবে। বাংলাদেশের নিজস্ব ডেবিট কার্ড চালু হলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরতা কমে যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে ডেবিট কার্ডের গ্রাহকরা দৈনিক ১ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন এটিএম বুথ ও পস মেশিনের মাধ্যমে। ওই মাসে মোট লেনেদন হয়েছে ৪২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা।
গত মার্চ পর্যন্ত তিন কোটি ৯ লাখ ৯৭ হাজারের বেশি কার্ড ইস্যু করেছে বিভিন্ন ব্যাংক।
নিজস্ব ডেবিট কার্ডের বাইরে বহির্বিশ্বে প্রচলিত থাকা ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা চালুর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে গভর্নর বলেন, “আমরা ডিজিটাল ব্যাংক তৈরির পথে আছি, যেটা পুরোপুরি ভার্চুয়াল হবে। কাস্টমার ব্যাংককারকে দেখবে না, ব্যাংক কাস্টমারকে দেখবে না। এটা অলরেডি উন্নত বিশ্বে শুরু হয়েছে।
“আমরা ইতোমধ্যে এটার কাজ শুরু করেছি। ডিজিটাল ব্যাংক যদি হয়ে যায়, তখন দেখবেন যে- তরুণ সমাজ, স্মার্টফোন ইউজার এটাতে যুক্ত হবে। এই মুহূর্তে ছয় কোটি মানুষ স্মার্টফোন ইউজ করে। আমাদের ছয় কোটি কাস্টমার কিন্তু রেডি আছে।”
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, “আমাদের অন্যান্য যেসব ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন আছে, সেটা এবং এই ডিজিটাল ব্যাংক– দুই মিলে ক্যাশলেস ট্রানজেকশনের গতি আরও বৃদ্ধি পাবে।
“আমাদের টার্গেট হচ্ছে ২০২৭ সালে ৭৫ শতাংশ ক্যাশলেস ট্রানজেকশন। আমরা মনে করি, তার আগেই এ কয়েকটা উদ্যোগের মাধ্যমে সেই লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।”