প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট কিছু ‘ধারণা’র ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। বাস্তবতার সঙ্গে এর কোন মিল নেই। বাজেটে মূল্যস্ফীতি, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও বিনিয়োগ সূচকের ক্ষেত্রে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলোও অনেকটা ধারণার ওপর ভিত্তি করে। দেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থায় লক্ষ্যমাত্রাগুলো উচ্চাকাক্সক্ষী। অনুমিতি বা প্রক্ষেপণের দুর্বলতার কারণে পরে বাজেট বাস্তবায়ন হোঁচট খাবে। তাতে শেষ পর্যন্ত হয়তো লক্ষ্য বাস্তবায়নও হবে না।
শুক্রবার (২ জুন) সকালে বিস্তারিত বাজেট প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এ উপলক্ষে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশ ধরা হয়েছে। আবার ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ ছিল ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগ বাড়িয়ে ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে দেশের অর্থনীতি যেভাবে চলছে, সে আলোকে এসব লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাকাক্সক্ষী বলে মনে হয়েছে।’
এসব অনুমিতির সঙ্গে বাস্তবতার আসলে কোন মিল নেই উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘এসব লক্ষ্য অর্জন করা অনেক কঠিন হবে। শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হবে না বলে আমার ধারণা। চলমান সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো পুরোপুরি অনুধাবন করতে এবং সে অনুযায়ী সমাধান খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে বাজেটে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেই। আমরা মনে করি, বাজেটে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা দিয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।’
প্রশ্নোত্তর পর্বে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আগেও আমরা দেখেছি, সংকটের মূল কারণগুলো অনুধাবন না করে বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। এজন্য শেষ পর্যন্ত অনুমিতিগুলো সত্য হয় না। বাস্তবতাকে বিবেচনায় না নিয়ে আকাক্সক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে বাজেট করলে এমন অবস্থা হয়।’
মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দেশের অর্থনীতি ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ বৈশ্বিক সংকট তৈরি হওয়ার পরে সেটাকে বিবেচনায় না নিয়ে গতবছর বাজেট করা হয়েছে। এর ফলে বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটেও বর্তমান বাস্তবতাকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। এই উচ্চ আকাক্সক্ষার বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে রাজস্ব আয় চলতি বছরের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়াতে হবে। আর লক্ষ্য অনুযায়ী, রাজস্ব আদায় না হলে তখন ঘাটতি মেটাতে হয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে বা এডিপি কাটছাঁট করতে হবে। তা না হলে বৈদেশিক ঋণ নিতে হবে। ফলে অনুমিতির দুর্বলতার কারণে পরে অর্থনীতি প্রতিটি জায়গায় হোঁচট খাবে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এবারের বাজেটে সবচেয়ে দুর্বলতম জায়গা হচ্ছে মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে কার্যকর কোন উদ্যোগ ঘোষণা করতে না পারা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে যে প্রত্যাশা রয়েছে, সে আকাক্সক্ষা মেটাতে এ বাজেট ব্যর্থ হয়েছে।’
প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের যে লক্ষ্যমাত্রা বাজেটে ধরা হয়েছে, তা অর্জন কঠিন হবে বলেও মত সিপিডির। বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে যে ঋণের কথা বলা হয়েছে, সেটি মূল্যস্ফীতি বাড়াবে বলে মনে করছে সিপিডি, যদিও অর্থমন্ত্রী এই মূল্যস্ফীত ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই থেকে নামিয়ে ৬ শতাংশে করার লক্ষ্য ঠিক করেছেন।
কারো আয় করমুক্ত সীমার নিচে হলেও সরকারি ৩৮টি সেবা নিতে টিআইএনের বিপরীতে দুই হাজার টাকা কর নেয়ার বিধানটি বৈষম্যমূলক বলে মনে করছে সিপিডি।
সব মিলিয়ে তাদের ভাষ্য, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আগামী অর্থবছরের বাজেটটি ‘সময়োপযোগী হয়নি’; চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আরও অনেক উদ্যোগ নিতে পারতেন মন্ত্রী।
ফাহমিদা বলেন, ‘রেমিট্যান্স নিম্নমুখী। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কিন্তু নিম্নমুখী। বৈদ্যুতিক এবং জ্বালানি খাতে ব্যাপক একটা ঘাটতি দেখা গেছে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নতুন অর্থবছর ২০২৩-২০২৪ এ জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। গত অর্থবছরেও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছিল। পরে এটাকে নামিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়। সরকারি বিনিয়োগের হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ আর ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হয়েছে। কিন্তু ২০২৩ সালে যেটা ধরা হয়েছিল, তার চেয়ে কম হয়েছে এখন পর্যন্ত; সেটা ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। এখান থেকে লাফ দিয়ে ২৭ শতাংশ কীভাবে হবে? সেটা আমাদের কাছে মনে হচ্ছে একটি উচ্চাকাক্সক্ষা।’
ব্যক্তিখাতে ঋণ প্রবাহ নিয়ে ফাহমিদা বলেন, ‘ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ ১৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। এই বছরের ঋণ প্রবাহ যেটা ধরা হয়েছে সেটা গত বছরের ধরা ঋণ প্রবাহের সঙ্গে মিলছে না। ব্যক্তি খাতের যে বিনিয়োগের হার ধরা হয়েছে সেটা এমন ঋণ প্রবাহ দিয়ে কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও কঠিন মনে হয়েছে ফাহমিদার কাছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানিকৃত মূল্যস্ফীতির কথা বলা হলেও বৈশ্বিক বাজারে এখন সব পণ্যের দাম নিম্নমুখী। তাই মূল্যস্ফীতিকে এর ওপর চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না, আমাদের অভ্যন্তরীণ অনেক দুর্বলতা আছে, করকাঠামোর মধ্যে আছে, প্রাতিষ্ঠানিক ও মনিটারি পলিসির মধ্যেও দুর্বলতা আছে। মুদ্রানীতির সঙ্গে আমাদের আর্থিক নীতির যদি সমন্বয় না থাকে তাহলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ খুবই কঠিন হবে।’
করমুক্ত আয় সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করাকে ‘ভালো বিষয়’ বলে উল্লেখ করেন সিপিডি নির্বাহী পরিচালক। তবে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা করারোপের বিষয়টি ভালো হয়নি বলে মত তার।
তিনি বলেন, ‘কারো যদি আয় সাড়ে তিন লাখের নিচেও হয়, তাহলে সরকারি ৩৮টি সেবা নিতে টিন লাগবে। করযোগ্য আয় না থাকলেও তাকে দুই হাজার টাকা দিতে হবে। মানুষকে স্বস্তি দিতে এখানে করমুক্ত আয় বাড়িয়ে আবার যার করযোগ্য আয় নেই তার ওপর দুই হাজার টাকার কর আরোপ করা এটা কীভাবে যুক্তিযুক্ত হয় তা আমরা খুঁজে পাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে কর দেয়ার যোগ্য, ক্ষমতা, আয় আছে সেই তো কর দেবে, কিন্তু যার নাই তার ওপর আবার বসিয়ে দিলাম। এটা সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক। নৈতিকভাবেও এটা ঠিক না। এটা অর্থনৈতিক চাপ বাড়াবে। ফলে মূল যে উদ্দেশ্য ছিল, সেটিও নষ্ট হয়ে গেল।’
শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩
প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট কিছু ‘ধারণা’র ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। বাস্তবতার সঙ্গে এর কোন মিল নেই। বাজেটে মূল্যস্ফীতি, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও বিনিয়োগ সূচকের ক্ষেত্রে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলোও অনেকটা ধারণার ওপর ভিত্তি করে। দেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থায় লক্ষ্যমাত্রাগুলো উচ্চাকাক্সক্ষী। অনুমিতি বা প্রক্ষেপণের দুর্বলতার কারণে পরে বাজেট বাস্তবায়ন হোঁচট খাবে। তাতে শেষ পর্যন্ত হয়তো লক্ষ্য বাস্তবায়নও হবে না।
শুক্রবার (২ জুন) সকালে বিস্তারিত বাজেট প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এ উপলক্ষে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশ ধরা হয়েছে। আবার ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ ছিল ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগ বাড়িয়ে ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে দেশের অর্থনীতি যেভাবে চলছে, সে আলোকে এসব লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাকাক্সক্ষী বলে মনে হয়েছে।’
এসব অনুমিতির সঙ্গে বাস্তবতার আসলে কোন মিল নেই উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘এসব লক্ষ্য অর্জন করা অনেক কঠিন হবে। শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হবে না বলে আমার ধারণা। চলমান সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো পুরোপুরি অনুধাবন করতে এবং সে অনুযায়ী সমাধান খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে বাজেটে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেই। আমরা মনে করি, বাজেটে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা দিয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।’
প্রশ্নোত্তর পর্বে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আগেও আমরা দেখেছি, সংকটের মূল কারণগুলো অনুধাবন না করে বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। এজন্য শেষ পর্যন্ত অনুমিতিগুলো সত্য হয় না। বাস্তবতাকে বিবেচনায় না নিয়ে আকাক্সক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে বাজেট করলে এমন অবস্থা হয়।’
মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দেশের অর্থনীতি ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ বৈশ্বিক সংকট তৈরি হওয়ার পরে সেটাকে বিবেচনায় না নিয়ে গতবছর বাজেট করা হয়েছে। এর ফলে বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটেও বর্তমান বাস্তবতাকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। এই উচ্চ আকাক্সক্ষার বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে রাজস্ব আয় চলতি বছরের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়াতে হবে। আর লক্ষ্য অনুযায়ী, রাজস্ব আদায় না হলে তখন ঘাটতি মেটাতে হয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে বা এডিপি কাটছাঁট করতে হবে। তা না হলে বৈদেশিক ঋণ নিতে হবে। ফলে অনুমিতির দুর্বলতার কারণে পরে অর্থনীতি প্রতিটি জায়গায় হোঁচট খাবে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এবারের বাজেটে সবচেয়ে দুর্বলতম জায়গা হচ্ছে মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে কার্যকর কোন উদ্যোগ ঘোষণা করতে না পারা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে যে প্রত্যাশা রয়েছে, সে আকাক্সক্ষা মেটাতে এ বাজেট ব্যর্থ হয়েছে।’
প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের যে লক্ষ্যমাত্রা বাজেটে ধরা হয়েছে, তা অর্জন কঠিন হবে বলেও মত সিপিডির। বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে যে ঋণের কথা বলা হয়েছে, সেটি মূল্যস্ফীতি বাড়াবে বলে মনে করছে সিপিডি, যদিও অর্থমন্ত্রী এই মূল্যস্ফীত ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই থেকে নামিয়ে ৬ শতাংশে করার লক্ষ্য ঠিক করেছেন।
কারো আয় করমুক্ত সীমার নিচে হলেও সরকারি ৩৮টি সেবা নিতে টিআইএনের বিপরীতে দুই হাজার টাকা কর নেয়ার বিধানটি বৈষম্যমূলক বলে মনে করছে সিপিডি।
সব মিলিয়ে তাদের ভাষ্য, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আগামী অর্থবছরের বাজেটটি ‘সময়োপযোগী হয়নি’; চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আরও অনেক উদ্যোগ নিতে পারতেন মন্ত্রী।
ফাহমিদা বলেন, ‘রেমিট্যান্স নিম্নমুখী। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কিন্তু নিম্নমুখী। বৈদ্যুতিক এবং জ্বালানি খাতে ব্যাপক একটা ঘাটতি দেখা গেছে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নতুন অর্থবছর ২০২৩-২০২৪ এ জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। গত অর্থবছরেও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছিল। পরে এটাকে নামিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়। সরকারি বিনিয়োগের হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ আর ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হয়েছে। কিন্তু ২০২৩ সালে যেটা ধরা হয়েছিল, তার চেয়ে কম হয়েছে এখন পর্যন্ত; সেটা ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। এখান থেকে লাফ দিয়ে ২৭ শতাংশ কীভাবে হবে? সেটা আমাদের কাছে মনে হচ্ছে একটি উচ্চাকাক্সক্ষা।’
ব্যক্তিখাতে ঋণ প্রবাহ নিয়ে ফাহমিদা বলেন, ‘ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ ১৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। এই বছরের ঋণ প্রবাহ যেটা ধরা হয়েছে সেটা গত বছরের ধরা ঋণ প্রবাহের সঙ্গে মিলছে না। ব্যক্তি খাতের যে বিনিয়োগের হার ধরা হয়েছে সেটা এমন ঋণ প্রবাহ দিয়ে কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও কঠিন মনে হয়েছে ফাহমিদার কাছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানিকৃত মূল্যস্ফীতির কথা বলা হলেও বৈশ্বিক বাজারে এখন সব পণ্যের দাম নিম্নমুখী। তাই মূল্যস্ফীতিকে এর ওপর চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না, আমাদের অভ্যন্তরীণ অনেক দুর্বলতা আছে, করকাঠামোর মধ্যে আছে, প্রাতিষ্ঠানিক ও মনিটারি পলিসির মধ্যেও দুর্বলতা আছে। মুদ্রানীতির সঙ্গে আমাদের আর্থিক নীতির যদি সমন্বয় না থাকে তাহলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ খুবই কঠিন হবে।’
করমুক্ত আয় সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করাকে ‘ভালো বিষয়’ বলে উল্লেখ করেন সিপিডি নির্বাহী পরিচালক। তবে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা করারোপের বিষয়টি ভালো হয়নি বলে মত তার।
তিনি বলেন, ‘কারো যদি আয় সাড়ে তিন লাখের নিচেও হয়, তাহলে সরকারি ৩৮টি সেবা নিতে টিন লাগবে। করযোগ্য আয় না থাকলেও তাকে দুই হাজার টাকা দিতে হবে। মানুষকে স্বস্তি দিতে এখানে করমুক্ত আয় বাড়িয়ে আবার যার করযোগ্য আয় নেই তার ওপর দুই হাজার টাকার কর আরোপ করা এটা কীভাবে যুক্তিযুক্ত হয় তা আমরা খুঁজে পাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে কর দেয়ার যোগ্য, ক্ষমতা, আয় আছে সেই তো কর দেবে, কিন্তু যার নাই তার ওপর আবার বসিয়ে দিলাম। এটা সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক। নৈতিকভাবেও এটা ঠিক না। এটা অর্থনৈতিক চাপ বাড়াবে। ফলে মূল যে উদ্দেশ্য ছিল, সেটিও নষ্ট হয়ে গেল।’