alt

অর্থ-বাণিজ্য

লোডশেডিং ও গরমে ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে চার্জার ফ্যানের

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩

একদিকে লোডশেডিং অন্যদিকে চরম গরমের কারণে বাজারে ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে চার্জার ফ্যানের। তাই প্রচন্ড গরমে কিছুটা স্বস্তি পেতে বিকল্প খুঁজছে মানুষ। ফলে বেড়েছে চার্জার ফ্যানের (রিচার্জেবল ফ্যান) চাহিদা। নামিদামি ব্র্যান্ডসহ কোন সাধারণ শোরুমেই এখন মিলছে না চার্জার ফ্যান। এই চাহিদাকেই পুঁজি করে পণ্যটির কয়েকগুণ দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ইলেকট্রনিক পণ্যের খুচরা ও পাইকারি দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।

রামপুরা বাজার এলাকায় ১২-১৫টি ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকান রয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ দোকানে নেই চার্জার ফ্যান। এমনকি একটি ব্র্যান্ডের শোরুমেও মেলেনি এ ধরনের ফ্যান। সবারই এক কথা, স্টক শেষ।

রাজধানীর গুলিস্তানের স্টেডিয়াম মার্কেটে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মার্কেটে ব্যাপক চাহিদা চার্জার ফ্যানের। কথা হয় মিরপুর থেকে ফ্যান কিনতে আসা শিলা হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিন মাস আসে এসি কিনতে গিয়ে নোভা ব্র্যান্ডের একটি চার্জার ফ্যান দরদাম করেছিলাম। আজ কিনতে গিয়ে দেখি মিরপুর এলাকায় ওই ফ্যান নেই। এখন স্টেডিয়াম মার্কেটে এসে দেখি সাড়ে ৮ হাজার টাকার ওই কম্বো (এসি-ডিসি) ফ্যানের দাম চাচ্ছে ১৪ হাজার টাকা। শিলা হক জানান, অনলাইনে এই ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। বলছে স্টক আউট।

স্টেডিয়াম মার্কেটে ওই সময় চার্জার ফ্যানের শত শত ক্রেতার দেখা মেলে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন তারা। বেশিরভাগ ক্রেতা জানিয়েছেন, তাদের এলাকার দোকান বা শোরুমে চার্জার ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। তবে স্টেডিয়াম মার্কেট ও নবাবপুর মার্কেটে ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, সংকটকে পুঁজি করে এখন চার্জার ফ্যানের দাম নেয়া হচ্ছে দেড় থেকে দুইগুণ। দেখা গেছে, ক্রেতারা দোকানে দোকানে ঘুরে চার্জার ফ্যানের দরদাম করছেন। কিন্তু পছন্দ হলেও দামে মিলছিল না। এছাড়া কোন ধরনের চার্জার ফ্যান কিনলে ভালো হবে, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বেরও শেষ নেই।

রাসেল হুসাইন নামের এক ক্রেতা বলেন, গত ২৭ রমজান দামি ব্র্যান্ডের একটি চার্জার ফ্যান কিনি তিন হাজার ৫০০ টাকায়। ওই ফ্যানের দাম এখন চাচ্ছে ছয় হাজার। আগের ফ্যানের ক্যাশ মেমো দোকানে দেখিয়েছি। এরপর ১০০ টাকা কম নেবে বলে জানিয়েছেন দোকানি।

তিনি বলেন, লোডশেডিং এতটাই বেড়েছে যে থাকা যাচ্ছে না। কয়েকদিন অসুস্থ ছিলাম গরমের কারণে। ফলে বাধ্য হয়েই চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছি। খালেক হোসেন নামের আরেক ক্রেতা নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমার স্ত্রী অনলাইন থেকে দুই হাজার টাকায় একটি ফ্যান অর্ডার করতে বলেছিলেন। তখন কিনিনি। বৃহস্পতিবার স্থানীয় এক দোকানে ওই ফ্যানের দরদাম করেছিলাম, তারা সাড়ে তিন হাজার টাকা চেয়েছে। একদিন পর আজ এখানে এসে দেখি চার হাজার টাকা চাচ্ছে।

নবাবপুর ও গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগের তুলনায় প্রতিটি ছোট চার্জার ফ্যানের দাম বেড়েছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা। মাঝারি আকারের (হাফ স্ট্যান্ড) ফ্যানের দাম তিন থেকে চার হাজার টাকা বেড়েছে। এছাড়া বড় স্ট্যান্ডের চার্জার ফ্যানের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। তবে বেশি বেড়েছে বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চার্জার ফ্যানের দাম। গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেটের বিক্রেতারা জানান, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ফ্যানের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। যে কারণে বাধ্য হয়ে তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

স্টেডিয়াম মার্কেটের কে এম ইলেকট্রনিক্সের স্বত্বাধিকারী এরফান হক বলেন, আমদানিকারকরা ইচ্ছামতো দামে ফ্যান বিক্রি করছেন। আমরা তাদের কাছে জিম্মি। গতকালের তুলনায় আজ প্রতিটি ফ্যান ২০০ টাকা বাড়তি দরে কিনেছি। চাহিদার ওপর ভিত্তি করে প্রতিদিন তারা (আমদানিকারকরা) দাম বাড়াচ্ছেন। সবশেষ এক সপ্তাহে দাম বেশ বেড়েছে। আমরা যেভাবে কিনছি, সেভাবেই বিক্রি করছি।

রাজধানীর নবাবপুর এলাকায় দেখা গেছে, খুচরা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলার সময় নেই বিক্রেতাদের। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফ্যানের পাইকারি অর্ডার নিতে ও বিক্রি করতে ব্যস্ত তারা।

নবাবপুর মার্কেটের বিক্রেতারা জানান, গত এক সপ্তাহে তাদের চার্জার ফ্যান বিক্রি বেড়েছে দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত। আমদানিকারকদের কারও কারও বিক্রি আরও বেশি। এখন আনেক আমদানিকারকের গুদামে ফ্যান নেই।

তবে ওই মার্কেটের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন খোদ সেখানকার অন্য ব্যবসায়ীরা। চার্জার ফ্যানের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে সিন্ডিকেট করার অভিযোগ আনেন তারা। নবাবপুরের বেশ কয়েকটি বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ক্রেতা-বিক্রেতাদের। ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে কেউ কিছু বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আমদানিকারক বলেন, চাহিদার কারণে আমরা ১০০ টাকা বাড়িয়ে দিলে সেটা খুচরায় ৫০০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরমের সঙ্গে অস্বাভাবিক লোডশেডিংয়ের কারণে চার্জার ফ্যানের চাহিদা এখন তুঙ্গে। চাহিদার এই পরিমাণ ফ্যানের জোগান এখন আমদানিকারকদের কাছে নেই। তারা বছরে চার থেকে পাঁচ লাখ চার্জার ফ্যান আমদানি করেন। কিন্তু এবার চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। এতে তৈরি হয়েছে পণ্যের সংকট, বেড়েছে দামও।

ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করে ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, অস্বাভাবিক হারে কনটেইনার ভাড়া বৃদ্ধি ও এলসি খোলার জটিলতার কারণে আমদানি খরচ আগের তুলনায় বেড়েছে। ফলে এসবের প্রভাবও রয়েছে বাজারে। তবে শুধু আমদানি নয়, দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠানও এখন চার্জার ফ্যান তৈরি করে থাকে। ফলে এক সময় এ বাজার পুরোপুরি আমদানি নির্ভর থাকলেও এখন তা অনেকটাই কাটতে শুরু করেছে। তবে দেশি ব্র্যান্ডের এসব প্রতিষ্ঠানের কাছেও এখন চার্জার ফ্যানের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। রামপুরার একটি শোরুমের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর শাহরিয়ার কবির বলেন, গত ৩ জুলাই থেকে আমাদের শোরুমে চার্জার ফ্যানের স্টক নেই। কবে আসবে সেটাও জানি না। প্রতিদিন অন্তত ৫০০ ক্রেতা ফিরে যাচ্ছেন। গরম বাড়ার কারণে শুধু যে শোরুম আর দোকানে ফ্যানের বিক্রি বেড়েছে- তা নয়, ফুটপাতের অনেক দোকানেও বিক্রি হচ্ছে ছোট চার্জার ফ্যান। তবে সেখানেও দাম বেশ চড়া।

ছবি

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

ছবি

সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ১৪ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা

ছবি

ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকার দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের কর্মসূচি

অক্টোবরেও বাড়ছে ঋণের সুদহার

২০ খাতে বিনিয়োগে মিলবে কর রেয়াত

সপ্তাহের শুরুতে পুঁজিবাজারে বড় দরপতন

ছবি

১২ প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার

ছবি

সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ১৪ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা

ছবি

সপ্তাহের শুরুতে পুঁজিবাজারে বড় দরপতন

ছবি

অক্টোবরেও বাড়ছে ঋণের সুদহার

ছবি

ফ্রিল্যান্সারদের রেমিট্যান্সের ওপর কর আরোপ করা হয়নি : এনবিআর

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নকল পোশাক বিক্রির অভিযোগ, বিজিএমইএ’-এর নাকচ

ফ্রিল্যান্সারদের রেমিট্যান্সে ১০ শতাংশ করের তথ্য সঠিক নয় : বাংলাদেশ ব্যাংক

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পে ১৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে জাপান

ছবি

পোশাকের দাম বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের প্রতি অনুরোধ

লেনদেন অর্ধেকে নেমেছে শেয়ারবাজারে

ছবি

পোশাকের দাম বাড়াতে এএএফএ ক্রেতাদের অনুরোধ বিজিএমইএর

ছবি

নিয়ন্ত্রণ নেই বাজারে, বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ডিম-আলু-পেঁয়াজ

ছবি

বড় কোম্পানি মুড়ি-চানাচুর তৈরি করলে ছোটরা কি করবে, প্রশ্ন শিল্পমন্ত্রীর

জিআইআই সূচকে তিন ধাপ পেছালো বাংলাদেশ

বাংলাদেশে হালাল মাংস রপ্তানিতে আগ্রহী মেক্সিকো

ছবি

তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের মানববন্ধন

ফ্রিল্যান্সারদেরও দিতে হবে ১০ শতাংশ কর

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েই চলেছে

ছবি

বাজারে আগাম শীতকালীন সবজি, চড়া দামে ক্রেতাদের অস্বস্তি

ছবি

রিজার্ভ কমে দাঁড়ালো ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার

এমএফএসের ২২ হাজার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে বিএফআইইউ

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা : আকু সচিবালয়ের চিঠির অপেক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংক

নামমাত্র উত্থান শেয়ারবাজারে

জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ব্যয় বাড়লো ২৭০ কোটি টাকা

ছবি

জরিমানা নয়, নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান কাজ : নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ

ছবি

পোশাক রপ্তানিতে ভিসানীতির প্রভাব পড়বে না : বিজিএমইএ সভাপতি

ছবি

বাংলাদেশের ঋণমান ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘নেতিবাচক’-এ নামলো

ডিম আমদানি বন্ধের দাবি পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের

সূচক ও লেনদেনে নামমাত্র উত্থান শেয়ারবাজারে

ছবি

বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন ও সহসভাপতি মো. ফায়জুর রহমান ভূঁইয়া নির্বাচিত

tab

অর্থ-বাণিজ্য

লোডশেডিং ও গরমে ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে চার্জার ফ্যানের

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩

একদিকে লোডশেডিং অন্যদিকে চরম গরমের কারণে বাজারে ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে চার্জার ফ্যানের। তাই প্রচন্ড গরমে কিছুটা স্বস্তি পেতে বিকল্প খুঁজছে মানুষ। ফলে বেড়েছে চার্জার ফ্যানের (রিচার্জেবল ফ্যান) চাহিদা। নামিদামি ব্র্যান্ডসহ কোন সাধারণ শোরুমেই এখন মিলছে না চার্জার ফ্যান। এই চাহিদাকেই পুঁজি করে পণ্যটির কয়েকগুণ দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ইলেকট্রনিক পণ্যের খুচরা ও পাইকারি দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।

রামপুরা বাজার এলাকায় ১২-১৫টি ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকান রয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ দোকানে নেই চার্জার ফ্যান। এমনকি একটি ব্র্যান্ডের শোরুমেও মেলেনি এ ধরনের ফ্যান। সবারই এক কথা, স্টক শেষ।

রাজধানীর গুলিস্তানের স্টেডিয়াম মার্কেটে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মার্কেটে ব্যাপক চাহিদা চার্জার ফ্যানের। কথা হয় মিরপুর থেকে ফ্যান কিনতে আসা শিলা হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিন মাস আসে এসি কিনতে গিয়ে নোভা ব্র্যান্ডের একটি চার্জার ফ্যান দরদাম করেছিলাম। আজ কিনতে গিয়ে দেখি মিরপুর এলাকায় ওই ফ্যান নেই। এখন স্টেডিয়াম মার্কেটে এসে দেখি সাড়ে ৮ হাজার টাকার ওই কম্বো (এসি-ডিসি) ফ্যানের দাম চাচ্ছে ১৪ হাজার টাকা। শিলা হক জানান, অনলাইনে এই ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। বলছে স্টক আউট।

স্টেডিয়াম মার্কেটে ওই সময় চার্জার ফ্যানের শত শত ক্রেতার দেখা মেলে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন তারা। বেশিরভাগ ক্রেতা জানিয়েছেন, তাদের এলাকার দোকান বা শোরুমে চার্জার ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। তবে স্টেডিয়াম মার্কেট ও নবাবপুর মার্কেটে ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, সংকটকে পুঁজি করে এখন চার্জার ফ্যানের দাম নেয়া হচ্ছে দেড় থেকে দুইগুণ। দেখা গেছে, ক্রেতারা দোকানে দোকানে ঘুরে চার্জার ফ্যানের দরদাম করছেন। কিন্তু পছন্দ হলেও দামে মিলছিল না। এছাড়া কোন ধরনের চার্জার ফ্যান কিনলে ভালো হবে, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বেরও শেষ নেই।

রাসেল হুসাইন নামের এক ক্রেতা বলেন, গত ২৭ রমজান দামি ব্র্যান্ডের একটি চার্জার ফ্যান কিনি তিন হাজার ৫০০ টাকায়। ওই ফ্যানের দাম এখন চাচ্ছে ছয় হাজার। আগের ফ্যানের ক্যাশ মেমো দোকানে দেখিয়েছি। এরপর ১০০ টাকা কম নেবে বলে জানিয়েছেন দোকানি।

তিনি বলেন, লোডশেডিং এতটাই বেড়েছে যে থাকা যাচ্ছে না। কয়েকদিন অসুস্থ ছিলাম গরমের কারণে। ফলে বাধ্য হয়েই চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছি। খালেক হোসেন নামের আরেক ক্রেতা নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমার স্ত্রী অনলাইন থেকে দুই হাজার টাকায় একটি ফ্যান অর্ডার করতে বলেছিলেন। তখন কিনিনি। বৃহস্পতিবার স্থানীয় এক দোকানে ওই ফ্যানের দরদাম করেছিলাম, তারা সাড়ে তিন হাজার টাকা চেয়েছে। একদিন পর আজ এখানে এসে দেখি চার হাজার টাকা চাচ্ছে।

নবাবপুর ও গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগের তুলনায় প্রতিটি ছোট চার্জার ফ্যানের দাম বেড়েছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা। মাঝারি আকারের (হাফ স্ট্যান্ড) ফ্যানের দাম তিন থেকে চার হাজার টাকা বেড়েছে। এছাড়া বড় স্ট্যান্ডের চার্জার ফ্যানের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। তবে বেশি বেড়েছে বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চার্জার ফ্যানের দাম। গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেটের বিক্রেতারা জানান, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ফ্যানের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। যে কারণে বাধ্য হয়ে তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

স্টেডিয়াম মার্কেটের কে এম ইলেকট্রনিক্সের স্বত্বাধিকারী এরফান হক বলেন, আমদানিকারকরা ইচ্ছামতো দামে ফ্যান বিক্রি করছেন। আমরা তাদের কাছে জিম্মি। গতকালের তুলনায় আজ প্রতিটি ফ্যান ২০০ টাকা বাড়তি দরে কিনেছি। চাহিদার ওপর ভিত্তি করে প্রতিদিন তারা (আমদানিকারকরা) দাম বাড়াচ্ছেন। সবশেষ এক সপ্তাহে দাম বেশ বেড়েছে। আমরা যেভাবে কিনছি, সেভাবেই বিক্রি করছি।

রাজধানীর নবাবপুর এলাকায় দেখা গেছে, খুচরা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলার সময় নেই বিক্রেতাদের। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফ্যানের পাইকারি অর্ডার নিতে ও বিক্রি করতে ব্যস্ত তারা।

নবাবপুর মার্কেটের বিক্রেতারা জানান, গত এক সপ্তাহে তাদের চার্জার ফ্যান বিক্রি বেড়েছে দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত। আমদানিকারকদের কারও কারও বিক্রি আরও বেশি। এখন আনেক আমদানিকারকের গুদামে ফ্যান নেই।

তবে ওই মার্কেটের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন খোদ সেখানকার অন্য ব্যবসায়ীরা। চার্জার ফ্যানের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে সিন্ডিকেট করার অভিযোগ আনেন তারা। নবাবপুরের বেশ কয়েকটি বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ক্রেতা-বিক্রেতাদের। ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে কেউ কিছু বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আমদানিকারক বলেন, চাহিদার কারণে আমরা ১০০ টাকা বাড়িয়ে দিলে সেটা খুচরায় ৫০০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরমের সঙ্গে অস্বাভাবিক লোডশেডিংয়ের কারণে চার্জার ফ্যানের চাহিদা এখন তুঙ্গে। চাহিদার এই পরিমাণ ফ্যানের জোগান এখন আমদানিকারকদের কাছে নেই। তারা বছরে চার থেকে পাঁচ লাখ চার্জার ফ্যান আমদানি করেন। কিন্তু এবার চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। এতে তৈরি হয়েছে পণ্যের সংকট, বেড়েছে দামও।

ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করে ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, অস্বাভাবিক হারে কনটেইনার ভাড়া বৃদ্ধি ও এলসি খোলার জটিলতার কারণে আমদানি খরচ আগের তুলনায় বেড়েছে। ফলে এসবের প্রভাবও রয়েছে বাজারে। তবে শুধু আমদানি নয়, দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠানও এখন চার্জার ফ্যান তৈরি করে থাকে। ফলে এক সময় এ বাজার পুরোপুরি আমদানি নির্ভর থাকলেও এখন তা অনেকটাই কাটতে শুরু করেছে। তবে দেশি ব্র্যান্ডের এসব প্রতিষ্ঠানের কাছেও এখন চার্জার ফ্যানের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। রামপুরার একটি শোরুমের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর শাহরিয়ার কবির বলেন, গত ৩ জুলাই থেকে আমাদের শোরুমে চার্জার ফ্যানের স্টক নেই। কবে আসবে সেটাও জানি না। প্রতিদিন অন্তত ৫০০ ক্রেতা ফিরে যাচ্ছেন। গরম বাড়ার কারণে শুধু যে শোরুম আর দোকানে ফ্যানের বিক্রি বেড়েছে- তা নয়, ফুটপাতের অনেক দোকানেও বিক্রি হচ্ছে ছোট চার্জার ফ্যান। তবে সেখানেও দাম বেশ চড়া।

back to top