ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল সবুজ চত্বর যেন নতুন এক ঋতুর আগমনী বার্তা শুনতে পেয়েছে। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে নীরব, ধূলিধূসর হয়ে থাকা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) আবারও ফিরে আসছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ১৫ সেপ্টেম্বর ঘোষিত ভোটের তারিখ। কেউ শুনছে আশার সুর, কেউ আবার দেখছে অজানা ঝড়ের ঘন মেঘ।
নির্বাচন কমিশন নিয়ে অনিশ্চয়তা
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. আমজাদ হোসেন সম্প্রতি সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ফলে তিনি রাকসুর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। এতে ছাত্রনেতাদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরি হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, নির্ধারিত সময়েই ভোটগ্রহণ হবে, প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব পড়বে না।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময়সূচি নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছিল। শুরু হওয়ার কথা ছিল ১৯ আগস্ট সকাল ৯টায়, কিন্তু আগের রাতে তা স্থগিত করা হয়। পরে জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে।
সরব ছাত্ররাজনীতি
ভোটের ঘণ্টা বাজার পর থেকেই আবাসিক হল, ডিপার্টমেন্টের সিঁড়িঘর কিংবা ভাস্কর্যের চারপাশ সর্বত্র এখন নির্বাচনী কোলাহল। গোপন বৈঠক আর খোলা আড্ডায় পুরো ক্যাম্পাস উত্তেজনায় সরগরম।
ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘আমরা একক প্যানেলেই লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে পরিস্থিতি বুঝে জোটেও যাওয়া সম্ভব। ফ্যাসিবাদবিরোধী প্যানেল দেয়ার জন্য সব দলের সঙ্গেই আলোচনা চলছে।’
অন্য সংগঠনগুলো যেখানে প্যানেল সাজানোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, সেখানে ছাত্রদলের তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম নিয়েও আলোচনা হয়নি। তবে ক্যাম্পাসে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও আমাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়নি। ক্লাস হচ্ছে না, পরিবেশও অনিশ্চিত। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা শঙ্কিত। প্রশাসন আশ্বাস দিলে আমরাও প্রস্তুতি নেব।’
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাকিব হোসেন জানান, সাত-আটটি সংগঠন নিয়ে বৃহত্তর ঐক্যের পথে তারা হাঁটছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মেহেদী সজীবও জানান, হলভিত্তিক প্যানেল সাজানো হচ্ছে, শিগগিরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।
এদিকে ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ইউএসডিএফ, রেনেসাঁসহ আরও অনেক সংগঠন নিজেদের মতো প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নারী শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহ
রাকসুতে নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা আছে। প্রার্থী হওয়ার মতো পরিবেশ নেই বলে মনে করছেন অনেক ছাত্রী।
ইউএসডিএফের সংগঠক তাসিন খান বলেন, ‘সাইবার বুলিং রোধে প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। নির্বাচনে গেলে আমরা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হতে পারি।’
ফোকলোর ও সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সুষ্মিতা চক্রবর্তী বলেন, ‘নারীরা ভয় পাচ্ছে, কারণ তাদের চরিত্রহনন বা সাইবার হুমকি এখন নিত্যনৈমিত্তিক। পরিবেশ নিশ্চিত না হলে তাদের অংশগ্রহণ কমে যাবে।’
তবে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন নারীদের নেতৃত্বে দেখতে চায় এবং প্যানেলে গুরুত্বপূর্ণ পদে অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাসও দিয়েছে।
প্রশাসনের অবস্থান
উপ-উপাচার্য ফরিদ খান বলেন, ‘রুয়া ছিল প্রাক্তনদের প্ল্যাটফর্ম, রাকসু বর্তমানদের নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্র। রাজনীতি আসবেই, তবে নিয়ম ভেঙে কিছুই হবে না।’
ইতিহাসের দীর্ঘ নিস্তব্ধতা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৫৬-৫৭ সালে, তখন নাম ছিল ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’। ১৯৬২ সালে ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)’ নামে যাত্রা শুরু করে। এরপর মোট ১৬ বার নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। তখন ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল সবুজ চত্বর যেন নতুন এক ঋতুর আগমনী বার্তা শুনতে পেয়েছে। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে নীরব, ধূলিধূসর হয়ে থাকা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) আবারও ফিরে আসছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ১৫ সেপ্টেম্বর ঘোষিত ভোটের তারিখ। কেউ শুনছে আশার সুর, কেউ আবার দেখছে অজানা ঝড়ের ঘন মেঘ।
নির্বাচন কমিশন নিয়ে অনিশ্চয়তা
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. আমজাদ হোসেন সম্প্রতি সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ফলে তিনি রাকসুর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। এতে ছাত্রনেতাদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরি হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, নির্ধারিত সময়েই ভোটগ্রহণ হবে, প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব পড়বে না।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময়সূচি নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছিল। শুরু হওয়ার কথা ছিল ১৯ আগস্ট সকাল ৯টায়, কিন্তু আগের রাতে তা স্থগিত করা হয়। পরে জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে।
সরব ছাত্ররাজনীতি
ভোটের ঘণ্টা বাজার পর থেকেই আবাসিক হল, ডিপার্টমেন্টের সিঁড়িঘর কিংবা ভাস্কর্যের চারপাশ সর্বত্র এখন নির্বাচনী কোলাহল। গোপন বৈঠক আর খোলা আড্ডায় পুরো ক্যাম্পাস উত্তেজনায় সরগরম।
ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘আমরা একক প্যানেলেই লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে পরিস্থিতি বুঝে জোটেও যাওয়া সম্ভব। ফ্যাসিবাদবিরোধী প্যানেল দেয়ার জন্য সব দলের সঙ্গেই আলোচনা চলছে।’
অন্য সংগঠনগুলো যেখানে প্যানেল সাজানোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, সেখানে ছাত্রদলের তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম নিয়েও আলোচনা হয়নি। তবে ক্যাম্পাসে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও আমাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়নি। ক্লাস হচ্ছে না, পরিবেশও অনিশ্চিত। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা শঙ্কিত। প্রশাসন আশ্বাস দিলে আমরাও প্রস্তুতি নেব।’
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাকিব হোসেন জানান, সাত-আটটি সংগঠন নিয়ে বৃহত্তর ঐক্যের পথে তারা হাঁটছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মেহেদী সজীবও জানান, হলভিত্তিক প্যানেল সাজানো হচ্ছে, শিগগিরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।
এদিকে ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ইউএসডিএফ, রেনেসাঁসহ আরও অনেক সংগঠন নিজেদের মতো প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নারী শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহ
রাকসুতে নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা আছে। প্রার্থী হওয়ার মতো পরিবেশ নেই বলে মনে করছেন অনেক ছাত্রী।
ইউএসডিএফের সংগঠক তাসিন খান বলেন, ‘সাইবার বুলিং রোধে প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। নির্বাচনে গেলে আমরা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শিকার হতে পারি।’
ফোকলোর ও সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সুষ্মিতা চক্রবর্তী বলেন, ‘নারীরা ভয় পাচ্ছে, কারণ তাদের চরিত্রহনন বা সাইবার হুমকি এখন নিত্যনৈমিত্তিক। পরিবেশ নিশ্চিত না হলে তাদের অংশগ্রহণ কমে যাবে।’
তবে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন নারীদের নেতৃত্বে দেখতে চায় এবং প্যানেলে গুরুত্বপূর্ণ পদে অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাসও দিয়েছে।
প্রশাসনের অবস্থান
উপ-উপাচার্য ফরিদ খান বলেন, ‘রুয়া ছিল প্রাক্তনদের প্ল্যাটফর্ম, রাকসু বর্তমানদের নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্র। রাজনীতি আসবেই, তবে নিয়ম ভেঙে কিছুই হবে না।’
ইতিহাসের দীর্ঘ নিস্তব্ধতা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৫৬-৫৭ সালে, তখন নাম ছিল ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’। ১৯৬২ সালে ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)’ নামে যাত্রা শুরু করে। এরপর মোট ১৬ বার নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। তখন ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।