সাত বছর বয়সী মেয়ে লিমাকে কোলে নিয়ে মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজ সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তির শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজ বাসায় যাচ্ছিলেন শরবত বিক্রেতা মিজান হাওলাদার (৩০)। আর সাত মাস বয়সী ছেলে হোসাইনকে কোলে নিয়ে পিছু পিছু যাচ্ছিলেন তার স্ত্রী মুক্তা (২৫)। বস্তির সামনের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। বৃষ্টির কারণে ওই রাস্তায় হাঁটু সমান পানি জমে ছিল। এর মধ্যেই মেপে মেপে পা ফেলছিলেন সবাই। হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে পানিতে পড়ে যান মিজান। তাকে অনুসরণ করে হাঁটতে থাকা স্ত্রীও পরক্ষণে ঝাঁকুনি খেয়ে পড়ে যান পানিতে। কোলে থাকা শিশু হোসাইন ছিটকে যায়। হাবুডুবু খেতে থাকেন তারা। ছটফট করতে করতে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নিস্তেজ হয়ে যান তিনজনই। উপুড় হয়ে ভাসতে থাকেন জমে থাকা হাঁটু পানিতে। আশপাশে তখনো অনেক মানুষ। সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন, কেউ কেউ চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করছিলেন। চিৎকার-চেচামেচিও করতে থাকেন। কিন্তু কারোই কিছু করার ছিল না। সবাই বুঝতে পারছিলেন, বিদ্যুতায়িত হয়েছেন মিজান ও তার পরিবার। তবে সবার মতো আর দাঁড়িয়ে থাকেননি অটোরিকশা চালক যুবক মোহাম্মদ অনিক (২০)। চোখের সামনে এমন ঘটনা দেখে নেমে পড়েন পানিতে। পা ধরে উপরে টেনে তোলেন শিশু হোসাইনকে। তাকে এক নারীর কাছে দিয়ে উদ্ধার করতে যান শিশু লিমাকে। এতে তিনি নিজেও বিদ্যুতায়িত হন। পানিতে হাবুডুবু খেতে খেতে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অনিক নিজেও নিস্তেজ হয়ে যান।
গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রবল বৃষ্টিতে মিরপুর মডেল থানার সিরাজিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা হাজী রোড ঝিলপাড় বস্তির বিপরীত পাশে রাস্তার ওপর এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনা শুনেই ঝিলপাড় বস্তির বাসিন্দারা ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। পুরো ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আসে বস্তি জুড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সেই মর্মান্তিক ঘটনার ভিডিও চিত্র।
অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যুতের চোরাই লাইন ছিঁড়ে পড়ে জমে থাকা পানিতে। এতেই বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এই চারজন। অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় নিহত অনিকের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে অজ্ঞাতদের আসামি করে।
নিহতের মিজানের গ্রামের বাড়ি বরিশালের ঝালকাঠিতে। বিগত গত কয়েক বছর ধরে পরিবার নিয়ে মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। পরিবার নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরেন তিনি। দুপুরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঝিলপাড় বস্তিতে শ্বশুরবাড়িতে যান। সেখানে একত্রে সবাই খাওয়া-দাওয়া করেন। পরে রাতে সেখান থেকে নিজ বাসায় ফেরার পথেই প্রাণ হারান তারা।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে এই ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া শিশু হোসাইনকে নিয়ে মিরপুর মডেল থানায় আসেন আমিনা বেগম তৃতীয় লিঙ্গের একজন ব্যক্তি। তার সঙ্গে ছিলেন বৃষ্টি নামে তৃতীয় লিঙ্গের আরেকজন।
বৃষ্টি সাংবাদিকদের বলেন, তারা বৃষ্টির সময় বাসাতেই ছিলেন। একপর্যায়ে হইচই শুনে বাসা থেকে বের হয়ে শোনেন, কয়েকজন মারা গেছেন। তখন দেখতে পান, ছোট একটা বাচ্চা পানিতে ভাসছে। বাচ্চাটিকে একজন (অনিক) তুলে নিয়ে আসে। আশপাশের নারীরা তাকে বাসায় নিয়ে তেল মাখিয়ে দেয়। পরে বাচ্চাটির নাক দিয়ে রক্ত বের হলে হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু পরিচিত কেউ নেই, কে নিয়ে যাবে হাসপাতালে? এই দোটানা দেখে তিনি ও আমিনা বাচ্চাটিকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন।
আশপাশের কয়েক হাসপাতালে ঘুরলেও কোথাও বাচ্চাটিকে ভর্তি করানো যায়নি। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভর্তি করানো হয়। সেখান প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সকালে হোসাইনকে ছেড়ে দেন চিকিৎসকেরা।
বৃষ্টি জানান, হোসাইনের বাবা, মা ও বোনের লাশ ছিল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। শিশুটিকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর প্রতিবেশীরা তাকে নিয়ে যায়।
নিহত অটোরিকশা চালক অনিকের বন্ধু আবদুর রহমান বলেন, ঝিলপাড় বস্তির অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন টানা হয়েছে। বৃষ্টিতে এই বিদ্যুতের লাইন লিক করেছে। এ কারণেই রাস্তার পানি কারেন্ট হয়ে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ঝিলপাড় বস্তির সামনে বসে কাঁদছিলেন নিহত মুক্তার মা কুলসুম। তিনি বলেন, এই বৃষ্টি ও কাদার মধ্যে নাতি-নাতনিদের নিয়ে বাসায় যেতে না করেছিলাম মুক্তাকে। গত বৃহস্পতিবার দিনটা বাসায় থাকতে বলেছিলাম। বৃষ্টি কমায় বাসা থেকে বের হয়। রিকশায় যেতে বলেছিলাম। রিকশায় না পাওয়া হেঁটে যাওয়া এই ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, সিরাজিয়া ইসলামিয়া মাদরাসার দেয়াল কেটে বস্তিতে বিদ্যুতের লাইন নেয়া হয়েছে। এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, এখানে বৃষ্টি হলেই পানি জমে। পানি জমার দুইটি কারণ। এক ঝিলপাড়ের খাল দখল হয়ে যাওয়া ও এই সড়কের মধ্যে আইল্যান্ডে একটি গর্ত আছে। এই গর্তটি বন্ধ করে দিলে রাস্তায় হাঁটু পানি জমে। গত বৃহস্পতিবারের বৃষ্টির সময় এই গর্তটি বন্ধ ছিল। গর্তটা খুলে দেয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে পানি সরে যায়। তারা আরও বলেন, এখানকার খাল দখল করে দারুল আমান সোসাইটি একটি মসজিদ তৈরি করেছে। খালটি দখল করেছে ক্ষমতাধর লোকেরা। আইল্যান্ডের ওই গর্তটি তারাই বন্ধ করে রাখে। এই দখল করে যে স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, ওই স্থাপনাগুলো সরিয়ে দিলেই জলাবদ্ধতার সমস্যা দূর হবে।
এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলমান। এছাড়া নিহতের স্বজনরা আমাদের কাছে অবহেলিতজনিত মৃত্যুর একটি অভিযোগ করেছে। সেটি মামলা আকারে দায়েরের প্রক্রিয়াও চলমান। অবৈধ বিদ্যুৎসংযোগ থেকে শুরু করে এই মৃত্যুর পেছনে কারো কোন দায় আছে কি না সেটি আমরা তদন্ত করে দেখব। নিহত মুক্তার বাবা মহফিজ শুক্রবার সন্ধ্যায় জানান, তার মেয়ে, মেয়ের জামাই এবং নাতনি লিমার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর সন্ধ্যার দিকে মরদেহ নেয়া হয় ঝিলপাড় বস্তিতে। সেখানে জানাজা শেষে তিনজনের মরদেহ গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই পাশাপাশি দাফন করা হবে তাদের।
এদিকে শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘটনায় চার জনের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে ভালোভাবে অনুসন্ধান করেও ঘটনাস্থলে বা এর আশপাশে বিদ্যুতের কোন ছেঁড়া তার পাওয়া যায়নি উল্লেখ করা হয় ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
সাত বছর বয়সী মেয়ে লিমাকে কোলে নিয়ে মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজ সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তির শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজ বাসায় যাচ্ছিলেন শরবত বিক্রেতা মিজান হাওলাদার (৩০)। আর সাত মাস বয়সী ছেলে হোসাইনকে কোলে নিয়ে পিছু পিছু যাচ্ছিলেন তার স্ত্রী মুক্তা (২৫)। বস্তির সামনের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। বৃষ্টির কারণে ওই রাস্তায় হাঁটু সমান পানি জমে ছিল। এর মধ্যেই মেপে মেপে পা ফেলছিলেন সবাই। হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে পানিতে পড়ে যান মিজান। তাকে অনুসরণ করে হাঁটতে থাকা স্ত্রীও পরক্ষণে ঝাঁকুনি খেয়ে পড়ে যান পানিতে। কোলে থাকা শিশু হোসাইন ছিটকে যায়। হাবুডুবু খেতে থাকেন তারা। ছটফট করতে করতে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নিস্তেজ হয়ে যান তিনজনই। উপুড় হয়ে ভাসতে থাকেন জমে থাকা হাঁটু পানিতে। আশপাশে তখনো অনেক মানুষ। সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন, কেউ কেউ চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করছিলেন। চিৎকার-চেচামেচিও করতে থাকেন। কিন্তু কারোই কিছু করার ছিল না। সবাই বুঝতে পারছিলেন, বিদ্যুতায়িত হয়েছেন মিজান ও তার পরিবার। তবে সবার মতো আর দাঁড়িয়ে থাকেননি অটোরিকশা চালক যুবক মোহাম্মদ অনিক (২০)। চোখের সামনে এমন ঘটনা দেখে নেমে পড়েন পানিতে। পা ধরে উপরে টেনে তোলেন শিশু হোসাইনকে। তাকে এক নারীর কাছে দিয়ে উদ্ধার করতে যান শিশু লিমাকে। এতে তিনি নিজেও বিদ্যুতায়িত হন। পানিতে হাবুডুবু খেতে খেতে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অনিক নিজেও নিস্তেজ হয়ে যান।
গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রবল বৃষ্টিতে মিরপুর মডেল থানার সিরাজিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা হাজী রোড ঝিলপাড় বস্তির বিপরীত পাশে রাস্তার ওপর এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনা শুনেই ঝিলপাড় বস্তির বাসিন্দারা ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। পুরো ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আসে বস্তি জুড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সেই মর্মান্তিক ঘটনার ভিডিও চিত্র।
অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যুতের চোরাই লাইন ছিঁড়ে পড়ে জমে থাকা পানিতে। এতেই বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এই চারজন। অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় নিহত অনিকের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে অজ্ঞাতদের আসামি করে।
নিহতের মিজানের গ্রামের বাড়ি বরিশালের ঝালকাঠিতে। বিগত গত কয়েক বছর ধরে পরিবার নিয়ে মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। পরিবার নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরেন তিনি। দুপুরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঝিলপাড় বস্তিতে শ্বশুরবাড়িতে যান। সেখানে একত্রে সবাই খাওয়া-দাওয়া করেন। পরে রাতে সেখান থেকে নিজ বাসায় ফেরার পথেই প্রাণ হারান তারা।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে এই ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া শিশু হোসাইনকে নিয়ে মিরপুর মডেল থানায় আসেন আমিনা বেগম তৃতীয় লিঙ্গের একজন ব্যক্তি। তার সঙ্গে ছিলেন বৃষ্টি নামে তৃতীয় লিঙ্গের আরেকজন।
বৃষ্টি সাংবাদিকদের বলেন, তারা বৃষ্টির সময় বাসাতেই ছিলেন। একপর্যায়ে হইচই শুনে বাসা থেকে বের হয়ে শোনেন, কয়েকজন মারা গেছেন। তখন দেখতে পান, ছোট একটা বাচ্চা পানিতে ভাসছে। বাচ্চাটিকে একজন (অনিক) তুলে নিয়ে আসে। আশপাশের নারীরা তাকে বাসায় নিয়ে তেল মাখিয়ে দেয়। পরে বাচ্চাটির নাক দিয়ে রক্ত বের হলে হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু পরিচিত কেউ নেই, কে নিয়ে যাবে হাসপাতালে? এই দোটানা দেখে তিনি ও আমিনা বাচ্চাটিকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন।
আশপাশের কয়েক হাসপাতালে ঘুরলেও কোথাও বাচ্চাটিকে ভর্তি করানো যায়নি। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভর্তি করানো হয়। সেখান প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সকালে হোসাইনকে ছেড়ে দেন চিকিৎসকেরা।
বৃষ্টি জানান, হোসাইনের বাবা, মা ও বোনের লাশ ছিল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। শিশুটিকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর প্রতিবেশীরা তাকে নিয়ে যায়।
নিহত অটোরিকশা চালক অনিকের বন্ধু আবদুর রহমান বলেন, ঝিলপাড় বস্তির অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন টানা হয়েছে। বৃষ্টিতে এই বিদ্যুতের লাইন লিক করেছে। এ কারণেই রাস্তার পানি কারেন্ট হয়ে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ঝিলপাড় বস্তির সামনে বসে কাঁদছিলেন নিহত মুক্তার মা কুলসুম। তিনি বলেন, এই বৃষ্টি ও কাদার মধ্যে নাতি-নাতনিদের নিয়ে বাসায় যেতে না করেছিলাম মুক্তাকে। গত বৃহস্পতিবার দিনটা বাসায় থাকতে বলেছিলাম। বৃষ্টি কমায় বাসা থেকে বের হয়। রিকশায় যেতে বলেছিলাম। রিকশায় না পাওয়া হেঁটে যাওয়া এই ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, সিরাজিয়া ইসলামিয়া মাদরাসার দেয়াল কেটে বস্তিতে বিদ্যুতের লাইন নেয়া হয়েছে। এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, এখানে বৃষ্টি হলেই পানি জমে। পানি জমার দুইটি কারণ। এক ঝিলপাড়ের খাল দখল হয়ে যাওয়া ও এই সড়কের মধ্যে আইল্যান্ডে একটি গর্ত আছে। এই গর্তটি বন্ধ করে দিলে রাস্তায় হাঁটু পানি জমে। গত বৃহস্পতিবারের বৃষ্টির সময় এই গর্তটি বন্ধ ছিল। গর্তটা খুলে দেয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে পানি সরে যায়। তারা আরও বলেন, এখানকার খাল দখল করে দারুল আমান সোসাইটি একটি মসজিদ তৈরি করেছে। খালটি দখল করেছে ক্ষমতাধর লোকেরা। আইল্যান্ডের ওই গর্তটি তারাই বন্ধ করে রাখে। এই দখল করে যে স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, ওই স্থাপনাগুলো সরিয়ে দিলেই জলাবদ্ধতার সমস্যা দূর হবে।
এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলমান। এছাড়া নিহতের স্বজনরা আমাদের কাছে অবহেলিতজনিত মৃত্যুর একটি অভিযোগ করেছে। সেটি মামলা আকারে দায়েরের প্রক্রিয়াও চলমান। অবৈধ বিদ্যুৎসংযোগ থেকে শুরু করে এই মৃত্যুর পেছনে কারো কোন দায় আছে কি না সেটি আমরা তদন্ত করে দেখব। নিহত মুক্তার বাবা মহফিজ শুক্রবার সন্ধ্যায় জানান, তার মেয়ে, মেয়ের জামাই এবং নাতনি লিমার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর সন্ধ্যার দিকে মরদেহ নেয়া হয় ঝিলপাড় বস্তিতে। সেখানে জানাজা শেষে তিনজনের মরদেহ গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই পাশাপাশি দাফন করা হবে তাদের।
এদিকে শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘটনায় চার জনের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে ভালোভাবে অনুসন্ধান করেও ঘটনাস্থলে বা এর আশপাশে বিদ্যুতের কোন ছেঁড়া তার পাওয়া যায়নি উল্লেখ করা হয় ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।