মুক্তিযুদ্ধের ৫২ বছর পরেও একাত্তরের বীরঙ্গনারা পাকিস্তান সেনার ভয়ঙ্কর অত্যাচারের কথা ভুলতে পারছেন না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বীরত্বগাঁথার কথা বলা হলেও বীরঙ্গনাদের কথা উহ্য থাকে। এই শব্দটি গালির মতো হয়ে গেছে। বীরঙ্গনা একটি বেদনাবিধুর ইতিহাসের নাম হলেও আজো তাদের সঠিক মূল্যায়ন হয় নাই - এমন নানা অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বীরঙ্গনাদের নিয়ে সম্মিলন ‘মোরা আকাশের মত বাধাহীন’ কর্মসূচি।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বীরঙ্গনারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যেভাবে বলা হয়, তাদের জন্য যতো সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়, সেভাবে বীরঙ্গনাদের দেখা হয় না। তাদের আজো মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে অনেকই কেঁদে ফেলেন।
ইতিহাসের পাতায় বীরঙ্গনাদের আনার দাবি জানিয়ে নারী পক্ষের সদস্য ও ‘৭১ এর যে নারীদের ভুলেছি’ প্রকল্পের সমন্বয়কারী ফিরদৌস আজিম বলেন, সরকারের গেজেটে সব বীরাঙ্গনাকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধে বীরঙ্গনাদের অবদানের বিষয়ে সঠিকভাবে জানতে পারছে না। কয়েক লাখ নারী মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, শুধু এতটুকুই বলা হয়। কিন্তু তাদের বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানানো হয় না।
গতকাল নারীপক্ষের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ‘মোরা আকাশের মত বাধাহীন’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুদিন ব্যাপী আয়োজিত সম্মিলনের আয়োজন করে সাভার গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের পিএইচএ ভবন মিলনায়তনে।
ফিরদৌস বলেন, আমাদের পাঠ্যবইয়ে বীরঙ্গনা বিষয়টি নেই বললেই চলে। আমরা শুধু বীরগাঁথা, বীরত্বগাঁথা দেখি। তাই সরকার হয়তো বীরাঙ্গনার বদলে নারী মুক্তিযোদ্ধা শব্দটি ব্যবহার করতে চাইছে। কিন্তু আমরা চাই বীরাঙ্গনা নামটি থাক। তাদের ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানানো খুব দরকার।
তিনি বলেন, এই কর্মসূচীর আওতায় ১০০ বীরঙ্গনাদের নিয়ে কাজ করছে। এখন তাদের কার্যক্রমে ৫৪ জন বীরাঙ্গনা যুক্ত আছেন। তাদের মধ্যে ২০ জন মারা গেছেন। বাকিরা সরকারে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছেন। যারা এখন পর্যন্ত তালিকাভুক্ত হতে পারেনি তাদের অবস্থা খুবই খারাপ।
নারীপক্ষের সভানেত্রী গীতা দাস বলেন, ‘মোরা আকাশের মত বাধাহীন’ এই শিরোনাম দিয়ে আমরা ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেছি। এর মধ্যে বীরাঙ্গনা সম্মিলন একটি। এখানে ১৩টি জেলার ৩৮ বীরাঙ্গনা বোনরা এখানে সামিল হয়েছেন। গেজেটভুক্ত হতে না পারায় মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া সম্মানী এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না, এমন ৪৬ জন বীরাঙ্গনাকে মাসিক আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে নারীপক্ষ।
২১শে পদক প্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাওসার চৌধুরী বলেন, বীরাঙ্গনারা ১৯৭২ সালের পর পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী দ্বারা ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা প্রকাশ করতে চাননি। এর পরবর্তী সময়ে সামাজিকভাবে এই বিষয়গুলো আরও জটিল হতে থাকে। এমন একটা পশ্চাৎপদ সময়ে আমরা বসবাস করি সেখানে নারীদের এমন একটা চোখে দেখা হয়, তার উপর পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার নারীদের আমরা কতোটা সম্মানের চোখে দেখবো, কতটা সম্মান করবো, সেটা বড় ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। সে জায়গায় সমাজ তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। এই ভয়ে বীরাঙ্গনারা নিজেকে প্রকাশ করেননি।
খুলনা থেকে আসা বীরঙ্গনা রঞ্জিতা বলেন, ‘আমরা রাস্তা চিনি না, পথ চিনি না। কাগজপত্র নিয়ে দৌঁড়াতে জানি না। তাই স্বীকৃতিও পাচ্ছি না। কুড়িগ্রাম থেকে আসা বীরঙ্গনা মোছা. আবিরন বলেন, ‘৯ সাল থাকি কাগজপত্র নিয়া দৌড়াওছি। কারো, কারোটা হইসে। মোরটা (আমারটা) হয় নাই’।
সম্মিলনে অতিথি হিসেবে অংশ নেওয়া সাবেক সচিব রীতি ইব্রাহিম বলেন, বীরাঙ্গনাদের অনেকেই মারা গেছেন। যারা বেঁচে আছেন, তাদেরও আমরা যথাযথভাবে স্বীকৃতি দিতে পারছি না।
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গবেষক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শবনম আজীম, চলচ্চিত্র নিমার্তা শবনম ফেরদৌসী, আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইয়ের রচয়িতা ড. নীলিমা ইব্রাহিমের মেয়ে রিতি ইব্রহিম আহসান। এ ছাড়াও গবেষক ও নাট্যব্যক্তিত্ব কাউসার চৌধুরী প্রমুখ।
সোমবার, ০৪ মার্চ ২০২৪
মুক্তিযুদ্ধের ৫২ বছর পরেও একাত্তরের বীরঙ্গনারা পাকিস্তান সেনার ভয়ঙ্কর অত্যাচারের কথা ভুলতে পারছেন না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বীরত্বগাঁথার কথা বলা হলেও বীরঙ্গনাদের কথা উহ্য থাকে। এই শব্দটি গালির মতো হয়ে গেছে। বীরঙ্গনা একটি বেদনাবিধুর ইতিহাসের নাম হলেও আজো তাদের সঠিক মূল্যায়ন হয় নাই - এমন নানা অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বীরঙ্গনাদের নিয়ে সম্মিলন ‘মোরা আকাশের মত বাধাহীন’ কর্মসূচি।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বীরঙ্গনারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যেভাবে বলা হয়, তাদের জন্য যতো সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়, সেভাবে বীরঙ্গনাদের দেখা হয় না। তাদের আজো মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে অনেকই কেঁদে ফেলেন।
ইতিহাসের পাতায় বীরঙ্গনাদের আনার দাবি জানিয়ে নারী পক্ষের সদস্য ও ‘৭১ এর যে নারীদের ভুলেছি’ প্রকল্পের সমন্বয়কারী ফিরদৌস আজিম বলেন, সরকারের গেজেটে সব বীরাঙ্গনাকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধে বীরঙ্গনাদের অবদানের বিষয়ে সঠিকভাবে জানতে পারছে না। কয়েক লাখ নারী মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, শুধু এতটুকুই বলা হয়। কিন্তু তাদের বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানানো হয় না।
গতকাল নারীপক্ষের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ‘মোরা আকাশের মত বাধাহীন’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুদিন ব্যাপী আয়োজিত সম্মিলনের আয়োজন করে সাভার গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের পিএইচএ ভবন মিলনায়তনে।
ফিরদৌস বলেন, আমাদের পাঠ্যবইয়ে বীরঙ্গনা বিষয়টি নেই বললেই চলে। আমরা শুধু বীরগাঁথা, বীরত্বগাঁথা দেখি। তাই সরকার হয়তো বীরাঙ্গনার বদলে নারী মুক্তিযোদ্ধা শব্দটি ব্যবহার করতে চাইছে। কিন্তু আমরা চাই বীরাঙ্গনা নামটি থাক। তাদের ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানানো খুব দরকার।
তিনি বলেন, এই কর্মসূচীর আওতায় ১০০ বীরঙ্গনাদের নিয়ে কাজ করছে। এখন তাদের কার্যক্রমে ৫৪ জন বীরাঙ্গনা যুক্ত আছেন। তাদের মধ্যে ২০ জন মারা গেছেন। বাকিরা সরকারে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছেন। যারা এখন পর্যন্ত তালিকাভুক্ত হতে পারেনি তাদের অবস্থা খুবই খারাপ।
নারীপক্ষের সভানেত্রী গীতা দাস বলেন, ‘মোরা আকাশের মত বাধাহীন’ এই শিরোনাম দিয়ে আমরা ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেছি। এর মধ্যে বীরাঙ্গনা সম্মিলন একটি। এখানে ১৩টি জেলার ৩৮ বীরাঙ্গনা বোনরা এখানে সামিল হয়েছেন। গেজেটভুক্ত হতে না পারায় মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া সম্মানী এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না, এমন ৪৬ জন বীরাঙ্গনাকে মাসিক আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে নারীপক্ষ।
২১শে পদক প্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাওসার চৌধুরী বলেন, বীরাঙ্গনারা ১৯৭২ সালের পর পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী দ্বারা ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা প্রকাশ করতে চাননি। এর পরবর্তী সময়ে সামাজিকভাবে এই বিষয়গুলো আরও জটিল হতে থাকে। এমন একটা পশ্চাৎপদ সময়ে আমরা বসবাস করি সেখানে নারীদের এমন একটা চোখে দেখা হয়, তার উপর পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার নারীদের আমরা কতোটা সম্মানের চোখে দেখবো, কতটা সম্মান করবো, সেটা বড় ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। সে জায়গায় সমাজ তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। এই ভয়ে বীরাঙ্গনারা নিজেকে প্রকাশ করেননি।
খুলনা থেকে আসা বীরঙ্গনা রঞ্জিতা বলেন, ‘আমরা রাস্তা চিনি না, পথ চিনি না। কাগজপত্র নিয়ে দৌঁড়াতে জানি না। তাই স্বীকৃতিও পাচ্ছি না। কুড়িগ্রাম থেকে আসা বীরঙ্গনা মোছা. আবিরন বলেন, ‘৯ সাল থাকি কাগজপত্র নিয়া দৌড়াওছি। কারো, কারোটা হইসে। মোরটা (আমারটা) হয় নাই’।
সম্মিলনে অতিথি হিসেবে অংশ নেওয়া সাবেক সচিব রীতি ইব্রাহিম বলেন, বীরাঙ্গনাদের অনেকেই মারা গেছেন। যারা বেঁচে আছেন, তাদেরও আমরা যথাযথভাবে স্বীকৃতি দিতে পারছি না।
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গবেষক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শবনম আজীম, চলচ্চিত্র নিমার্তা শবনম ফেরদৌসী, আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইয়ের রচয়িতা ড. নীলিমা ইব্রাহিমের মেয়ে রিতি ইব্রহিম আহসান। এ ছাড়াও গবেষক ও নাট্যব্যক্তিত্ব কাউসার চৌধুরী প্রমুখ।