alt

নগর-মহানগর

ঢাকা, চট্টগ্রামে ঝড়-বৃষ্টি-জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম ব্যুরো : সোমবার, ২৭ মে ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দিনভর বৃষ্টিতে ঢাকা-চট্টগ্রামের অনেক রাস্তা তলিয়ে যায়। এ রকম হাঁটুপানি ছিল দিনভরই-সংবাদ

রিমেলের প্রভাবে কখনো মুষলধার, কখনো হালকা বৃষ্টি আর ঝোড়ো বাতাসের কারণে সোমবার (২৭ মে) সারাদিন চরম দুর্ভোগে কেটেছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের জনজীবন। একদিকে বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা, অন্যদিকে যানবাহনের অভাবে সাধারণ জীবনযাত্রা থমকে গিয়েছিল।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণ এই দুই নগরীতে সোমবার সকাল থেকে সারাদিন দমকা হাওয়ার সঙ্গে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে মানুষের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বৃষ্টির জন্য অনেক বাজার-দোকান খুলতে পারেননি দোকানিরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৬ মে রোববার রাতে ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানার পর সেটি শক্তি হারিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবেই ঢাকায় দমকা হাওয়া ও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকায় প্রায় ১৫০ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টি হয়েছে। চলতি মৌসুমে ঢাকায় এটাই সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সোমবার ঢাকায় ভোর থেকে সারাদিন দমকা হাওয়া বয়ে যায়। আজ পর্যন্ত থেমে থেমে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাবে বলে আবহাওয়াবিদেরা জানিয়েছেন।

এই ঝড়ের প্রভাবে সারাদেশেই বৃষ্টি হচ্ছে। বিকেল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে ১৩৮ মিলিমিটার।

বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকার মূল সড়কসহ অনেক অলিগলি হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।

পুরনো ঢাকার বংশাল, ধোলাইখাল, নিউমার্কেটসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় অলিগলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, মোহাম্মদপুর এলাকার বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতার ফলে সড়ক ডুবে গিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি হয়। একই কারণে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। অনেক জায়গায় দোকানপাট বন্ধ করে অলস সময় পার করেন বিক্রেতারা।

পুরনো ঢাকার বাসিন্দা আবদুস সাত্তার জলবদ্ধতায় পথ চলতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্ষা এলেই সিটি করপোরেশনের মনে পড়ে তাদের উন্নয়ন কাজ করতে হবে। সারা বছর খবর থাকে না। এই এলাকার ড্রেনের কাজ চলছে। এ কারণে পানি কোথাও যেতে পারছে না। তাই অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে মানুষজনকে।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকার মানুষে সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে জলাবদ্ধতার জন্য ভোগান্তি হয়নি। আগে একাধিকবার বৃষ্টি হওয়ার পরই দেখা গেছে নিউমার্কেট এলাকায় পানি জমে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

এক দোকানদার তার দোকানের সামনে পানি জমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, এটা কোনো নতুন চিত্র না। বৃষ্টির পানি জমে রাস্তায় হাঁটার অবস্থা নেই। প্রতি বছর এলাকায় জলবদ্ধতা হয়, অথচ এর প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। আর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের।

পল্টনে কথা হয় মতিঝিলগামী এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি মীরপুর থেকে কর্মক্ষেত্রে আসার সময় মেট্রোরেল বন্ধ পাওয়ায় বাসে চড়েই এসেছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বৃষ্টির জন্য সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কম। বাসে ভিড়ের জন্য উঠতে না পেরে সিএনজিতে আসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। কারণ সিএনজিচালক এত বেশি ভাড়া হাকেন যে তাতে আমার পকেটের টাকায় হবে না। ফলে বাস উঠতে অপেক্ষা করতে হয়েছে এক ঘণ্টা।

শুধু বাস যাত্রী বা দোকানদারই নয় যারা এক স্থান থেকে হেঁটে সামান্য দূরে যেতে চেষ্টা করেছেন তারাও ব্যর্থ হন বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতার কারণে। কোথাও কোথাও প্রায় হাঁটু সমান পানি জমে যেতে দেখা যায়। পায়ের জুতা ভিজিয়ে পথ চলতে হয়েছে অনেক পথচারীকে। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা সব রাস্তায় উঠে এসেছে। এতে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এসব কারণে ফুটপাথ দিয়ে অনেকের হাঁটাও সম্ভব হয় না।

হেঁটে যাওয়া সম্ভব না হওয়ার বিষয়টি টের পেয়ে স্বল্প দূরতে যেতে অনেক রিকশাচলাক দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করে অভিযোগ অনেক অফিসযাত্রীর।

হিমেল ঝড়ের সময় প্রবল বাতাসে ঢাকার অনেক স্থানে গাছের ডালপালা ভেঙে রাস্তার ওপর পড়ে গেছে। এতেও যানবাহন ও মানুষের চলাফেরায় বিঘœ সৃষ্টি হয়। পুরান ঢাকার জজ কোর্টের সামনে, ভিক্টোরিয়া পার্ক, সূত্রাপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গাছের ডাল ভেঙে এই সমস্যা সৃষ্টি হতে দেখা গেছে।

বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে সকালে স্কুলে যাওয়ার পথেও বিপদে পড়েন অনেক শিক্ষার্থী। একদিকে যানবাহনের অভাব, অন্যদিকে বেশি ভাড়ার কারণে অনেক অভিভাবক সমস্যায় পড়েন সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যেতে। তবে কিছু স্কুল সকালে বৃষ্টি দেখে ফোন জানিয়ে দিয়েছে যে, আজ বন্ধ থাকবে। এতে কিছু শিক্ষার্থী ভোগান্তি থেকে বেঁচে যান।

এদিকে রাজধানীর বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনে কাজ করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় কোথাও জলাবদ্ধতা হলে বা পানি জমে থাকলে হটলাইনে যোগাযোগ করার (১৬১০৬) আহ্বান জানিয়েছে। ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯১টি দল (প্রতি দলে পাঁচ জন কর্মী) মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ।

দুর্ভোগে চট্টগ্রাম নগরবাসী
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে একটানা ভারী বর্ষণ, তার সঙ্গে জোয়ারের পানি যোগ হয়ে তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকা। ঝড়ের ঝাঁপটা খুব একটা না লাগলেও রোববার রাত থেকে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে, যা অব্যাহত ছিল সোমবার সারাদিন। ভোর থেকে শহরের বিভিন্ন সড়কে পানি উঠতে শুরু করে। ফলে পথে বের হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। বিভিন্ন সড়কে গোড়ালি থেকে কোমর সমান পানি ঠেলে তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে অনেক মানুষকে। ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও ২৪ ঘণ্টায় দেড় শতাধিক মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। রোববার রাতে বৃষ্টি শুরুর পর মধ্যরাতে নগরীর কাতালগঞ্জ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এরপর সোমবার সকাল থেকে নগরীর প্রবর্তক মোড়, চকবাজার, ডিসি রোড, দুই নম্বর গেইটসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যায়। সোমবার দুপুরের মধ্যেই বহদ্দারহাট মোড়, মুরাদপুর, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, কাপাসগোলা, বাকলিয়া ও হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে প্রবর্তক মোড়ের অবস্থা বেশি খারাপ দেখা গেছে। এই সড়কে কোমর সমান পানি ঠেলে রিকশা চলেছে, পানির মধ্যেই হেঁটে চলাচলা করেছেন অনেক পথচারী।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে ডুবে গেছে চট্টগ্রাম নগরীর বেশিরভাগ এলাকা। ডুবেছে সড়ক, অলি-গলি। জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক যানজট। পানি ঢুকেছে বাসাবাড়ি, দোকানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এতে নগরীর বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

প্রবর্তক মোড়ে অফিসযাত্রী আনিসুর রহমান জানান, সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে দেখি আমাদের এলাকায় পানি। অনেক কষ্টে তা পেরিয়ে সামনের সড়কে আসি। সেখানেও পানি। অন্য এলাকাতেও রাস্তা ডুবেছে। রিকশায় আর হেঁটে অনেক কষ্টে দুই ঘণ্টায় কোনো রকমে অফিসে পৌঁছেছি।

মুরাদপুরের এক বাসিন্দা মিজানুল আলম তার পথ চলার কষ্ট তুলে ধরে বলেন, সকালে বাসা থেকে বের হতে গিয়ে দেখি সড়ক প্রায় হাঁটু সমনা পানিতে ডুবে আছে। এরপর আর বাসা থেকে বের হতে পারিনি।

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, নগরীর বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে গেছে। মোহাম্মদপুর, নাজিরপাড়া, বিবিরহাট, জিইসি, ২ নম্বর গেইট, শুলকবহর, চকবাজার, চান্দগাঁও এবং বাকলিয়া এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

ভারী বর্ষণে ড্রেন উপচে পানি সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে জানিয়ে মোবারক আলী বলেন, যেমন মুরাদপুর এলাকায় কিন্তু ড্রেনে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। নালা ভরে পানি সড়কের উপর দিয়ে যাচ্ছে। ধারণক্ষমতার বেশি বৃষ্টি হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে অতি ভারী বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় নগরীর বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারী অনেক বাসিন্দাকে রোববার রাতে সরিয়ে নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

বায়তুল মোকাররমে কঠোর নিরাপত্তা

কারফিউ পুরোপুরি তুলে না নেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

ছবি

জনজীবনে স্বস্তি, রাজধানীতে যানজট

ছবি

স্বাভাবিকতার পথে নগরজীবন

ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচিতে রামপুরায় বিটিভি ভবনে অগ্নিকাণ্ড

ছবি

বাড্ডায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ, একজন নিহত

ছবি

মেট্রোরেলের মিরপুর অংশে চলাচল বন্ধ

ছবি

বাড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে পুলিশের রাবার বুলেট ও ছররা গুলিতে আহত অনেকে

ছবি

উত্তাল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, যান চলাচল বন্ধ

ছবি

মিরপুর-১০ রণক্ষেত্র, আ.লীগের সমাবেশ পণ্ড

ছবি

রামপুরা পুলিশ বক্সে আগুন, সড়কে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

ছবি

সংঘর্ষে রণক্ষেত্র যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া

ছবি

সহিংসতা পরিহার করুনঃ পুলিশ সদর দপ্তর

ছবি

ঢাকার শনির আখড়ায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ, শিশুসহ ৬ জন গুলিবিদ্ধ

ছবি

ঢাকায় কোটা সংঘর্ষে নিহত ২ঃ পুলিশ বলছে দায় আন্দোলনকারীদের

ছবি

আজ গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল কর্মসূচি

ছবি

সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ

ছবি

"তাণ্ডবের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশের মোতায়েন"

ছবি

"কোটা আন্দোলন: ঢাকা মেডিকেলের সামনে সংঘর্ষ ও হাত বোমা বিস্ফোরণ"

রাজধানীতে গ্যাস সংকট, চুলা জ্বলে না বাসাবাড়িতে

ছবি

ডিএনসিসির চিঠি, ‘আতঙ্কে’ গরুর খামারিরা

ছবি

চার দফা দাবিতে রাজধানীতে হরিজন সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ সমাবেশ

ছবি

প্রবল বর্ষণে রাজধানীতে বিদ্যুতায়িত হয়ে চার শ্রমজীবীর মৃত্যু

৫ বছর পড়ে আছে ৩৮ কোটির সিজেএম ভবন

ছবি

কোটাবিরোধী আন্দোলন: শিক্ষার্থীদের নামে পুলিশের মামলা

ছবি

সকাল থেকে ঝুম বৃষ্টি, ভাসছে ঢাকা

ছবি

বেবিচক এর মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়সমূহের সাথে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর অনু্ষ্ঠান

ছবি

‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগানে উত্তাল শাহবাগ, পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দিল শিক্ষার্থীরা

ছবি

আত্মসাত মামলা: ইউনূসের আবেদনের রায় ২১ জুলাই

ছবি

এসি নষ্ট, আকাশে ৩৭ মিনিট উড়ে ঢাকায় ফিরল বিমান

ছবি

কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে হরিজনদের ওপর হামলার অভিযোগ

ছবি

বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিপোর্টার্স ফোরামের নেতৃত্বে সবুজ-কাওসার

ছবি

বিসিএস ও মেডিকেল প্রশ্নফাঁসকারীদের বিচার চায় জবি শিক্ষার্থীরা

ছবি

কোটা : ঢাবির পর এবার জবি শিক্ষার্থীদের জিরো পয়েন্ট অবরোধ

ছবি

বাংলা ব্লকেডে’ অচল সড়ক, মেট্রোতে উপচেপড়া ভিড়

ছবি

কোটা : স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ আপিল বিভাগের

tab

নগর-মহানগর

ঢাকা, চট্টগ্রামে ঝড়-বৃষ্টি-জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম ব্যুরো

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দিনভর বৃষ্টিতে ঢাকা-চট্টগ্রামের অনেক রাস্তা তলিয়ে যায়। এ রকম হাঁটুপানি ছিল দিনভরই-সংবাদ

সোমবার, ২৭ মে ২০২৪

রিমেলের প্রভাবে কখনো মুষলধার, কখনো হালকা বৃষ্টি আর ঝোড়ো বাতাসের কারণে সোমবার (২৭ মে) সারাদিন চরম দুর্ভোগে কেটেছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের জনজীবন। একদিকে বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা, অন্যদিকে যানবাহনের অভাবে সাধারণ জীবনযাত্রা থমকে গিয়েছিল।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণ এই দুই নগরীতে সোমবার সকাল থেকে সারাদিন দমকা হাওয়ার সঙ্গে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে মানুষের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বৃষ্টির জন্য অনেক বাজার-দোকান খুলতে পারেননি দোকানিরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৬ মে রোববার রাতে ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানার পর সেটি শক্তি হারিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবেই ঢাকায় দমকা হাওয়া ও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকায় প্রায় ১৫০ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টি হয়েছে। চলতি মৌসুমে ঢাকায় এটাই সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সোমবার ঢাকায় ভোর থেকে সারাদিন দমকা হাওয়া বয়ে যায়। আজ পর্যন্ত থেমে থেমে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাবে বলে আবহাওয়াবিদেরা জানিয়েছেন।

এই ঝড়ের প্রভাবে সারাদেশেই বৃষ্টি হচ্ছে। বিকেল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে ১৩৮ মিলিমিটার।

বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকার মূল সড়কসহ অনেক অলিগলি হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।

পুরনো ঢাকার বংশাল, ধোলাইখাল, নিউমার্কেটসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় অলিগলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, মোহাম্মদপুর এলাকার বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতার ফলে সড়ক ডুবে গিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি হয়। একই কারণে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। অনেক জায়গায় দোকানপাট বন্ধ করে অলস সময় পার করেন বিক্রেতারা।

পুরনো ঢাকার বাসিন্দা আবদুস সাত্তার জলবদ্ধতায় পথ চলতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্ষা এলেই সিটি করপোরেশনের মনে পড়ে তাদের উন্নয়ন কাজ করতে হবে। সারা বছর খবর থাকে না। এই এলাকার ড্রেনের কাজ চলছে। এ কারণে পানি কোথাও যেতে পারছে না। তাই অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে মানুষজনকে।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকার মানুষে সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে জলাবদ্ধতার জন্য ভোগান্তি হয়নি। আগে একাধিকবার বৃষ্টি হওয়ার পরই দেখা গেছে নিউমার্কেট এলাকায় পানি জমে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

এক দোকানদার তার দোকানের সামনে পানি জমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, এটা কোনো নতুন চিত্র না। বৃষ্টির পানি জমে রাস্তায় হাঁটার অবস্থা নেই। প্রতি বছর এলাকায় জলবদ্ধতা হয়, অথচ এর প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। আর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের।

পল্টনে কথা হয় মতিঝিলগামী এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি মীরপুর থেকে কর্মক্ষেত্রে আসার সময় মেট্রোরেল বন্ধ পাওয়ায় বাসে চড়েই এসেছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বৃষ্টির জন্য সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কম। বাসে ভিড়ের জন্য উঠতে না পেরে সিএনজিতে আসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। কারণ সিএনজিচালক এত বেশি ভাড়া হাকেন যে তাতে আমার পকেটের টাকায় হবে না। ফলে বাস উঠতে অপেক্ষা করতে হয়েছে এক ঘণ্টা।

শুধু বাস যাত্রী বা দোকানদারই নয় যারা এক স্থান থেকে হেঁটে সামান্য দূরে যেতে চেষ্টা করেছেন তারাও ব্যর্থ হন বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতার কারণে। কোথাও কোথাও প্রায় হাঁটু সমান পানি জমে যেতে দেখা যায়। পায়ের জুতা ভিজিয়ে পথ চলতে হয়েছে অনেক পথচারীকে। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা সব রাস্তায় উঠে এসেছে। এতে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এসব কারণে ফুটপাথ দিয়ে অনেকের হাঁটাও সম্ভব হয় না।

হেঁটে যাওয়া সম্ভব না হওয়ার বিষয়টি টের পেয়ে স্বল্প দূরতে যেতে অনেক রিকশাচলাক দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করে অভিযোগ অনেক অফিসযাত্রীর।

হিমেল ঝড়ের সময় প্রবল বাতাসে ঢাকার অনেক স্থানে গাছের ডালপালা ভেঙে রাস্তার ওপর পড়ে গেছে। এতেও যানবাহন ও মানুষের চলাফেরায় বিঘœ সৃষ্টি হয়। পুরান ঢাকার জজ কোর্টের সামনে, ভিক্টোরিয়া পার্ক, সূত্রাপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গাছের ডাল ভেঙে এই সমস্যা সৃষ্টি হতে দেখা গেছে।

বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে সকালে স্কুলে যাওয়ার পথেও বিপদে পড়েন অনেক শিক্ষার্থী। একদিকে যানবাহনের অভাব, অন্যদিকে বেশি ভাড়ার কারণে অনেক অভিভাবক সমস্যায় পড়েন সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যেতে। তবে কিছু স্কুল সকালে বৃষ্টি দেখে ফোন জানিয়ে দিয়েছে যে, আজ বন্ধ থাকবে। এতে কিছু শিক্ষার্থী ভোগান্তি থেকে বেঁচে যান।

এদিকে রাজধানীর বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনে কাজ করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় কোথাও জলাবদ্ধতা হলে বা পানি জমে থাকলে হটলাইনে যোগাযোগ করার (১৬১০৬) আহ্বান জানিয়েছে। ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯১টি দল (প্রতি দলে পাঁচ জন কর্মী) মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ।

দুর্ভোগে চট্টগ্রাম নগরবাসী
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে একটানা ভারী বর্ষণ, তার সঙ্গে জোয়ারের পানি যোগ হয়ে তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকা। ঝড়ের ঝাঁপটা খুব একটা না লাগলেও রোববার রাত থেকে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে, যা অব্যাহত ছিল সোমবার সারাদিন। ভোর থেকে শহরের বিভিন্ন সড়কে পানি উঠতে শুরু করে। ফলে পথে বের হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। বিভিন্ন সড়কে গোড়ালি থেকে কোমর সমান পানি ঠেলে তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে অনেক মানুষকে। ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও ২৪ ঘণ্টায় দেড় শতাধিক মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। রোববার রাতে বৃষ্টি শুরুর পর মধ্যরাতে নগরীর কাতালগঞ্জ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এরপর সোমবার সকাল থেকে নগরীর প্রবর্তক মোড়, চকবাজার, ডিসি রোড, দুই নম্বর গেইটসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যায়। সোমবার দুপুরের মধ্যেই বহদ্দারহাট মোড়, মুরাদপুর, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, কাপাসগোলা, বাকলিয়া ও হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে প্রবর্তক মোড়ের অবস্থা বেশি খারাপ দেখা গেছে। এই সড়কে কোমর সমান পানি ঠেলে রিকশা চলেছে, পানির মধ্যেই হেঁটে চলাচলা করেছেন অনেক পথচারী।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে ডুবে গেছে চট্টগ্রাম নগরীর বেশিরভাগ এলাকা। ডুবেছে সড়ক, অলি-গলি। জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক যানজট। পানি ঢুকেছে বাসাবাড়ি, দোকানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এতে নগরীর বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

প্রবর্তক মোড়ে অফিসযাত্রী আনিসুর রহমান জানান, সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে দেখি আমাদের এলাকায় পানি। অনেক কষ্টে তা পেরিয়ে সামনের সড়কে আসি। সেখানেও পানি। অন্য এলাকাতেও রাস্তা ডুবেছে। রিকশায় আর হেঁটে অনেক কষ্টে দুই ঘণ্টায় কোনো রকমে অফিসে পৌঁছেছি।

মুরাদপুরের এক বাসিন্দা মিজানুল আলম তার পথ চলার কষ্ট তুলে ধরে বলেন, সকালে বাসা থেকে বের হতে গিয়ে দেখি সড়ক প্রায় হাঁটু সমনা পানিতে ডুবে আছে। এরপর আর বাসা থেকে বের হতে পারিনি।

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, নগরীর বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে গেছে। মোহাম্মদপুর, নাজিরপাড়া, বিবিরহাট, জিইসি, ২ নম্বর গেইট, শুলকবহর, চকবাজার, চান্দগাঁও এবং বাকলিয়া এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

ভারী বর্ষণে ড্রেন উপচে পানি সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে জানিয়ে মোবারক আলী বলেন, যেমন মুরাদপুর এলাকায় কিন্তু ড্রেনে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। নালা ভরে পানি সড়কের উপর দিয়ে যাচ্ছে। ধারণক্ষমতার বেশি বৃষ্টি হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে অতি ভারী বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় নগরীর বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারী অনেক বাসিন্দাকে রোববার রাতে সরিয়ে নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

back to top