ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন,সম্প্রতি হাতিরঝিল প্রকল্পের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার পর সেখানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ভবনটি ভাঙার পর জায়গার অর্ধেক এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, যা প্রকল্পের প্রাথমিক উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করছে।
শনিবার রাজধানীর বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স-বিআইপি সম্মেলন কেন্দ্রে এক সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি রাজধানীর উন্নয়নে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা নিয়েও কথা বলেন।
ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-ডুরা ‘ঢাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টিতে খাল পুনুরুদ্ধারের ভূমিকা’ শীর্ষক এই সংলাপের আয়োজন করে।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
সংলাপের বিশেষ অতিথি ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, “ঢাকা একটা শহর যেখানে ১৪টি সংস্থা কাজ করে। প্রতিটি সংস্থা নিজকে স্বাধীন বলে দাবি করে কিন্তু তাদের কাজের কোনো জবাবদিহিতা নেই। আজ সিটি করপোরেশন রাস্তা করে দিলে কাল আবার ওয়াসা রাস্তা কেটে রাখে। এ অবস্থায় নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করে কী লাভ হবে? এ জন্য টেকসই উন্নয়নের বিকল্প নেই।”
দখলদাররা রাজনৈতিকভাবে খুবই শক্তিশালী উল্লেখ করে তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন।
হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে জলাশয় উদ্ধার করা হলেও সেখানে আবার ভরাট করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা হয়েছে ওইটার অবস্থা কী জানেন? ওইটার অর্ধেক নাই এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য। তাহলে ভবনটা ভাঙলেন কেন?
“পরিবেশবাদীরা যারা ওইটা নিয়ে আন্দোলন, বড় বড় মামলা করলেন তারা কই? সেই পরিবেশবাদীরা আবার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কনসালটেন্ট।”
আলোচনায় অংশ নিয়ে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, খালের জমিতে সরকারি-বেসরকারি দখলদারদের আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ করা না হলে জলাবদ্ধতা সমস্যারও কোনো স্থায়ী সমাধান নেই।
তিনি বলেন “শ্যামল দত্ত (ভোরের কাগজ সম্পাদক) সাহেব বলেছেন, হাতিরঝিলের খালি জায়গা কীভাবে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আমি ওই ব্যাপারে আর না বলি। কিন্তু এই সকল আগ্রাসন, ভূমিদস্যূদের আগ্রাসনের বিষয়ে সরকারি বেসরকারি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দিন দিন আমাদের সামনে আরও প্রতিকূলতা সৃষ্টি করছে। এ থেকে পরিত্রাণ না পাওয়া পর্যন্ত পূর্ণরূপে আমরা জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পারব এটা বলা যায় না।”
বিজিএমইএ ভবনকে হাতিরঝিল প্রকল্পের ‘ক্যান্সার’ আখ্যায়িত করে হাই কোর্ট ২০১১ সালে এক রায়ে ইমারতটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। পরে আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে।
সর্বোচ্চ আদালত বিজিএমইএ ভবন ভাঙার রায় দেওয়ার পর কয়েক দফায় সময় নিয়েছিল তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা। সব বাধা কাটিয়ে ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি ভবনটি ভাঙা শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা উল্লেখ করেন, রাজধানীতে উন্নয়নের জন্য কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এক সংস্থা কাজ শেষ করার পর অন্য সংস্থা একই জায়গায় কাজ শুরু করে, ফলে নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তারা দখলদারদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান, যা রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস জানান, সরকারি-বেসরকারি দখলদারদের কারণে খাল ও জলাশয় পুনুরুদ্ধার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে, যা ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বাধা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, গত তিন বছরে জলাবদ্ধতা ৭০ শতাংশ কমানো হয়েছে, তবে এখনো অনেক কাজ বাকি আছে।
বিজিএমইএ ভবনটি ২০২০ সালে ভাঙা শুরু হলেও, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য সেই স্থানটি ভরাট করা হয়েছে। এটি নিয়ে পরিবেশবাদীরা আপত্তি তুলেছেন। তবে একই সাথে তারা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কনসালটেন্ট হিসেবেও কাজ করছেন, যা নিয়ে শ্যামল দত্ত প্রশ্ন তুলেছেন।
অন্যান্য বক্তারা উল্লেখ করেন, সিটি করপোরেশন এখন দায়িত্ব নিয়ে জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ঢাকার বিভিন্ন খাল ও জলাশয়ের দখল এবং পুনুরুদ্ধার নিয়ে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
ডিএসসিসি মেয়র তাপস জানান, ২০২১ সালে ডিএসসিসি এলাকায় ১৬১টি স্থান চিহ্নিত করে ১৩৬টি জায়গার জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়েছে এবং নতুন করে ৫০টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। ওয়াসা থেকে পাওয়া ১১টি খালের মধ্যে জিরানি, মান্ডা, শ্যামপুর এবং কালুনগর খাল গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি। খালগুলো নিয়ে ইতোমধ্যে একটি প্রকল্পের অনুমোদন পাওয়া গেছে।
তাপস আরও বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালগুলো আমরা এখনো বুঝে পাইনি। তবে, এগুলো পেলে সব খাল ও জলাশয় নিয়ে আমরা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করব।”
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন ডুরার সভাপতি ওবায়দুর মাসুম, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মোল্লা। অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান, ডুরার সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়শ্রী ভাদুড়ী, ডিএসসিসির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বাবুল এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নার্গিস মাহতাব বক্তব্য রাখেন।
শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪
ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন,সম্প্রতি হাতিরঝিল প্রকল্পের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার পর সেখানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ভবনটি ভাঙার পর জায়গার অর্ধেক এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, যা প্রকল্পের প্রাথমিক উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করছে।
শনিবার রাজধানীর বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স-বিআইপি সম্মেলন কেন্দ্রে এক সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি রাজধানীর উন্নয়নে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা নিয়েও কথা বলেন।
ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-ডুরা ‘ঢাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টিতে খাল পুনুরুদ্ধারের ভূমিকা’ শীর্ষক এই সংলাপের আয়োজন করে।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
সংলাপের বিশেষ অতিথি ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, “ঢাকা একটা শহর যেখানে ১৪টি সংস্থা কাজ করে। প্রতিটি সংস্থা নিজকে স্বাধীন বলে দাবি করে কিন্তু তাদের কাজের কোনো জবাবদিহিতা নেই। আজ সিটি করপোরেশন রাস্তা করে দিলে কাল আবার ওয়াসা রাস্তা কেটে রাখে। এ অবস্থায় নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করে কী লাভ হবে? এ জন্য টেকসই উন্নয়নের বিকল্প নেই।”
দখলদাররা রাজনৈতিকভাবে খুবই শক্তিশালী উল্লেখ করে তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন।
হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে জলাশয় উদ্ধার করা হলেও সেখানে আবার ভরাট করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা হয়েছে ওইটার অবস্থা কী জানেন? ওইটার অর্ধেক নাই এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য। তাহলে ভবনটা ভাঙলেন কেন?
“পরিবেশবাদীরা যারা ওইটা নিয়ে আন্দোলন, বড় বড় মামলা করলেন তারা কই? সেই পরিবেশবাদীরা আবার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কনসালটেন্ট।”
আলোচনায় অংশ নিয়ে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, খালের জমিতে সরকারি-বেসরকারি দখলদারদের আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ করা না হলে জলাবদ্ধতা সমস্যারও কোনো স্থায়ী সমাধান নেই।
তিনি বলেন “শ্যামল দত্ত (ভোরের কাগজ সম্পাদক) সাহেব বলেছেন, হাতিরঝিলের খালি জায়গা কীভাবে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আমি ওই ব্যাপারে আর না বলি। কিন্তু এই সকল আগ্রাসন, ভূমিদস্যূদের আগ্রাসনের বিষয়ে সরকারি বেসরকারি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দিন দিন আমাদের সামনে আরও প্রতিকূলতা সৃষ্টি করছে। এ থেকে পরিত্রাণ না পাওয়া পর্যন্ত পূর্ণরূপে আমরা জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পারব এটা বলা যায় না।”
বিজিএমইএ ভবনকে হাতিরঝিল প্রকল্পের ‘ক্যান্সার’ আখ্যায়িত করে হাই কোর্ট ২০১১ সালে এক রায়ে ইমারতটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। পরে আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে।
সর্বোচ্চ আদালত বিজিএমইএ ভবন ভাঙার রায় দেওয়ার পর কয়েক দফায় সময় নিয়েছিল তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা। সব বাধা কাটিয়ে ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি ভবনটি ভাঙা শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা উল্লেখ করেন, রাজধানীতে উন্নয়নের জন্য কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এক সংস্থা কাজ শেষ করার পর অন্য সংস্থা একই জায়গায় কাজ শুরু করে, ফলে নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তারা দখলদারদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান, যা রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস জানান, সরকারি-বেসরকারি দখলদারদের কারণে খাল ও জলাশয় পুনুরুদ্ধার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে, যা ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বাধা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, গত তিন বছরে জলাবদ্ধতা ৭০ শতাংশ কমানো হয়েছে, তবে এখনো অনেক কাজ বাকি আছে।
বিজিএমইএ ভবনটি ২০২০ সালে ভাঙা শুরু হলেও, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য সেই স্থানটি ভরাট করা হয়েছে। এটি নিয়ে পরিবেশবাদীরা আপত্তি তুলেছেন। তবে একই সাথে তারা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কনসালটেন্ট হিসেবেও কাজ করছেন, যা নিয়ে শ্যামল দত্ত প্রশ্ন তুলেছেন।
অন্যান্য বক্তারা উল্লেখ করেন, সিটি করপোরেশন এখন দায়িত্ব নিয়ে জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ঢাকার বিভিন্ন খাল ও জলাশয়ের দখল এবং পুনুরুদ্ধার নিয়ে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
ডিএসসিসি মেয়র তাপস জানান, ২০২১ সালে ডিএসসিসি এলাকায় ১৬১টি স্থান চিহ্নিত করে ১৩৬টি জায়গার জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়েছে এবং নতুন করে ৫০টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। ওয়াসা থেকে পাওয়া ১১টি খালের মধ্যে জিরানি, মান্ডা, শ্যামপুর এবং কালুনগর খাল গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি। খালগুলো নিয়ে ইতোমধ্যে একটি প্রকল্পের অনুমোদন পাওয়া গেছে।
তাপস আরও বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালগুলো আমরা এখনো বুঝে পাইনি। তবে, এগুলো পেলে সব খাল ও জলাশয় নিয়ে আমরা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করব।”
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন ডুরার সভাপতি ওবায়দুর মাসুম, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মোল্লা। অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান, ডুরার সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়শ্রী ভাদুড়ী, ডিএসসিসির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বাবুল এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নার্গিস মাহতাব বক্তব্য রাখেন।