তখন দুপুর দুইটা। রাজধানীর নববগঞ্জ বাজারের সামনে একটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকানের সামনে দীর্ঘ লাইন। কেউ এসেছেন নগদ টাকা তুলতে। কেউ টাকা পাঠাতে। কেউবা ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে। ভেতরে মহাব্যস্ত দোকানদার ও তার সহযোগী। যেন কথা বলার ফুরসত নেই।
এর মধ্যেই একজন সিরিয়াল এড়িয়ে ভেতরে যেতেই দুজন বাধা দিলেন। বললেন, আগে লাইনে দাঁড়াতে হবে। পরে তিনি লাইনে দাঁড়ান। তার নাম কামাল মিয়া। তিনি পাশের একটি দোকানের কর্মচারী।
‘একবার লাইনে দাঁড়িয়েছি। ক্যাশআউট করতে পারছিলাম না। বারবার ঝামেলা করছিল। পরে চলে গিয়েছি। এখন টাকা ক্যাশআউট করতে পেরেছি। কিন্তু টাকা নিতে আবারও লাইন ধরতে হলো। দোকানদার আমার কাছের মানুষ। তারপরও লাইন ছাড়া ভেতরে যেতে পারিনি।’
এই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকানের আশপাশের দোকানগুলোতেও তখন কাস্টমারদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন দোকানদাররা।
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) দুপুরে তখন কারফিউ শিথিল চলছে। রাজধানী ঢাকায় শিথিলের সময় এদিন এক ঘন্টা সময় বাড়ানো হয়েছে। তথা আগেরদিন দুপুর দুইটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত, তিন ঘণ্টার জায়গায় দুপুর ১টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা শিথিলের মেয়াদ ছিল। ফলে আগের দিনের তুলনায় ঘর থেকে বেরিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা ছিল বেশি।
নবাবগঞ্জ বাজারের শত শত মানুষের সমাগম ছিল। এছাড়া শহীদ নগর, আমলিগোলা, খান সাহেবের বাজারসহ লালবাগ ও হাজারীবাগ এলাকা ঘুরেও প্রায় স্বাভাবিক দিনের মতো মানুষের সমাগম দেখা গেছে।
তবে এসব এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কারফিউয়ের কারণে নিজেদের যতটা নিরাপত্তা বেড়েছে তেমনি তাদের নানাবিধ ভোগান্তিও বেড়েছে। ‘প্রয়োজনের সময় দোকান খোলা পাওয়া যাচ্ছে না। যখন
দোকান খুলছে তখন অনেক ক্ষেত্রে লাইন ধরতে হচ্ছে। দোকানের জিনিসপত্রের দামও বাড়ছে,’ বলেন হাজারীবাগ এনায়েতগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মো. শাহজাহান।
ভোগান্তির কথা বলতে গিয়ে হাজারীবাগ পিলখানা বিজিবির (সাবেক বিডিআর) ১ নাম্বার গেট এলাকার বাসিন্দা হাছান বাহার বলেন, ‘এলাকার বাইরে কাজ ও প্রয়োজন থাকলেও মানুষ (কারফিউয়ের) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘরে ফেরতে পারবেন না। তাই এলাকার মধ্যেই থাকছেন মানুষ। অনেকেই ঘরবন্দী হয়ে পরেছেন।’
সড়কেও সমাগম বাড়ছে
তখন দুপুর সোয়া তিনটা। লালবাগ এতিমখানা টাওয়ারের সামনের রাস্তায় জটলা। এখান ১০-১২টি প্রাইভেটকারও পার্কিং করে আছে। পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যসহ টহলরত একটি গাড়িও ছিল। এখানকার সব রেস্টোরেন্টসহ অন্যান্য দোকানপাটও ছিল খোলা।
সেখান থেকে এতিমখানা মোড়ে এলেও মানুষজনের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। এতিমখানা হয়ে আজিমপুর-নিউমার্কেট মুখে রোড ও বিপরীতমুখী মন্দির রোডে তখন প্রাইভেটকারসহ প্রায় সবধরণের যান চলাচল করতে দেখা যায়।
তবে সেখানে বেশ কিছ্ক্ষুণ দাঁড়িয়ে কোন গণপরিবহন চলতে চোখে পড়েনি। গণপরিবহনের জন্য কেউ অপেক্ষা করতেও দেখা যায়নি। দু-একজন যারা দাঁড়াচ্ছিলেন তারা লেগুনার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। জুয়েনা আক্তার ও তার চার বছরের মেয়েকে নিয়ে এতিমখানা মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার স্বামী ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি আছে। তিনি লেগুনার জন্য অপেক্ষা করছেন। ‘মাইয়ার বাপ হাসপাতালে ভর্তি কয়েকদিন ধরেই। দুই দিন ধরেই এই সড়কে লেগুনা যায় । হেই দিয়াই যাওয়া আশা করি। তয় বাস দেহি নাই।’ তবে গণপরিবহন কম
আজিমপুর সড়কে গণপরিবহন না দেখা গেলেও যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান এলাকায় দু-একটি গণপরিবহন দেখা গেছে। তবে যাত্রীদের তুলনায় ছিল কম। তবে রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি, লেগুনা ছিল পর্যাপ্ত। তবে এগুলোর ভাড়া ছিল দ্বিগুণ থেকে দুই গুণ।
দুপুর একটার দিকে কারফিউ শিথিলের সময় শুরু হলে যাত্রাবাড়ী মোড়ে অনেকেই এসে ভিড় জমান বিভিন্ন স্থানে জরুরি কাজে যেতে। কিন্তু সেখানে যে দু-একটি বাস ছিল সেগুলো পর্যাপ্ত ছিল না। তবে অনেকেই সিএনজি লেগুনাসহ অন্যান্য বাহন দিয়ে গৌন্তব্যে রওনা হোন।
বেশি ভাড়া আদায়
হারুন নামের এক যাত্রী বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। কথা হলে তিনি বলেন, ‘গুলিস্তান যাবো। কিন্তু রিকশা ১০০ টাকা বলছে। সিএনজি ২৫০ টাকা চেয়েছে। লেগুনা ২০ টাকা। এখন বাসের জন্য অপেক্ষা করছি।’
‘বাস চলছে, একটা বাস আসার সঙ্গে সঙ্গে ভরে গেছে। তাই উঠতে পারিনি। আবার আসলে উঠবো,’ বলে শহরে গুরুত্বপূর্ণ রোডে গণপরিবহন বাড়ানোর দাবিও জানান তিনি।
যাত্রাবাড়ীর মতো সায়েদাবাদ ও গুলিস্তানেও মানুষের চলাচল লক্ষ্য করা গেছে। ফ্লাইওয়ার, ফুলবাড়িয়া মোড় ও মাজার এলাকায়ও কারফিউ শিথিলকালে মানুষের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে গণপরিবহন না থাকায় সিএনজি-রিকশা ওলারা বেশি ভাড়া আদায় করার অভিযোগ যাত্রীদের।
গুলিস্তান মাজার এলাকা থেকে হাজারীবাগ সিকশন এলাকার লেগুনা ভাড়া ২০ টাকা। তবে এদিন ৩০ টাকা করে নিচ্ছেন লেগুনা চালকরা। জানতে চাইলে একজন লেগুনা চালক বলেন, ‘কয়েকঘন্টা সময়ই পাইছি। এই সময়ে কিছু টাকা না কামাইতে পারলে খাবো কি করে। এমনতেই এই কয়দিন ইনকাম বন্ধ থাকায় মেলা সমস্যায় পরেছি।’ তবে মাজার এলাকা থেকে হাজারীবাগ এলাকায় পূর্বের ভাড়া ২৫ টাকাই আদায় করার কথা জানিয়েছেন লেগুনা চালকরা।
কারফিউ শেষ না হতেই তৎপর সেনারা
তখন চারটা পঁয়ত্রিশ মিনিট। খাতা কলমে তখনও কারফিউ শিথিল। কিন্তু রাজধানী মৎস্য ভবন মোড়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে একটি সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান । আর মোড়ের চার কোনে তখন একজন করে সেনা সদস্য দাঁড়িয়ে টহল দিচ্ছিলেন।
তবে শিল্পকলা একাডেমি, কাকরাইল, হাইকোর্ট ও শাহবাগমুখী সব সড়কেই প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেলসহ প্রায় সব সবধরনের যানবাহন চলছিল।
স্বাভাবিক দিনের মতো মৎস্য ভবন সামনে তখন বেশ কিছু রিকশা দাঁড়ানো ছিল। কোন পথচারী গেলেই তাকে ঘিরে ধরছেন নিয়ে যাওয়ার জন্য।
একজন রিকশাচালক সরব আলি (৪৫) বলেন, ‘এহন পর্যন্ত সমস্যা হয় নাই।’
তবে শিল্পকলা একাডেমির দিকে এগুলেই কিছুটা থমথমে পরিবেশ। আশপাশের লোকজন ও পথচারীদের বলতে শোনা যায়, কারফিউয়ের সময় শেষ হয়ে আসছে।
শিল্পকলা একাডেমির মূল গেটে তখন একজন সেনা সদস্য দাঁড়িয়ে টহল দিচ্ছিলেন। একটু এগুলে দূর থেকেই শিল্পকলা একাডেমির মোড়ে বাগিচা রেস্টুরেন্টের সামনে একজন সেনা সদস্যকে দাঁড়িয়ে টহল দিতে দেখা যায়। কাছে গিয়ে সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার রোড ও দুদক কার্যালয় রোডেও একজন করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে টহল দিচ্ছিলেন।
তখন এখানকার ভোজ রেস্টুরেন্টের সামনে এক মোটরসাইকেলের দুই আরোহীকে হাত উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে ‘আমি কখনো আর হেলমেট ছাড়া বাইক চালাবো না’ বলে শপথ করাতে দেখা যায় এক সেনা সদস্যকে।
তবে সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার এলাকার দিকে এগোলে অনেকটাই স্বাভাবিক চিত্র লক্ষ্য করা যায়। কাঁচাবাজারের পাশে সড়কে ফলমূল কিনছিলেন নারী-পুরুষ সবাই। কাঁচাবাজারেও মানুষের সমাগম ছিল।
কাঁচাবাজারের মায়ের দোয়া রাইস এজেন্সির কর্মচারী সজিব বলেন, তার দোকানে কাস্টমার (মঙ্গলবার) তুলনামূলক বেশি এসেছেন।
‘দোকান সকাল দশটায় খুলেছি। কোনো বাধা পাইনি। কাস্টামারাও আসছেন। ছয়টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখবো।’
যথাসময়ে মাঠে সেনারা
তখন ৪টা ৪৫ মিনিট। বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কির এলাকায় অনেক পথচারী। সবারই তাড়া ঘরে বা গৌন্তব্যে ফেরার। সড়কে প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য যানবাহনও চলছিল। পানির ট্যাঙ্কির এলাকার কিছুকিছু দোকানপাটও। তবে সেনা বা পুলিশ সদস্যদের সেখানে চোখে পড়েনি।
তবে সেখান থেকে পুরানা পল্টন মোড়ে এলে সেনাদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। তবে তখনও যানবাহন বাধাহীন চলছিল। কিন্তু হঠাৎ দেখা গেল, রাস্তায় নেমে আসে সেনারা।
পল্টন মোড়ে তখন একটি সাদা ও আরেকটি সেনা পোশাকের কালারের সাঁজোয়া যান সচিবালয় প্রেসক্লাব সড়কের মুখে দাঁড়িয়ে। বিজিবি একটি গাড়ি দাঁড়িয়েছিল সচিবালয়ের ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে। ট্রাফিক পুলিশ বক্স ঘিরে বেশ কয়েকজন বিজিবি সদস্যদের বসে ছিলেন। পাশে পুলিশ বক্স ও সংবাদপত্র বিক্রয় কেন্দ্র ঘিরে বসে আছেন অনেক পুলিশ সদস্যও।
প্রথমে সচিবালয় প্রেসক্লাব সড়ক আটকে দেয়। এপথে দুজন সেনা সদ্য যানবাহন ঘুরিয়ে দেন। সেখানকার রোডে অবস্থান করা মানুষদেরও সরিয়ে দেন। তবে উল্টোপাশে বাইতুল মোকাররম-দৈনিক বাংলা রোডে তখনও পথচারী, স্থানীয় মানুষ ও যানবাহনের জটলা ছিল।
কিন্তু ঘড়ির কাটা ৫টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে তাড়িয়ে দেয়া শুরু করেন সেনা সদস্যরা। তখন যেসব রিকশা যেখানে ছিল সেগুলো পুরানা পল্টন গলি ও দৈনিক বাংলা রোডে চলে যান। যাওয়ার সময় চান মিয়া (৫৫) নামের এক রিকশা চালক বলেন, ‘টাইম শ্যাষ। তাই আমাগো খেদায়া দিতাছে।’
মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০২৪
তখন দুপুর দুইটা। রাজধানীর নববগঞ্জ বাজারের সামনে একটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকানের সামনে দীর্ঘ লাইন। কেউ এসেছেন নগদ টাকা তুলতে। কেউ টাকা পাঠাতে। কেউবা ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে। ভেতরে মহাব্যস্ত দোকানদার ও তার সহযোগী। যেন কথা বলার ফুরসত নেই।
এর মধ্যেই একজন সিরিয়াল এড়িয়ে ভেতরে যেতেই দুজন বাধা দিলেন। বললেন, আগে লাইনে দাঁড়াতে হবে। পরে তিনি লাইনে দাঁড়ান। তার নাম কামাল মিয়া। তিনি পাশের একটি দোকানের কর্মচারী।
‘একবার লাইনে দাঁড়িয়েছি। ক্যাশআউট করতে পারছিলাম না। বারবার ঝামেলা করছিল। পরে চলে গিয়েছি। এখন টাকা ক্যাশআউট করতে পেরেছি। কিন্তু টাকা নিতে আবারও লাইন ধরতে হলো। দোকানদার আমার কাছের মানুষ। তারপরও লাইন ছাড়া ভেতরে যেতে পারিনি।’
এই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকানের আশপাশের দোকানগুলোতেও তখন কাস্টমারদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন দোকানদাররা।
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) দুপুরে তখন কারফিউ শিথিল চলছে। রাজধানী ঢাকায় শিথিলের সময় এদিন এক ঘন্টা সময় বাড়ানো হয়েছে। তথা আগেরদিন দুপুর দুইটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত, তিন ঘণ্টার জায়গায় দুপুর ১টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা শিথিলের মেয়াদ ছিল। ফলে আগের দিনের তুলনায় ঘর থেকে বেরিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা ছিল বেশি।
নবাবগঞ্জ বাজারের শত শত মানুষের সমাগম ছিল। এছাড়া শহীদ নগর, আমলিগোলা, খান সাহেবের বাজারসহ লালবাগ ও হাজারীবাগ এলাকা ঘুরেও প্রায় স্বাভাবিক দিনের মতো মানুষের সমাগম দেখা গেছে।
তবে এসব এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কারফিউয়ের কারণে নিজেদের যতটা নিরাপত্তা বেড়েছে তেমনি তাদের নানাবিধ ভোগান্তিও বেড়েছে। ‘প্রয়োজনের সময় দোকান খোলা পাওয়া যাচ্ছে না। যখন
দোকান খুলছে তখন অনেক ক্ষেত্রে লাইন ধরতে হচ্ছে। দোকানের জিনিসপত্রের দামও বাড়ছে,’ বলেন হাজারীবাগ এনায়েতগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মো. শাহজাহান।
ভোগান্তির কথা বলতে গিয়ে হাজারীবাগ পিলখানা বিজিবির (সাবেক বিডিআর) ১ নাম্বার গেট এলাকার বাসিন্দা হাছান বাহার বলেন, ‘এলাকার বাইরে কাজ ও প্রয়োজন থাকলেও মানুষ (কারফিউয়ের) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘরে ফেরতে পারবেন না। তাই এলাকার মধ্যেই থাকছেন মানুষ। অনেকেই ঘরবন্দী হয়ে পরেছেন।’
সড়কেও সমাগম বাড়ছে
তখন দুপুর সোয়া তিনটা। লালবাগ এতিমখানা টাওয়ারের সামনের রাস্তায় জটলা। এখান ১০-১২টি প্রাইভেটকারও পার্কিং করে আছে। পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যসহ টহলরত একটি গাড়িও ছিল। এখানকার সব রেস্টোরেন্টসহ অন্যান্য দোকানপাটও ছিল খোলা।
সেখান থেকে এতিমখানা মোড়ে এলেও মানুষজনের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। এতিমখানা হয়ে আজিমপুর-নিউমার্কেট মুখে রোড ও বিপরীতমুখী মন্দির রোডে তখন প্রাইভেটকারসহ প্রায় সবধরণের যান চলাচল করতে দেখা যায়।
তবে সেখানে বেশ কিছ্ক্ষুণ দাঁড়িয়ে কোন গণপরিবহন চলতে চোখে পড়েনি। গণপরিবহনের জন্য কেউ অপেক্ষা করতেও দেখা যায়নি। দু-একজন যারা দাঁড়াচ্ছিলেন তারা লেগুনার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। জুয়েনা আক্তার ও তার চার বছরের মেয়েকে নিয়ে এতিমখানা মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার স্বামী ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি আছে। তিনি লেগুনার জন্য অপেক্ষা করছেন। ‘মাইয়ার বাপ হাসপাতালে ভর্তি কয়েকদিন ধরেই। দুই দিন ধরেই এই সড়কে লেগুনা যায় । হেই দিয়াই যাওয়া আশা করি। তয় বাস দেহি নাই।’ তবে গণপরিবহন কম
আজিমপুর সড়কে গণপরিবহন না দেখা গেলেও যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান এলাকায় দু-একটি গণপরিবহন দেখা গেছে। তবে যাত্রীদের তুলনায় ছিল কম। তবে রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি, লেগুনা ছিল পর্যাপ্ত। তবে এগুলোর ভাড়া ছিল দ্বিগুণ থেকে দুই গুণ।
দুপুর একটার দিকে কারফিউ শিথিলের সময় শুরু হলে যাত্রাবাড়ী মোড়ে অনেকেই এসে ভিড় জমান বিভিন্ন স্থানে জরুরি কাজে যেতে। কিন্তু সেখানে যে দু-একটি বাস ছিল সেগুলো পর্যাপ্ত ছিল না। তবে অনেকেই সিএনজি লেগুনাসহ অন্যান্য বাহন দিয়ে গৌন্তব্যে রওনা হোন।
বেশি ভাড়া আদায়
হারুন নামের এক যাত্রী বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। কথা হলে তিনি বলেন, ‘গুলিস্তান যাবো। কিন্তু রিকশা ১০০ টাকা বলছে। সিএনজি ২৫০ টাকা চেয়েছে। লেগুনা ২০ টাকা। এখন বাসের জন্য অপেক্ষা করছি।’
‘বাস চলছে, একটা বাস আসার সঙ্গে সঙ্গে ভরে গেছে। তাই উঠতে পারিনি। আবার আসলে উঠবো,’ বলে শহরে গুরুত্বপূর্ণ রোডে গণপরিবহন বাড়ানোর দাবিও জানান তিনি।
যাত্রাবাড়ীর মতো সায়েদাবাদ ও গুলিস্তানেও মানুষের চলাচল লক্ষ্য করা গেছে। ফ্লাইওয়ার, ফুলবাড়িয়া মোড় ও মাজার এলাকায়ও কারফিউ শিথিলকালে মানুষের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে গণপরিবহন না থাকায় সিএনজি-রিকশা ওলারা বেশি ভাড়া আদায় করার অভিযোগ যাত্রীদের।
গুলিস্তান মাজার এলাকা থেকে হাজারীবাগ সিকশন এলাকার লেগুনা ভাড়া ২০ টাকা। তবে এদিন ৩০ টাকা করে নিচ্ছেন লেগুনা চালকরা। জানতে চাইলে একজন লেগুনা চালক বলেন, ‘কয়েকঘন্টা সময়ই পাইছি। এই সময়ে কিছু টাকা না কামাইতে পারলে খাবো কি করে। এমনতেই এই কয়দিন ইনকাম বন্ধ থাকায় মেলা সমস্যায় পরেছি।’ তবে মাজার এলাকা থেকে হাজারীবাগ এলাকায় পূর্বের ভাড়া ২৫ টাকাই আদায় করার কথা জানিয়েছেন লেগুনা চালকরা।
কারফিউ শেষ না হতেই তৎপর সেনারা
তখন চারটা পঁয়ত্রিশ মিনিট। খাতা কলমে তখনও কারফিউ শিথিল। কিন্তু রাজধানী মৎস্য ভবন মোড়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে একটি সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান । আর মোড়ের চার কোনে তখন একজন করে সেনা সদস্য দাঁড়িয়ে টহল দিচ্ছিলেন।
তবে শিল্পকলা একাডেমি, কাকরাইল, হাইকোর্ট ও শাহবাগমুখী সব সড়কেই প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেলসহ প্রায় সব সবধরনের যানবাহন চলছিল।
স্বাভাবিক দিনের মতো মৎস্য ভবন সামনে তখন বেশ কিছু রিকশা দাঁড়ানো ছিল। কোন পথচারী গেলেই তাকে ঘিরে ধরছেন নিয়ে যাওয়ার জন্য।
একজন রিকশাচালক সরব আলি (৪৫) বলেন, ‘এহন পর্যন্ত সমস্যা হয় নাই।’
তবে শিল্পকলা একাডেমির দিকে এগুলেই কিছুটা থমথমে পরিবেশ। আশপাশের লোকজন ও পথচারীদের বলতে শোনা যায়, কারফিউয়ের সময় শেষ হয়ে আসছে।
শিল্পকলা একাডেমির মূল গেটে তখন একজন সেনা সদস্য দাঁড়িয়ে টহল দিচ্ছিলেন। একটু এগুলে দূর থেকেই শিল্পকলা একাডেমির মোড়ে বাগিচা রেস্টুরেন্টের সামনে একজন সেনা সদস্যকে দাঁড়িয়ে টহল দিতে দেখা যায়। কাছে গিয়ে সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার রোড ও দুদক কার্যালয় রোডেও একজন করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে টহল দিচ্ছিলেন।
তখন এখানকার ভোজ রেস্টুরেন্টের সামনে এক মোটরসাইকেলের দুই আরোহীকে হাত উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে ‘আমি কখনো আর হেলমেট ছাড়া বাইক চালাবো না’ বলে শপথ করাতে দেখা যায় এক সেনা সদস্যকে।
তবে সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার এলাকার দিকে এগোলে অনেকটাই স্বাভাবিক চিত্র লক্ষ্য করা যায়। কাঁচাবাজারের পাশে সড়কে ফলমূল কিনছিলেন নারী-পুরুষ সবাই। কাঁচাবাজারেও মানুষের সমাগম ছিল।
কাঁচাবাজারের মায়ের দোয়া রাইস এজেন্সির কর্মচারী সজিব বলেন, তার দোকানে কাস্টমার (মঙ্গলবার) তুলনামূলক বেশি এসেছেন।
‘দোকান সকাল দশটায় খুলেছি। কোনো বাধা পাইনি। কাস্টামারাও আসছেন। ছয়টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখবো।’
যথাসময়ে মাঠে সেনারা
তখন ৪টা ৪৫ মিনিট। বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কির এলাকায় অনেক পথচারী। সবারই তাড়া ঘরে বা গৌন্তব্যে ফেরার। সড়কে প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য যানবাহনও চলছিল। পানির ট্যাঙ্কির এলাকার কিছুকিছু দোকানপাটও। তবে সেনা বা পুলিশ সদস্যদের সেখানে চোখে পড়েনি।
তবে সেখান থেকে পুরানা পল্টন মোড়ে এলে সেনাদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। তবে তখনও যানবাহন বাধাহীন চলছিল। কিন্তু হঠাৎ দেখা গেল, রাস্তায় নেমে আসে সেনারা।
পল্টন মোড়ে তখন একটি সাদা ও আরেকটি সেনা পোশাকের কালারের সাঁজোয়া যান সচিবালয় প্রেসক্লাব সড়কের মুখে দাঁড়িয়ে। বিজিবি একটি গাড়ি দাঁড়িয়েছিল সচিবালয়ের ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে। ট্রাফিক পুলিশ বক্স ঘিরে বেশ কয়েকজন বিজিবি সদস্যদের বসে ছিলেন। পাশে পুলিশ বক্স ও সংবাদপত্র বিক্রয় কেন্দ্র ঘিরে বসে আছেন অনেক পুলিশ সদস্যও।
প্রথমে সচিবালয় প্রেসক্লাব সড়ক আটকে দেয়। এপথে দুজন সেনা সদ্য যানবাহন ঘুরিয়ে দেন। সেখানকার রোডে অবস্থান করা মানুষদেরও সরিয়ে দেন। তবে উল্টোপাশে বাইতুল মোকাররম-দৈনিক বাংলা রোডে তখনও পথচারী, স্থানীয় মানুষ ও যানবাহনের জটলা ছিল।
কিন্তু ঘড়ির কাটা ৫টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে তাড়িয়ে দেয়া শুরু করেন সেনা সদস্যরা। তখন যেসব রিকশা যেখানে ছিল সেগুলো পুরানা পল্টন গলি ও দৈনিক বাংলা রোডে চলে যান। যাওয়ার সময় চান মিয়া (৫৫) নামের এক রিকশা চালক বলেন, ‘টাইম শ্যাষ। তাই আমাগো খেদায়া দিতাছে।’