কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। জনমনে দেখা দেয় আতঙ্ক। সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঠেকাতে বাধ্য হয়েই সরকার অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করে। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মাঠে নামে সেনাবাহিনী। তবে ধীরে ধীরে কারফিউ শিথিল হওয়ায় রাজধানীসহ সারাদেশে খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট, চলাচল করছে গণপরিবহন। কিন্তু সাধারণ জনগণ এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। এখনও আতঙ্কে আছে উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, মিরপুর, কাজীপাড়াসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। এই এলাকাগুলো কোটা আন্দোলনের জেরে তৈরি হওয়া সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সহিংসতার জেরে গত ১৯ জুলাই থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে কারফিউ জারি করে সরকার। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির পর রোববার, সোমবার ও মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩ দিন নির্বাহী আদেশে সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করা হয়।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কে প্রচুর যানবাহন চলাচল করলেও স্থানীয় এলাকাগুলোতে স্বাভাবিক সময়ে যে পরিমাণ লোকসমাগম চলাচল করতো, যেমন ভিড় লেগে থাকত, সেই ভিড় নেই। অধিকাংশ দোকান ও শপিং সেন্টার খুললেও ক্রেতার অভাবে একরকম বসেই সময় পার করছিলেন ব্যবসায়ীরা। ফুটপাতের কিছু কিছু দোকান খুললেও অধিকাংশ দোকান ছিল বন্ধ।
উত্তরা, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, যাত্রাবাড়ীসহ এর আশপাশের এলাকাগুলো কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় অন্যতম হটস্পট ছিল। ১৭ জুলাই থেকে এসব এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শতাধিক মৃত্যুসহ হতাহত হন সহ¯্রাধিক। ফলে এসব এলাকার আশপাশের অলিগলির চায়ের দোকানগুলোতে নেই আগের মতো সেই চিরচেনা ভিড়। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দোকানিদের ভীতিও কাটেনি।
কথা হয় উত্তরা ১১ নাম্বার সেক্টরের রাজু নামে এক মুদি দোকানদারের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এই গলিতেই উত্তরা পশ্চিম থানা। তাপরপরেও এই এলাকায় যে তা-ব দেখেছি, সেই ভয় সহজে কাটবে না। দোকান না খুললে সংসার চলবে না, বাধ্য হয়ে তাই বের হয়েছি। কারফিউ শিথিল থাকলেও মনের ভয় কাটছে না।’
গলির চায়ের দোকানগুলো দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘সকাল-দুপুর-রাত যেকোনো সময় এই দোকানগুলোতে ভিড় লেগেই থাকত। এখন দেখেন, কোনো মানুষ নেই। সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পরেও এখানে মানুষের মনের ভয় কাটতে সময় লাগবে।’
চা দোকানদার বলেন, ‘গতকাল দোকান খুলেছি, কিন্তু আগের মতো কাস্টমার নেই। আজকে কিছু মার্কেট খুলতে শুরু করেছে, তাই কিছু কাস্টমার আসছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন আর আগের মতো রাতে দোকান খোলা রাখতে পারি না। ৫টায় কারফিউ শুরু হলে দোকান বন্ধ করে দিতে হয়। আর এখনও এখানকার পরিবেশ পুরোপুরি ঠিক হয়নি। শুধু মনে হয়, এই বুঝি গোলাগুলি শুরু হলো।’
এই এলাকার অন্য এক ব্যবসায়ী রাজিব বলেন, ‘গোলাগুলির মধ্যে কোনোমতে পালিয়েছিলাম। আজকে দোকান খুলেছি, কিন্তু বিক্রি নেই। আমরা এখনও আতঙ্কে আছি, কখন আবার কী হয়।’
জারি করা অনির্দিষ্টকালের কারফিউ আগামীকাল ঢাকাসহ চার জেলায় ৯ ঘণ্টা করে শিথিল থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি জানান, ‘সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে ৯ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকবে।’ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ধানমন্ডিতে তার নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। এর আগে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার এসব এলাকায় সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৭ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল ছিল। তারও আগে ২ ঘণ্টা, ৩ ঘণ্টা, ৪ ঘণ্টা এভাবে পর্যায়ক্রমে কারফিউ শিথিল করে আনা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ধীরে ধীরে কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ানো হচ্ছে। অন্যান্য জেলায় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বয় করে কারফিউ দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
রোববার কারফিউ উঠিয়ে নেয়া হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কারফিউ উঠিয়ে নেয়ার কথা বলিনি, শিথিলের কথা বলেছি। উঠিয়ে দেয়ার কথা এখনো আসেনি। যখন আসবে, নিজেরাই বুঝতে পারবেন।’
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। জনমনে দেখা দেয় আতঙ্ক। সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঠেকাতে বাধ্য হয়েই সরকার অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করে। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মাঠে নামে সেনাবাহিনী। তবে ধীরে ধীরে কারফিউ শিথিল হওয়ায় রাজধানীসহ সারাদেশে খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট, চলাচল করছে গণপরিবহন। কিন্তু সাধারণ জনগণ এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। এখনও আতঙ্কে আছে উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, মিরপুর, কাজীপাড়াসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। এই এলাকাগুলো কোটা আন্দোলনের জেরে তৈরি হওয়া সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সহিংসতার জেরে গত ১৯ জুলাই থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে কারফিউ জারি করে সরকার। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির পর রোববার, সোমবার ও মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩ দিন নির্বাহী আদেশে সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করা হয়।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কে প্রচুর যানবাহন চলাচল করলেও স্থানীয় এলাকাগুলোতে স্বাভাবিক সময়ে যে পরিমাণ লোকসমাগম চলাচল করতো, যেমন ভিড় লেগে থাকত, সেই ভিড় নেই। অধিকাংশ দোকান ও শপিং সেন্টার খুললেও ক্রেতার অভাবে একরকম বসেই সময় পার করছিলেন ব্যবসায়ীরা। ফুটপাতের কিছু কিছু দোকান খুললেও অধিকাংশ দোকান ছিল বন্ধ।
উত্তরা, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, যাত্রাবাড়ীসহ এর আশপাশের এলাকাগুলো কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় অন্যতম হটস্পট ছিল। ১৭ জুলাই থেকে এসব এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শতাধিক মৃত্যুসহ হতাহত হন সহ¯্রাধিক। ফলে এসব এলাকার আশপাশের অলিগলির চায়ের দোকানগুলোতে নেই আগের মতো সেই চিরচেনা ভিড়। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দোকানিদের ভীতিও কাটেনি।
কথা হয় উত্তরা ১১ নাম্বার সেক্টরের রাজু নামে এক মুদি দোকানদারের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এই গলিতেই উত্তরা পশ্চিম থানা। তাপরপরেও এই এলাকায় যে তা-ব দেখেছি, সেই ভয় সহজে কাটবে না। দোকান না খুললে সংসার চলবে না, বাধ্য হয়ে তাই বের হয়েছি। কারফিউ শিথিল থাকলেও মনের ভয় কাটছে না।’
গলির চায়ের দোকানগুলো দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘সকাল-দুপুর-রাত যেকোনো সময় এই দোকানগুলোতে ভিড় লেগেই থাকত। এখন দেখেন, কোনো মানুষ নেই। সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পরেও এখানে মানুষের মনের ভয় কাটতে সময় লাগবে।’
চা দোকানদার বলেন, ‘গতকাল দোকান খুলেছি, কিন্তু আগের মতো কাস্টমার নেই। আজকে কিছু মার্কেট খুলতে শুরু করেছে, তাই কিছু কাস্টমার আসছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন আর আগের মতো রাতে দোকান খোলা রাখতে পারি না। ৫টায় কারফিউ শুরু হলে দোকান বন্ধ করে দিতে হয়। আর এখনও এখানকার পরিবেশ পুরোপুরি ঠিক হয়নি। শুধু মনে হয়, এই বুঝি গোলাগুলি শুরু হলো।’
এই এলাকার অন্য এক ব্যবসায়ী রাজিব বলেন, ‘গোলাগুলির মধ্যে কোনোমতে পালিয়েছিলাম। আজকে দোকান খুলেছি, কিন্তু বিক্রি নেই। আমরা এখনও আতঙ্কে আছি, কখন আবার কী হয়।’
জারি করা অনির্দিষ্টকালের কারফিউ আগামীকাল ঢাকাসহ চার জেলায় ৯ ঘণ্টা করে শিথিল থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি জানান, ‘সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে ৯ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকবে।’ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ধানমন্ডিতে তার নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। এর আগে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার এসব এলাকায় সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৭ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল ছিল। তারও আগে ২ ঘণ্টা, ৩ ঘণ্টা, ৪ ঘণ্টা এভাবে পর্যায়ক্রমে কারফিউ শিথিল করে আনা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ধীরে ধীরে কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ানো হচ্ছে। অন্যান্য জেলায় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বয় করে কারফিউ দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
রোববার কারফিউ উঠিয়ে নেয়া হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কারফিউ উঠিয়ে নেয়ার কথা বলিনি, শিথিলের কথা বলেছি। উঠিয়ে দেয়ার কথা এখনো আসেনি। যখন আসবে, নিজেরাই বুঝতে পারবেন।’