নারায়ণগঞ্জ শহরে একটি পরিবহন দখল নিয়ে বিএনপির দু’টি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আটক করা হয়েছে আটজনকে।
শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় রোববার দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চার ঘন্টা থেমে থেমে এই সংঘর্ষ চলে। ঘটনাস্থল থেকে সদর মডেল থানা মাত্র কয়েক গজ দূরে অবস্থিত।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বন্ধন পরিবহন নামে বাস কোম্পানি দখলকে কেন্দ্র করে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান ও মহানগর বিএনপির সদস্য মাহবুবুল্লাহ তপনের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ চলে। উভয়পক্ষ ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা হাতে সংঘর্ষে জড়ায়। এই সময় আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলিও চালানো হয়।
বিকেল পাঁচটার দিকে সেনাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যের টহলের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে আটজনকে আটকের কথা জানিয়েছেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম।
পরিবহনটির শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সিটি বন্ধন পরিবহন নামে একটি বাস কোম্পানির অর্ধশত বাস ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করে। আগে একই রুটে বন্ধন ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির নামে বাসগুলো চলাচল করতো। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাস কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে তার নিয়ন্ত্রণ নেয় আওয়ামী লীগের লোকজন। সিটি বন্ধন পরিবহনের মালিক সমিতির সভাপতিও ছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি জুয়েল হোসেন। তবে গণঅভ্যূত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। আওয়ামী লীগের লোকজন পালিয়ে যাওয়ায় বিএনপির দু’টি পক্ষ এই পরিবহনের নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা-তদবির শুরু করে।
একাধিক পরিবহন শ্রমিক জানান, রোববার দুপুরে মাহবুবুল্লাহ তপনের অনুসারীরা বন্ধন বাসের কাউন্টারের সামনে এসে জড়ো হলে বিএনপির ক্যাডার বলে পরিচিত মো. সেলিম ওরফে দাদা সেলিম ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে জাকির খানের অনুসারীরা তাদের উপর হামলা করেন। এরপর উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে।
বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে টহল দিলে উভয়পক্ষ সেখান থেকে সরে যায়। তবে সেনাবাহিনীর দলটি চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই আবারও তারা সংঘর্ষে জড়ায় বলে পুলিশের একটি সূত্র জানান।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার হন হত্যাসহ কয়েকটি মামলার আসামি জাকির খান। বিএনপির ক্যাডার বলে পরিচিত সাবেক এই ছাত্রদল নেতা এখনও কারাগারে রয়েছেন।
অন্যদিকে মাহবুবুল্লাহ তপন ২০০৪ সালে র্যাবের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত যুবদলের ক্যাডার মমিনুল্লাহ ডেভিডের ভাই।
তপনের ভাগ্নে ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাখাওয়াত ইসলাম রানাও সংঘর্ষের সময় সেখানে ছিলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বন্ধন ট্রান্সপোর্টের সকল বৈধ কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পরিবহন কোম্পানিটি দখল করে আওয়ামী লীগের লোকজন। এখন বাসটির মালিকপক্ষ পুনরায় বাস চালাতে চান। আজ কাউন্টারের সামনে গেলে জাকির খানের লোকজন আমাদের উপর হামলা করেন। কারণ তারা এই পরিবহনটি অবৈধভাবে দখল করতে চায়।’
জানতে চাইলে সাবেক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ও জাকির খানের অনুসারী জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমাদের নেতা জাকির খানের বিরুদ্ধে করা একটি হত্যা মামলার শুনানি ছিল আজ। আমরা তার মুক্তির দাবিতে শহরে একটি মিছিল করি। মিছিল শেষে বাস টার্মিনালে একটি দোয়া মাহফিলে যাই। এই সময় পরিবহন শ্রমিকদের উপর হামলা করে তপন ও রানার লোকজন। পরে শ্রমিকরাই এই হামলা প্রতিহত করে। আমি কিংবা আমাদের কেউ এতে জড়িত নই।’
সদর মডেল থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বন্ধন বাস কাউন্টারের সামনে মালিক সমিতির দু’টি পক্ষ ঝামেলা করতেছিল। এই সংবাদের ভিত্তিতে আমরা সেখানে যাই। দু’টি পক্ষকেই আমরা শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু তারা শান্ত না হলে পরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে পরিস্থিতি কন্ট্রোলে নেই। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে যৌথ বাহিনী তৎপর রয়েছে। পরিস্থিতি কেউ ঘোলাটে করতে চাইলে সে সুযোগ দেওয়া হবে না।’
এই ঘটনার পর শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান ওসি। রাত সোয়া আটটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।
রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
নারায়ণগঞ্জ শহরে একটি পরিবহন দখল নিয়ে বিএনপির দু’টি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আটক করা হয়েছে আটজনকে।
শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় রোববার দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চার ঘন্টা থেমে থেমে এই সংঘর্ষ চলে। ঘটনাস্থল থেকে সদর মডেল থানা মাত্র কয়েক গজ দূরে অবস্থিত।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বন্ধন পরিবহন নামে বাস কোম্পানি দখলকে কেন্দ্র করে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান ও মহানগর বিএনপির সদস্য মাহবুবুল্লাহ তপনের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ চলে। উভয়পক্ষ ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা হাতে সংঘর্ষে জড়ায়। এই সময় আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলিও চালানো হয়।
বিকেল পাঁচটার দিকে সেনাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যের টহলের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে আটজনকে আটকের কথা জানিয়েছেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম।
পরিবহনটির শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সিটি বন্ধন পরিবহন নামে একটি বাস কোম্পানির অর্ধশত বাস ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করে। আগে একই রুটে বন্ধন ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির নামে বাসগুলো চলাচল করতো। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাস কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে তার নিয়ন্ত্রণ নেয় আওয়ামী লীগের লোকজন। সিটি বন্ধন পরিবহনের মালিক সমিতির সভাপতিও ছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি জুয়েল হোসেন। তবে গণঅভ্যূত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। আওয়ামী লীগের লোকজন পালিয়ে যাওয়ায় বিএনপির দু’টি পক্ষ এই পরিবহনের নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা-তদবির শুরু করে।
একাধিক পরিবহন শ্রমিক জানান, রোববার দুপুরে মাহবুবুল্লাহ তপনের অনুসারীরা বন্ধন বাসের কাউন্টারের সামনে এসে জড়ো হলে বিএনপির ক্যাডার বলে পরিচিত মো. সেলিম ওরফে দাদা সেলিম ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে জাকির খানের অনুসারীরা তাদের উপর হামলা করেন। এরপর উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে।
বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে টহল দিলে উভয়পক্ষ সেখান থেকে সরে যায়। তবে সেনাবাহিনীর দলটি চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই আবারও তারা সংঘর্ষে জড়ায় বলে পুলিশের একটি সূত্র জানান।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার হন হত্যাসহ কয়েকটি মামলার আসামি জাকির খান। বিএনপির ক্যাডার বলে পরিচিত সাবেক এই ছাত্রদল নেতা এখনও কারাগারে রয়েছেন।
অন্যদিকে মাহবুবুল্লাহ তপন ২০০৪ সালে র্যাবের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত যুবদলের ক্যাডার মমিনুল্লাহ ডেভিডের ভাই।
তপনের ভাগ্নে ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাখাওয়াত ইসলাম রানাও সংঘর্ষের সময় সেখানে ছিলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বন্ধন ট্রান্সপোর্টের সকল বৈধ কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পরিবহন কোম্পানিটি দখল করে আওয়ামী লীগের লোকজন। এখন বাসটির মালিকপক্ষ পুনরায় বাস চালাতে চান। আজ কাউন্টারের সামনে গেলে জাকির খানের লোকজন আমাদের উপর হামলা করেন। কারণ তারা এই পরিবহনটি অবৈধভাবে দখল করতে চায়।’
জানতে চাইলে সাবেক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ও জাকির খানের অনুসারী জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমাদের নেতা জাকির খানের বিরুদ্ধে করা একটি হত্যা মামলার শুনানি ছিল আজ। আমরা তার মুক্তির দাবিতে শহরে একটি মিছিল করি। মিছিল শেষে বাস টার্মিনালে একটি দোয়া মাহফিলে যাই। এই সময় পরিবহন শ্রমিকদের উপর হামলা করে তপন ও রানার লোকজন। পরে শ্রমিকরাই এই হামলা প্রতিহত করে। আমি কিংবা আমাদের কেউ এতে জড়িত নই।’
সদর মডেল থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বন্ধন বাস কাউন্টারের সামনে মালিক সমিতির দু’টি পক্ষ ঝামেলা করতেছিল। এই সংবাদের ভিত্তিতে আমরা সেখানে যাই। দু’টি পক্ষকেই আমরা শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু তারা শান্ত না হলে পরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে পরিস্থিতি কন্ট্রোলে নেই। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে যৌথ বাহিনী তৎপর রয়েছে। পরিস্থিতি কেউ ঘোলাটে করতে চাইলে সে সুযোগ দেওয়া হবে না।’
এই ঘটনার পর শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান ওসি। রাত সোয়া আটটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।