ফ্যাসিবাদী মনোভাবের অপসারণ ও জুরি বোর্ডের জবাবদিহিতা চায় লেখক সমাজ
বাংলা একাডেমির সাম্প্রতিক সাহিত্য পুরস্কার বিতর্ক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজ’ এবং ‘জাতীয় সাংস্কৃতিক বিপ্লব’ নামের দুটি প্ল্যাটফর্মের সদস্যরা রবিবার একাডেমির সামনে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছেন। বিক্ষোভকারীরা পুরস্কার প্রক্রিয়ায় জড়িতদের জবাবদিহিতা এবং একাডেমির কার্যক্রমে মৌলিক সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা বাংলা একাডেমির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে একাডেমির গবেষণা কার্যক্রমে উদাসীনতা এবং পুরস্কার প্রদানের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব। তরুণ কথাসাহিত্যিক এহসান মাহমুদ বলেন, “বাংলা একাডেমি এখন গবেষণা থেকে সরে গিয়ে শুধুমাত্র বইমেলার আয়োজন আর পুরস্কার প্রদানে ব্যস্ত। পুরস্কার জুরি বোর্ডের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে হবে।”
লেখক আবিদ আজম দাবি করেন, “স্বৈরাচারী সরকারের সময় একাডেমিতে অনেক অযোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের দ্রুত অপসারণ এবং পুরস্কার জুরি বোর্ডে থাকা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করতে হবে।”
গত বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪-এর তালিকা প্রকাশের পর বিতর্ক শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে, তালিকায় কয়েকজন পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তির যোগ্যতা নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পোস্টে নারী লেখকদের অনুপস্থিতি এবং মনোনয়ন প্রক্রিয়ার অসঙ্গতির সমালোচনা করা হয়।
শনিবার বাংলা একাডেমি পুরস্কারের তালিকা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। একাডেমির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, “কিছু সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং পুরস্কার তালিকায় থাকা কয়েকজনকে নিয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
তবে এই স্থগিতাদেশ নিয়েও বিতর্ক থামেনি। বিক্ষোভকারীদের মতে, পুরস্কারের জন্য যোগ্যদের অপমানিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে যারা জুরি বোর্ডে ছিলেন, তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
বিক্ষোভে বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতাদের কাজকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন না করার বিষয়টি নিয়েও সমালোচনা করা হয়। লেখক মামুন সারওয়ার বলেন, “ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতো ব্যক্তিত্বদের নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। বাংলা একাডেমি এক পরিবারের চাহিদা মেটাতেই ব্যস্ত থেকেছে।”
এবিএম সোহেল রশিদ সরাসরি বলেন, “আমরা ফ্যাসিবাদী মনোভাবের দোসরদের বাংলা একাডেমি থেকে বিতাড়িত করার দাবি জানাই। একাডেমির কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।”
এ বছর সাহিত্য পুরস্কারের জন্য ঘোষিত তালিকায় ছিলেন কবিতায় মাসুদ খান, কথাসাহিত্যে সেলিম মোরশেদ, নাটকে শুভাশিস সিনহা, প্রবন্ধে সলিমুল্লাহ খান, শিশুসাহিত্যে ফারুক নওয়াজ, অনুবাদে জি এইচ হাবীব, গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ হাননান।
তবে তালিকায় কোনো নারী লেখকের অনুপস্থিতি এবং নির্দিষ্ট কিছু নাম নিয়ে অভিযোগ ওঠে। সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কৃতি উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে পুরস্কার স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয় বলে অনেকে ধারণা করছেন।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। তবে এবারের পরিস্থিতি পুরস্কার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং একাডেমির ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। বিক্ষুব্ধ লেখক সমাজ সংস্কার এবং জবাবদিহিতার দাবি জানিয়ে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে। একাডেমির ভবিষ্যৎ কার্যক্রমে এ ধরনের মতামত কতটুকু প্রভাব ফেলবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
ফ্যাসিবাদী মনোভাবের অপসারণ ও জুরি বোর্ডের জবাবদিহিতা চায় লেখক সমাজ
রোববার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫
বাংলা একাডেমির সাম্প্রতিক সাহিত্য পুরস্কার বিতর্ক নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজ’ এবং ‘জাতীয় সাংস্কৃতিক বিপ্লব’ নামের দুটি প্ল্যাটফর্মের সদস্যরা রবিবার একাডেমির সামনে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছেন। বিক্ষোভকারীরা পুরস্কার প্রক্রিয়ায় জড়িতদের জবাবদিহিতা এবং একাডেমির কার্যক্রমে মৌলিক সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা বাংলা একাডেমির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাদের বক্তব্যে উঠে আসে একাডেমির গবেষণা কার্যক্রমে উদাসীনতা এবং পুরস্কার প্রদানের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব। তরুণ কথাসাহিত্যিক এহসান মাহমুদ বলেন, “বাংলা একাডেমি এখন গবেষণা থেকে সরে গিয়ে শুধুমাত্র বইমেলার আয়োজন আর পুরস্কার প্রদানে ব্যস্ত। পুরস্কার জুরি বোর্ডের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে হবে।”
লেখক আবিদ আজম দাবি করেন, “স্বৈরাচারী সরকারের সময় একাডেমিতে অনেক অযোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের দ্রুত অপসারণ এবং পুরস্কার জুরি বোর্ডে থাকা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করতে হবে।”
গত বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪-এর তালিকা প্রকাশের পর বিতর্ক শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে, তালিকায় কয়েকজন পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তির যোগ্যতা নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পোস্টে নারী লেখকদের অনুপস্থিতি এবং মনোনয়ন প্রক্রিয়ার অসঙ্গতির সমালোচনা করা হয়।
শনিবার বাংলা একাডেমি পুরস্কারের তালিকা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। একাডেমির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, “কিছু সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং পুরস্কার তালিকায় থাকা কয়েকজনকে নিয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
তবে এই স্থগিতাদেশ নিয়েও বিতর্ক থামেনি। বিক্ষোভকারীদের মতে, পুরস্কারের জন্য যোগ্যদের অপমানিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে যারা জুরি বোর্ডে ছিলেন, তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
বিক্ষোভে বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতাদের কাজকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন না করার বিষয়টি নিয়েও সমালোচনা করা হয়। লেখক মামুন সারওয়ার বলেন, “ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতো ব্যক্তিত্বদের নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। বাংলা একাডেমি এক পরিবারের চাহিদা মেটাতেই ব্যস্ত থেকেছে।”
এবিএম সোহেল রশিদ সরাসরি বলেন, “আমরা ফ্যাসিবাদী মনোভাবের দোসরদের বাংলা একাডেমি থেকে বিতাড়িত করার দাবি জানাই। একাডেমির কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।”
এ বছর সাহিত্য পুরস্কারের জন্য ঘোষিত তালিকায় ছিলেন কবিতায় মাসুদ খান, কথাসাহিত্যে সেলিম মোরশেদ, নাটকে শুভাশিস সিনহা, প্রবন্ধে সলিমুল্লাহ খান, শিশুসাহিত্যে ফারুক নওয়াজ, অনুবাদে জি এইচ হাবীব, গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ হাননান।
তবে তালিকায় কোনো নারী লেখকের অনুপস্থিতি এবং নির্দিষ্ট কিছু নাম নিয়ে অভিযোগ ওঠে। সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কৃতি উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে পুরস্কার স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয় বলে অনেকে ধারণা করছেন।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। তবে এবারের পরিস্থিতি পুরস্কার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং একাডেমির ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। বিক্ষুব্ধ লেখক সমাজ সংস্কার এবং জবাবদিহিতার দাবি জানিয়ে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে। একাডেমির ভবিষ্যৎ কার্যক্রমে এ ধরনের মতামত কতটুকু প্রভাব ফেলবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।