ইজতেমার আগের দিন দুর্ভোগে যাত্রীরা
রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এ অবরোধের ফলে গুলশান, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট ও মগবাজার এলাকায় যান চলাচল প্রায় থমকে যায়।
গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। গুলিস্তান থেকে বেলা ১২টায় রওনা হওয়া হাফিজ মিয়া বিকাল ৪টাতেও তেজগাঁওয়ের সাত রাস্তার মোড়ে বাসের মধ্যেই আটকে ছিলেন। তিনি বলেন, “কলেজের ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় বসেছে, ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। গাড়ি এগোচ্ছে না। এখনও সাত রাস্তার মোড়েই পড়ে আছি। সঙ্গে কিছু মালপত্র আছে বলে হেঁটেও যেতে পারছি না।”
একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন সোনিয়া আখতার। অসুস্থ মাকে দেখতে বনানী যাওয়ার পথে তেজগাঁওয়ের তিব্বত মোড়ে তিন ঘণ্টা আটকে ছিলেন তিনি। বাস বা ব্যক্তিগত গাড়িতে আটকা পড়া অনেক যাত্রী বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হন, তবে দূরের যাত্রীরা যানজটে আটকে অপেক্ষা করেন দীর্ঘ সময়।
অবরোধের কারণ ও শিক্ষার্থীদের দাবি:
সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাদের সাত দফা দাবির মধ্যে অন্যতম কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে মহাখালী-গুলশান সড়ক অবরোধ করেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন, আলী আহমদ, বলেন, “আমাদের পাঁচজন বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের দাবিতে অনশনে ছিলেন। ক্যাম্পাস শাটডাউন থাকার পরও অধ্যক্ষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। অনশনরতরা অসুস্থ হওয়ার পরও তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলেননি। উল্টো তাদের দিকে মাইক দিয়ে গান-বাজনা চালানো হয়েছে, যা আমাদের ক্ষুব্ধ করেছে। তাই আমরা রাস্তায় নেমেছি।”
সন্ধ্যা পৌনে ৭টাতেও শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছাড়েননি। কেউ কেউ রাস্তায় শুয়ে পড়েছেন, অন্যরা ব্যানার হাতে স্লোগান দিচ্ছেন। এতে পুরো এলাকা কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে।
বিশ্ব ইজতেমার আগের দিন দুর্ভোগ চরমে:
তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে যানজটের প্রভাব আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে, যা বিশ্ব ইজতেমার আগের দিন যাত্রীদের জন্য আরও বেশি দুর্ভোগ সৃষ্টি করে।
সন্ধ্যার দিকে তেজগাঁও এলাকায় থাকা আবেদ আলী জানান, তিন ঘণ্টা বাসে বসে থাকার পর বাধ্য হয়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হন। “বলাকা পরিবহন থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেছি, যাব কারওয়ান বাজার। কোনো অলিগলিই ফাঁকা নেই। সব যেন জ্যামে অচল হয়ে গেছে,” বলেন তিনি।
৬৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং সাত রাস্তার মোড়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এভাবে ধর্মঘট হবে, সরকার নিশ্চুপ, প্রশাসন নিশ্চুপ…আমরা সাধারণ মানুষ যাব কোথায়?”
অবরোধের কারণে তীব্র যানজট সামাল দিতে ট্রাফিক পুলিশ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে।
তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার তানিয়া সুলতানা বলেন, “তিতুমীর কলেজের আন্দোলনের প্রভাব পুরো মহাখালী ও তেজগাঁও এলাকায় পড়েছে। গাড়ি ধীরগতিতে চলায় বড় ধরনের যানজট তৈরি হয়েছে। মহাখালী এলাকার সঙ্গে সমন্বয় করে ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল রাখার চেষ্টা করছি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে যানবাহন পার করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
গুলশান ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. জিয়াউর রহমান জানান, “উত্তরা থেকে আসা যানবাহন ফ্লাইওভার দিয়ে পার করানোর ব্যবস্থা করছি। বিপরীত দিকের গাড়িগুলোকেও বনানীর দিকে পাঠিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।”
তিনি আরও বলেন, “আজ বৃহস্পতিবার, তার মধ্যে আগামীকাল ইজতেমা। তাই যানজট আরও বেশি হয়েছে। আমরা ডাইভারশন দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
শুধু তিতুমীর কলেজ নয়, বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শনিরআখড়া এলাকার দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীরাও সড়ক অবরোধ করেন। এতে যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামগামী সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দনিয়া কলেজের সামনে মিনহাজুল ইসলাম নামে এক ছাত্রকে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। বিক্ষোভের ফলে প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক বন্ধ থাকে।
ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার মো. আজাদ রহমান জানান, “সম্প্রতি দনিয়া কলেজের এক শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা দুপুরে মহাসড়ক অবরোধ করেন। দুই ঘণ্টার অবস্থানের পর তারা সরে যান।”
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করলেও, আন্দোলনের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বিশ্ব ইজতেমার আগের দিন হওয়ায় যানজটের প্রভাব আরও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
ইজতেমার আগের দিন দুর্ভোগে যাত্রীরা
বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এ অবরোধের ফলে গুলশান, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট ও মগবাজার এলাকায় যান চলাচল প্রায় থমকে যায়।
গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। গুলিস্তান থেকে বেলা ১২টায় রওনা হওয়া হাফিজ মিয়া বিকাল ৪টাতেও তেজগাঁওয়ের সাত রাস্তার মোড়ে বাসের মধ্যেই আটকে ছিলেন। তিনি বলেন, “কলেজের ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় বসেছে, ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। গাড়ি এগোচ্ছে না। এখনও সাত রাস্তার মোড়েই পড়ে আছি। সঙ্গে কিছু মালপত্র আছে বলে হেঁটেও যেতে পারছি না।”
একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন সোনিয়া আখতার। অসুস্থ মাকে দেখতে বনানী যাওয়ার পথে তেজগাঁওয়ের তিব্বত মোড়ে তিন ঘণ্টা আটকে ছিলেন তিনি। বাস বা ব্যক্তিগত গাড়িতে আটকা পড়া অনেক যাত্রী বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হন, তবে দূরের যাত্রীরা যানজটে আটকে অপেক্ষা করেন দীর্ঘ সময়।
অবরোধের কারণ ও শিক্ষার্থীদের দাবি:
সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাদের সাত দফা দাবির মধ্যে অন্যতম কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে মহাখালী-গুলশান সড়ক অবরোধ করেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন, আলী আহমদ, বলেন, “আমাদের পাঁচজন বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের দাবিতে অনশনে ছিলেন। ক্যাম্পাস শাটডাউন থাকার পরও অধ্যক্ষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। অনশনরতরা অসুস্থ হওয়ার পরও তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলেননি। উল্টো তাদের দিকে মাইক দিয়ে গান-বাজনা চালানো হয়েছে, যা আমাদের ক্ষুব্ধ করেছে। তাই আমরা রাস্তায় নেমেছি।”
সন্ধ্যা পৌনে ৭টাতেও শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছাড়েননি। কেউ কেউ রাস্তায় শুয়ে পড়েছেন, অন্যরা ব্যানার হাতে স্লোগান দিচ্ছেন। এতে পুরো এলাকা কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে।
বিশ্ব ইজতেমার আগের দিন দুর্ভোগ চরমে:
তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে যানজটের প্রভাব আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে, যা বিশ্ব ইজতেমার আগের দিন যাত্রীদের জন্য আরও বেশি দুর্ভোগ সৃষ্টি করে।
সন্ধ্যার দিকে তেজগাঁও এলাকায় থাকা আবেদ আলী জানান, তিন ঘণ্টা বাসে বসে থাকার পর বাধ্য হয়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হন। “বলাকা পরিবহন থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেছি, যাব কারওয়ান বাজার। কোনো অলিগলিই ফাঁকা নেই। সব যেন জ্যামে অচল হয়ে গেছে,” বলেন তিনি।
৬৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং সাত রাস্তার মোড়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এভাবে ধর্মঘট হবে, সরকার নিশ্চুপ, প্রশাসন নিশ্চুপ…আমরা সাধারণ মানুষ যাব কোথায়?”
অবরোধের কারণে তীব্র যানজট সামাল দিতে ট্রাফিক পুলিশ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে।
তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার তানিয়া সুলতানা বলেন, “তিতুমীর কলেজের আন্দোলনের প্রভাব পুরো মহাখালী ও তেজগাঁও এলাকায় পড়েছে। গাড়ি ধীরগতিতে চলায় বড় ধরনের যানজট তৈরি হয়েছে। মহাখালী এলাকার সঙ্গে সমন্বয় করে ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল রাখার চেষ্টা করছি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে যানবাহন পার করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
গুলশান ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. জিয়াউর রহমান জানান, “উত্তরা থেকে আসা যানবাহন ফ্লাইওভার দিয়ে পার করানোর ব্যবস্থা করছি। বিপরীত দিকের গাড়িগুলোকেও বনানীর দিকে পাঠিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।”
তিনি আরও বলেন, “আজ বৃহস্পতিবার, তার মধ্যে আগামীকাল ইজতেমা। তাই যানজট আরও বেশি হয়েছে। আমরা ডাইভারশন দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
শুধু তিতুমীর কলেজ নয়, বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শনিরআখড়া এলাকার দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীরাও সড়ক অবরোধ করেন। এতে যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামগামী সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দনিয়া কলেজের সামনে মিনহাজুল ইসলাম নামে এক ছাত্রকে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। বিক্ষোভের ফলে প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক বন্ধ থাকে।
ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার মো. আজাদ রহমান জানান, “সম্প্রতি দনিয়া কলেজের এক শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা দুপুরে মহাসড়ক অবরোধ করেন। দুই ঘণ্টার অবস্থানের পর তারা সরে যান।”
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করলেও, আন্দোলনের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বিশ্ব ইজতেমার আগের দিন হওয়ায় যানজটের প্রভাব আরও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।