রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভূগর্ভস্থ স্বাধীনতা জাদুঘর এখন এক ধ্বংসস্তুপ। সরকারের পতনের দিন সংঘটিত ভাঙচুর ও লুটপাটে ক্ষতিগ্রস্ত এ জাদুঘর ঘুরে দেখেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
সংস্কার কাজ শেষে জাদুঘরটি নতুনভাবে উদ্বোধনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সোমবার (১৯ মে) সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস-২০২৫ উপলক্ষে রোববার জাতীয় জাদুঘরে এক বিশেষ সভায় বক্তব্য রাখেন ফারুকী। সভা শেষে তিনি স্বাধীনতা জাদুঘর পরিদর্শন করেন। উপস্থিত ছিলেন জাদুঘরের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন ও স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম।
সংস্কার কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মেরিনা তাবাসসুম জানান, “মূলত আমরা জাদুঘরের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে। এখন জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব, কীভাবে নতুনভাবে জাদুঘরটি গড়ে তোলা যায়।”
তিনি আরও বলেন, “ভবনের ফোয়ারা নষ্ট হয়ে গেছে, লিফট অচল, কাচের রেলিং ভাঙা—সব কিছু সংস্কার করতে হবে। এ বিষয়ে জাতীয় জাদুঘরের ডিজিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, সংস্কারের মাধ্যমে স্বাধীনতা জাদুঘরকে আবারও ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার মাধ্যম হিসেবে তৈরি করা যাবে।
২০২৩ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার দিন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা স্বাধীনতা জাদুঘরে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। জাতীয় জাদুঘরের সহকারী কিপার ও জাদুঘরটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম কাউছার জানান, ঘটনার পর থানায় অভিযোগ ও মামলা হয়েছে। “জাদুঘর যেন পুরোপুরি পরিত্যক্ত না হয়ে পড়ে, তাই সীমিতভাবে অফিস খোলা রাখা হয়,” বলেন তিনি।
ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায়, ছবির ফ্রেমের কাচের টুকরো ছড়িয়ে আছে মেঝেতে। কোথাও পোড়া পলেস্তরা ঝরে পড়ে আছে, চারপাশে পোড়া গন্ধ, অন্ধকারাচ্ছন্ন গ্যালারি—সব মিলিয়ে এক বিষণ্ন ছবি।
যে জাদুঘর এক সময় ছিল ইতিহাসের পাঠশালা
২০১৫ সালের ২৫ মার্চ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়া স্বাধীনতা জাদুঘর ছিল বাংলাদেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ জাদুঘর। এটি ছিল বৃহৎ ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ প্রকল্পের অংশ। প্রকল্পটি বিস্তৃত ৬৭ একর এলাকাজুড়ে। স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী ও মেরিনা তাবাসসুমের নকশায় তৈরি প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ছিল প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা।
জাদুঘরে ছিল ১৪৪টি কাচের প্যানেলে তিন শতাধিক ঐতিহাসিক আলোকচিত্র, মুক্তিযুদ্ধ-সম্পর্কিত সংবাদপত্রের কাটিং, বিদেশি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন, এবং নানা পোস্টার। ছিল কামানের অংশ, বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ভিডিও, শহীদদের অশ্রুসংবলিত প্রতীকী ফোয়ারা ‘অশ্রুপাত’—যা এখন আর চালু নেই।
স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রাখা হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাপতির আত্মসমর্পণের টেবিলের রেপ্লিকাও। ছিল বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও আরও অনেক নিদর্শন—যেগুলোর অনেক কিছুই আজ নেই।
ভবিষ্যতের জাদুঘর কেমন হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সময়সীমা না থাকলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দ্রুত কাজ শুরু করে এই নিদর্শনটিকে পূর্ব গৌরবে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভূগর্ভস্থ স্বাধীনতা জাদুঘর এখন এক ধ্বংসস্তুপ। সরকারের পতনের দিন সংঘটিত ভাঙচুর ও লুটপাটে ক্ষতিগ্রস্ত এ জাদুঘর ঘুরে দেখেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
সংস্কার কাজ শেষে জাদুঘরটি নতুনভাবে উদ্বোধনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সোমবার (১৯ মে) সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস-২০২৫ উপলক্ষে রোববার জাতীয় জাদুঘরে এক বিশেষ সভায় বক্তব্য রাখেন ফারুকী। সভা শেষে তিনি স্বাধীনতা জাদুঘর পরিদর্শন করেন। উপস্থিত ছিলেন জাদুঘরের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন ও স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম।
সংস্কার কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মেরিনা তাবাসসুম জানান, “মূলত আমরা জাদুঘরের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে। এখন জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব, কীভাবে নতুনভাবে জাদুঘরটি গড়ে তোলা যায়।”
তিনি আরও বলেন, “ভবনের ফোয়ারা নষ্ট হয়ে গেছে, লিফট অচল, কাচের রেলিং ভাঙা—সব কিছু সংস্কার করতে হবে। এ বিষয়ে জাতীয় জাদুঘরের ডিজিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, সংস্কারের মাধ্যমে স্বাধীনতা জাদুঘরকে আবারও ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার মাধ্যম হিসেবে তৈরি করা যাবে।
২০২৩ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার দিন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা স্বাধীনতা জাদুঘরে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। জাতীয় জাদুঘরের সহকারী কিপার ও জাদুঘরটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম কাউছার জানান, ঘটনার পর থানায় অভিযোগ ও মামলা হয়েছে। “জাদুঘর যেন পুরোপুরি পরিত্যক্ত না হয়ে পড়ে, তাই সীমিতভাবে অফিস খোলা রাখা হয়,” বলেন তিনি।
ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায়, ছবির ফ্রেমের কাচের টুকরো ছড়িয়ে আছে মেঝেতে। কোথাও পোড়া পলেস্তরা ঝরে পড়ে আছে, চারপাশে পোড়া গন্ধ, অন্ধকারাচ্ছন্ন গ্যালারি—সব মিলিয়ে এক বিষণ্ন ছবি।
যে জাদুঘর এক সময় ছিল ইতিহাসের পাঠশালা
২০১৫ সালের ২৫ মার্চ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়া স্বাধীনতা জাদুঘর ছিল বাংলাদেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ জাদুঘর। এটি ছিল বৃহৎ ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ প্রকল্পের অংশ। প্রকল্পটি বিস্তৃত ৬৭ একর এলাকাজুড়ে। স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী ও মেরিনা তাবাসসুমের নকশায় তৈরি প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ছিল প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা।
জাদুঘরে ছিল ১৪৪টি কাচের প্যানেলে তিন শতাধিক ঐতিহাসিক আলোকচিত্র, মুক্তিযুদ্ধ-সম্পর্কিত সংবাদপত্রের কাটিং, বিদেশি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন, এবং নানা পোস্টার। ছিল কামানের অংশ, বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ভিডিও, শহীদদের অশ্রুসংবলিত প্রতীকী ফোয়ারা ‘অশ্রুপাত’—যা এখন আর চালু নেই।
স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রাখা হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাপতির আত্মসমর্পণের টেবিলের রেপ্লিকাও। ছিল বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও আরও অনেক নিদর্শন—যেগুলোর অনেক কিছুই আজ নেই।
ভবিষ্যতের জাদুঘর কেমন হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সময়সীমা না থাকলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দ্রুত কাজ শুরু করে এই নিদর্শনটিকে পূর্ব গৌরবে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।