“আমি ওসি হয়েও কম দামের ফোন ব্যবহার করি। আপনি এত দামী ফোন নিয়ে ঘুরবেন আর ছিনতাই হবে না, সেটা কীভাবে হয়?”
মোহাম্মদপুর থানায় ছিনতাইয়ের অভিযোগ জানাতে গিয়ে এমন কথাই শুনেছেন ভুক্তভোগী আহমাদ ওয়াদুদ। অভিযোগ করতে এসে থানায় তার অভিজ্ঞতা ছিল আরও হতাশাজনক। পুলিশি গড়িমসি, সহানুভূতির অভাব এবং দায়িত্বহীনতায় ক্ষুব্ধ ওয়াদুদ এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি দীর্ঘ পোস্ট দেন, যার শিরোনাম: ‘মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের সাথে এক ঘণ্টা’।
থানায় ঢুকতেই ‘বোতাম লাগান’ নির্দেশনা
গত বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাতে মোহাম্মদপুরের তিন রাস্তার মোড়ে ছিনতাইয়ের শিকার হন আহমাদ ওয়াদুদ। ছিনতাইকারীরা চাপাতির আঘাতে তাকে আহত করে, নিয়ে যায় মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ এবং কিছু টাকা। তার সঙ্গে থাকা স্ত্রী অল্পের জন্য রক্ষা পান।
ছিনতাইয়ের পাঁচ মিনিটের মাথায় তিনি মোহাম্মদপুর থানায় উপস্থিত হন। কিন্তু সেখানে গিয়ে অভিযোগ জানানোর আগেই তাকে বোতাম লাগান বলে ধমক দেন এক সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্য। ছিনতাইয়ের ধাক্কায় তার শার্টের বোতাম খুলে গিয়েছিল।
“আমি আহত, স্ত্রীর সামনে বিব্রত। এরপরও সেই অফিসারের কথা মেনে বোতাম লাগালাম, ঝামেলা করিনি,”—লিখেছেন ওয়াদুদ।
‘কলম নেই’, ‘লোক নেই’, ‘কমন সেন্স নেই’
ডিউটি অফিসার এসআই জসিম জানান, অভিযোগ লেখার জন্য লোক নেই। কাগজ দিলেও বলেন, কলম নেই। অথচ টেবিলে একাধিক কলম পড়ে থাকতে দেখেছেন ভুক্তভোগী নিজেই। স্ত্রীর ব্যাগ থেকে কলম এনে নিজেই অভিযোগ লিখে দেন ওয়াদুদ।
তবে অভিযোগের কোনো কপি তাকে দেওয়া হয়নি। বরং বলা হয়, “এই নাম্বারটা নিন, এএসআই আনারুলের। এখন উনি অন্য কাজে ব্যস্ত, ফোনে কথা বলেন।”
ওয়াদুদ অনুরোধ করেন, “আপনাদের কেউ আমাদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাবেন কি না?” এর জবাবে এসআই জসিম বলেন, “এটা সম্ভব না। আপনার কমন সেন্স নাই? ছিনতাইকারী আপনার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে?”
ওসির ‘উপদেশ’: দামী ফোন নিয়ে বের হলে এমন হবেই
হতাশ হয়ে তিনি ওসির কক্ষে যান। সাদা পোশাকের ওসি আলী ইফতেখার হাসান তার অভিযোগ শোনেন। এরপর বলেন, “আমি ওসি হয়েও কম দামের ফোন ব্যবহার করি, আপনি এত দামী ফোন নিয়ে ঘুরবেন আর ছিনতাই হবে না, সেটা কীভাবে হয়?”
ওয়াদুদ কোনো পাল্টা কথা না বলেই অনুরোধ করেন, যেন সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ওসি তখন তাকে এএসআই আনারুলের সঙ্গে দেখা করার জন্য বলেন।
৪০ মিনিট দেরি, সামনে থাকা ছিনতাইকারীদেরও ধরা হয়নি
তিনটি জায়গায় ঘুরে অবশেষে আনারুলসহ পুলিশের একটি দল ওয়াদুদকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে গিয়ে ওয়াদুদ নিজের চোখে ছিনতাইকারীদের চিনে ফেলেন এবং আঙুল দেখিয়ে ইশারা করেন।
কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এএসআই আনারুল তাদের না গিয়ে কিছু দূরে অন্য লোকদের সঙ্গে কথা বলেন। ছিনতাইকারীরা এই ফাঁকে ধীরে ধীরে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
ওয়াদুদ বলেন, “আমি অবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে ছিলাম। আমি পুলিশকে বলেছি, ওরা যাচ্ছে, ওরা যাচ্ছে! কিন্তু তবুও কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বলা হলো, ‘এখন তো আর ওদের ধরা যাবে না, গভীর রাতে অভিযান চালাবো।’”
প্রত্যাহার এবং অভিযান
ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে আলোচনায় আসার পর শুক্রবার (২৫ জুলাই) ডিএমপির মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুয়েল রানা জানান, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে এসআই জসিম উদ্দীন, এএসআই মো. আনারুল ইসলাম এবং কনস্টেবল মাজেদুর রহমান ও শিহাব উদ্দিন শিহাবকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
একই দিন দুপুরে বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগীর ফোনটিসহ ছিনতাইকারী ইউসুফ (২৬), সিয়াম (২৩) ও জহুরুল (২২)-কে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওসির বিতর্কিত বক্তব্য ও আচরণ নিয়ে জানতে চাইলে এডিসি জুয়েল রানা বলেন, “বিষয়টি তদন্তাধীন। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
---
শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫
“আমি ওসি হয়েও কম দামের ফোন ব্যবহার করি। আপনি এত দামী ফোন নিয়ে ঘুরবেন আর ছিনতাই হবে না, সেটা কীভাবে হয়?”
মোহাম্মদপুর থানায় ছিনতাইয়ের অভিযোগ জানাতে গিয়ে এমন কথাই শুনেছেন ভুক্তভোগী আহমাদ ওয়াদুদ। অভিযোগ করতে এসে থানায় তার অভিজ্ঞতা ছিল আরও হতাশাজনক। পুলিশি গড়িমসি, সহানুভূতির অভাব এবং দায়িত্বহীনতায় ক্ষুব্ধ ওয়াদুদ এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি দীর্ঘ পোস্ট দেন, যার শিরোনাম: ‘মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের সাথে এক ঘণ্টা’।
থানায় ঢুকতেই ‘বোতাম লাগান’ নির্দেশনা
গত বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাতে মোহাম্মদপুরের তিন রাস্তার মোড়ে ছিনতাইয়ের শিকার হন আহমাদ ওয়াদুদ। ছিনতাইকারীরা চাপাতির আঘাতে তাকে আহত করে, নিয়ে যায় মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ এবং কিছু টাকা। তার সঙ্গে থাকা স্ত্রী অল্পের জন্য রক্ষা পান।
ছিনতাইয়ের পাঁচ মিনিটের মাথায় তিনি মোহাম্মদপুর থানায় উপস্থিত হন। কিন্তু সেখানে গিয়ে অভিযোগ জানানোর আগেই তাকে বোতাম লাগান বলে ধমক দেন এক সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্য। ছিনতাইয়ের ধাক্কায় তার শার্টের বোতাম খুলে গিয়েছিল।
“আমি আহত, স্ত্রীর সামনে বিব্রত। এরপরও সেই অফিসারের কথা মেনে বোতাম লাগালাম, ঝামেলা করিনি,”—লিখেছেন ওয়াদুদ।
‘কলম নেই’, ‘লোক নেই’, ‘কমন সেন্স নেই’
ডিউটি অফিসার এসআই জসিম জানান, অভিযোগ লেখার জন্য লোক নেই। কাগজ দিলেও বলেন, কলম নেই। অথচ টেবিলে একাধিক কলম পড়ে থাকতে দেখেছেন ভুক্তভোগী নিজেই। স্ত্রীর ব্যাগ থেকে কলম এনে নিজেই অভিযোগ লিখে দেন ওয়াদুদ।
তবে অভিযোগের কোনো কপি তাকে দেওয়া হয়নি। বরং বলা হয়, “এই নাম্বারটা নিন, এএসআই আনারুলের। এখন উনি অন্য কাজে ব্যস্ত, ফোনে কথা বলেন।”
ওয়াদুদ অনুরোধ করেন, “আপনাদের কেউ আমাদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাবেন কি না?” এর জবাবে এসআই জসিম বলেন, “এটা সম্ভব না। আপনার কমন সেন্স নাই? ছিনতাইকারী আপনার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে?”
ওসির ‘উপদেশ’: দামী ফোন নিয়ে বের হলে এমন হবেই
হতাশ হয়ে তিনি ওসির কক্ষে যান। সাদা পোশাকের ওসি আলী ইফতেখার হাসান তার অভিযোগ শোনেন। এরপর বলেন, “আমি ওসি হয়েও কম দামের ফোন ব্যবহার করি, আপনি এত দামী ফোন নিয়ে ঘুরবেন আর ছিনতাই হবে না, সেটা কীভাবে হয়?”
ওয়াদুদ কোনো পাল্টা কথা না বলেই অনুরোধ করেন, যেন সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ওসি তখন তাকে এএসআই আনারুলের সঙ্গে দেখা করার জন্য বলেন।
৪০ মিনিট দেরি, সামনে থাকা ছিনতাইকারীদেরও ধরা হয়নি
তিনটি জায়গায় ঘুরে অবশেষে আনারুলসহ পুলিশের একটি দল ওয়াদুদকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে গিয়ে ওয়াদুদ নিজের চোখে ছিনতাইকারীদের চিনে ফেলেন এবং আঙুল দেখিয়ে ইশারা করেন।
কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এএসআই আনারুল তাদের না গিয়ে কিছু দূরে অন্য লোকদের সঙ্গে কথা বলেন। ছিনতাইকারীরা এই ফাঁকে ধীরে ধীরে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
ওয়াদুদ বলেন, “আমি অবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে ছিলাম। আমি পুলিশকে বলেছি, ওরা যাচ্ছে, ওরা যাচ্ছে! কিন্তু তবুও কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বলা হলো, ‘এখন তো আর ওদের ধরা যাবে না, গভীর রাতে অভিযান চালাবো।’”
প্রত্যাহার এবং অভিযান
ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে আলোচনায় আসার পর শুক্রবার (২৫ জুলাই) ডিএমপির মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুয়েল রানা জানান, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে এসআই জসিম উদ্দীন, এএসআই মো. আনারুল ইসলাম এবং কনস্টেবল মাজেদুর রহমান ও শিহাব উদ্দিন শিহাবকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
একই দিন দুপুরে বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগীর ফোনটিসহ ছিনতাইকারী ইউসুফ (২৬), সিয়াম (২৩) ও জহুরুল (২২)-কে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওসির বিতর্কিত বক্তব্য ও আচরণ নিয়ে জানতে চাইলে এডিসি জুয়েল রানা বলেন, “বিষয়টি তদন্তাধীন। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
---