alt

নগর-মহানগর

দুর্ঘটনা এড়াতে অ্যাপ্রোচ এরিয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়ার দাবি বিআইপির

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কারিগরিভাবে বৈধ হলেও এটি কার্যত অনিরাপদ এলাকায় অবস্থিত। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোচ এরিয়ার (বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ অঞ্চল) মধ্যে পড়েছে। বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোচ এরিয়ায় থাকা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ জনসমাগম হয়, এমন সব প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ‘মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা: জননিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের দায় ও করণীয়’ শীর্ষক এক তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। আজ শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটরে প্ল্যানার্স টাওয়ারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব বিষয় তুলে ধরেছে বিআইপি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বিআইপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিমানবন্দরের রানওয়ের পর ৫০০ ফুট এলাকায় কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যায় না। এর পরের ১৩ হাজার ফুট বা প্রায় ৪ কিলোমিটার অঞ্চলকে অ্যাপ্রোচ এরিয়া বলা হয়, যেখান দিয়ে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাপ্রোচ এলাকায় ১৫০ ফুট উচ্চতার স্থাপনা নির্মাণে সরকারের নগর কর্তৃপক্ষ ও বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দিক থেকে কোনো বাধা নেই। সেসব স্থাপনার কী ধরনের ব্যবহার হবে, সে বিষয়েও কোনো নির্দেশনা নেই সরকারের সংস্থাগুলোর। প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাপ্রোচ এলাকায় এ ধরনের স্থাপনা কারিগরিভাবে বৈধ হলেও কার্যত অনিরাপদ।

প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপে অ্যাপ্রোচ এলাকার স্থাপনার উচ্চতা নিয়ন্ত্রণের কথা বলা আছে। কিন্তু সেখানকার ভূমির কী ধরনের ব্যবহার হবে, তা উল্লেখ নেই। গণজমায়েত হয় এ রকম কোনো স্থাপনার জন্য সেখানকার ভূমি ব্যবহার করা উচিত নয়। কৃষিজমি ও সবুজায়ন করা যেতে পারে, তবে এমন কিছু করা যাবে না, যাতে সেখানে পাখি আসে।

আন্তর্জাতিকভাবে বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা আদর্শিক মান ব্যাখ্যা করে তামজিদুল ইসলাম বলেন, আদর্শ মান অনুযায়ী বিমানবন্দর শহর থেকে দূরে থাকে। এই বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোচ এলাকায় একাধিক আবাসিক এলাকা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে মাইলস্টোন স্কুলে যাতায়াত সহজ ছিল। না হলে হাসপাতালে নিতে দেরি হওয়ায় প্রাণহানি আরও বেশি হতে পারত।

গত সোমবার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ, যাঁদের অনেকের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।

সংবাদ সম্মেলনে বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, অ্যাপ্রোচ এরিয়া থেকে স্কুল, কলেজ, মসজিদ ও মাদ্রাসার মতো জনসমাগম হয়, এমন সব স্থাপনা সরাতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা ঘটলে মৃত্যুর মিছিল ঠেকানো সম্ভব হবে না। বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের জায়গা তদন্ত করে যত ধরনের ব্যত্যয় হয়েছে, সেগুলো অনুসন্ধান করতে হবে। স্থাপনার উচ্চতায় ব্যত্যয় থাকলেও বাড়তি অংশ ভেঙে ফেলতে হবে।

জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান উড়ানোর সুযোগ নেই উল্লেখ করে আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকা থেকে বিমানবন্দর দূরে ছিল। ঢাকাকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ বলে যে একটা জিনিস আছে, তা ভুলে যাওয়া হয়েছে। তা না হলে বিমানবন্দরের উড্ডয়ন-অবতরণের পাশে স্কুল-কলেজের মতো অবকাঠামো হওয়ারই কথা নয়। মৌলিক ব্যাকরণ ভুলে যাওয়া হয়েছে।

১৯৯৫ সালে যখন ঢাকা মহানগর উন্নয়ন পরিকল্পনা (ডিএমডিপি) হয়, তখনো মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এলাকা জলাশয় ছিল। এটি বিমানবন্দরের জন্য উপযোগী ছিল উল্লেখ করে আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, মাইলস্টোনের জন্য নিচু এলাকা ভরাট করতে দেয় রাজউক।

মাইলস্টোনের নিচু এলাকা ভরাটে রাজউক কেন বাধা দেয়নি, সেই প্রশ্ন রেখে এই পরিকল্পনাবিদ বলেন, রাজউক ও বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) কেউ নিজেদের দায়িত্ব পালন করেনি। যাঁরা ভবন তৈরি করেছেন, তাঁরা নিজেরাও অঙ্গীকার ঠিক রাখেননি।

আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, কয়েক দশক ধরে রাষ্ট্রে যে চর্চা হয়েছিল, তাতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে ভূমি ও ভবন নিয়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ওপরের পর্যায় থেকে চাপ দিয়ে অনুমোদন নিয়ে নেওয়া হয়েছে। মাইলস্টোনের কয়েকটি ভবনের অনুমোদন আছে, কয়েকটির নেই। যে ভবনে বিমান আঘাত করেছে, সম্ভবত সেটির অনুমোদন নেই।

বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোচ এলাকায় জনসমাগম হয়, এমন স্থাপনা কত আছে, তা যাচাইয়ে সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চপর্যায়ের কমিটি করা উচিত বলে মনে করেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান।

এই পরিকল্পনাবিদ বলেন, যিনি মাইলস্টোন নির্মাণ করেছেন, তাঁর দায় আছে। এ ছাড়া বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুমতি ও অনাপত্তিপত্র নেওয়ার বিষয় আছে। যাঁরা অনুমতি ও অনাপত্তিপত্র দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের দায়ভার আছে। দায়ভার আছে, এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনলে হয়তো ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়ানো যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিআইপির সহসভাপতি পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন।

ছবি

ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে প্রাণ গেল দুই সন্তানের বাবার

ছবি

মাইলস্টোন ট্রাজেডি: দুই শিশু বাসায় ফিরলেও মৃত্যু বেড়ে ৩৫

ছবি

ওসির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীদের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ, স্থানীয়দের বিক্ষোভ

ছবি

আন্দোলনে ভাঙা ভবন পরিষ্কারে ব্যস্ত কর্মীরা, আসছে নতুন ইনস্টিটিউট

ছবি

বিমান বিধ্বস্তে দগ্ধ ৪০ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে, ৫ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন

ছবি

বিমান দুর্ঘটনায় মাইলস্টোনের আরও দুই শিক্ষার্থী দগ্ধ হয়ে মারা গেল

ছবি

‘দামী ফোন নিয়ে ঘোরাফেরা করলে ছিনতাই হবেই’: ও‌সি মোহাম্মদপুর থানা

ছবি

দিয়াবাড়ির বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ শিক্ষার্থীর পরিচয় নিশ্চিত করল সিআইডি

ছবি

মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত, নিখোঁজ ৫

সচিবালয়ে ‘ভাঙচুর-হত্যাচেষ্টার’ অভিযোগে মামলা, অভিযুক্ত ১২০০ জন

ছবি

“মৃত্যুর সংখ্যা গোপন নয়, গুজব এড়ান” — আইএসপিআর

ছবি

ঋণ জালিয়াতি মামলায় গ্রেপ্তার আবুল বারকাতের রিমান্ড শুনানিতে অভিযোগ-জবাব

ছবি

বিমান বিধ্বস্তে বার্ন ইনস্টিটিউটে আট জনের অবস্থা সংকটাপন্ন

ছবি

৭০ শতাংশ দগ্ধ মাহতাব লাইফ সাপোর্টে, “ভাগ্নে এখনো বেঁচে আছে”

ছবি

দিয়াবাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত তৌকিরের জানাজা শেষে মরদেহ রাজশাহীতে পাঠানো হলো

ছবি

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে দগ্ধ নাজিয়া মারা গেল, হাসপাতালেই ছোট ভাই নাফি

ছবি

মাইলস্টোনে নিহতদের তালিকায় বিভ্রান্তি, অশনাক্ত ৬ জনের ডিএনএ নমুনা রাখা হচ্ছে

ছবি

উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে উপদেষ্টাদের ঘিরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ছয় দফা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস

ছবি

উচ্ছ্বাস থেকে কান্নায় রাজশাহীর তৌকির ইসলামের পরিবার

ছবি

হাসপাতালে ৮৮ জন ভর্তি, ২৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

ছবি

উত্তরার স্কুলে বিমান দুর্ঘটনার পরও সন্ধান মেলেনি লামিয়া ও আফিয়ার

ছবি

শহীদদের নামে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নামকরণের ঘোষণা তারেক রহমানের

ছবি

‘মিগ-২১’-এর উন্নত চীনা সংস্করণ এফ-৭ বিজিআই, বাংলাদেশে ২০১৩ সাল থেকে

ছবি

ঢাকায় বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানের পাইলট তৌকিরের পরিবার জানত তিনি জীবিত

ছবি

মাইলস্টোন স্কুলে বিধ্বস্ত বিমান, শিশুসহ দগ্ধ অনেকেই, ২০ জনের প্রাণহানি

ছবি

উত্তরায় স্কুল ভবনে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত , দগ্ধ বহু

ছবি

মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা: আহতদের মধ্যে শিক্ষার্থীও, রক্তের আহ্বান

ছবি

মাইলস্টোন স্কুলে বিধ্বস্ত বিমান: ডিএনএ পরীক্ষা করে অজ্ঞাতদের পরিচয় শনাক্ত হবে

মাইলস্টোন দুর্ঘটনা: নিখোঁজদের জন্য যোগাযোগ করতে পাঁচটি হটলাইন

ছবি

যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় শিশুসহ ১৯ জনের মৃত্যু, আহত শতাধিক

ছবি

উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ১৯, আহত ১৬৪

ছবি

ঢাকায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে ১৯ জন নিহত, পাইলটের ‘সর্বাত্মক চেষ্টা’ সত্ত্বেও দুর্ঘটনা

উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত, নিহত অন্তত ১৯

দিয়াবাড়িতে বিধ্বস্তের পর আগুন, আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে মেট্রোরেলেও

ছবি

‘পাথর দিয়ে হত্যা’ মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিনের জবানবন্দি আদালতে

ছবি

নাশকতার অভিযোগে শ্যামপুরে এক যুবক আটক, আরেকজন পলাতক

tab

নগর-মহানগর

দুর্ঘটনা এড়াতে অ্যাপ্রোচ এরিয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়ার দাবি বিআইপির

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কারিগরিভাবে বৈধ হলেও এটি কার্যত অনিরাপদ এলাকায় অবস্থিত। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোচ এরিয়ার (বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ অঞ্চল) মধ্যে পড়েছে। বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোচ এরিয়ায় থাকা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ জনসমাগম হয়, এমন সব প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ‘মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা: জননিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের দায় ও করণীয়’ শীর্ষক এক তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। আজ শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটরে প্ল্যানার্স টাওয়ারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব বিষয় তুলে ধরেছে বিআইপি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বিআইপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিমানবন্দরের রানওয়ের পর ৫০০ ফুট এলাকায় কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যায় না। এর পরের ১৩ হাজার ফুট বা প্রায় ৪ কিলোমিটার অঞ্চলকে অ্যাপ্রোচ এরিয়া বলা হয়, যেখান দিয়ে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাপ্রোচ এলাকায় ১৫০ ফুট উচ্চতার স্থাপনা নির্মাণে সরকারের নগর কর্তৃপক্ষ ও বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দিক থেকে কোনো বাধা নেই। সেসব স্থাপনার কী ধরনের ব্যবহার হবে, সে বিষয়েও কোনো নির্দেশনা নেই সরকারের সংস্থাগুলোর। প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাপ্রোচ এলাকায় এ ধরনের স্থাপনা কারিগরিভাবে বৈধ হলেও কার্যত অনিরাপদ।

প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপে অ্যাপ্রোচ এলাকার স্থাপনার উচ্চতা নিয়ন্ত্রণের কথা বলা আছে। কিন্তু সেখানকার ভূমির কী ধরনের ব্যবহার হবে, তা উল্লেখ নেই। গণজমায়েত হয় এ রকম কোনো স্থাপনার জন্য সেখানকার ভূমি ব্যবহার করা উচিত নয়। কৃষিজমি ও সবুজায়ন করা যেতে পারে, তবে এমন কিছু করা যাবে না, যাতে সেখানে পাখি আসে।

আন্তর্জাতিকভাবে বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা আদর্শিক মান ব্যাখ্যা করে তামজিদুল ইসলাম বলেন, আদর্শ মান অনুযায়ী বিমানবন্দর শহর থেকে দূরে থাকে। এই বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোচ এলাকায় একাধিক আবাসিক এলাকা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে মাইলস্টোন স্কুলে যাতায়াত সহজ ছিল। না হলে হাসপাতালে নিতে দেরি হওয়ায় প্রাণহানি আরও বেশি হতে পারত।

গত সোমবার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ, যাঁদের অনেকের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।

সংবাদ সম্মেলনে বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, অ্যাপ্রোচ এরিয়া থেকে স্কুল, কলেজ, মসজিদ ও মাদ্রাসার মতো জনসমাগম হয়, এমন সব স্থাপনা সরাতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা ঘটলে মৃত্যুর মিছিল ঠেকানো সম্ভব হবে না। বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের জায়গা তদন্ত করে যত ধরনের ব্যত্যয় হয়েছে, সেগুলো অনুসন্ধান করতে হবে। স্থাপনার উচ্চতায় ব্যত্যয় থাকলেও বাড়তি অংশ ভেঙে ফেলতে হবে।

জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান উড়ানোর সুযোগ নেই উল্লেখ করে আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকা থেকে বিমানবন্দর দূরে ছিল। ঢাকাকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ বলে যে একটা জিনিস আছে, তা ভুলে যাওয়া হয়েছে। তা না হলে বিমানবন্দরের উড্ডয়ন-অবতরণের পাশে স্কুল-কলেজের মতো অবকাঠামো হওয়ারই কথা নয়। মৌলিক ব্যাকরণ ভুলে যাওয়া হয়েছে।

১৯৯৫ সালে যখন ঢাকা মহানগর উন্নয়ন পরিকল্পনা (ডিএমডিপি) হয়, তখনো মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এলাকা জলাশয় ছিল। এটি বিমানবন্দরের জন্য উপযোগী ছিল উল্লেখ করে আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, মাইলস্টোনের জন্য নিচু এলাকা ভরাট করতে দেয় রাজউক।

মাইলস্টোনের নিচু এলাকা ভরাটে রাজউক কেন বাধা দেয়নি, সেই প্রশ্ন রেখে এই পরিকল্পনাবিদ বলেন, রাজউক ও বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) কেউ নিজেদের দায়িত্ব পালন করেনি। যাঁরা ভবন তৈরি করেছেন, তাঁরা নিজেরাও অঙ্গীকার ঠিক রাখেননি।

আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, কয়েক দশক ধরে রাষ্ট্রে যে চর্চা হয়েছিল, তাতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে ভূমি ও ভবন নিয়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ওপরের পর্যায় থেকে চাপ দিয়ে অনুমোদন নিয়ে নেওয়া হয়েছে। মাইলস্টোনের কয়েকটি ভবনের অনুমোদন আছে, কয়েকটির নেই। যে ভবনে বিমান আঘাত করেছে, সম্ভবত সেটির অনুমোদন নেই।

বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোচ এলাকায় জনসমাগম হয়, এমন স্থাপনা কত আছে, তা যাচাইয়ে সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চপর্যায়ের কমিটি করা উচিত বলে মনে করেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান।

এই পরিকল্পনাবিদ বলেন, যিনি মাইলস্টোন নির্মাণ করেছেন, তাঁর দায় আছে। এ ছাড়া বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুমতি ও অনাপত্তিপত্র নেওয়ার বিষয় আছে। যাঁরা অনুমতি ও অনাপত্তিপত্র দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের দায়ভার আছে। দায়ভার আছে, এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনলে হয়তো ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়ানো যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিআইপির সহসভাপতি পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন।

back to top