alt

নগর-মহানগর

অদৃশ্য আদি বুড়িগঙ্গা নদীর সীমানা পিলার

কারখানা, দোকানপাট নির্মাণ, ভেতরে পিলার

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ : মঙ্গলবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২২

https://sangbad.net.bd/images/2022/February/01Feb22/news/aaaaaa%20%281%29.jpg

বুড়িগঙ্গা নদীর সীমানা পিলার ভেঙে ভাঙারির দোকান, তৈরি করা হয় প্লাস্টিক কারখানা সোহরাব আলম

আদি বুড়িগঙ্গা নদীর মুখ থেকে কামরাঙ্গীরচরের লোহার সেতু পর্যন্ত নদীর সীমানা চিহ্নিত করে ২৮টি পিলার স্থাপন করা হয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি। এখন স্থাপিত পিলারের মধ্যে নদীর তীরে মাত্র ১৩টি পিলার দৃশ্যমান। বাকি ১৫টি পিলার অদৃশ্য হয়ে গেছে। রোববার (৩০ জানুয়ারি) আদি বুড়িগঙ্গা নদীর তীর এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, কামরাঙ্গীরচরের আশ্রাফাবাদ এলাকায় ছাতি মসজিদের দেয়াল ঘেঁষে একটি সীমানা পিলার তৈরি করা হয়েছে। কাছে গিয়ে দেখা গেল পিলারের গায়ে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও বাংলাদেশ সরকারের লোগোসহ লেখা রয়েছে ‘বাগচান খাঁ, পিলার নম্বর-২, বুড়িগঙ্গা নদী’। কিন্তু তিন নম্বর পিলারটি আর দেখা যাচ্ছে না।

https://sangbad.net.bd/images/2022/February/01Feb22/news/pic-2%20%281%29.jpg

ওই পিলারটির বিষয়ে জানতে চাইলে শরিফুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা সংবাদকে বলেন, ‘মাস তিনেক আগে এই পিলারগুলো বসানো হয়েছে। এক নম্বর পিলারটি লোহার ব্রিজের কাছাকাছি আছে। দুই নম্বর তো এটা। তিন নম্বর পিলার মনে হয় এই দোকানপাটের নিচে চাপা পড়েছে।’

একটু সামনে গিয়ে দেখা গেল ভাঙারির দোকানের শাটারের নিচে ঢাকা পড়েছে তিন নম্বর পিলারটি। জানতে চাইলে নূরু নামের এক কর্মচারী সংবাদকে বলেন, ‘এই দোকানে ভাঙারির কাজ করি। মালিকের দোকান আমরা শুধু কাজ করছি। পিলারের ওপর অনেক কিছু রাখা হয়। এটা সরকারি লোকেরা তৈরি করেছে। আমরা এটার বিষয়ে কিছু জানি না।’ দোকানের মালিকের নাম জানতে চাইলে তা বলতে চাননি তিনি।

এভাবে বুড়িগঙ্গা নদী ৩-১৭ নম্বর পিলার দৃশ্যমান নয়। এসব পিলার ঢেকে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন প্লাস্টিক কারখানা ও ভাঙারির দোকানসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা। তবে কামরাঙ্গীরচরের নূরবাগ এলাকার মাদবরের বাজার বেড়িবাঁধের পাশের পিলারগুলো অনেকটা দৃশ্যমান। কিন্তু পিলারের গা ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে ইট, বালু, পাথর ও সিমেন্ট বিক্রয় কেন্দ্র।

নূরবাগ এলাকার বাইতুল রহমান মসজিদের পাশে বুড়িগঙ্গা নদীর ৬৮ নম্বর পিলার ঘেঁষে মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজ নামে সিমেন্ট, ইটের খোয়া ইত্যাদি বিক্রির দোকান করেছেন জহিরুল ইসলাম বাবু। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘নদী সীমানা পিলার বিষয়ে তেমন কিছু বলতে পারবো না। কারণ আমি এই এলাকার লোক নই। এই জায়গার মালিক হাজী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। আমি তার কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছি।’

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মো. গুলজার আলী সংবাদকে বলেন, ‘আদি বুড়িগঙ্গা এলাকায় প্রাথমিকভাবে ৭৪টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখন আবার নতুন করে আরও ৭২টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকা অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। নদীর পিলার ঢেকে যদি কেউ স্থাপনা তৈরি করে অবশ্যই তা উচ্ছেদ করা হবে।’ কামরাঙ্গীরচর এলাকায় যদি এ রকম হয়ে থাকে তাহলে দুই-একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

নদীর সীমানা নির্ধারণে দুই দফা পিলার স্থাপন, তাতেও গরমিল

ঢাকার চারপাশে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর সীমানা নির্ধারণের জন্য দুই দফা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। প্রথম দফায় ২০১১-২০১৫ সাল পর্যন্ত গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পিডব্লিউডির মাধ্যমে ছয় হাজার ৮৪৩টি পিলার স্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু পাঁচ বছরের স্থাপন করা হয় চার হাজার ৬৩টি পিলার। এতে ব্যয় হয় প্রায় ২৭ কোটি টাকা। তবে বিআইডব্লিউটিএ বলছে, তারা ওই হিসাব থেকে ৩৬টি পিলার কম পেয়েছে। অর্থাৎ মোট চার হাজার ২৭টি পিলার স্থাপন করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও ধলেশ্বরী নদীর সীমানা নির্ধারণে। এর মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে ২১টি মৌজায় এক হাজার আটটি, তুরাগ নদীর পাড়ে ৩৫টি মৌজায় দুই হাজার ১৪টি, বালু নদীর পাড়ে ১৮টি মৌজায় ৫৮৯টি ও ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে চারটি মৌজায় ৪১৬টি পিলার স্থাপন করা হয়।

আবার এসব পিলারের মধ্যে ৮৯৪টি পিলার বিষয়ে আপত্তি ছিল বিআইডব্লিউটিএর। তারা বলছে, ২৬৪টি পিলার ক্ষতিগ্রস্ত ও ভাঙা পাওয়া গেছে। এছাড়া পিলার স্থাপনের কথা বলা হলেও সরেজমিন দৃশ্যমান পাওয়া যায়নি ২০৮ পিলার। আর ৪২২টি পিলার সঠিক স্থানে স্থাপন করা হয়নি বলে অভিযোগ বিআইডব্লিউটিএর।

এরপর দ্বিতীয় দফায় ২০১৮ সালে ঢাকার চারপাশের বৃত্তাকার ১১০ কিলোমিটার নৌ-পথে সৌন্দর্যবর্ধন ও নদীর সীমানা চিহ্নিত করে সাত হাজার সীমানা পিলার স্থাপন ও ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করে নৌ-মন্ত্রণালয়। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ছিল সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা। তা বাড়িয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১৮১ কোটি ১০ লাখ ৩১ হাজার টাকা। ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তা বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার পিলার স্থাপন করা হয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে প্রকল্পের উপপরিচালক (ডিপিডি) মতিউর ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় সাত হাজার ৫৬২টি সীমানা পিলার, ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে ৮০টি, কি ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে ১০ কিলোমিটার, ওয়াকওয়ে ড্রেন তিন কিলোমিটার, হাঁটার সেতু ৩৯৫ মিটার, নদী তীরে বসার বেঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে ২৯১টি, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে ৮৫০ মিটার, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা তিন কিলোমিটার ৫০০ মিটার, জেটি নির্মাণ ১৪টি ও ২৩ হাজার বর্গমিটার পার্কিং ইয়ার্ডসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে।’

বনানীতে ৯ বছর বয়সী পথশিশু ধর্ষণ: মূল অভিযুক্ত আল আমিন গ্রেফতার

ছবি

সূত্রাপুরে গ্যাস বিস্ফোরণ: একই পরিবারের আরও দুই শিশুর মৃত্যু

ছবি

রবিনকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখাল আদালত

ছবি

সচিবালয় ও যমুনাসহ কয়েকটি এলাকায় সভা-মিছিল নিষিদ্ধের সময়সীমা বাড়াল ডিএমপি

ছবি

শাহবাগে জুলাই মনুমেন্ট নির্মাণের জন্য ভাঙা হচ্ছে পুরনো স্থাপনা

ছবি

মহানগরীতে চলাচলের দাবিতে বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে অটোরিকশা চালকদের অবস্থান

ছবি

সলিমুল্লাহ মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন

ছবি

পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবির পর সশস্ত্র হামলায় রক্তাক্ত পল্লবীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

ছবি

পুরান ঢাকার নৃশংস হত্যার পর পল্লবীতেও চাঁদাবাজদের হামলা, আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা

ছবি

যাত্রাবাড়ীতে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ শিশুটিও মারা গেল

ছবি

‘স্বামীর’ অঙ্গ কাটার অভিযোগে গ্রেপ্তার নারী থানায় বিষপান করে মারা গেলেন

ছবি

পুরান ঢাকায় হত্যাকাণ্ড ও অস্ত্র মামলায় মহিন ও রবিনের রিমান্ড

ছবি

ভারত ও বাংলাদেশ অভিন্ন বৌদ্ধ ঐতিহ্যের অধিকারী : প্রণয় ভার্মা

ছবি

শাহজালাল বিমানবন্দরে নেপালগামী ফ্লাইটে বোমার ভুয়া খবর, আতঙ্কের পর স্বাভাবিক উড্ডয়ন

ছবি

সূত্রাপুরে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ একই পরিবারের ৫ জন

ছবি

লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের হাতে নির্যাতিত দুই প্রবাসী, মুক্তিপণে গ্রেপ্তার দুইজন

ছবি

সংখ্যালঘুদের বাদ রেখে সংস্কার কার্যক্রম, সবচেয়ে হতাশাজনক’ — নির্মল রোজারিও

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ক্লাসে ফেরার নির্দেশ, হোস্টেলও খুলছে ১১ জুলাই

ছবি

দ্বিতীয় ধাপের টাকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ আহতরা, রোববার দেওয়ার আশ্বাস

ছবি

বৃষ্টি-জলে রাজধানীতে ভোগান্তি, জলাবদ্ধতা ঠেকাতে সতর্ক সিটি করপোরেশন

ছবি

গাজীপুরে ভবনের ছাদে পোল্ট্রি খামার: পরিবেশ দূষণের দায়ে দন্ড

ছবি

ডিপজলের বিরুদ্ধে নারীকে নির্যাতন ও অ্যাসিড নিক্ষেপের অভিযোগে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ

যাত্রাবাড়ীতে বৃদ্ধ দম্পতিকে মারধর করে ডাকাতি, স্বামীর মৃত্যু

ছবি

রাজস্ব আহরণে স্থবিরতা কাটাতে কর্মীদের অভয় দিলেন আবদুর রহমান খান

ছবি

হাইকোর্টের বেঞ্চ বিভাগীয় শহরে স্থানান্তরের উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন

ছবি

তিন দাবিতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ঘেরাও ইউনানী শিক্ষার্থীদের

ছবি

কাউকে না জানিয়ে কুয়াকাটায় যাওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা ভোরে বাসায় ফিরলেন

ছবি

খিলক্ষেতে কভার্ড ভ্যানের চাপায় দুই পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিহত

ছবি

জুমার নামাজের কথা বলে বেরিয়ে আর ফেরেননি ব্যাংক কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান

ছবি

নতুন আতঙ্ক ‘মব সন্ত্রাস’, বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে: বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা

ছবি

বনানীতে হোটেলে নারীদের ওপর হামলা, নেতৃত্বে যুবদল নেতা—ভিডিও ভাইরাল

ছবি

বিদেশে নারী পাচারে জালিয়াতি, বিএমইটির কর্মকর্তাসহ ৯ জনের নামে দুদকের মামলা

ছবি

মাদক ও সন্ত্রাসে জড়িত টুন্ডা বাবুর বিরুদ্ধে ১০টির বেশি মামলা

ছবি

আশুরা উপলক্ষে নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের প্রস্তুতি, তাজিয়া মিছিলে কঠোর নজরদারি

ছবি

তেজগাঁওয়ে ছিনতাইয়ের নাটক: মানি এক্সচেঞ্জকর্মীসহ গ্রেপ্তার ৬

ছবি

হাটখোলায় রাসায়নিক গুদামে আগুন, ২ ঘন্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে

tab

নগর-মহানগর

অদৃশ্য আদি বুড়িগঙ্গা নদীর সীমানা পিলার

কারখানা, দোকানপাট নির্মাণ, ভেতরে পিলার

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

মঙ্গলবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২২

https://sangbad.net.bd/images/2022/February/01Feb22/news/aaaaaa%20%281%29.jpg

বুড়িগঙ্গা নদীর সীমানা পিলার ভেঙে ভাঙারির দোকান, তৈরি করা হয় প্লাস্টিক কারখানা সোহরাব আলম

আদি বুড়িগঙ্গা নদীর মুখ থেকে কামরাঙ্গীরচরের লোহার সেতু পর্যন্ত নদীর সীমানা চিহ্নিত করে ২৮টি পিলার স্থাপন করা হয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি। এখন স্থাপিত পিলারের মধ্যে নদীর তীরে মাত্র ১৩টি পিলার দৃশ্যমান। বাকি ১৫টি পিলার অদৃশ্য হয়ে গেছে। রোববার (৩০ জানুয়ারি) আদি বুড়িগঙ্গা নদীর তীর এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, কামরাঙ্গীরচরের আশ্রাফাবাদ এলাকায় ছাতি মসজিদের দেয়াল ঘেঁষে একটি সীমানা পিলার তৈরি করা হয়েছে। কাছে গিয়ে দেখা গেল পিলারের গায়ে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও বাংলাদেশ সরকারের লোগোসহ লেখা রয়েছে ‘বাগচান খাঁ, পিলার নম্বর-২, বুড়িগঙ্গা নদী’। কিন্তু তিন নম্বর পিলারটি আর দেখা যাচ্ছে না।

https://sangbad.net.bd/images/2022/February/01Feb22/news/pic-2%20%281%29.jpg

ওই পিলারটির বিষয়ে জানতে চাইলে শরিফুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা সংবাদকে বলেন, ‘মাস তিনেক আগে এই পিলারগুলো বসানো হয়েছে। এক নম্বর পিলারটি লোহার ব্রিজের কাছাকাছি আছে। দুই নম্বর তো এটা। তিন নম্বর পিলার মনে হয় এই দোকানপাটের নিচে চাপা পড়েছে।’

একটু সামনে গিয়ে দেখা গেল ভাঙারির দোকানের শাটারের নিচে ঢাকা পড়েছে তিন নম্বর পিলারটি। জানতে চাইলে নূরু নামের এক কর্মচারী সংবাদকে বলেন, ‘এই দোকানে ভাঙারির কাজ করি। মালিকের দোকান আমরা শুধু কাজ করছি। পিলারের ওপর অনেক কিছু রাখা হয়। এটা সরকারি লোকেরা তৈরি করেছে। আমরা এটার বিষয়ে কিছু জানি না।’ দোকানের মালিকের নাম জানতে চাইলে তা বলতে চাননি তিনি।

এভাবে বুড়িগঙ্গা নদী ৩-১৭ নম্বর পিলার দৃশ্যমান নয়। এসব পিলার ঢেকে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন প্লাস্টিক কারখানা ও ভাঙারির দোকানসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা। তবে কামরাঙ্গীরচরের নূরবাগ এলাকার মাদবরের বাজার বেড়িবাঁধের পাশের পিলারগুলো অনেকটা দৃশ্যমান। কিন্তু পিলারের গা ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে ইট, বালু, পাথর ও সিমেন্ট বিক্রয় কেন্দ্র।

নূরবাগ এলাকার বাইতুল রহমান মসজিদের পাশে বুড়িগঙ্গা নদীর ৬৮ নম্বর পিলার ঘেঁষে মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজ নামে সিমেন্ট, ইটের খোয়া ইত্যাদি বিক্রির দোকান করেছেন জহিরুল ইসলাম বাবু। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘নদী সীমানা পিলার বিষয়ে তেমন কিছু বলতে পারবো না। কারণ আমি এই এলাকার লোক নই। এই জায়গার মালিক হাজী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। আমি তার কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছি।’

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মো. গুলজার আলী সংবাদকে বলেন, ‘আদি বুড়িগঙ্গা এলাকায় প্রাথমিকভাবে ৭৪টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখন আবার নতুন করে আরও ৭২টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকা অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। নদীর পিলার ঢেকে যদি কেউ স্থাপনা তৈরি করে অবশ্যই তা উচ্ছেদ করা হবে।’ কামরাঙ্গীরচর এলাকায় যদি এ রকম হয়ে থাকে তাহলে দুই-একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

নদীর সীমানা নির্ধারণে দুই দফা পিলার স্থাপন, তাতেও গরমিল

ঢাকার চারপাশে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর সীমানা নির্ধারণের জন্য দুই দফা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। প্রথম দফায় ২০১১-২০১৫ সাল পর্যন্ত গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পিডব্লিউডির মাধ্যমে ছয় হাজার ৮৪৩টি পিলার স্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু পাঁচ বছরের স্থাপন করা হয় চার হাজার ৬৩টি পিলার। এতে ব্যয় হয় প্রায় ২৭ কোটি টাকা। তবে বিআইডব্লিউটিএ বলছে, তারা ওই হিসাব থেকে ৩৬টি পিলার কম পেয়েছে। অর্থাৎ মোট চার হাজার ২৭টি পিলার স্থাপন করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও ধলেশ্বরী নদীর সীমানা নির্ধারণে। এর মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে ২১টি মৌজায় এক হাজার আটটি, তুরাগ নদীর পাড়ে ৩৫টি মৌজায় দুই হাজার ১৪টি, বালু নদীর পাড়ে ১৮টি মৌজায় ৫৮৯টি ও ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে চারটি মৌজায় ৪১৬টি পিলার স্থাপন করা হয়।

আবার এসব পিলারের মধ্যে ৮৯৪টি পিলার বিষয়ে আপত্তি ছিল বিআইডব্লিউটিএর। তারা বলছে, ২৬৪টি পিলার ক্ষতিগ্রস্ত ও ভাঙা পাওয়া গেছে। এছাড়া পিলার স্থাপনের কথা বলা হলেও সরেজমিন দৃশ্যমান পাওয়া যায়নি ২০৮ পিলার। আর ৪২২টি পিলার সঠিক স্থানে স্থাপন করা হয়নি বলে অভিযোগ বিআইডব্লিউটিএর।

এরপর দ্বিতীয় দফায় ২০১৮ সালে ঢাকার চারপাশের বৃত্তাকার ১১০ কিলোমিটার নৌ-পথে সৌন্দর্যবর্ধন ও নদীর সীমানা চিহ্নিত করে সাত হাজার সীমানা পিলার স্থাপন ও ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করে নৌ-মন্ত্রণালয়। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ছিল সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা। তা বাড়িয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১৮১ কোটি ১০ লাখ ৩১ হাজার টাকা। ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তা বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার পিলার স্থাপন করা হয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে প্রকল্পের উপপরিচালক (ডিপিডি) মতিউর ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় সাত হাজার ৫৬২টি সীমানা পিলার, ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, আরসিসি সিঁড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে ৮০টি, কি ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে ১০ কিলোমিটার, ওয়াকওয়ে ড্রেন তিন কিলোমিটার, হাঁটার সেতু ৩৯৫ মিটার, নদী তীরে বসার বেঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে ২৯১টি, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে ৮৫০ মিটার, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা তিন কিলোমিটার ৫০০ মিটার, জেটি নির্মাণ ১৪টি ও ২৩ হাজার বর্গমিটার পার্কিং ইয়ার্ডসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে।’

back to top