জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের পর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। শুনানি শেষে রোববার (২২ মে) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক শহিদুল ইসলাম এ আদেশ দেন। আদেশের পর পুলিশের পিকআপ ভ্যানে করে বিকেল ৫টার কিছু সময় পর তাকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়।
এর আগে হাজী সেলিমের আত্মসমর্পণের খবরে বেলা ১২টা থেকে আদালত চত্বরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা যায়। ভিড় ঠেলে বেলা ৩টার দিকে এজলাসে প্রবেশ করেন তিনি। এজলাসে ঢুকেই তিনি সামনের একটি বেঞ্চে বসে পড়েন। তার তিন ছেলেও তার পাশে গিয়ে দাঁড়ান। এ সময় হাজী সেলিমের কিছু সমর্থকও এজলাসে ঢুকে পড়েন। আইনজীবী, সাংবাদিক, পুলিশ ও তার সমর্থকদের উপস্থিতিতে আদালত কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
যার ফলে বিচারিক কাজ শুরু হতে কিছুটা বিলম্ব হয়। ৩টা ২০ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে ওঠেন। কিছু সংখ্যক আইনজীবীকে কক্ষে থাকতে বলেন আদালত। অন্যদের বের হয়ে যেতে বলা হয়। এ সময় হাজী সেলিম বেঞ্চ থেকে উঠে তার সমর্থকদের বের হয়ে যেতে বলেন। শুনানি শুরু হলে তিনি আসামির কাঠগড়ায় গিয়ে দাঁড়ান। শুনানিকালে পুরোটা সময় তিনি কাঠগড়াতেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।
আসামিপক্ষ এবং দুদকের আইনজীবীদের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে হাজী সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। তবে প্রিজন ভ্যান আসার আগপর্যন্ত তাকে আদালতে থাকতে বলা হয়। পরে আবার বেঞ্চে এসে বসেন হাজী সেলিম। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে উঠে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে যান হাজী সেলিম।
আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার কিছু সময় পর ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েন হাজী সেলিম। আদালতের একটি বেঞ্চে শুয়ে পড়েন তিনি। বিকেল ৫টার কিছু সময় পর তাকে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে, জামিন আবেদন নামঞ্জুরের পর কারাগারে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা (সিআইপি মর্যাদা) চেয়ে দ্বিতীয় আবেদন করে হাজী সেলিমের আইনজীবী প্রাণনাথ। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ চাওয়া হয় আবেদনে। পরে আদালত সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে হাজী সেলিমকে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা (সিআইপি মর্যাদা) ও কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে উন্নত চিকিৎসার আবেদন মঞ্জুর করে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আদালত কারাবিধি অনুযায়ী হাজী সেলিমকে ডিভিশন দিতে বলেছে। একইসঙ্গে তাকে চিকিৎসা দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছে। দুদকের করা অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের যে মামলায় হাজী সেলিমের সাজা হয়েছে, সেটি দায়ের করা হয়েছিল ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর, সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জরুরি অবস্থার মধ্যে। পরের বছর ২৭ এপ্রিল বিশেষ আদালত তাকে দুই ধারায় মোট ১৩ বছরের কারাদন্ড দেয়। পাশাপাশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার অভিযোগে হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমকে দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় তিন বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়।
হাজী সেলিম এবং তার স্ত্রী ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি উচ্চ আদালত তাদের সাজা বাতিল করে রায় দেয়। দুদক তখন সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে হাজী সেলিমের আপিল পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।
সেই শুনানি শেষে গত বছরের ৯ মার্চ হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি ধারায় হাজী সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল রাখে এবং অন্য ধারায় ৩ বছরের সাজা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়। সেই সঙ্গে তাকে এক মাসের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়। আর আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ায় বিচারিক আদালতের রায়ে দন্ডিত হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমের আপিলটি বাতিল করা হয়।
দুর্নীতির মামলায় সাজা নিয়ে ঈদের আগে অনেকটাই চুপিসারে দেশ ছেড়ে আলোচনার জন্ম দেয়া এ নেতা দেশেও ফেরেন গোপনে। ঈদের ছুটি শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন। সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা না দিয়েই তিনি দাবি করেন, আইন অনুযায়ীই দেশের বাইরে গিয়ে ফিরে এসেছেন হাজী সেলিম।
পুরান ঢাকার সংসদ সদস্য হাজী সেলিম আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উপদেষ্টমন্ডলীতে রয়েছেন। বিগত কমিটিতে তিনি সদস্য ছিলেন। তার আগে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। তার আত্মসেমর্পণের খবরে আদালত চত্বরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা যায়। ওই ভবনের সামনে বাড়তি পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, নিরাপত্তা দেয়ার জন্যই এ ব্যবস্থা।
রোববার, ২২ মে ২০২২
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের পর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। শুনানি শেষে রোববার (২২ মে) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক শহিদুল ইসলাম এ আদেশ দেন। আদেশের পর পুলিশের পিকআপ ভ্যানে করে বিকেল ৫টার কিছু সময় পর তাকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়।
এর আগে হাজী সেলিমের আত্মসমর্পণের খবরে বেলা ১২টা থেকে আদালত চত্বরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা যায়। ভিড় ঠেলে বেলা ৩টার দিকে এজলাসে প্রবেশ করেন তিনি। এজলাসে ঢুকেই তিনি সামনের একটি বেঞ্চে বসে পড়েন। তার তিন ছেলেও তার পাশে গিয়ে দাঁড়ান। এ সময় হাজী সেলিমের কিছু সমর্থকও এজলাসে ঢুকে পড়েন। আইনজীবী, সাংবাদিক, পুলিশ ও তার সমর্থকদের উপস্থিতিতে আদালত কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
যার ফলে বিচারিক কাজ শুরু হতে কিছুটা বিলম্ব হয়। ৩টা ২০ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে ওঠেন। কিছু সংখ্যক আইনজীবীকে কক্ষে থাকতে বলেন আদালত। অন্যদের বের হয়ে যেতে বলা হয়। এ সময় হাজী সেলিম বেঞ্চ থেকে উঠে তার সমর্থকদের বের হয়ে যেতে বলেন। শুনানি শুরু হলে তিনি আসামির কাঠগড়ায় গিয়ে দাঁড়ান। শুনানিকালে পুরোটা সময় তিনি কাঠগড়াতেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।
আসামিপক্ষ এবং দুদকের আইনজীবীদের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে হাজী সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। তবে প্রিজন ভ্যান আসার আগপর্যন্ত তাকে আদালতে থাকতে বলা হয়। পরে আবার বেঞ্চে এসে বসেন হাজী সেলিম। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে উঠে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে যান হাজী সেলিম।
আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার কিছু সময় পর ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েন হাজী সেলিম। আদালতের একটি বেঞ্চে শুয়ে পড়েন তিনি। বিকেল ৫টার কিছু সময় পর তাকে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে, জামিন আবেদন নামঞ্জুরের পর কারাগারে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা (সিআইপি মর্যাদা) চেয়ে দ্বিতীয় আবেদন করে হাজী সেলিমের আইনজীবী প্রাণনাথ। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ চাওয়া হয় আবেদনে। পরে আদালত সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে হাজী সেলিমকে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা (সিআইপি মর্যাদা) ও কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে উন্নত চিকিৎসার আবেদন মঞ্জুর করে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আদালত কারাবিধি অনুযায়ী হাজী সেলিমকে ডিভিশন দিতে বলেছে। একইসঙ্গে তাকে চিকিৎসা দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছে। দুদকের করা অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের যে মামলায় হাজী সেলিমের সাজা হয়েছে, সেটি দায়ের করা হয়েছিল ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর, সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জরুরি অবস্থার মধ্যে। পরের বছর ২৭ এপ্রিল বিশেষ আদালত তাকে দুই ধারায় মোট ১৩ বছরের কারাদন্ড দেয়। পাশাপাশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার অভিযোগে হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমকে দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় তিন বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়।
হাজী সেলিম এবং তার স্ত্রী ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি উচ্চ আদালত তাদের সাজা বাতিল করে রায় দেয়। দুদক তখন সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে হাজী সেলিমের আপিল পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।
সেই শুনানি শেষে গত বছরের ৯ মার্চ হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি ধারায় হাজী সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল রাখে এবং অন্য ধারায় ৩ বছরের সাজা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়। সেই সঙ্গে তাকে এক মাসের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়। আর আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ায় বিচারিক আদালতের রায়ে দন্ডিত হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমের আপিলটি বাতিল করা হয়।
দুর্নীতির মামলায় সাজা নিয়ে ঈদের আগে অনেকটাই চুপিসারে দেশ ছেড়ে আলোচনার জন্ম দেয়া এ নেতা দেশেও ফেরেন গোপনে। ঈদের ছুটি শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন। সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা না দিয়েই তিনি দাবি করেন, আইন অনুযায়ীই দেশের বাইরে গিয়ে ফিরে এসেছেন হাজী সেলিম।
পুরান ঢাকার সংসদ সদস্য হাজী সেলিম আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উপদেষ্টমন্ডলীতে রয়েছেন। বিগত কমিটিতে তিনি সদস্য ছিলেন। তার আগে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। তার আত্মসেমর্পণের খবরে আদালত চত্বরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা যায়। ওই ভবনের সামনে বাড়তি পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, নিরাপত্তা দেয়ার জন্যই এ ব্যবস্থা।