স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্টে একসঙ্গে জ্বলে উঠলো সবগুলো বাতি, আলোতিক হলো পুরো সেতু -সংবাদ
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আর মাত্র ১০ দিন বাকি। এর মধ্যে মঙ্গলবার (১৪ জুন) আলোকিত হয়েছে পুরো পদ্মা সেতু। সেতুর ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্টে এক সঙ্গে বাতি জ্বালানো হয়েছে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। এর আগে ভাগ ভাগ করে সেতুর ল্যাম্পপোস্টে বাতি জ্বালানো হয়েছিল। এর আগে সোমবার (১৩ জুন) মাওয়া প্রান্তে ২০৭টি বাতি জ্বালানো হয়েছিল। সর্বশেষ মঙ্গলবার পুরো সেতুর ৪১৫টি বাতি একসঙ্গে ল্যাম্পপোস্টে পরীক্ষা শেষ করা হয়েছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান।
এ বিষয়ে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘মঙ্গলবার পুরো সেতুর বাতিগুলো জ্বালানি পরীক্ষার কাজ শেষ করা হয়েছে। এর আগে ভাগ ভাগ করে জ্বালানো হয়েছিল।’
প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর ভায়াডাক্টে প্রথম ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছিল। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুতে মোট ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে মূল সেতুতে ৩২৮টি, জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টে ৪৬টি, মাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্টে ৪১টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। মূল সেতুতে ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ শেষ হয় গত ১৮ এপ্রিল।
এর আগে গত ৪ জুন বিকেলে পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো হয়। ওইদিন সেতুর ১৪ থেকে ১৯ নম্বর পিয়ারের মাঝামাঝিতে ২৪টি ল্যাম্পপোস্টে বাতি জ্বালানো হয়েছিল। গত ২৪ মে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৪২ নম্বর পিয়ারে সেতুর সাবস্টেশনে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেয়া হয়।
শরীয়তপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি থেকে ৮০ কিলোওয়াট ও মুন্সীগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি থেকে দেয়া আরও ৮০ কিলোওয়াট বিদ্যুতে সেতুর ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্টে বাতি জ্বালানো হবে। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত এই বাতিগুলো জ্বালানো হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এ বিষয়ে পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল কাদের সংবাদকে বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার সেতুপথের দুই পাশের সব ল্যাম্পপোস্টের আলো জ্বালিয়ে দেন প্রকৌশলীরা। মুন্সীগঞ্জ ও জাজিরা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির দেয়া বৈদ্যুতিক সংযোগের মাধ্যমে এই প্রথম সম্পূর্ণ সেতুর ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্টে পরীক্ষামূলকভাবে বাতি জ্বালানো হয়েছে। এর আগে সেতুর ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্টে ভাগ ভাগ করে বিদ্যুৎ ও জেনেরেটর দিয়ে বাতি জ্বালানো পরীক্ষা করা হয়। সেতু চালু হলে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর এই বাতিগুলো জ্বালানো থাকবে। বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনেরেটরের ব্যবস্থা থাকবে।’
শরীয়তপুর (জাজিরা) প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের সেতুর সব ল্যাম্পপোস্টে একসঙ্গে বাতি জ্বালানো হয়। এতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া প্রান্ত থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা প্রান্ত পর্যন্ত পুরো পদ্মা সেতুতে ঝলমল করে আলো জ্বলে উঠে।
শরীয়তপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানায়, শরীয়তপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির দেয়া বৈদ্যুতিক সংযোগের মাধ্যমে এই প্রথম জাজিরা প্রান্তের ২১০টি ল্যাম্পপোস্টে পরীক্ষামূলকভাবে বাতি জ্বালানো হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর প্রথম পিয়ার থেকে ৩ দশমিক সাড়ে ৭ কিলোমিটার বিদ্যুতের লাইন সংযুক্ত করে দিয়েছে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি জোনাল অফিস। আর শরীয়তপুরে জাজিরা নাওডোবা প্রান্ত থেকে ৩ দশমিক সাড়ে ৭ কিলোমিটার সেতুতে অর্ধেক বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে শরীয়তপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি।
সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে বাতি জ্বালানো হয়েছিল। এ নিয়ে গত ৭ দিনে পর্যায়ক্রমে ৪১৫টি বাতি জ্বালানোর মাধ্যমে স্ট্রিট লাইটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ যাত্রী ও বাসিন্দাদের
স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুরো সেতুতে বাতি জ্বালানো ফলে পদ্মা নদীর দুই পাড়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও ফেরিঘাটের যাত্রীদের আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
আলম নামের বরিশালের এক যাত্রী বলেন, ‘আমি ঢাকায় কাজ করি। এক আত্মীয়ের বিয়েতে গ্রামে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরছিলাম। ফেরিতে উঠেই জানতে পারি, সেতুতে আলো জ্বালানো হবে। ফেরিতে চড়ে যেতে যেতে পুরো পদ্মা সেতুতে প্রথমবারের মতো জ্বলে ওঠা আলোকচ্ছটা দেখেছি। এটা আমাদের জীবনে স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে।’
জাজিরার নাওডোবার আশরাফুল নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘২০০৮ সালে যখন আমাদের জমি পদ্মা সেতুর জন্য অধিগ্রহণের নোটিশ করা হয়, সেদিন থেকেই স্বপ্নের সেতুর জন্য অপেক্ষা করছি। অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে। আজ নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আলোকিত পদ্মা সেতু দেখে গর্বে বুকটা ভরে গেছে।’
স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্টে একসঙ্গে জ্বলে উঠলো সবগুলো বাতি, আলোতিক হলো পুরো সেতু -সংবাদ
মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০২২
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আর মাত্র ১০ দিন বাকি। এর মধ্যে মঙ্গলবার (১৪ জুন) আলোকিত হয়েছে পুরো পদ্মা সেতু। সেতুর ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্টে এক সঙ্গে বাতি জ্বালানো হয়েছে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। এর আগে ভাগ ভাগ করে সেতুর ল্যাম্পপোস্টে বাতি জ্বালানো হয়েছিল। এর আগে সোমবার (১৩ জুন) মাওয়া প্রান্তে ২০৭টি বাতি জ্বালানো হয়েছিল। সর্বশেষ মঙ্গলবার পুরো সেতুর ৪১৫টি বাতি একসঙ্গে ল্যাম্পপোস্টে পরীক্ষা শেষ করা হয়েছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান।
এ বিষয়ে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘মঙ্গলবার পুরো সেতুর বাতিগুলো জ্বালানি পরীক্ষার কাজ শেষ করা হয়েছে। এর আগে ভাগ ভাগ করে জ্বালানো হয়েছিল।’
প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর ভায়াডাক্টে প্রথম ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছিল। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুতে মোট ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে মূল সেতুতে ৩২৮টি, জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টে ৪৬টি, মাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্টে ৪১টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। মূল সেতুতে ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ শেষ হয় গত ১৮ এপ্রিল।
এর আগে গত ৪ জুন বিকেলে পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো হয়। ওইদিন সেতুর ১৪ থেকে ১৯ নম্বর পিয়ারের মাঝামাঝিতে ২৪টি ল্যাম্পপোস্টে বাতি জ্বালানো হয়েছিল। গত ২৪ মে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৪২ নম্বর পিয়ারে সেতুর সাবস্টেশনে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেয়া হয়।
শরীয়তপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি থেকে ৮০ কিলোওয়াট ও মুন্সীগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি থেকে দেয়া আরও ৮০ কিলোওয়াট বিদ্যুতে সেতুর ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্টে বাতি জ্বালানো হবে। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত এই বাতিগুলো জ্বালানো হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এ বিষয়ে পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল কাদের সংবাদকে বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার সেতুপথের দুই পাশের সব ল্যাম্পপোস্টের আলো জ্বালিয়ে দেন প্রকৌশলীরা। মুন্সীগঞ্জ ও জাজিরা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির দেয়া বৈদ্যুতিক সংযোগের মাধ্যমে এই প্রথম সম্পূর্ণ সেতুর ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্টে পরীক্ষামূলকভাবে বাতি জ্বালানো হয়েছে। এর আগে সেতুর ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্টে ভাগ ভাগ করে বিদ্যুৎ ও জেনেরেটর দিয়ে বাতি জ্বালানো পরীক্ষা করা হয়। সেতু চালু হলে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর এই বাতিগুলো জ্বালানো থাকবে। বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনেরেটরের ব্যবস্থা থাকবে।’
শরীয়তপুর (জাজিরা) প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের সেতুর সব ল্যাম্পপোস্টে একসঙ্গে বাতি জ্বালানো হয়। এতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া প্রান্ত থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা প্রান্ত পর্যন্ত পুরো পদ্মা সেতুতে ঝলমল করে আলো জ্বলে উঠে।
শরীয়তপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানায়, শরীয়তপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির দেয়া বৈদ্যুতিক সংযোগের মাধ্যমে এই প্রথম জাজিরা প্রান্তের ২১০টি ল্যাম্পপোস্টে পরীক্ষামূলকভাবে বাতি জ্বালানো হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর প্রথম পিয়ার থেকে ৩ দশমিক সাড়ে ৭ কিলোমিটার বিদ্যুতের লাইন সংযুক্ত করে দিয়েছে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি জোনাল অফিস। আর শরীয়তপুরে জাজিরা নাওডোবা প্রান্ত থেকে ৩ দশমিক সাড়ে ৭ কিলোমিটার সেতুতে অর্ধেক বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে শরীয়তপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি।
সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে বাতি জ্বালানো হয়েছিল। এ নিয়ে গত ৭ দিনে পর্যায়ক্রমে ৪১৫টি বাতি জ্বালানোর মাধ্যমে স্ট্রিট লাইটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ যাত্রী ও বাসিন্দাদের
স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুরো সেতুতে বাতি জ্বালানো ফলে পদ্মা নদীর দুই পাড়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও ফেরিঘাটের যাত্রীদের আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
আলম নামের বরিশালের এক যাত্রী বলেন, ‘আমি ঢাকায় কাজ করি। এক আত্মীয়ের বিয়েতে গ্রামে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরছিলাম। ফেরিতে উঠেই জানতে পারি, সেতুতে আলো জ্বালানো হবে। ফেরিতে চড়ে যেতে যেতে পুরো পদ্মা সেতুতে প্রথমবারের মতো জ্বলে ওঠা আলোকচ্ছটা দেখেছি। এটা আমাদের জীবনে স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে।’
জাজিরার নাওডোবার আশরাফুল নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘২০০৮ সালে যখন আমাদের জমি পদ্মা সেতুর জন্য অধিগ্রহণের নোটিশ করা হয়, সেদিন থেকেই স্বপ্নের সেতুর জন্য অপেক্ষা করছি। অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে। আজ নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আলোকিত পদ্মা সেতু দেখে গর্বে বুকটা ভরে গেছে।’