গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ হচ্ছে না। সোমবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন রুটে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছে বাস শ্রমিকরা। প্রতিটি বাসে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দেড় থেকে দুইগুণ বেশি ভাড়া আদায় করেছে তারা। প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে দেখা গেছে বাস কর্মচারীদের। কোন কোন রুটে যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে দেয়ার অভিযোগ করেন অনেকেই।
দূরপাল্লার রুটে সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রী পাচ্ছে না বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানি। তাই বাধ্য হয়ে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নিতে হচ্ছে বলে জানান কাউন্টার ম্যানেজাররা। তবে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসে ভাড়া বেশি বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।
রাজধানীর রামপুরা থেকে গুলিস্তানের আগে ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। কিন্তু সোমবার ৩০ টাকা নেয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদ করায় একজন যাত্রীদের মগবাজার ফ্লাইওভারের উপর নামিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান যাত্রীরা। আলমগীর নামের রামপুরার এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘রাজধানীর সদরঘাট থেকে উত্তরা রুটের সব গাড়ি রামপুরা-বাড্ডা হয়ে যাতায়াত করে। এই রুটের সব বাসে ১০-২০ টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। সর্বনিম্ন ভাড়া নেয়া হয় ২৫ টাকা। ১০ টাকা কোন ভাড়া নেই।’ ওয়েবিলের চেকার অতিক্রম করলেই ২৫-৩০ ভাড়া দিতে হয় বলে জানান তিনি।
দূরপাল্লার বাসে আগের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৮০ পয়সার জায়গায় ৪০ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ২০ পয়সা করা হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে নতুন ভাড়া করা হয়েছে প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৫০ পয়সা। আগে ভাড়া ছিল ২ টাকা ১৫ পয়সা। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বেড়েছে ৩৫ পয়সা। সর্বনিম্ন ভাড়া বাসে ১০ টাকা ও মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করে রোববার (৭ আগস্ট) গেজেট প্রকাশ করেছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ।
কিন্তু রাজধানী বিভিন্ন রুটে এই ভাড়া মানছে না পরিবহন কর্মচারীরা। সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, সব বাসেই ভাড়া নৈরাজ্য চলছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া মানছে না কেউ। ওয়েবিলের চেকারের কথা বলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বাস শ্রমিকরা। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। এজন্য বিভিন্ন সড়কে বাস বন্ধ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে বাস মালিকরা। তাই অনেক সড়কে গণপরিবহন কম চলাচল করতে দেখা গেছে বলে যাত্রীরা জানান।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় মাকসিম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘রাস্তায় বাস কম। অনেক্ষণ ধরে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি, বাস আসছে না। সকালে বাসা থেকে বের হয়েও বাসের জন্য দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। একটা বাস আসার পর মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রতিটি বাসে ১০-২০ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে।’ সড়কে বাস অন্যদিনের তুলনায় কম। ফলে দীর্ঘক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে জানিয়ে পারভীন নামের যাত্রাবাড়ীর এক যাত্রী বলেন, ‘আমি যাত্রাবাড়ী থেকে মালিবাগ যাই বাইকে। আজ বাইকে আড়াইশ’ টাকা করে চাচ্ছে, উবারে কল দিলাম তাও পেলাম না। পরে বাসস্ট্যান্ডে আসি বাসের জন্য। দুপুরের দিকে এই রুটের বাসে ভিড় কম থাকে। কিন্তু আজ (সোমবার) ব্যাপক ভিড় ছিল। আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে একটা বাসে উঠেছি ধাক্কাধাক্কি করে।’ মালিবাগের আগের ভাড়া ছিল ১৫ টাকা, আজ (সোমবার) নিয়েছে ৩০ টাকা।’
দূরপাল্লার প্রতিটি বাসে ২০০-৩০০ টাকা ভাড়া বৃদ্ধি
আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসের ভাড়া বেশি হওয়ায় যাত্রী পাচ্ছে না আন্তঃজেলা বাস কোম্পানিগুলো। তাই অনেকেই সরকার নির্ধারিত ভাড়া থেকে কমে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ঢাকা-কুমিল্লা রুটে চলাচল করে তিশা পরিবহন। আগে এই রুটের ভাড়া ছিল ১২০ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকা। তবুও যাত্রী পাওয়া যায় না বলে জানান বাস শ্রমিকরা।
রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে একই অবস্থা। যাত্রী সংকটে বন্ধ অধিকাংশ কাউন্টার। প্রয়োজনের তাগিদে যেসব যাত্রী এসেছেন তাদেরও গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। আবার কাউন্টারে দায়িত্বপ্রাপ্তরাও যাত্রীদের কাছে এত বেশি ভাড়া চাইতে বিব্রত বোধ করছেন। অনেকটা নিরুপায় হয়েই বাড়তি ভাড়া নিতে হচ্ছে বলে জানান তারা।
মামুন নামের এক যাত্রী জানান, অন্য সময় ঝিনাইদহের মহেশপুর থেকে ৫০০ টাকায় এলেও এখন তা বেড়ে হয়েছে ৭০০ টাকা। ফলে যাতায়াতের জন্য তাকে ৪০০ টাকা বাড়তি গুণতে হচ্ছে।
মিলন নামের কুষ্টিয়ার এক যাত্রী বলেন, ‘কক্সবাজার যাবো। অন্য সময় এই রুটে এসি বাসের ভাড়া এক হাজার ৮০০ টাকা হলেও এখন তা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার টাকা।’ ঢাকা-কক্সবাজার যাতায়াত করতে স্বামী-স্ত্রীর বাড়তি ৮০০ টাকা গুণতে হবে বলে জানান তিনি।
এই অবস্থা অন্য রুটেও ঢাকা-দর্শনা রুটে এসি বাসের ভাড়া ২০০ টাকা বাড়িয়ে ৯০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এই রুটে নন-এসি বাসের ভাড়া ১০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬৯০ টাকা। এই রুটে গড়ে নন-এসি বাসে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে এসি বাসে ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের ম্যানেজার আমিনুর রহমান বলেন, ‘যাত্রীদের কাছে ভাড়া চাইতেই লজ্জা লাগে। কী করবো ভাই, নিরুপায় হয়ে গেছি। ৮০ টাকার ডিজেল ১১৪ টাকা। আমাদের বাঁচার পথ নেই। নিজেরও চক্ষুলজ্জা লাগে। কীভাবে যাত্রীদের কাছে এত বেশি ভাড়া চাওয়া যায়?
সোমবার, ০৮ আগস্ট ২০২২
গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ হচ্ছে না। সোমবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন রুটে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছে বাস শ্রমিকরা। প্রতিটি বাসে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দেড় থেকে দুইগুণ বেশি ভাড়া আদায় করেছে তারা। প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে দেখা গেছে বাস কর্মচারীদের। কোন কোন রুটে যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে দেয়ার অভিযোগ করেন অনেকেই।
দূরপাল্লার রুটে সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রী পাচ্ছে না বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানি। তাই বাধ্য হয়ে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নিতে হচ্ছে বলে জানান কাউন্টার ম্যানেজাররা। তবে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসে ভাড়া বেশি বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।
রাজধানীর রামপুরা থেকে গুলিস্তানের আগে ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। কিন্তু সোমবার ৩০ টাকা নেয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদ করায় একজন যাত্রীদের মগবাজার ফ্লাইওভারের উপর নামিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান যাত্রীরা। আলমগীর নামের রামপুরার এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘রাজধানীর সদরঘাট থেকে উত্তরা রুটের সব গাড়ি রামপুরা-বাড্ডা হয়ে যাতায়াত করে। এই রুটের সব বাসে ১০-২০ টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। সর্বনিম্ন ভাড়া নেয়া হয় ২৫ টাকা। ১০ টাকা কোন ভাড়া নেই।’ ওয়েবিলের চেকার অতিক্রম করলেই ২৫-৩০ ভাড়া দিতে হয় বলে জানান তিনি।
দূরপাল্লার বাসে আগের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৮০ পয়সার জায়গায় ৪০ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ২০ পয়সা করা হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে নতুন ভাড়া করা হয়েছে প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৫০ পয়সা। আগে ভাড়া ছিল ২ টাকা ১৫ পয়সা। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বেড়েছে ৩৫ পয়সা। সর্বনিম্ন ভাড়া বাসে ১০ টাকা ও মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করে রোববার (৭ আগস্ট) গেজেট প্রকাশ করেছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ।
কিন্তু রাজধানী বিভিন্ন রুটে এই ভাড়া মানছে না পরিবহন কর্মচারীরা। সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, সব বাসেই ভাড়া নৈরাজ্য চলছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া মানছে না কেউ। ওয়েবিলের চেকারের কথা বলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বাস শ্রমিকরা। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। এজন্য বিভিন্ন সড়কে বাস বন্ধ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে বাস মালিকরা। তাই অনেক সড়কে গণপরিবহন কম চলাচল করতে দেখা গেছে বলে যাত্রীরা জানান।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় মাকসিম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘রাস্তায় বাস কম। অনেক্ষণ ধরে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি, বাস আসছে না। সকালে বাসা থেকে বের হয়েও বাসের জন্য দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। একটা বাস আসার পর মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রতিটি বাসে ১০-২০ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে।’ সড়কে বাস অন্যদিনের তুলনায় কম। ফলে দীর্ঘক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে জানিয়ে পারভীন নামের যাত্রাবাড়ীর এক যাত্রী বলেন, ‘আমি যাত্রাবাড়ী থেকে মালিবাগ যাই বাইকে। আজ বাইকে আড়াইশ’ টাকা করে চাচ্ছে, উবারে কল দিলাম তাও পেলাম না। পরে বাসস্ট্যান্ডে আসি বাসের জন্য। দুপুরের দিকে এই রুটের বাসে ভিড় কম থাকে। কিন্তু আজ (সোমবার) ব্যাপক ভিড় ছিল। আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে একটা বাসে উঠেছি ধাক্কাধাক্কি করে।’ মালিবাগের আগের ভাড়া ছিল ১৫ টাকা, আজ (সোমবার) নিয়েছে ৩০ টাকা।’
দূরপাল্লার প্রতিটি বাসে ২০০-৩০০ টাকা ভাড়া বৃদ্ধি
আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসের ভাড়া বেশি হওয়ায় যাত্রী পাচ্ছে না আন্তঃজেলা বাস কোম্পানিগুলো। তাই অনেকেই সরকার নির্ধারিত ভাড়া থেকে কমে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ঢাকা-কুমিল্লা রুটে চলাচল করে তিশা পরিবহন। আগে এই রুটের ভাড়া ছিল ১২০ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকা। তবুও যাত্রী পাওয়া যায় না বলে জানান বাস শ্রমিকরা।
রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে একই অবস্থা। যাত্রী সংকটে বন্ধ অধিকাংশ কাউন্টার। প্রয়োজনের তাগিদে যেসব যাত্রী এসেছেন তাদেরও গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। আবার কাউন্টারে দায়িত্বপ্রাপ্তরাও যাত্রীদের কাছে এত বেশি ভাড়া চাইতে বিব্রত বোধ করছেন। অনেকটা নিরুপায় হয়েই বাড়তি ভাড়া নিতে হচ্ছে বলে জানান তারা।
মামুন নামের এক যাত্রী জানান, অন্য সময় ঝিনাইদহের মহেশপুর থেকে ৫০০ টাকায় এলেও এখন তা বেড়ে হয়েছে ৭০০ টাকা। ফলে যাতায়াতের জন্য তাকে ৪০০ টাকা বাড়তি গুণতে হচ্ছে।
মিলন নামের কুষ্টিয়ার এক যাত্রী বলেন, ‘কক্সবাজার যাবো। অন্য সময় এই রুটে এসি বাসের ভাড়া এক হাজার ৮০০ টাকা হলেও এখন তা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার টাকা।’ ঢাকা-কক্সবাজার যাতায়াত করতে স্বামী-স্ত্রীর বাড়তি ৮০০ টাকা গুণতে হবে বলে জানান তিনি।
এই অবস্থা অন্য রুটেও ঢাকা-দর্শনা রুটে এসি বাসের ভাড়া ২০০ টাকা বাড়িয়ে ৯০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এই রুটে নন-এসি বাসের ভাড়া ১০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬৯০ টাকা। এই রুটে গড়ে নন-এসি বাসে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে এসি বাসে ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের ম্যানেজার আমিনুর রহমান বলেন, ‘যাত্রীদের কাছে ভাড়া চাইতেই লজ্জা লাগে। কী করবো ভাই, নিরুপায় হয়ে গেছি। ৮০ টাকার ডিজেল ১১৪ টাকা। আমাদের বাঁচার পথ নেই। নিজেরও চক্ষুলজ্জা লাগে। কীভাবে যাত্রীদের কাছে এত বেশি ভাড়া চাওয়া যায়?