একদিকে উচ্ছেদ, অন্যদিকে দখল। এভাবেই রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন এলাকায় লুকোচুরি খেলা হয়েছে ম্যাজিস্টেট ও হকারদের মধ্যে। সকাল থেকে উচ্ছেদ অভিযান দুপুর পর্যন্ত চললেও কার্যত কোন হকারকেই ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করা যায়নি।
এদিকে অবৈধভাবে স্থাপিত দোকানপাট ও হকার উচ্ছেদের অভিযানে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট (নুর হোসেন চত্বর) থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হয়ে আহাদ পুলিশ বক্স পর্যন্ত চলা অভিযানে ৯ হকারকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ এর ৯২ ধারার ৭ ও ৮ নম্বর উপধারায় এ জরিমানা আদায় করা হয়।
রোববার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মতিঝিল, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত উচ্ছেদ অভিযানে নামে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট আসার আগেই হকাররা তাদের মালামাল সরিয়ে ফেলে। আবার ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পরপরই চৌকি বসিয়ে মালামাল বিক্রি শুরু করে। দুপুর ২টায় অভিযান শেষ হলে চিত্রটা ছিল আগের মতো। অর্থাৎ সড়কে চৌকি বসিয়ে ফুটপাত দখলে নিয়ে নেয় হকাররা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশনের অভিযানের খবরে আগে থেকেই সতর্ক হয়ে যান হকাররা। তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে বা দায়িত্ব পেয়ে ইনফর্মার হিসেবে কাজ করেন। ম্যাজিস্ট্রেটকে আসতে দেখলেই তারা সিগন্যাল দিয়ে হকারদের রক্ষার কাজ করতে থাকেন। ফলে ম্যাজিস্ট্রেট গুলিস্তানের এক গলি দিয়ে ঢুকলে খবর পেয়ে অন্য গলি দিয়ে কাঠের খাট, বাক্স, কাঠ ও প্লাস্টিকের টুল-মোড়া ইত্যাদিসহ যার যার বিক্রয়যোগ্য জিনিসপত্র নিয়ে দৌড়ে পালান হকাররা। এ যেন ম্যাজিস্ট্রেট-হকার লুকোচুরি খেলা। অন্যদিকে যারা পালাতে পারেননি এমন কিছু হকারকে ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা করার অভিযোগে অথবা রাস্তা আটকে রেখে পথচারীদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরির অভিযোগে জরিমানা করা হয়। স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইন-২০০৯ এর ৯২ এর ৭ ও ৮ ধারা অনুযায়ী তাদের জরিমানা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ডিএসসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুর রহমান, ডিএসসিসির ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. এনামুল হক, ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ রতন প্রমুখ।
অভিযানের বিষয়ে ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ রতন বলেন, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ ঢাকায় আসে। কিন্তু তাদের আসা-যাওয়ার সমপরিমাণ সময় গুলিস্তানের জ্যামে বসে কাটাতে হয়। গুলিস্তান এলাকাটি রেড জোনে আছে। মানুষের কষ্ট লাঘবে যানজট কমাতেই আজকের এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা হলো জনসাধারণ যাতে জিরো পয়েন্ট থেকে গুলিস্তান ও হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে যেতে পারেন। কিন্তু গুলিস্তান এলাকা বেদখল থাকার কারণে অনেক সময়ই দেখা যায়, যাত্রীরা এখানে জ্যামে আটকে থাকেন। তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস নির্দেশ দিয়েছেন এ এলাকা দখলমুক্ত করতে। তারই অংশ হিসেবে আমরা তিনদিন মাইকিং করার পর আজ (রোববার ) অভিযান পরিচালনা করতে এসেছি। এলাকাটি ডিএসসিসির রেড জোন হওয়ায় এখানে অবৈধ দোকান বসতে দেয়া হবে না। প্রতিদিনই আমাদের উচ্ছেদ অভিযান চলবে।
প্রথচারীদের অভিযোগ, বছরের পর বছর রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, ফুলবাড়িয়া, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউসহ আশপাশের এলাকায় সড়কগুলো কার্যত হকারদের দখলে থাকে। সড়ক দখল করে নির্ধারিত টাকার বিনিময়ে হকারদের ব্যবসা করার জন্য সুযোগ করে দেয়া হয়। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা এসব অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। পুলিশও এসব অবৈধ ফুটপাত থেকে চাঁদা পেয়ে থাকেন। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন তাদের কর্মীদের মাধ্যমে প্রতিটি হকারের কাছ থেকে প্রতিদিন নির্ধারিত অঙ্কে টাকা নেন। এতে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার অভিযান করেও ফুটপাত দখলমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন একবার ফুটপাত উচ্ছেদ করতে গেলে হকারদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে আসেন ছাত্রলীগের দুই নেতা। এ ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কাউন্সিলর বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাদের কারণে। কারণ ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে হকার বসিয়ে কোটি কোটি টাকার চাঁদা তোলা হয়। এসব চাঁদার টাকা যায় বিভিন্ন নেতাদের পকেটে। বিভিন্ন সময়ে সিটি করপোরেশন ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য উচ্ছেদ অভিযানের চেষ্টা করলেও রাজনৈতিক নেতাদের তদবিরের কারণে তা বাস্তবায়ন করা যায় না। অথচ ফুটপাত দখলে থাকার কারণে গুলিস্তান, মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকায় মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় যানবাহন আটকে থাকে। অফিসমুখো মানুষ নির্ধারিত সময়ে অফিসে যেতে পারে না। গুলিস্তানে এত পরিমাণ হকার বেড়েছে যে এটি দেখে কেউ বলবে না এটি রাজধানীর শহর। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিভিন্ন সড়ক হারকদের দখলে থাকার প্রভাব পুরো রাজধানীতে পড়ে।
রোববার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২
একদিকে উচ্ছেদ, অন্যদিকে দখল। এভাবেই রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন এলাকায় লুকোচুরি খেলা হয়েছে ম্যাজিস্টেট ও হকারদের মধ্যে। সকাল থেকে উচ্ছেদ অভিযান দুপুর পর্যন্ত চললেও কার্যত কোন হকারকেই ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করা যায়নি।
এদিকে অবৈধভাবে স্থাপিত দোকানপাট ও হকার উচ্ছেদের অভিযানে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট (নুর হোসেন চত্বর) থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হয়ে আহাদ পুলিশ বক্স পর্যন্ত চলা অভিযানে ৯ হকারকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ এর ৯২ ধারার ৭ ও ৮ নম্বর উপধারায় এ জরিমানা আদায় করা হয়।
রোববার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মতিঝিল, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত উচ্ছেদ অভিযানে নামে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট আসার আগেই হকাররা তাদের মালামাল সরিয়ে ফেলে। আবার ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পরপরই চৌকি বসিয়ে মালামাল বিক্রি শুরু করে। দুপুর ২টায় অভিযান শেষ হলে চিত্রটা ছিল আগের মতো। অর্থাৎ সড়কে চৌকি বসিয়ে ফুটপাত দখলে নিয়ে নেয় হকাররা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশনের অভিযানের খবরে আগে থেকেই সতর্ক হয়ে যান হকাররা। তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে বা দায়িত্ব পেয়ে ইনফর্মার হিসেবে কাজ করেন। ম্যাজিস্ট্রেটকে আসতে দেখলেই তারা সিগন্যাল দিয়ে হকারদের রক্ষার কাজ করতে থাকেন। ফলে ম্যাজিস্ট্রেট গুলিস্তানের এক গলি দিয়ে ঢুকলে খবর পেয়ে অন্য গলি দিয়ে কাঠের খাট, বাক্স, কাঠ ও প্লাস্টিকের টুল-মোড়া ইত্যাদিসহ যার যার বিক্রয়যোগ্য জিনিসপত্র নিয়ে দৌড়ে পালান হকাররা। এ যেন ম্যাজিস্ট্রেট-হকার লুকোচুরি খেলা। অন্যদিকে যারা পালাতে পারেননি এমন কিছু হকারকে ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা করার অভিযোগে অথবা রাস্তা আটকে রেখে পথচারীদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরির অভিযোগে জরিমানা করা হয়। স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইন-২০০৯ এর ৯২ এর ৭ ও ৮ ধারা অনুযায়ী তাদের জরিমানা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ডিএসসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুর রহমান, ডিএসসিসির ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. এনামুল হক, ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ রতন প্রমুখ।
অভিযানের বিষয়ে ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ রতন বলেন, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ ঢাকায় আসে। কিন্তু তাদের আসা-যাওয়ার সমপরিমাণ সময় গুলিস্তানের জ্যামে বসে কাটাতে হয়। গুলিস্তান এলাকাটি রেড জোনে আছে। মানুষের কষ্ট লাঘবে যানজট কমাতেই আজকের এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা হলো জনসাধারণ যাতে জিরো পয়েন্ট থেকে গুলিস্তান ও হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে যেতে পারেন। কিন্তু গুলিস্তান এলাকা বেদখল থাকার কারণে অনেক সময়ই দেখা যায়, যাত্রীরা এখানে জ্যামে আটকে থাকেন। তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস নির্দেশ দিয়েছেন এ এলাকা দখলমুক্ত করতে। তারই অংশ হিসেবে আমরা তিনদিন মাইকিং করার পর আজ (রোববার ) অভিযান পরিচালনা করতে এসেছি। এলাকাটি ডিএসসিসির রেড জোন হওয়ায় এখানে অবৈধ দোকান বসতে দেয়া হবে না। প্রতিদিনই আমাদের উচ্ছেদ অভিযান চলবে।
প্রথচারীদের অভিযোগ, বছরের পর বছর রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, ফুলবাড়িয়া, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউসহ আশপাশের এলাকায় সড়কগুলো কার্যত হকারদের দখলে থাকে। সড়ক দখল করে নির্ধারিত টাকার বিনিময়ে হকারদের ব্যবসা করার জন্য সুযোগ করে দেয়া হয়। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা এসব অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। পুলিশও এসব অবৈধ ফুটপাত থেকে চাঁদা পেয়ে থাকেন। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন তাদের কর্মীদের মাধ্যমে প্রতিটি হকারের কাছ থেকে প্রতিদিন নির্ধারিত অঙ্কে টাকা নেন। এতে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার অভিযান করেও ফুটপাত দখলমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন একবার ফুটপাত উচ্ছেদ করতে গেলে হকারদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে আসেন ছাত্রলীগের দুই নেতা। এ ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কাউন্সিলর বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাদের কারণে। কারণ ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে হকার বসিয়ে কোটি কোটি টাকার চাঁদা তোলা হয়। এসব চাঁদার টাকা যায় বিভিন্ন নেতাদের পকেটে। বিভিন্ন সময়ে সিটি করপোরেশন ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য উচ্ছেদ অভিযানের চেষ্টা করলেও রাজনৈতিক নেতাদের তদবিরের কারণে তা বাস্তবায়ন করা যায় না। অথচ ফুটপাত দখলে থাকার কারণে গুলিস্তান, মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকায় মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় যানবাহন আটকে থাকে। অফিসমুখো মানুষ নির্ধারিত সময়ে অফিসে যেতে পারে না। গুলিস্তানে এত পরিমাণ হকার বেড়েছে যে এটি দেখে কেউ বলবে না এটি রাজধানীর শহর। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিভিন্ন সড়ক হারকদের দখলে থাকার প্রভাব পুরো রাজধানীতে পড়ে।