alt

নগর-মহানগর

১৫ বছর ধরে বিমানবন্দরে সক্রিয় এক ‘অজ্ঞান পার্টি’

তিনশ’র বেশি প্রবাসীকে অজ্ঞান করে মালামাল লুট

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ০২ অক্টোবর ২০২২

১৫ বছর ধরে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সক্রিয় একটি চক্র। যাদের কাজ বিদেশ ফেরত যাত্রীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে সর্বস্ব লুটে নেয়া। এই চক্র এমন যাত্রীকে টার্গেট করত যার জন্য বিমানবন্দরে কোন আত্মীয়-স্বজন যায়নি, বা গাড়ি নিয়ে কেউ অপেক্ষা করছে না।

আর এই চক্রের নেতৃত্বে আছেন আমির হোসেন, যে বিমানবন্দরের উল্টো দিকে একটি ফাস্টফুডের দোকানে ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন। ‘অজ্ঞান পার্টির’ খপ্পরে পড়ে এক প্রবাসীর সর্বস্ব হারানোর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে আমিরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাবব। আর তারপরই এই চক্রের খবর প্রকাশ্যে এলো।

গত ১৫ বছরে তিনশ’র বেশি প্রবাসীকে অজ্ঞান করে মালামাল লুটে নিয়েছে এই চক্র। আর আমিরের বিরুদ্ধে ১৫টির বেশি মামলাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানিয়েছেন ৫১ বছর বয়সী আমিরের বাড়ি বরিশালে। মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে সে।

মঈন বলেন, ‘বিমানবন্দর রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডকেন্দ্রিক অজ্ঞান পার্টি চক্রের নেতৃত্বে এখন আমির। সে কখনো বিদেশে যাননি। কিন্তু বিমানবন্দর এলাকায় সবসময় একটি পাসপোর্ট হাতে ঘোরেন। তার সঙ্গে লাগেজ থাকে। লাগেজের ওপর স্টিকার লাগানো থাকে যাতে মনে হয় তিনি বিদেশ থেকে ফিরলেন।

আমিরের সঙ্গে গ্রেপ্তার মো. লিটন মিয়া ওরফে মিল্টন (৪৮) একজন মাইক্রোবাস চালক, তার বাড়িও বরিশাল। আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে পারভেজ (৩৫) গয়নার ব্যবসায়ী, তার বাড়ি ফেনী। আর জাকির হোসেন (৪০) পেশায় ছাপাখানার কর্মী। তার বাড়ি পটুয়াখালী।

কমান্ডার মঈন রোববার (২ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘চক্রের সদস্য সংখ্যা আট থেকে ১০ জনের মতো। তাদের অনেকেই এখন কারাগারে। জেল থেকে বের হয়ে তারা আবার একই পেশায় নামেন। তারা মূলত বিদেশ থেকে আসা সেসব প্রবাসীদের টার্গেট করতেন, যাদের নেয়ার জন্য কোন আত্মীয়-স্বজন বিমানবন্দরে আসেননি।’

তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, প্রবাসীদের অচেতন করার নেশাজাতীয় ট্যাবলেট এবং লাগেজ ও লুটকৃত স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত স্বর্ণ গলানো হয়েছে।

সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর কুয়েতফেরত এক প্রবাসীর মালামাল লুট করে চক্রটি। সেদিন ভোরে বিমানবন্দরে নেমে বগুড়ায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ওই প্রবাসী। এরপরই চক্রের একজন সদস্য বিমানবন্দরে ওই প্রবাসীকে অনুসরণ করে এবং তার সঙ্গে আলাপ জমান।

র‌্যাব বলছে, ওই প্রবাসী উত্তরা আজমপুর বাসস্ট্যান্ডে কাউন্টারে টিকেট কাটতে যান। ততক্ষণে ওই প্রবাসীর বিশ্বাস অর্জন করেন চক্রের সেই সদস্য। আর তখন লাগেজ ও পাসপোর্ট হাতে দৃশ্যপটে হাজির হন আমির। মাত্র কুয়েত থেকে এসেছেন এমন পরিচয় দিয়ে আমির বলেন, তারও গন্তব্যও বগুড়া।

নিজের কথা বিশ্বাসযোগ্য করতে আমির পকেট থেকে কুয়েতি মুদ্রা বের করে দেখান। নিজের সহযোগীদের ‘নিকট আত্মীয়’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন ওই প্রবাসীর সঙ্গে।

এরপর তারা বলেন যে, তাদের কাছে অতিরিক্ত একটি বাসের টিকেট আছে। তাদের একজন আত্মীয় যাওয়ার কথা ছিল বলে কাটা হয়েছিল, কিন্তু তিনি যাচ্ছেন না। ওই প্রবাসী চাইলে তাদের সঙ্গে যেতে পারেন, জিজ্ঞাসাবাদের সূত্রে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন।

তাদের প্রস্তাবে প্রবাসী রাজি হয়ে গেলে তারা উত্তরার আজমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বগুড়াগামী একটি বাসে উঠে বসেন। আমির ও ওই প্রবাসী পাশাপাশি আসনে বসেন। গ্রেপ্তার লিটন মিয়া পাশের আরেকটি আসনে বসেন। বাস চলতে শুরু করলে চেতনানাশক মিশ্রিত বিস্কুট খাইয়ে প্রবাসীকে অজ্ঞান করে ফেলেন আমির।

গ্রেপ্তারদের ‘স্বীকারোক্তির’ উদ্ধৃতি দিয়ে কমান্ডার মঈন জানান, এরপর ওই প্রবাসীর পকেট থেকে বাসের লাগেজ ট্যাগ বের নেন তারা। সিরাজগঞ্জ এলাকায় তার লাগেজ নিয়ে বাস থেকে নেমে যান আমির ও লিটন মিয়া। এরপর বাসের সুপারবাইজার প্রবাসীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে সে ওই ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন।

র‌্যাব বলছে, ওই ব্যক্তির ব্যাগে প্রায় আট ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ দামি জিনিসপত্র ছিল। স্বর্ণালঙ্কারগুলো শ্যামপুরের জুয়েলার্স দোকানের মালিক পারভেজের কাছে বিক্রি করেন আমির ও তার সহযোগীরা। আট ভরি স্বর্ণ নিয়ে সাড়ে ছয় ভরির দাম ধরে পৌনে পাঁচ লাখ টাকা আমিরকে দেন পারভেজ।

সেখান থেকে লিটন মিয়া ভাগ পান এক লাখ। জাকির ও আরেক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার করে টাকা দেন আমির। বাকি টাকা আমির নিজে নিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

পরে পারভেজকে গ্রেপ্তার করে তার কাছ থেকে লুটকৃত স্বর্ণের কিছু অংশ গলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। কমান্ডার মঈন জানান, এর আগেও বিভিন্ন সময় পারভেজের কাছে লুটের মাল বিক্রি করেছেন আমির। গ্রেপ্তার হওয়া জাকির ও অন্য আরেকজন এই লুটে তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। তারাও লুটের ভাগ পেয়েছে।

র‌্যাবের পরিচালক কমান্ডার মঈন বলেন, ‘আমির তিন-চারদিন পরপর এরকম একজনকে টার্গেট করেন। এ বছরই তিনি দুইবার গ্রেপ্তার হয়েছেন।’ আমিরের বিরুদ্ধে শুধু প্রতারণা ও লুটের মামলাই পাওয়া গেছে ১৫টি। এছাড়া আরও ফৌজদারি মামলাও রয়েছে। কয়েকবার গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে আবারও প্রতারণার কাজ করেন।

র‌্যাব বলছে, গত জানুয়ারিতে সৌদি প্রবাসী এক ব্যক্তির কাছ থেকে একইভাবে সর্বস্ব লুটে নেয় আমিরের চক্র। এপ্রিলে আরেক প্রবাসীর সর্বস্ব লুট করেন তারা।

আমিরের সহযোগী লিটন মিয়া পেশায় মাইক্রোবাস চালক। তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে সে। লিটনও একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে জানান কমান্ডার মঈন। সেও একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। সে বিভিন্ন সময় প্রবাসীদের মাইক্রোবাসে আনা-নেয়ার সুযোগে সর্বস্ব লুট করে নিত।

গ্রেপ্তার পারভেজ বলেছে, সে ৮-৯ বছর জুয়েলারি দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছে। ৬-৭ বছর আগে নিজেই রাজধানীর শ্যামপুরে জুয়েলারি দোকান দিয়েছে। জুয়েলারি দোকানের আড়ালে সে গত ২ থেকে ৩ বছর ধরে লুটকৃত স্বর্ণ কিনে গলিয়ে বিক্রি করত।

গ্রেপ্তারকৃত জাকির হোসেন বলেছে, সে ছাপাখানার ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে। গত ৩ থেকে ৪ বছর আগে সে অভিযুক্ত আমিরের সঙ্গে যোগ দেয়। সে লুটকৃত স্বর্ণালঙ্কার ও অন্য মালামাল রাজধানীর বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রির সঙ্গে জড়িত।

ছবি

আনু মুহাম্মদের ক্ষতিগ্রস্ত পায়ে অস্ত্রোপচার করা হবে

ছবি

সদরঘাটে যাত্রীবাহী লঞ্চের আগুন নিয়ন্ত্রণে

ছবি

সদরঘাটে যাত্রীবাহী লঞ্চে আগুন

ছবি

এবার এডিসের লার্ভা পেলেই জেল-জরিমানা: মেয়র আতিক

ছবি

রিহ্যাবের মতামত ছাড়া ইমারত নির্মাণ বিধিমালা চূড়ান্ত না করার দাবি

ছবি

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী গ্রেপ্তার

নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য সস্তা, দাম বাড়ানোর দাবি

ছবি

ট্রেনে পায়ের আঙুল কাটা পড়েছে আনু মুহাম্মদের

ছবি

রেকি করে ফাঁকা ঢাকায় চুরি করতেন তারা

ছবি

প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে আইনজীবীদের গাউন পড়নে শিথিলতা

ছবি

হাতিরঝিলে ভাসছিল যুবকের মরদেহ

ছবি

শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস

ছবি

শিশু হাসপাতালে আগুন, ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

ছবি

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাইদা বাস থার্ড টার্মিনালে, প্রকৌশলী নিহত

ছবি

ঢাকা শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক বিভাগে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট

ছবি

ভাষানটেকে বাবা-মা-দাদির পরে চলে গেল লামিয়াও

ছবি

যমুনা এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত বগি উদ্ধার, ঢাকামুখী পথ সচল

ছবি

রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি

ছবি

ভাসানটেকে গ্যাসের আগুন: শাশুড়ি ও স্ত্রীর পর স্বামীও মারা গেছে

ছবি

পহেলা বৈশাখে জাহানারা জাদুঘরের বিশেষ প্রদর্শনী

ছবি

চট্টগ্রামে বস্তিতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৯ ইউনিট

ছবি

ঢাকায় পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ৮

ঢাবি চারুকলার বকুলতলায় গান-নাচ-আবৃত্তিতে চৈত্রসংক্রান্তি উদ্‌যাপন

ছবি

ঢাকায় এসেছে ইসরায়েলের ফ্লাইট, বেবিচকের ব্যাখা

ছবি

বর্ষবরণের অপেক্ষায় রমনা

ছবি

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর গাড়িতে আগুন লাগে জানান পুলিশ

লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে ৫ জনের মৃত্যু : আসামিদের তিন দিনের রিমান্ড

ছবি

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর প্রাইভেট কারে আগুন

রাজধানীর শাহজাদপুরে বুথের নিরাপত্তা প্রহরীকে হত্যা

ছবি

যাত্রীদের পিটুনিতে হয়নি চালক-সহকারীর মৃত্যু, হেলপার গল্প সাজিয়েছে বলছে পুলিশ

ছবি

ঈদের দিন বন্ধ থাকবে মেট্রোরেল

ছবি

মেট্রোরেলের পিলারে বাসের ধাক্কা

ছবি

কেএনএফের তৎপরতা নিয়ে ঢাকায় কোনো শঙ্কা নেই: ডিএমপি কমিশনার

ছবি

আবাসিক হোটেল থেকে নির্মাতা সোহানুর রহমানের মেয়ের মরদেহ উদ্ধার

কেটলির শর্টসার্কিট থেকে লিকেজের গ্যাসে বিস্তার

ছবি

জনগণের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে পুলিশের সব ইউনিট একযোগে কাজ করছে : আইজিপি

tab

নগর-মহানগর

১৫ বছর ধরে বিমানবন্দরে সক্রিয় এক ‘অজ্ঞান পার্টি’

তিনশ’র বেশি প্রবাসীকে অজ্ঞান করে মালামাল লুট

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

রোববার, ০২ অক্টোবর ২০২২

১৫ বছর ধরে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সক্রিয় একটি চক্র। যাদের কাজ বিদেশ ফেরত যাত্রীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে সর্বস্ব লুটে নেয়া। এই চক্র এমন যাত্রীকে টার্গেট করত যার জন্য বিমানবন্দরে কোন আত্মীয়-স্বজন যায়নি, বা গাড়ি নিয়ে কেউ অপেক্ষা করছে না।

আর এই চক্রের নেতৃত্বে আছেন আমির হোসেন, যে বিমানবন্দরের উল্টো দিকে একটি ফাস্টফুডের দোকানে ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন। ‘অজ্ঞান পার্টির’ খপ্পরে পড়ে এক প্রবাসীর সর্বস্ব হারানোর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে আমিরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাবব। আর তারপরই এই চক্রের খবর প্রকাশ্যে এলো।

গত ১৫ বছরে তিনশ’র বেশি প্রবাসীকে অজ্ঞান করে মালামাল লুটে নিয়েছে এই চক্র। আর আমিরের বিরুদ্ধে ১৫টির বেশি মামলাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানিয়েছেন ৫১ বছর বয়সী আমিরের বাড়ি বরিশালে। মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে সে।

মঈন বলেন, ‘বিমানবন্দর রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডকেন্দ্রিক অজ্ঞান পার্টি চক্রের নেতৃত্বে এখন আমির। সে কখনো বিদেশে যাননি। কিন্তু বিমানবন্দর এলাকায় সবসময় একটি পাসপোর্ট হাতে ঘোরেন। তার সঙ্গে লাগেজ থাকে। লাগেজের ওপর স্টিকার লাগানো থাকে যাতে মনে হয় তিনি বিদেশ থেকে ফিরলেন।

আমিরের সঙ্গে গ্রেপ্তার মো. লিটন মিয়া ওরফে মিল্টন (৪৮) একজন মাইক্রোবাস চালক, তার বাড়িও বরিশাল। আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে পারভেজ (৩৫) গয়নার ব্যবসায়ী, তার বাড়ি ফেনী। আর জাকির হোসেন (৪০) পেশায় ছাপাখানার কর্মী। তার বাড়ি পটুয়াখালী।

কমান্ডার মঈন রোববার (২ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘চক্রের সদস্য সংখ্যা আট থেকে ১০ জনের মতো। তাদের অনেকেই এখন কারাগারে। জেল থেকে বের হয়ে তারা আবার একই পেশায় নামেন। তারা মূলত বিদেশ থেকে আসা সেসব প্রবাসীদের টার্গেট করতেন, যাদের নেয়ার জন্য কোন আত্মীয়-স্বজন বিমানবন্দরে আসেননি।’

তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, প্রবাসীদের অচেতন করার নেশাজাতীয় ট্যাবলেট এবং লাগেজ ও লুটকৃত স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত স্বর্ণ গলানো হয়েছে।

সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর কুয়েতফেরত এক প্রবাসীর মালামাল লুট করে চক্রটি। সেদিন ভোরে বিমানবন্দরে নেমে বগুড়ায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ওই প্রবাসী। এরপরই চক্রের একজন সদস্য বিমানবন্দরে ওই প্রবাসীকে অনুসরণ করে এবং তার সঙ্গে আলাপ জমান।

র‌্যাব বলছে, ওই প্রবাসী উত্তরা আজমপুর বাসস্ট্যান্ডে কাউন্টারে টিকেট কাটতে যান। ততক্ষণে ওই প্রবাসীর বিশ্বাস অর্জন করেন চক্রের সেই সদস্য। আর তখন লাগেজ ও পাসপোর্ট হাতে দৃশ্যপটে হাজির হন আমির। মাত্র কুয়েত থেকে এসেছেন এমন পরিচয় দিয়ে আমির বলেন, তারও গন্তব্যও বগুড়া।

নিজের কথা বিশ্বাসযোগ্য করতে আমির পকেট থেকে কুয়েতি মুদ্রা বের করে দেখান। নিজের সহযোগীদের ‘নিকট আত্মীয়’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন ওই প্রবাসীর সঙ্গে।

এরপর তারা বলেন যে, তাদের কাছে অতিরিক্ত একটি বাসের টিকেট আছে। তাদের একজন আত্মীয় যাওয়ার কথা ছিল বলে কাটা হয়েছিল, কিন্তু তিনি যাচ্ছেন না। ওই প্রবাসী চাইলে তাদের সঙ্গে যেতে পারেন, জিজ্ঞাসাবাদের সূত্রে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন।

তাদের প্রস্তাবে প্রবাসী রাজি হয়ে গেলে তারা উত্তরার আজমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বগুড়াগামী একটি বাসে উঠে বসেন। আমির ও ওই প্রবাসী পাশাপাশি আসনে বসেন। গ্রেপ্তার লিটন মিয়া পাশের আরেকটি আসনে বসেন। বাস চলতে শুরু করলে চেতনানাশক মিশ্রিত বিস্কুট খাইয়ে প্রবাসীকে অজ্ঞান করে ফেলেন আমির।

গ্রেপ্তারদের ‘স্বীকারোক্তির’ উদ্ধৃতি দিয়ে কমান্ডার মঈন জানান, এরপর ওই প্রবাসীর পকেট থেকে বাসের লাগেজ ট্যাগ বের নেন তারা। সিরাজগঞ্জ এলাকায় তার লাগেজ নিয়ে বাস থেকে নেমে যান আমির ও লিটন মিয়া। এরপর বাসের সুপারবাইজার প্রবাসীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে সে ওই ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন।

র‌্যাব বলছে, ওই ব্যক্তির ব্যাগে প্রায় আট ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ দামি জিনিসপত্র ছিল। স্বর্ণালঙ্কারগুলো শ্যামপুরের জুয়েলার্স দোকানের মালিক পারভেজের কাছে বিক্রি করেন আমির ও তার সহযোগীরা। আট ভরি স্বর্ণ নিয়ে সাড়ে ছয় ভরির দাম ধরে পৌনে পাঁচ লাখ টাকা আমিরকে দেন পারভেজ।

সেখান থেকে লিটন মিয়া ভাগ পান এক লাখ। জাকির ও আরেক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার করে টাকা দেন আমির। বাকি টাকা আমির নিজে নিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

পরে পারভেজকে গ্রেপ্তার করে তার কাছ থেকে লুটকৃত স্বর্ণের কিছু অংশ গলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। কমান্ডার মঈন জানান, এর আগেও বিভিন্ন সময় পারভেজের কাছে লুটের মাল বিক্রি করেছেন আমির। গ্রেপ্তার হওয়া জাকির ও অন্য আরেকজন এই লুটে তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। তারাও লুটের ভাগ পেয়েছে।

র‌্যাবের পরিচালক কমান্ডার মঈন বলেন, ‘আমির তিন-চারদিন পরপর এরকম একজনকে টার্গেট করেন। এ বছরই তিনি দুইবার গ্রেপ্তার হয়েছেন।’ আমিরের বিরুদ্ধে শুধু প্রতারণা ও লুটের মামলাই পাওয়া গেছে ১৫টি। এছাড়া আরও ফৌজদারি মামলাও রয়েছে। কয়েকবার গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে আবারও প্রতারণার কাজ করেন।

র‌্যাব বলছে, গত জানুয়ারিতে সৌদি প্রবাসী এক ব্যক্তির কাছ থেকে একইভাবে সর্বস্ব লুটে নেয় আমিরের চক্র। এপ্রিলে আরেক প্রবাসীর সর্বস্ব লুট করেন তারা।

আমিরের সহযোগী লিটন মিয়া পেশায় মাইক্রোবাস চালক। তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে সে। লিটনও একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে জানান কমান্ডার মঈন। সেও একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। সে বিভিন্ন সময় প্রবাসীদের মাইক্রোবাসে আনা-নেয়ার সুযোগে সর্বস্ব লুট করে নিত।

গ্রেপ্তার পারভেজ বলেছে, সে ৮-৯ বছর জুয়েলারি দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছে। ৬-৭ বছর আগে নিজেই রাজধানীর শ্যামপুরে জুয়েলারি দোকান দিয়েছে। জুয়েলারি দোকানের আড়ালে সে গত ২ থেকে ৩ বছর ধরে লুটকৃত স্বর্ণ কিনে গলিয়ে বিক্রি করত।

গ্রেপ্তারকৃত জাকির হোসেন বলেছে, সে ছাপাখানার ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে। গত ৩ থেকে ৪ বছর আগে সে অভিযুক্ত আমিরের সঙ্গে যোগ দেয়। সে লুটকৃত স্বর্ণালঙ্কার ও অন্য মালামাল রাজধানীর বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রির সঙ্গে জড়িত।

back to top