alt

নগর-মহানগর

ফগিং পুরনো পদ্ধতি, প্রজাতি শনাক্ত করে মশা নিয়ন্ত্রণ করবে ডিএনসিসি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৩

মশা নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মিয়ামি শহরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা এতদিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। তাতে মশা তো ধ্বংস হয়নি, বরং অর্থের অপচয় হয়েছে। তাই দ্রুত ডিএনসিসি’তে মশার প্রজাতি চিহ্নিত করতে একটি ল্যাব স্থাপন করতে চাই।’

গত শুক্রবার স্থানীয় সময় সকালে ফিল্ড ভিজিট ও কর্মশালায় তথ্য উপাত্ত তুলে ধরার মাধ্যমে ডিএনসিসি প্রতিনিধি দলকে হাতে-কলমে মশার প্রজাতি নির্ধারণ শিখিয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ।

মেয়র আতিকুল আরও বলেন, ‘মিয়ামি থেকে যে জ্ঞান অর্জিত হয়েছে সেটির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিএনসিসিকে মশা মুক্ত রাখতে চাই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে তাদের সিডিসির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আমাদের দেশের কীটতত্ত্ববিদদের নিয়ে একটি সভার আয়োজন করব। তারা আসলে কিভাবে সফল সেটি কিভাবে ঢাকাতে প্রয়োগ করা যায় তার কর্মপদ্ধতি ঠিক করা হবে।’

প্রসঙ্গত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আয়োজনে দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের কমার্শিয়াল ল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের (সিএলডিপি) আমন্ত্রণ ও অর্থায়নে ডিএনসিসির প্রতিনিধি দল ফ্লোরিডা সফরে রয়েছেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। সফরকালে মশক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটির অভিজ্ঞতা হাতে-কলমে শিখিয়ে দেন মিয়ামি ডেড কাউন্টির বিশেষজ্ঞরা। আর মশা নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের এই সফল কার্যক্রম নিজ এলাকায় বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র।

কর্মশালায় তুলে ধরা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি শহরে প্রায় ৫২ প্রজাতির মশার অস্তিত্ব রয়েছে। ফলে বছরের ৩৬৫ দিনই মশাবাহিত রোগ, যেমন- ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায় শহরটিতে।

রাজধানী ঢাকার আবহাওয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা স্টেটের মিয়ামি ডেড কাউন্টির বেশ মিল রয়েছে। সেখানকার তাপমাত্রা গড়ে ১৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রিতে উঠানামা করে। মাঝে মাঝে ভারী বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে। ফলে এডিস বাহিত ডেঙ্গুসহ সব ধরনের মশাবাহিত রোগের উর্বর ক্ষেত্র হতে পারত মিয়ামি। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে মশাবাহিত রোগ পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ। মিয়ামিতে মশা ধ্বংস করার ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে মশার প্রজাতি নির্ণয়। কেননা মশার ধরন বুঝে ওষুধ স্প্রে করতে পারলেই কেবল মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব। অন্যথায় প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ফগার স্প্রে করে কোনভাবেই মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ।

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘প্রয়োজনে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলাপ করে তাদের ল্যাবেই মশার জীবন প্রকৃতি নির্ণয়ে কাজ করা যেতে পারে। আর ফগিংয়ে অর্থ অপচয় না করে লার্ভিসাইডিংয়ে মনোযোগী হতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি মিয়ামি আর ঢাকার আবহাওয়া এবং মশার ধরন একই। তাই তারা সফল হলে অবশ্যই আমরা সফল হব। এখন আর পিছিয়ে থাকার সময় নেই। উন্নত দেশ তাদের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে ঢাকাকেও মশামুক্ত করা সম্ভব।’ এজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিএলডিপি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

মিয়ামি ডেড কাউন্টি যেভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করে :

প্রথমতো তারা মশার প্রজননস্থল খুঁজে বের করতে একটি টিমকে দায়িত্ব দিয়ে থাকে। তারা খুঁজে খুঁজে মশার প্রজননস্থল থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা ও মশার ডিম সংগ্রহ করে তাদের ল্যাবে পাঠিয়ে দেয়। ল্যাবে থাকা বিশেষজ্ঞরা সেই মশা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রজাতি পৃথক করে দেন। দেখা যায় এক জায়গায় কিউলেক্স বেশি তো আর এক জায়গা এডিস মশা বেশি। আবার অন্য জায়গায় পাওয়া যায় ইজিপ্ট মশা। এভাবে মশার প্রজাতি নির্ণয় করা হয়ে থাকে। মিয়ামির ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষের দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫২ প্রজাতির মশা রয়েছে। প্রজাতি চিহ্নিত করতে পারলেই মশা নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ শেষ হয়। এরপর মশার ধরন বুঝে পরিমিত ওষুধ স্প্রে করার মাধ্যমে স্ব স্ব প্রজাতির মশা ধ্বংস করা হয়। তারা ফগিংকে গুরুত্ব না দিয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন লার্ভিসাইডিংকে। তাদের মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মোট বাজেটের ৮০ ভাগই খরচ হয় লারবিসাইডিং কার্যক্রমে। তাদের দাবি ফগিং পুরনো পদ্ধতি। এটি দিয়ে মশা কখনও মরে না। তাই মশা নিয়ন্ত্রণও সম্ভব হয় না। যে কারণে তারা মশার প্রজনন স্থান চিহ্নিত করে সেখানে লার্বিসাইডিং কার্যক্রম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। আর কীটনাশকেও পরিবর্তন আনার পরামর্শ দিয়েছেন।

দেশে সাধারণত টেমিফস্ট ও নোভারিয়ন ওষুধ ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘদিন এই ওষুধ ব্যবহার করার ফলে সেখানে ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রে বেশি ব্যবহৃত হয় বিআইটি। মিয়ামিতে যে ল্যাব রয়েছে সেটি খুব বড় জায়গা নিয়ে নয়। মাত্র ৫০ বর্গফুটের দুটি রুমে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে মশার জীবন চক্র নির্ণয় করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। কীটনাশক ব্যবহারে তারা মানুষের ব্যবহার কমিয়ে যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীলতা দেখিয়েছেন। এখানেও রয়েছে ভিন্নতা। তাদের দাবি, মানুষের মাধ্যমে কীটনাশকের মিশ্রণ করলে কমবেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই যন্ত্রের মাধ্যমে সঠিক পরিমাণের কীটনাশক মিশিয়ে একটি গাড়ির মাধ্যমে খোলা জায়গায় স্প্রে করে থাকে। গাড়িটির স্প্রে যন্ত্র ১০০ ফুট ওপরে এবং ডানে বামে ঘুরিয়ে স্প্রে করার সক্ষমতা রাখে। এতে কীটনাশকের পরিমিত ড্রফলেটটি মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পড়ে। মজার বিষয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের কর্তৃপক্ষের হাতে।

মশক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা ও ফিল্ড পরিদর্শনে সহায়তা করেন দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের অপারেশন ম্যানেজার উসিক উনলু ও পরিচালক ড. উইলিয়াম ডি পেট্রি। মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিকসহ অনেকে।

ছবি

আনু মুহাম্মদের ক্ষতিগ্রস্ত পায়ে অস্ত্রোপচার করা হবে

ছবি

সদরঘাটে যাত্রীবাহী লঞ্চের আগুন নিয়ন্ত্রণে

ছবি

সদরঘাটে যাত্রীবাহী লঞ্চে আগুন

ছবি

এবার এডিসের লার্ভা পেলেই জেল-জরিমানা: মেয়র আতিক

ছবি

রিহ্যাবের মতামত ছাড়া ইমারত নির্মাণ বিধিমালা চূড়ান্ত না করার দাবি

ছবি

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী গ্রেপ্তার

নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য সস্তা, দাম বাড়ানোর দাবি

ছবি

ট্রেনে পায়ের আঙুল কাটা পড়েছে আনু মুহাম্মদের

ছবি

রেকি করে ফাঁকা ঢাকায় চুরি করতেন তারা

ছবি

প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে আইনজীবীদের গাউন পড়নে শিথিলতা

ছবি

হাতিরঝিলে ভাসছিল যুবকের মরদেহ

ছবি

শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস

ছবি

শিশু হাসপাতালে আগুন, ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

ছবি

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাইদা বাস থার্ড টার্মিনালে, প্রকৌশলী নিহত

ছবি

ঢাকা শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক বিভাগে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট

ছবি

ভাষানটেকে বাবা-মা-দাদির পরে চলে গেল লামিয়াও

ছবি

যমুনা এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত বগি উদ্ধার, ঢাকামুখী পথ সচল

ছবি

রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি

ছবি

ভাসানটেকে গ্যাসের আগুন: শাশুড়ি ও স্ত্রীর পর স্বামীও মারা গেছে

ছবি

পহেলা বৈশাখে জাহানারা জাদুঘরের বিশেষ প্রদর্শনী

ছবি

চট্টগ্রামে বস্তিতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৯ ইউনিট

ছবি

ঢাকায় পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ৮

ঢাবি চারুকলার বকুলতলায় গান-নাচ-আবৃত্তিতে চৈত্রসংক্রান্তি উদ্‌যাপন

ছবি

ঢাকায় এসেছে ইসরায়েলের ফ্লাইট, বেবিচকের ব্যাখা

ছবি

বর্ষবরণের অপেক্ষায় রমনা

ছবি

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর গাড়িতে আগুন লাগে জানান পুলিশ

লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে ৫ জনের মৃত্যু : আসামিদের তিন দিনের রিমান্ড

ছবি

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর প্রাইভেট কারে আগুন

রাজধানীর শাহজাদপুরে বুথের নিরাপত্তা প্রহরীকে হত্যা

ছবি

যাত্রীদের পিটুনিতে হয়নি চালক-সহকারীর মৃত্যু, হেলপার গল্প সাজিয়েছে বলছে পুলিশ

ছবি

ঈদের দিন বন্ধ থাকবে মেট্রোরেল

ছবি

মেট্রোরেলের পিলারে বাসের ধাক্কা

ছবি

কেএনএফের তৎপরতা নিয়ে ঢাকায় কোনো শঙ্কা নেই: ডিএমপি কমিশনার

ছবি

আবাসিক হোটেল থেকে নির্মাতা সোহানুর রহমানের মেয়ের মরদেহ উদ্ধার

কেটলির শর্টসার্কিট থেকে লিকেজের গ্যাসে বিস্তার

ছবি

জনগণের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে পুলিশের সব ইউনিট একযোগে কাজ করছে : আইজিপি

tab

নগর-মহানগর

ফগিং পুরনো পদ্ধতি, প্রজাতি শনাক্ত করে মশা নিয়ন্ত্রণ করবে ডিএনসিসি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শনিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৩

মশা নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মিয়ামি শহরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা এতদিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। তাতে মশা তো ধ্বংস হয়নি, বরং অর্থের অপচয় হয়েছে। তাই দ্রুত ডিএনসিসি’তে মশার প্রজাতি চিহ্নিত করতে একটি ল্যাব স্থাপন করতে চাই।’

গত শুক্রবার স্থানীয় সময় সকালে ফিল্ড ভিজিট ও কর্মশালায় তথ্য উপাত্ত তুলে ধরার মাধ্যমে ডিএনসিসি প্রতিনিধি দলকে হাতে-কলমে মশার প্রজাতি নির্ধারণ শিখিয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ।

মেয়র আতিকুল আরও বলেন, ‘মিয়ামি থেকে যে জ্ঞান অর্জিত হয়েছে সেটির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিএনসিসিকে মশা মুক্ত রাখতে চাই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে তাদের সিডিসির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আমাদের দেশের কীটতত্ত্ববিদদের নিয়ে একটি সভার আয়োজন করব। তারা আসলে কিভাবে সফল সেটি কিভাবে ঢাকাতে প্রয়োগ করা যায় তার কর্মপদ্ধতি ঠিক করা হবে।’

প্রসঙ্গত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আয়োজনে দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের কমার্শিয়াল ল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের (সিএলডিপি) আমন্ত্রণ ও অর্থায়নে ডিএনসিসির প্রতিনিধি দল ফ্লোরিডা সফরে রয়েছেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। সফরকালে মশক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটির অভিজ্ঞতা হাতে-কলমে শিখিয়ে দেন মিয়ামি ডেড কাউন্টির বিশেষজ্ঞরা। আর মশা নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের এই সফল কার্যক্রম নিজ এলাকায় বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র।

কর্মশালায় তুলে ধরা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি শহরে প্রায় ৫২ প্রজাতির মশার অস্তিত্ব রয়েছে। ফলে বছরের ৩৬৫ দিনই মশাবাহিত রোগ, যেমন- ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায় শহরটিতে।

রাজধানী ঢাকার আবহাওয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা স্টেটের মিয়ামি ডেড কাউন্টির বেশ মিল রয়েছে। সেখানকার তাপমাত্রা গড়ে ১৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রিতে উঠানামা করে। মাঝে মাঝে ভারী বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে। ফলে এডিস বাহিত ডেঙ্গুসহ সব ধরনের মশাবাহিত রোগের উর্বর ক্ষেত্র হতে পারত মিয়ামি। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে মশাবাহিত রোগ পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ। মিয়ামিতে মশা ধ্বংস করার ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে মশার প্রজাতি নির্ণয়। কেননা মশার ধরন বুঝে ওষুধ স্প্রে করতে পারলেই কেবল মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব। অন্যথায় প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ফগার স্প্রে করে কোনভাবেই মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ।

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘প্রয়োজনে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলাপ করে তাদের ল্যাবেই মশার জীবন প্রকৃতি নির্ণয়ে কাজ করা যেতে পারে। আর ফগিংয়ে অর্থ অপচয় না করে লার্ভিসাইডিংয়ে মনোযোগী হতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি মিয়ামি আর ঢাকার আবহাওয়া এবং মশার ধরন একই। তাই তারা সফল হলে অবশ্যই আমরা সফল হব। এখন আর পিছিয়ে থাকার সময় নেই। উন্নত দেশ তাদের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে ঢাকাকেও মশামুক্ত করা সম্ভব।’ এজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিএলডিপি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

মিয়ামি ডেড কাউন্টি যেভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করে :

প্রথমতো তারা মশার প্রজননস্থল খুঁজে বের করতে একটি টিমকে দায়িত্ব দিয়ে থাকে। তারা খুঁজে খুঁজে মশার প্রজননস্থল থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা ও মশার ডিম সংগ্রহ করে তাদের ল্যাবে পাঠিয়ে দেয়। ল্যাবে থাকা বিশেষজ্ঞরা সেই মশা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রজাতি পৃথক করে দেন। দেখা যায় এক জায়গায় কিউলেক্স বেশি তো আর এক জায়গা এডিস মশা বেশি। আবার অন্য জায়গায় পাওয়া যায় ইজিপ্ট মশা। এভাবে মশার প্রজাতি নির্ণয় করা হয়ে থাকে। মিয়ামির ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষের দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫২ প্রজাতির মশা রয়েছে। প্রজাতি চিহ্নিত করতে পারলেই মশা নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ শেষ হয়। এরপর মশার ধরন বুঝে পরিমিত ওষুধ স্প্রে করার মাধ্যমে স্ব স্ব প্রজাতির মশা ধ্বংস করা হয়। তারা ফগিংকে গুরুত্ব না দিয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন লার্ভিসাইডিংকে। তাদের মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মোট বাজেটের ৮০ ভাগই খরচ হয় লারবিসাইডিং কার্যক্রমে। তাদের দাবি ফগিং পুরনো পদ্ধতি। এটি দিয়ে মশা কখনও মরে না। তাই মশা নিয়ন্ত্রণও সম্ভব হয় না। যে কারণে তারা মশার প্রজনন স্থান চিহ্নিত করে সেখানে লার্বিসাইডিং কার্যক্রম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। আর কীটনাশকেও পরিবর্তন আনার পরামর্শ দিয়েছেন।

দেশে সাধারণত টেমিফস্ট ও নোভারিয়ন ওষুধ ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘদিন এই ওষুধ ব্যবহার করার ফলে সেখানে ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রে বেশি ব্যবহৃত হয় বিআইটি। মিয়ামিতে যে ল্যাব রয়েছে সেটি খুব বড় জায়গা নিয়ে নয়। মাত্র ৫০ বর্গফুটের দুটি রুমে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে মশার জীবন চক্র নির্ণয় করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। কীটনাশক ব্যবহারে তারা মানুষের ব্যবহার কমিয়ে যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীলতা দেখিয়েছেন। এখানেও রয়েছে ভিন্নতা। তাদের দাবি, মানুষের মাধ্যমে কীটনাশকের মিশ্রণ করলে কমবেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই যন্ত্রের মাধ্যমে সঠিক পরিমাণের কীটনাশক মিশিয়ে একটি গাড়ির মাধ্যমে খোলা জায়গায় স্প্রে করে থাকে। গাড়িটির স্প্রে যন্ত্র ১০০ ফুট ওপরে এবং ডানে বামে ঘুরিয়ে স্প্রে করার সক্ষমতা রাখে। এতে কীটনাশকের পরিমিত ড্রফলেটটি মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পড়ে। মজার বিষয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের কর্তৃপক্ষের হাতে।

মশক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা ও ফিল্ড পরিদর্শনে সহায়তা করেন দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের অপারেশন ম্যানেজার উসিক উনলু ও পরিচালক ড. উইলিয়াম ডি পেট্রি। মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিকসহ অনেকে।

back to top